সোমবার, ২৪ সেপ্টেম্বর, ২০১৮, ১২:৩০:০২

এবার চিন্তা দ্বিতীয় পদ্মা সেতু

এবার চিন্তা দ্বিতীয় পদ্মা সেতু

মানিক মুনতাসির: দ্রুততম সময়ের মধ্যে দ্বিতীয় পদ্মা সেতুর কাজ শুরুর পরিকল্পনা নিয়েছে সরকার। বৃহৎ এই প্রকল্পে বিনিয়োগে আগ্রহ দেখিয়েছে বিশ্বব্যাংক ও এশীয় উন্নয়ন ব্যাংক (এডিবি)। ঢাকা সফররত বিশ্বব্যাংকের এশীয় অঞ্চল বিষয়ক ভাইস প্রেসিডেন্ট হার্টউইগ শাফার এ বিষয়ে অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিতের সঙ্গে আলোচনা করতে আগ্রহী বলে জানা গেছে। তাঁর ছয় দিনের ঢাকা সফরে পদ্মা সেতু, রোহিঙ্গা ইস্যুসহ আরও কয়েকটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয়ে আলোচনা হবে অর্থমন্ত্রীর সঙ্গে।

অর্থবিভাগ সূত্রে জানা গেছে, গত ফেব্রুয়ারি-মার্চে ঢাকা সফরের সময় এডিবির প্রেসিডেন্ট তাকিহিকো নাকাও দ্বিতীয় পদ্মা সেতুতে বিনিয়োগে আগ্রহের কথা জানান। পরে সরকারের পক্ষ থেকে আনুষ্ঠানিক প্রস্তাবও দেওয়া হয়েছে। সেই প্রস্তাবে সংস্থাটি ইতিবাচক সাড়া দিয়েছে। 

এদিকে বিশ্বব্যাংকও এমন বৃহৎ প্রকল্প বাস্তবায়নে বাংলাদেশের সঙ্গে থাকার আগ্রহ দেখিয়েছে। এমনকি প্রথম পদ্মা সেতুতে নানা কারণে বিনিয়োগ থেকে সরে দাঁড়ানোকেও অনভিপ্রেত বলে মনে করে সংস্থাটি। এ জন্য দ্বিতীয় পদ্মা সেতু নির্মাণের অংশীদার হতে চায় বিশ্বব্যাংক।

জানা গেছে, একক বৃহৎ প্রকল্প হিসেবে দ্বিতীয় পদ্মা সেতুতে অর্থায়নের ব্যাপারে বাংলাদেশ সরকার আনুষ্ঠানিক প্রস্তাব দিলে এডিবিও তাতে ইতিবাচক সাড়া দিয়েছে। এর আগে প্রকল্পটির সম্ভাব্যতা যাচাইয়ের কাজটিও করেছে এডিবি। সম্ভাব্যতা যাচাইয়ের প্রতিবেদন অনুযায়ী, পদ্মা নদীর ওপর পাটুরিয়া-গোয়ালন্দ পয়েন্টে দ্বিতীয় পদ্মা সেতু নির্মাণ করা হবে। 

আসছে ২০১৯-২০ বাজেটে এ প্রকল্পের জন্য পৃথকভাবে বরাদ্দ রাখার কথাও জানিয়েছেন অর্থমন্ত্রী। অবশ্য বর্তমান সরকার দ্বিতীয় মেয়াদে দায়িত্ব নেওয়ার প্রথমদিকে ৬ দশমিক ১০ কিলোমিটার দৈর্ঘ্যের রেলপথসহ মানিকগঞ্জের পাটুরিয়া ও রাজবাড়ী জেলার দৌলতদিয়া পয়েন্টে পাবলিক প্রাইভেট পার্টনারশিপের ভিত্তিতে (পিপিপি) দ্বিতীয় পদ্মা সেতু বাস্তবায়ন করার পরিকল্পনা নিয়েছিল।

এদিকে এ সেতুর অর্থায়ন এবং নির্মাণের জন্য আন্তর্জাতিক দরপত্র আহ্বানে ইতিমধ্যে দু-তিনটি বিদেশি কোম্পানি সাড়া দিয়েছে। আর বিনিয়োগের জন্য বিশ্বব্যাংক ও এডিবি আগ্রহ দেখিয়েছে। তবে পিপিপির ভিত্তিতে প্রকল্পটি বাস্তবায়নের সম্ভাবনা এখনো ফুরিয়ে যায়নি। কেননা সরকারের পরিকল্পনা অনুযায়ী আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচনের আগেই ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন ও টানা তৃতীয় মেয়াদে সরকার গঠনের শুরুতেই প্রকল্পটির মূল কাজ চালুর পরিকল্পনা করছে আওয়ামী লীগ সরকার। এতে প্রকল্পের কাজ শুরু হওয়ার পরও কোনো দেশি বা বিদেশি কোম্পানি কিংবা সংস্থা চাইলে পরবর্তীতে পিপিপি ভিত্তিতে এর নির্মাণে অংশীদার বা বিনিয়োগকারী হওয়ার পথ খোলা রাখছে সরকার। 

২০১১ সালের ২৭ অক্টোবর অর্থনৈতিক বিষয় সংক্রান্ত মন্ত্রিসভা কমিটি অনুমোদন দেয় দ্বিতীয় পদ্মা সেতু প্রকল্প। ২০১৩ সালের শুরুতে এ প্রকল্পের কাজ শুরু হওয়ার কথা থাকলেও তা করা যায়নি বিনিয়োগকারীর অভাবে। ফলে দ্বিতীয় পদ্মা বহুমুখী সেতুর অর্থায়ন এবং নির্মাণের জন্য আন্তর্জাতিক দরপত্র আহ্বান করা হয় গত ২০১১ সালের ৪ নভেম্বর। বৃহৎ এ প্রকল্পটি নির্মাণের প্রাক্কলিত ব্যয় ধরা হয় ১৩ হাজার ১২১ কোটি ৩৮ লাখ টাকা। 

দ্বিতীয় পদ্মা সেতু বাস্তবায়িত হলে দেশের দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের ১৩টি জেলার প্রায় ৫ কোটি মানুষের যাতায়াত সুবিধাসহ তাদের আর্থ-সামাজিক উন্নয়নের সহায়ক হবে বলে সংশ্লিষ্ট মহলের অভিমত। চলমান প্রথম পদ্মা সেতু নির্মাণ প্রকল্প মাওয়া-জাজিরার কাজ এগিয়ে চলছে দ্রুত গতিতে। ২০১৮ সালের ডিসেম্বরে সেতুর কাজ শেষ হওয়ার কথা থাকলেও নির্মাতা প্রতিষ্ঠান আরও অতিরিক্ত চার বছর সময়ে চেয়েছে। প্রথমটির মতো দ্বিতীয় সেতুতেও গাড়ির পাশাপাশি একই সঙ্গে রেল সংযোগও চালু থাকবে।-বিডি প্রতিদিন

Follow করুন এমটিনিউজ২৪ গুগল নিউজ, টুইটার , ফেসবুক এবং সাবস্ক্রাইব করুন এমটিনিউজ২৪ ইউটিউব চ্যানেলে