শনিবার, ১৫ সেপ্টেম্বর, ২০১৮, ০৮:৩৩:২৫

লোকাল বাসে যাব, এতে কারো কোনো সমস্যা আছে : তারানা

লোকাল বাসে যাব, এতে কারো কোনো সমস্যা আছে : তারানা

নিউজ ডেস্ক:  লোকাল বাসে অফিস থেকে বাসায় ফেরার ঘটনায় সমালোচনাকারীদের উদ্দেশ্যে তথ্য প্রতিমন্ত্রী তারানা হালিম বলেছেন, ‘আমি যখনই সুযোগ পাব-লোকাল বাসে যাব। এতে কারো কোনো সমস্যা আছে?

শনিবার প্রতিমন্ত্রীর ভেরিফায়েড ফেসবুক পেজে ‘তারানা হালিমের লোকাল বাস যাত্রা- উদ্দেশ্য কি?’ শিরোনামে দীর্ঘ এক স্ট্যাটাসে তিনি এ কথা বলেন।

গত ১২ সেপ্টেম্বর দুপুরে তারানা হালিম সচিবালয়ে অফিস শেষে জিপিও মোড় থেকে ৬ নম্বর বাসে গুলশানের বাসভবনে ফিরেন। এ সংক্রান্ত একটি ভিডিও ভাইরাল হয় ফেসবুকে। এটা নিয়ে বিভিন্ন গণমাধ্যমে সংবাদও প্রচারিত হয়।

সংবাদের লিংঙ্ক ও ভিডিও তারানা হালিমের ফেসবুক পেজেও প্রকাশিত হলে সেখানে অনেকেই নেতিবাচক মন্তব্য করেন।

এর ধারাবাহিকতায় তথ্য প্রতিমন্ত্রী তার স্ট্যাটাসটি দেন। স্ট্যাটাসটি হুবহু তুলে ধরা হলো- পুরো লেখাটা পড়ে মন্তব্য করবেন প্লিজ। আমি তারানা হালিম- একজন মানুষ, বাবা-মার সন্তান, একজন মা, বিশ্ববিদ্যালয় থেকে রাজনীতি করি, পেশায় আইনজীবী (এমপি হবার পর থেকে ছেড়ে দিয়েছি আইন পেশা), ৯ম ও ১০ম সংসদের এমপি। এখন প্রতিমন্ত্রী। রাজনীতি আমার পেশা নয়। মানুষের জন্য কিছু করার বাসনা আর বঙ্গবন্ধুর আদর্শে উজ্জীবিত হয়েই রাজনীতির পথচলা। উত্তরাধীকারসূত্রে মোটামুটি স্বচ্ছল থাকার মতো অবস্থা আমার প্রয়াত বাবা-মা করে গেছেন। এমপি হিসেবে বরাদ্দকৃত সরকারি প্লটও নেইনি। এটুকু শুধু আমার ব্যাগগ্রাউন্ড জানার জন্য একটি ভূমিকা।

আমৃত্যু ঘুষ খাব না, মুক্তিযুদ্ধের সপক্ষের যোদ্ধা হিসেবে কাজ করবো, নীতির প্রশ্নে আপোষ করবো না, বঙ্গবন্ধু, শেখ হাসিনা ও দলকে ভালোবাসবো- এগুলো আমার আমৃত্যু নীতি-এর কোনো উদ্দেশ্য, বিধেয় নেই, এর মধ্যে প্রাপ্তি-অপ্রাপ্তির হিসেবও নেই। তৈল মর্দনের বদ মতলবও নেই। এটি সত্য। সত্য বলবই।

এত কথা লেখার কারণ হলো ‘তারানা হালিম এর লোকাল বাস যাত্রা’ নিয়ে অসংখ্য উৎসাহব্যঞ্জক কমেন্টের পাশাপাশি কয়েকটি মন্তব্যে আমার চোখ আটকে গেল- মন্তব্যগুলো দেখার আগে যে ভাবনা আমি ভাবিনি, আমার সে সব না ভাবা ভাবনাগুলো নিয়ে মানুষ ভাবলো কিভাবে? নেতিবাচক সমালোচনার কয়েকটি হলো- ‘নির্বাচনের আগে স্ট্যান্টবাজি’, ‘অভিনয়’, ‘আবার মন্ত্রী হতে চায়’, ‘এক বাসে চড়েই এত কিছু পাওয়া যায় নাকি? জানতাম না তো!!’

এবার আসল কথাগুলো লিখি- ৫ বছর আগে ‘সড়ক নিরাপত্তা’ বিষয়ক জনসচেতনতা সৃষ্টির জন্য আমি, আমার বোন ও আমার বোনের গড়া সংগঠনের সদস্যরা প্রেস ক্লাব থেকে আমিনবাজার পর্যন্ত হেঁটে গেছি। শ্যামলীর কাছাকাছি যেতে আমার পায়ের গোড়ালির উপরের লিগামেন্ট ছিঁড়ে যায় (এখনও শক্ত হয়ে গোল হয়ে আছে) অসহ্য ব্যথা হচ্ছিল তার পরও রিকশা বা ভ্যানে চড়িনি। হেঁটে গেছি আমিনবাজার ব্রিজ পর্যন্ত। কারণ আমি বলেছিলাম ‘হেঁটেই যাবো’।

