বুধবার, ১৪ নভেম্বর, ২০১৮, ১২:৪৭:৩০

আওয়ামী লীগ ছাড় দেবে সর্বোচ্চ ৭০ আসন

আওয়ামী লীগ ছাড় দেবে সর্বোচ্চ ৭০ আসন

নিউজ ডেস্ক: ১৪ দল ও মহাজোটের শরিকদের জন্য ৬০ থেকে ৭০টি আসন ছাড়বে ক্ষমতাসীন দল আওয়ামী লীগ। অবশ্য আরও কয়েকটি আসনে ছাড় পেতে দলটির নীতিনির্ধারক নেতাদের সঙ্গে যোগাযোগ রাখছেন জাতীয় পার্টি, ওয়ার্কার্স পার্টি, জাসদ, যুক্তফ্রন্ট, জেপি, বিএনএফ, তরীকত ফেডারেশন, বিএনএ, ইসলামিক ডেমোক্রেটিক অ্যালায়েন্স, সাম্যবাদী দল, গণতন্ত্রী পার্টি, কমিউনিস্ট কেন্দ্র, জাকের পার্টি, এনডিএ এবং ইসলামিক ফ্রন্টের নেতারা।

এদিকে ৩০০ আসনে দলীয় প্রার্থীর তালিকা চূড়ান্ত করলেও আপাতত আনুষ্ঠানিকভাবে সবার নাম ঘোষণা না করার আগাম সিদ্ধান্ত নিয়েছে আওয়ামী লীগ। বর্তমানে ১৪ দলীয় জোট এবং মহাজোটগতভাবে চূড়ান্ত প্রার্থী তালিকা ঘোষণা করার সিদ্ধান্ত রয়েছে। একইসঙ্গে কোনো কারণে প্রার্থিতা নিয়ে সংকট তৈরি হলে ৩০০ আসনে দলের প্রার্থী তালিকা ঘোষণারও প্রস্তুতি রয়েছে।

আওয়ামী লীগের বেশ কয়েকজন শীর্ষ নেতা জানিয়েছেন, জনপ্রিয় প্রার্থী ছাড়া কাউকেই ১৪ দল কিংবা মহাজোটের মনোনয়ন দেওয়া হবে না। জনপ্রিয় প্রার্থী বাছাইয়ে সমমনা রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে নানামুখী আলাপ-আলোচনা শুরু হয়েছে। সেক্ষেত্রে প্রথমেই প্রাধান্য পাচ্ছে ১৪ দলভুক্ত রাজনৈতিক দলগুলো। ১৪ দলের মধ্যে ৬টি আসনে ওয়ার্কার্স পার্টি এবং ৫টি আসনে জাসদের প্রার্থীরা মনোনয়ন পাবেন।

এ ছাড়া পরিবেশ, বন ও জলবায়ু পরিবর্তনবিষয়ক মন্ত্রী আনোয়ার হোসেন মঞ্জুর নেতৃত্বাধীন জাতীয় পার্টি-জেপি এবং সৈয়দ নজিবুল বশর মাইজভাণ্ডারীর নেতৃত্বাধীন তরীকত ফেডারেশন দুটি করে আসনে মহাজোটের মনোনয়ন পাবে। সাবেক মন্ত্রী দিলীপ বড়ূয়ার নেতৃত্বাধীন সাম্যবাদী দল, ব্যারিস্টার আরশ আলীর নেতৃত্বাধীন গণতন্ত্রী পার্টি এবং ডা. ওয়াজেদুল ইসলাম খানের নেতৃত্বাধীন কমিউনিস্ট কেন্দ্রও কয়েকটি আসনে ১৪ দলের মনোনয়ন প্রত্যাশা করছে। আওয়ামী লীগের কাছে জাতীয় পার্টির নেতারা ৭৬টি আসনে মনোনয়ন প্রত্যাশা করছেন। কিন্তু ১২ থেকে ১৫টি আসনে জাতীয় পার্টির জনপ্রিয় প্রার্থী রয়েছেন বলে আওয়ামী লীগের শীর্ষ নেতারা মনে করছেন। তবে আওয়ামী লীগের সমর্থন পেলে ২২ থেকে ২৭টি আসনে জাতীয় পার্টির প্রার্থী নির্বাচিত হতে পারবেন বলে ধারণা করা হচ্ছে। ওই আসনগুলোতেই জাতীয় পার্টির প্রার্থীরা আওয়ামী লীগের নেতৃত্বাধীন মহাজোটের মনোনয়ন পেতে পারেন।

