ঢাকা: বাংলাদেশের রোহিঙ্গা শিবিরে প্রতিদিন জন্ম নেয় ৬০ জন শিশু। গত বছরের আগস্ট থেকে এ পর্যন্ত ১৬ হাজার শিশু জন্ম নিয়েছে রোহিঙ্গা শিবিরে। ১৬ কোটি জনসংখ্যার পদভারে জর্জরিত বাংলাদেশের জন্য এ বিপুল জন্মহার বাড়তি সমস্যা। কিন্তু বাংলাদেশকে গত এক বছর ধরে পথ চলতে হচ্ছে দেশের জনসংখ্যার সঙ্গে যুক্ত বাড়তি ১১ লাখ রোহিঙ্গা শরণার্থীকে নিয়ে যাদের সংখ্যা ক্রমবর্ধমান। আজ ২০ জুন বিশ্ব শরণার্থী দিবসটি বাংলাদেশ পালন করছে রোহিঙ্গা শরণার্থী সংকট সমাধানের বিষয়টি মাথায় রেখেই। বাংলাদেশ বিশ্ব শরণার্থী দিবসে সুখবর নেই রোহিঙ্গা ইস্যুতে।
জাতিসংঘের দেয়া তথ্যানুযায়ী, বিশ্বের শরণার্থী ও বাস্তুচ্যুত মানুষের সংখ্যা প্রায় ৭ কোটি। এদের মধ্যে বেশিরভাগই অভ্যন্তরীণ রাজনৈতিক অস্থিরতার কারণে এবং বাকিরা প্রাকৃতিক দূর্যোগ ও অর্থনৈতিকসহ বিভিন্ন কারণে শরণার্থীতে পরিণত হয়েছে। বিগত কয়েক বছরে যুদ্ধ ও রাজনৈতিক সহিংসতার কারনে সিরিয়াসহ মধ্যপ্রাচ্যের বিভিন্ন দেশ থেকে লাখ লাখ শরণার্থী ইউরোপ ও আমেরিকার দেশগুলোতে শরণার্থী হিসেবে গমন করেছে। কিন্তু বিশ্বের এই সংকটময় মুহূর্তে শরণার্থীদের সাথে মানবিক আচরণ করছে না অর্থনৈতিকভাবে উন্নত দেশগুলো। ২০১৬ সাল থেকে নৌকায় করে অস্ট্রেলিয়া গমনকারীদের দেশটিতে প্রবেশ করতে দিচ্ছে না অস্ট্রেলিয়া কর্তৃপক্ষ। দুই সপ্তাহ আগে সাগরে উদ্ধার করা ৬২৯ জন আশ্রয়প্রার্থী বহনকারী জাহাজকে দেশে ঢুকতে দেয়নি ইতালি ও মাল্টা। অন্যদিকে যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প তো ঘোষণাই করে দিয়েছেন, যুক্তরাষ্ট্রকে কোনোমতেই শরণার্থী শিবির বানানো হবে না। এসবের মধ্যে উন্নয়নশীল দেশ হিসেবে মিয়ানমারের রাষ্ট্রীয় অত্যাচারে দেশ ছাড়া ১১ লক্ষ রোহিঙ্গাকে আশ্রয় দিয়ে বিশ্বে মানবিক দেশ হিসেবে প্রশংসা পেয়েছে বাংলাদেশ।
কিন্তু সমস্যা হচ্ছে, রোহিঙ্গাদের কারণে দেশে বিভিন্ন সামাজিক ও অপরাধমূলক সংকটের সৃষ্টি হয়েছে। দুদিন আগেই কক্সবাজারের রোহিঙ্গা ক্যাম্পে আধিপত্য বিস্তারকে কেন্দ্র করে রোহিঙ্গাদের দু গ্রুপের মধ্যে সংঘর্ষে আহত হয়েছে ১০ জন। এছাড়া ইয়াবা পাচার, খুন, ডাকাতি, ছিনতাই, পতিতাবৃত্তি, সরকার বিরোধী কর্মকাণ্ডসহ নানা অপরাধমূলক কর্মকাণ্ডে জড়িত হওয়ার অভিযোগ রয়েছে রোহিঙ্গাদের বিরুদ্ধে। এসব কারণে কক্সবাজারবাসীসহ দেশের বেশিরভাগ নাগরিকই রোহিঙ্গাদের মিয়ানমারে ফেরত পাঠাতে আগ্রহী। বছরের প্রথম দিকে বাংলাদেশ সরকার ও মিয়ানমারের মধ্যে এ সংক্রান্ত একটি প্রত্যাবাসন চুক্তিও স্বাক্ষরিত হয়। কিন্তু মিয়ানমার সরকারের গড়িমসির কারণে এখন পর্যন্ত এ চুক্তি বাস্তবায়ন করা সম্ভব হয়নি।
এদিকে রোহিঙ্গারা দীর্ঘদিন বাংলাদেশে থাকলে সামাজিক ও নিরাপত্তা সংকটের পাশাপাশি রাজনৈতিক সংকটের সূচনা হবে বলেও মনে করছেন রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা। দীর্ঘদিন এদেশে অবস্থান করলে তারা বেশি সুযোগ- সুবিধা ও চলাচলের স্বাধীনতা চাইবে৷ রাজনীতির সঙ্গে যুক্ত হলে এসব সুযোগ-সুবিধা পাওয়া সহজ হয় বলে তারা রাজনীতিতে অংশ নিতে চাইবে এবং রাজনৈতিক দলগুলোও এর সুযোগ নেবে।
কিন্তু শরণার্থী দিবসের প্রাক্কালে আজ সকালেই পররাষ্ট্র সচিব শহিদুল হক জানিয়েছেন, মিয়ানমারের নিরাপত্তা নিশ্চিত না হওয়ায় এখনই শুরু করা যাচ্ছে রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসন। অর্থ্যাৎ আরও দীর্ঘায়িত হতে যাচ্ছে রোহিঙ্গা সমস্যা।
এ বছরের শরণার্থী দিবস বাংলাদেশ, রোহিঙ্গা শরণার্থী কিংবা বিশ্বের অন্যান্য দেশের শরণার্থীদের জন্য কোনো আশার আলো নিয়ে আসেনি বলেই আপাতত মনে হচ্ছে।
এমটিনিউজ২৪.কম/হাবিব/এইচআর