৫ বছর আগেই মহান জাতীয় সংসদে সড়ক নিরাপত্তা বিষয়ক ৭১ বিধির নোটিশ দেই, সিদ্ধান্ত প্রস্তাব গৃহীত হয়। আমরা আইনমন্ত্রীর কাছে বিভিন্ন প্রস্তাবও দেই। যোগাযোগমন্ত্রীর কাছে ‘ব্ল্যাক স্পট’ চিহ্নিত করার প্রস্তাব দিলে দ্রুতার সাথে তিনি তা ঠিক করে দেন।

আমি যখন মহান জাতীয় সংসদে ‘হিজরাদের থার্ড জেন্ডার’ হিসাবে স্বীকৃতি দেবার দৃষ্টি আকর্ষণী বিল আনি-এর আগে দুই দিন সকাল থেকে দুপুর পর্যন্ত ওদের বস্তিতে বসে থেকেছি। জানি না, কোথা থেকে অসম্ভব চুলকানি শুরু হলো। ওরা বললো- ঘুণে ধরা বাঁশ থেকে কণা ওড়ে, তাতে অভ্যাস না থাকলে চুলকানি হয়। তাদের জীবনযাত্রা দেখার পরই নোটিশটি দিয়েছিলাম।

সোজা বিষয়কে সোজা হিসেবে দেখতে ভুলে যাচ্ছি কি আমরা? সব কাজের পেছনেই কি জটিল উদ্দেশ্য থাকতে হবে? বাচ্চারা যখন সড়ক নিরাপত্তার জন্য কাজ করছিল তখন অনেক বাচ্চারা পোস্ট দিয়েছিল মন্ত্রী, এমপিরা তো পাবলিক বাসে চড়ে না- কষ্ট বুঝবে কি করে।

রাজনীতিবিদরা কষ্ট বোঝেন দেখেই সড়ক তৈরি হয়, দাবি পূরণ হয়, ব্রিজ হয়, দেশ এগিয়ে যায়। দেশ স্বাধীনও কিন্তু ছিল একটি রাজনৈতিক সংগ্রাম। আমাদের জন্য বঙ্গবন্ধু ১৫ বছর জেলের জীবন বেছে নিয়েছিলেন। আমরা যারা রাজনীতি করেছি এসি রুমে বসে করিনি- রোদে হেঁটেছি সবাই, ট্রাকে চেপে মাইলের পর মাইল গেছি, কখনো পুলিশের তাড়া খেয়েছি, রাসেল স্কয়ার-বঙ্গবন্ধু এভিনিউতে সারাদিন না খেয়ে থেকেছি সবাই। বঙ্গবন্ধু কন্যা এহেন গ্রাম নেই যেখানে যাননি। কখনো তিনি পায়ে হেঁটেছেন, কখনো নৌকায় চড়েছেন-কষ্ট করেই রাজনীতি করেছেন । ’৪৭-’৫২ এর ভাষা আন্দোলন, ৭১ এর মুক্তিযুদ্ধ সব দীর্ঘ দিনের রাজনৈতিক সংগ্রামেরই ফসল। কিন্ত সমাজের সব ক্ষেত্রে কিছু ব্যতিক্রমও আছে সেটাও স্বীকার করবো।

আমি কিছু তথ্য দিয়ে রাখি- সেদিন লোকাল বাসে কোন সাংবাদিক আমার সাথে ছিলেন না। যাত্রীরা খুশি হয়ে সেলফি তুলেছেন। ফেসবুকে ভাইরাল হয়েছে। সাংবাদিকরা অফিসে থাকা আমার পিআরও কে ফোন দিয়েছে। উনি কথা বলেছেন। অনেক সাংবাদিক আমাকে ফোন দিয়েছেন। আমি সত্যটাই বলেছি যে-হ্যাঁ চড়েছি। বাসের আসনে তেল চিটচিটে কভারটা পরিবর্তন করার, ইন্ডিকেটর লাইট ঠিক করার অনুরোধটা মালিককে বলার জন্য চালককে অনুরোধ করেছি।

এবার আমার যেহেতু একটি ফেসবুক পেজ আছে-তাই আমিও লিখতে পারি এমন দাবি থেকে ক’টি প্রশ্ন করি-
* আমি যখনই সুযোগ পাবো-লোকাল বাসে যাবো। কারো কোনো সমস্যা আছে?
* আমার কলিগরাও খুশি হয়েছেন। এতে অন্য কারো কোন সমস্যা আছে?
* ছাত্ররা চেয়েছিল- ওই পোস্ট দেখে আমি লোকাল বাস এ চড়ে দেখেছি-সময় বেশি লাগে, বেশ গরম, ভেতরটা পরিচ্ছন্ন নয়। দেখাটা অন্যায় হয়েছে?
* আপনারা চেয়েছিলেন পাবলিক বাসে আমরা চড়ি-চড়েছি- ‘কথা শুনলেও দোষ, না শুনলেও দোষ’?
* যখন প্রায়ই আমি লোকাল বাসে যাতায়াত করবো-মন্ত্রী থাকলেও করবো, না থাকলেও করবো, এমপি থাকলেও করবো, না থাকলেও করবো...সমস্যা আছে?

Follow করুন এমটিনিউজ২৪ গুগল নিউজ, টুইটার , ফেসবুক এবং সাবস্ক্রাইব করুন এমটিনিউজ২৪ ইউটিউব চ্যানেলে