তবে জাতীয় পার্টির শীর্ষ নেতারা তা মানতে চাচ্ছেন না। খুব দ্রুতই তারা এ নিয়ে প্রধানমন্ত্রী ও আওয়ামী লীগ সভাপতি শেখ হাসিনার সঙ্গে কথা বলবেন বলে জানা গেছে। ২২ থেকে ২৭টি আসনে জাতীয় পার্টির প্রার্থীদের অবস্থান ভালো থাকলেও পার্টির নীতিনির্ধারক নেতাদের অনেকের অবস্থা খুব একটা সংহত নয়। এই নেতাদের মহাজোটের মনোনয়ন দেওয়ার জন্য চেষ্টা-তদবির করা হচ্ছে। সেই ক্ষেত্রে কয়েকটি আসন বাড়তে পারে বলে ধারণা করা হচ্ছে।

বিকল্পধারার মহাসচিব মেজর (অব.) আবদুল মান্নান ও সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব মাহি বি চৌধুরী আসন ভাগাভাগি নিয়ে আওয়ামী লীগ নেতাদের সঙ্গে দর-কষাকষি করছেন। এই দুই নেতা গতকাল মঙ্গলবার আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদেরের সঙ্গে কথা বলেন। বিকল্পধারার নেতৃত্বাধীন যুক্তফ্রন্ট ১০টি আসনে মনোনয়ন প্রত্যাশা করছে। এ ক্ষেত্রে আওয়ামী লীগ আবারও সরকার গঠন করতে পারলে বাড়তি সুযোগের অঙ্গীকার চাচ্ছে বিকল্পধারা।

জাকের পার্টির চেয়ারম্যান পীরজাদা মোস্তফা আমীর ফয়সল মোজাদ্দেদীও গতকাল আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক এবং সড়ক যোগাযোগ ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদেরের সঙ্গে কথা বলেছেন। এ সময় আওয়ামী লীগের সঙ্গে জোটবদ্ধ হয়ে নির্বাচন করার বিষয়ে আগ্রহ প্রকাশ করেছেন জাকের পার্টির চেয়ারম্যান। ক্ষমতাসীন দলটির কয়েকজন নেতা বলেছেন, জাকের পার্টির একজন প্রার্থী মহাজোটের মনোনয়ন পেতে পারেন।

ব্যারিস্টার নাজমুল হুদার নেতৃত্বাধীন বাংলাদেশ ন্যাশনালিস্ট অ্যালায়েন্স (বিএনএ), আবুল কালাম আজাদের নেতৃত্বাধীন বাংলাদেশ ন্যাশনালিস্ট ফ্রন্ট (বিএনএফ), মিছবাহুর রহমান চৌধুরীর নেতৃত্বাধীন ইসলামিক ডেমোক্রেটিক অ্যালায়েন্স, সৈয়দ বাহাদুর শাহের নেতৃত্বাধীন ইসলামিক ফ্রন্ট এবং আলমগীর মজুমদারের নেতৃত্বাধীন ন্যাশনাল ডেমোক্রেটিক অ্যালায়েন্সের (এনডিএ) পক্ষ থেকে নূ্যনতম একটি করে আসনে মহাজোটের মনোনয়ন প্রত্যাশা করা হচ্ছে।

