বৃহস্পতিবার, ১৫ নভেম্বর, ২০১৮, ১১:০৪:২৫

কয়েকজনকে আবার ডাকবে বোর্ড

কয়েকজনকে আবার ডাকবে বোর্ড

নিউজ ডেস্ক: একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের জন্য আওয়ামী লীগের মনোনয়ন প্রত্যাশীদের সাক্ষাৎকার অনুষ্ঠিত হয়েছে গতকাল বুধবার। তবে মনোনয়ন বোর্ডের সাক্ষাৎকারগুলো সাধারণত যেভাবে অনুষ্ঠিত হয় গতকাল তেমন কিছু হয়নি। সাক্ষাৎকার প্রার্থীদের সামনে দলের সভাপতি ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা মূলত দিক নির্দেশনামূলক বক্তব্য রেখেছেন। এরপর আজ বৃহস্পতিবার বিকেলে আওয়ামী লীগের প্রার্থী বাছাই প্রক্রিয়ার ধারাবাহিকতায় দলটির মনোনয়ন কমিটির নীতিনির্ধারণী বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়েছে। কোন কোন বিষয়ের ভিত্তিতে মনোনয়ন দেওয়া হবে, শরিকদের জন্য কত আসন ছাড় দেওয়া হবে সেখানে এসব বিষয় নিয়ে আলোচনা হয়। আওয়ামী লীগের দায়িত্বশীল সূত্রগুলো বলছে, বৈঠকে দলটির মনোনয়ন বোর্ড মনোনয়ন প্রত্যাশীদের তিন ধরনের দলের আলাদা আলাদা সাক্ষাৎকার গ্রহণের সিদ্ধান্ত গ্রহণ করেছে। এর মধ্যে একটি দলের সঙ্গে প্রধানমন্ত্রী ও আওয়ামী লীগ সভাপতি শেখ হাসিনা বিশেষভাবে বসবেন।

এই তিনটি দল হলো:

১। এবারের নির্বাচনে শরিকদের সঙ্গে আসন ভাগাভাগির জন্য আওয়ামী লীগের অনেক জনপ্রিয় মনোনয়ন প্রত্যাশীকে মনোনয়ন দেওয়া যাবে না। তাঁদেরকে শরিকদের জন্য আসন ছেড়ে দিতে হবে। শরিকদের জন্য যাঁদের মনোনয়ন দেওয়া যাবে না, তাঁরা হচ্ছেন সাক্ষাৎকার পর্বে মনোনয়ন প্রত্যাশীদের প্রথম দল। তাদের ডেকে বৃহত্তর স্বার্থে দলের জন্য ত্যাগ স্বীকারের নির্দেশ দেওয়া হবে।

২। একই আসনে একাধিক যোগ্য ও জনপ্রিয় প্রার্থী থাকলে কৌশলগত কারণে একজনকে বাদ দিয়ে আরেকজনকে মনোনয়ন দিতে হবে। কৌশলগত কারণে যাঁদেরকে বাদ দেওয়া হবে তাঁরা সাক্ষাৎকার পর্বের দ্বিতীয় দল। এখানেও তাদের সান্ত্বনা দেওয়া হবে এবং দলের স্বার্থে ঐক্যবদ্ধ ভাবে কাজ করার জন্য অনুরোধ করা হবে। ভবিষ্যতে ক্ষমতায় এলে তাঁদের মূল্যায়ন করা হবে।

৩। আওয়ামী লীগের অনেক প্রবীণ ও সিনিয়র নেতা আছেন যাঁদের বার্ধক্য ও অসুস্থতার কারণে মনোনয়ন দেওয়া হবে না। সিনিয়র নেতাদের এই দলটি তৃতীয় দল।

আওয়ামী লীগের সূত্রগুলো বলছে, শরিকদের জন্য এবার আওয়ামী লীগ ৫০টি থেকে ৭০টি আসন ছেড়ে দেবে। এর মধ্যে এমন কিছু আসনও আছে যেখানে আওয়ামী লীগের প্রার্থী দাঁড়ালে তাদের বিজয় সুনিশ্চিত ছিল। কিন্তু তারপরও বৃহত্তর ঐক্যের স্বার্থে আওয়ামী লীগ এসব আসনে নিজেদের প্রার্থী না দিয়ে শরীকদের প্রার্থী হওয়ার সুযোগ দেবে। যেসব জনপ্রিয় প্রার্থীকে মনোনয়ন দেওয়া হবে না তাঁদেরকে মনোনয়ন বোর্ড ডাকবে এবং এলাকায় শরীক দলগুলোর প্রার্থীদের সমর্থন দেওয়ার জন্য ও তাঁদের সমর্থনে কাজ করার জন্য অনুরোধ করবে। 

