শুক্রবার, ২০ জুলাই, ২০১৮, ১০:৫৩:৫২

যে পাঁচ কারণে এবার এইচএসসির ফল খারাপ

যে পাঁচ কারণে এবার এইচএসসির ফল খারাপ

পাঁচ কারণে এবার এইচএসসিতে তুলনামূলক ফলাফল খারাপ হয়েছে বলে মনে করেন শিক্ষা প্রশাসনের কর্মকর্তা ও শিক্ষাবিদরা।

যেসব কারণ উঠে এসেছে তার মধ্যে আছে: পরীক্ষা ব্যবস্থাপনায় বদল, হলে কড়াকড়ি, খাতা মূল্যায়নে ‘যথার্থতা’ বজায় রাখা, সংখ্যার বদলে মানের দিকে মনোযোগ দেয়া এবং ইংরেজি, আইসিটি ও বিজ্ঞান বিভাগের বিষয়গুলোতে পাসের হার কম থাকা।

চলতি বছর এইচএসসি ও সমনার পরীক্ষায় পাসের হার আগের বছরের তুলনায় ২.২৭ শতাংশ কমেছে। জিপিএ ফাইভ কমেছে আট হাজারের বেশি। শতভাগ পাস এমন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের সংখ্যাও ১৩২টি কমে হয়েছে ৪০০টি।

গত দুই বছর ধরেই পাসের হার জিপিএ ফাইভ কমছে। আগের বছর পাসের হার ৫.৭ শতাংশ এবং জিপিএ ফাইভ কমেছিল প্রায় ৩৯ শতাংশ।

সকালে প্রধানমন্ত্রীর হাতে ফলাফল তুলে দিয়ে শিক্ষামন্ত্রী নুরুল ইসলাম নাহিদ বলেন, শিক্ষার মানের দিকে তারা এখন বেশি মনযোগী। খাতা দেখায় এখন কড়াকড়ি আরোপ হয়েছে।

তবে ঢাকা মাধ্যমিক ও উচ্চ মাধ্যমিক শিক্ষা বোর্ডের চেয়ারম্যান মু. জিয়াউল হক আরও কিছু কারণ চিহ্নিত করেছেন। ঢাকাটাইমসকে তিনি বলেন, ‘এবার আসলে ফলাফল তুলনামূলক খারাপ হওয়ার পেছনে মূল কারণ হল পরীক্ষা ব্যবস্থাপনায় এবার পরিবর্তন আনা হয়েছে। কোনো ত্রুটি ছিল না।’

‘নতুন ব্যবস্থাপনার ফলে প্রশ্নফাঁস হয়নি। পরীক্ষা নিয়ে কোনো বিতর্কও দেখা দেয়নি। এটি একটি বড় কারণ ফলাফল খারাপের পেছনে।’

‘এছাড়া ইংরেজি, আইসিটি, পদার্থ, রসায়ন, উচ্চতর গণিতে গতবছরের চেয়ে পাসের হার কম। এসব বিষয় সার্বিক ফলাফলের উপর প্রভাব পড়েছে।’

মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা অধিদপ্তরের (মাউশি) মহাপরিচালক মাহবুবুর রহমান ঢাকাটাইমসকে বলেন, ‘শিক্ষার গুণগত মান নিশ্চিতের দিকে ঝুঁকছে সরকার। এটি প্রধান কারণ ফলাফল খারাপের পেছনে। এছাড়া আরও যেসব কারণ রয়েছে তার মধ্যে আছে: পরীক্ষার হলে কড়াকড়ি, প্রশ্নফাঁস না হওয়া এবং খাতা মূল্যায়নে যথার্থতা বজায়ে রাখা।’

শিক্ষামন্ত্রী নুরুল ইসলাম নাহিদ অবশ্য তাৎক্ষণিক কোনো মূল্যায়নে যেতে চাননি। তিনি বলেন, ‘আমরা দেখব। সংশ্লিষ্ট বোর্ডগুলোও দেখবে, মূল্যায়ন করবে। কেন খারাপ হলো, আমাদের বোর্ডগুলো দেখবে। প্রয়োজন হলে মন্ত্রণালয়গুলো দেখবে। আমরা সমস্যা চিহ্নিত করব।’

সবচেয়ে বেশি ফল খারাপ বিজ্ঞানে

প্রকাশিত এইচএসসি ও সমমানের ফল পর্যালোচনা করে দেখা যায়, এ বছর বিজ্ঞানে পাসের হার ৮১.৮২ শতাংশ। গত বছর এই হার ছিল ৮৮.৩৬ শতাংশ। অর্থাৎ বিজ্ঞানের পাসের হার কমেছে ৬.৫৪ শতাংশ।

মানবিক বিভাগে এবার পাসের হার ৫৫.২৩ শতাংশ, গত বছর তা ছিল ৫৬.৫৯ শতাংশ। অর্থাৎ এ বছর এই বিভাগে পাসের হার কমেছে ১.৩৬ শতাংশ।

বাণিজ্যে এ বছর পাসের হার ৭০.৫৭ শতাংশ এবং গত বছর ছিল ৭৪.৫০ শতাংশ। এ হিসাবে এ হার কমেছে ৩.৯৩ শতাংশ।

আর বিজ্ঞানের বিষয়গুলোর মধ্যে পদার্থ বিজ্ঞান বিষয়ে এবার পাসের হার ৮৬.১৫ শতাংশ। গত বছর এই হার ছিল ৯২.১৭।

রসায়নে পাসের হার ৯৪.৩৫ শতাংশ, গত বছর যা ছিল ৯৭.৫৮ শতাংশ; উচ্চতর গণিতে পাসের হার ৮৭.৫ শতাংশ, যা গত বছর ছিল ৯৫.৮৯ শতাংশ, জীববিজ্ঞানে পাসের হার ৯৪.৭ শতাংশ, যা গত বছর ছিল ৯৬.৯৩ শতংশ। আইসিটিতে এ বছর পাসের হার ৮২.৮৩ শতাংশ, গত বছর ছিল ৮৮.৫৪ শতাংশ।

শিক্ষামন্ত্রী ঢাকাটাইমসকে বলেন, ‘আমরা ভালো করে দেখে কারণ খুঁজে বের করব। আগে গণিতে, ইংরেজিতে বেশি পাস করতো না। আমরা ‘সেকাপ’ প্রকল্পের মাধ্যমে আলাদা শিক্ষক দিয়ে আলাদা ক্লাস করিয়েছি। আস্তে আস্তে সবাই তারা পাস করছে। একটা দিকে বাড়াতে গেলে আরেকটা দিকে চাপ পড়ে।’

‘এখন আমরা গুণগত মানের দিকটায় গুরুত্ব দিচ্ছি। আমরা ক্লাস নেওয়া ও ভালোভাবে পরীক্ষা নেওয়ার দিকে গুরুত্ব দিচ্ছি। ঠিকভাবে যেন খাতা দেখা হয়, সেদিকে নজর দিচ্ছি। যা বাস্তব, যা সত্য সেই ফল বেরিয়ে এসেছে। আমরা কাউকে নম্বর বাড়িয়ে দিতে বলি না, কমাতেও বলি না। আমরা শিক্ষকদের বাধ্য করছি সঠিক মূল্যায়নের।’

Follow করুন এমটিনিউজ২৪ গুগল নিউজ, টুইটার , ফেসবুক এবং সাবস্ক্রাইব করুন এমটিনিউজ২৪ ইউটিউব চ্যানেলে