রবিবার, ২২ এপ্রিল, ২০১৮, ১১:০৪:২২

আমি এখন কী করব?

আমি এখন কী করব?

ঢাকা: দুইবার আমার উপর দিয়ে চাকা চলে গেছে। আমি শুধু বলছিলাম, আমাকে একটু হসপিটালে নিয়ে যান। অনেক মানুষকে বলছি আমাকে একটু হসপিটালে নিয়ে যেতে। আশপাশে পুলিশও ছিল। কিন্তু কেউ ধরে নাই।

রাজধানীর বনানীতে বাসের চাপায় পা হারানো রোজিনা আক্তার কাঁদতে কাঁদতে এ সব কথা বলছিলেন। শুক্রবার রাতে রাজধানীর বনানীতে ওই দুর্ঘটনার পর রোজিনার ডান পা উরু থেকে কেটে ফেলা হয়েছে। চিকিৎসকরা জানিয়েছেন এখনও তিনি পুরোপুরি শঙ্কামুক্ত নন।

ময়মনসিংহের মেয়ে রোজিনা ছয় বোনের মধ্যে দ্বিতীয়। ঢাকায় সাংবাদিক ইশতিয়াক রেজার বাসায় ১০ বছর ধরে কাজ করেন তিনি। মহাখালীতে এক বন্ধুর বাড়িতে বেড়িয়ে গুলশানের নিকেতনের বাসায় ফেরার সময় দুর্ঘটনার শিকার হয়েছিলেন রোজিনা।

শনিবার দুপুরে জাতীয় অর্থোপেডিক হাসপাতাল ও পুনর্বাসন প্রতিষ্ঠানের (পঙ্গু হাসপাতাল) জেনারেল ওয়ার্ডের বেডে শুয়ে রোজিনা ওই দুঃসহ ঘটনার বিস্তারিত তুলে ধরেন।

তিনি বলেন, কয়েকজন রাস্তা পার হচ্ছিল, আমি রাস্তা পার হওয়ার জন্য ফুটপাত থেকে নেমে মাত্র দুই পা দিয়েছি এমন সময় একটা গাড়ি সামনে এসে যায়। আমি ইশারা দেওয়ার পর গাড়িটা ব্রেক করে থামে। কিন্তু আমি যেই সামনে গেছি, গাড়িটা একটা বাড়ি দেয়। আমি তখন সামনের দিকে পড়ে গেছি। এরপরও বাসটা থামায় নাই। এত বড় বাসটা আমার পায়ের উপর দিয়ে চলে যায়।

আমি যখন পড়ে গেছি, তখন বাসটা থামালে আমার পাটা বাঁচানো যেত, বলতে বলতে কেঁদে ফেলেন রোজিনা।

দুর্ঘটনার সময় আশপাশে পুলিশসহ অনেকে ছিল জানিয়ে তিনি বলেন, দুইবার আমার উপর দিয়ে চাকা চলে গেছে। আমি শুধু বলছিলাম, আমাকে একটু হসপিটালে নিয়ে যান। এরপর আর কিছু জানি না। অনেক মানুষকে বলছি আমাকে একটু হসপিটালে নিয়ে যেতে। অনেক মানুষকে বলছি। সার্জেন্টও ছিল। কিন্তু ধরে নাই।

পরে একজন লোক এসে তাকে উদ্ধার করে হাসপাতালের দিকে যাত্রা করে জানিয়ে রোজিনা বলেন, যখন সেন্স আসে, তখন দেখি আমাকে তিন-চারজন সিএনজি করে নিয়ে যাচ্ছে।

রাত ৯টার দিকে এই দুর্ঘটনার পর পঙ্গু হাসপাতালে নেওয়া হয় রোজিনাকে, সেখানেই রাত ১টায় অস্ত্রোপচার করে তার পা কেটে ফেলা হয়।

রোজিনা

নিজের ভবিষ্যৎ নিয়ে শঙ্কিত এই গৃহকর্মী বলেন, আমি এখন কী করব? আমি তো আগের জায়গায় ফিরে আসতে পারব না। আমার যা ক্ষতি হওয়ার তা তো হয়েই গেছে। আমি তো আর আমার পাটা ফিরে পাব না।

দুর্ঘটনার জন্য চালকদের শাস্তি না হওয়ায় এ ধরনের ঘটনা বার বার ঘটছে মন্তব্য করে রোজিনা বলেন, ওদের কোনো শাস্তি হয় না। শাস্তি চেয়েও কোনো লাভ নাই। ছয় মাস, এক বছর জেল হয়, তারপর ওরা স্বাধীন মতো চলে। কোনো কিছু হয় না ওদের।
এমটি নিউজ/এপি/ডিসি

Follow করুন এমটিনিউজ২৪ গুগল নিউজ, টুইটার , ফেসবুক এবং সাবস্ক্রাইব করুন এমটিনিউজ২৪ ইউটিউব চ্যানেলে