এদিকে আসন বণ্টন নিয়ে সোমবার প্রধানমন্ত্রীর সরকারি বাসভবন গণভবনে আওয়ামী লীগের সংসদীয় বোর্ডের সর্বশেষ বৈঠকে অল্প-বিস্তর আলোচনা হয়। তবে কোনো সিদ্ধান্ত হয়নি। ওই বৈঠকে নেতারা ৩০০ আসনে দলের সম্ভাব্য প্রার্থীদের নিয়ে তৈরি করা বিভিন্ন জরিপ প্রতিবেদনের ওপর বিশদ আলোচনা করেন। তবে দলের প্রার্থী তালিকা চূড়ান্ত করা নিয়ে কোনো সিদ্ধান্ত হয়নি।

এ প্রসঙ্গে জানতে চাইলে আওয়ামী লীগ সংসদীয় বোর্ডের সদস্য ও দলের সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য কাজী জাফর উল্লাহ জানান, ১৪ দলীয় জোট কিংবা মহাজোটগত প্রার্থীর তালিকা চূড়ান্ত করা নিয়ে এখনও কোনো সিদ্ধান্ত হয়নি। আওয়ামী লীগের প্রার্থী তালিকা চূড়ান্ত করার পর এই নিয়ে ১৪ দল ও মহাজোট নেতাদের আনুষ্ঠানিক আলোচনা শুরু হবে।

আওয়ামী লীগ সংসদীয় বোর্ডের অপর সদস্য এবং দলের সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য লে. কর্নেল (অব.) ফারুক খান জানান, প্রধানমন্ত্রী ও দলের সভাপতি শেখ হাসিনা আজ বুধবার ৩০০ আসনে দলের মনোনয়নপ্রত্যাশী নেতাদের সঙ্গে কথা বলে প্রয়োজনীয় দিকনির্দেশনা দেবেন। এরপর কাল বৃহস্পতিবার শুরু হবে দলগতভাবে চূড়ান্ত প্রার্থী বাছাইয়ের কার্যক্রম।

জানা যায়, আওয়ামী লীগের মনোনয়নপ্রত্যাশী ৪ হাজার ২৩ নেতাকে আজ সকাল ১১টায় প্রধানমন্ত্রীর ধানমণ্ডির রাজনৈতিক কার্যালয়ে আসার জন্য অনুরোধ করা হয়েছে। সেখানে তাদের সঙ্গে সংক্ষিপ্ত কথা বলবেন দলের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের। পরে তিনি গণভবনে গিয়ে প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে দেখা করার জন্য মনোনয়নপ্রত্যাশীদের প্রতি আহ্বান জানাবেন। প্রধানমন্ত্রী দলের মনোনয়নপ্রত্যাশীদের উদ্দেশে দিকনির্দেশনামূলক ভাষণ দেওয়ার পর তাদের গণভবনে মধ্যাহ্নভোজে আমন্ত্রণ জানাবেন।

এদিকে আওয়ামী লীগের কয়েকজন নেতা বলেছেন, ৩০০ আসনে দলের প্রার্থী তালিকা চূড়ান্ত করতে আগামীকাল বৃহস্পতিবার থেকে সংসদীয় বোর্ডের ধারাবাহিক বৈঠক শুরু হবে। এই কার্যক্রম শেষ হওয়ার পর ১৪ দল ও মহাজোটের নেতাদের সঙ্গে বৈঠক হবে বলে জানিয়েছেন লে. কর্নেল (অব.) ফারুক খান। তিনি বলেছেন, দলগত মূল্যায়নের পর জোটগতভাবে প্রার্থী তালিকা চূড়ান্ত করা হবে।
সূত্র: সমকাল

Follow করুন এমটিনিউজ২৪ গুগল নিউজ, টুইটার , ফেসবুক এবং সাবস্ক্রাইব করুন এমটিনিউজ২৪ ইউটিউব চ্যানেলে