এছাড়া একই এলাকায় সমান সংখ্যক জনপ্রিয় দুজন প্রার্থী থাকলে কৌশলগত কারণে একজনকে মনোনয়ন দেওয়া সম্ভব হবে না। ওই আসনে বিএনপি প্রার্থীর সঙ্গে প্রতিদ্বন্দ্বিতায় কে ভালো করবে সে বিবেচনায় তুলনামূলক শক্তিশালী প্রার্থীকে মনোনয়ন দেওয়া হবে। এক্ষেত্রে যে মনোনয়ন প্রত্যাশীকে মনোনয়ন দেওয়া হবে না তাঁকে ডেকে সম্মানিত করা হবে এবং আওয়ামী লীগের মনোনীত প্রার্থীর পক্ষে কাজ করার জন্য বোঝানো হবে।

প্রবীণ নেতাদেরও এবার বাদ দেওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছে আওয়ামী লীগ। যেহেতু আসন্ন নির্বাচনটি হতে যাচ্ছে প্রতিনিধিত্বপূর্ণ একটি নির্বাচন এবং তরুণদের ভোট হতে যাচ্ছে এবারের নির্বাচনের বড় একটি ফ্যাক্টর, তাই কয়েকজন প্রবীণ নেতাকে এবার মনোনয়ন না দেওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছে আওয়ামী লীগ। এই বাদ পড়া প্রবীণদের প্রধানমন্ত্রী নিজে ডেকে সম্মানিত করবেন। প্রধানমন্ত্রী ও আওয়ামী লীগ সভাপতি শেখ হাসিনা দলে তাঁদের অবদানের কথা স্মরণ করবেন এবং নিজ নিজ এলাকায় আওয়ামী লীগের প্রার্থীদের পক্ষে কাজ করার জন্য অনুরোধ করবেন।

এবারের নির্বাচনে আওয়ামী লীগের জন্য সবচেয়ে বড় চ্যালেঞ্জ হতে যাচ্ছে শরিকদের সঙ্গে সমন্বয় রক্ষা করে দলের নেতাকর্মীদের শরীক প্রার্থীদের পক্ষে কাজ করতে উদ্বুদ্ধ করা। কারণ আওয়ামী লীগ একটি বড় সংগঠন এবং সাংগঠনিকভাবে দলটি অনেক শক্তিশালী। আওয়ামী লীগ নেতৃত্বাধীন মহাজোটের কোনো দলই তাদের মতো শক্তিশালী নয়। তাই স্থানীয় আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীদের সমর্থন না পেলে দলগুলোর প্রার্থীদের জন্য বিজয়ী হওয়া খুব কঠিন হয়ে যাবে যা শেষ পর্যন্ত আওয়ামী লীগের নির্বাচনী ফলাফলেই প্রভাব ফেলবে। অতীতে ২০০১ ও ২০০৮ এর নির্বাচনেও  দেখা গেছে আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীরা শরিকদের পক্ষে কাজ করেনি। ২০০১ সালের নির্বাচনে আওয়ামী লীগ পরাজিত হয়। পরবর্তীতে ২০০৮ সালে জাসদের হাসানুল হক ইনুকে কুষ্টিয়ায় এবং বাংলাদেশ ওয়ার্কার্স পার্টির রাশেদ খান মেননকে ঢাকায় মনোনয়ন দেওয়া হলে তাঁদের পক্ষে কাজ করেননি আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীরা। এছাড়া ওয়ার্কার্স পার্টির ফজলে হোসেন বাদশাকে রাজশাহীতে মনোনয়ন দেওয়া হলে তাঁর পক্ষেও কাজ করেনি স্থানীয় আওয়ামী লীগ। তাই দলটি এবার সর্বোচ্চ চেষ্টা করছে এমন সংহতি সৃষ্টি করতে যাতে শরীকদের বরাদ্দ করা আসনগুলোও আওয়ামী লীগের আসন বলে গণ্য হয়।

আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের মনোনয়ন প্রসঙ্গে বলেছেন, যেহেতু ২৮ নভেম্বর পর্যন্ত মনোনয়ন পত্র জমা দেওয়ার শেষ তারিখ তাই তার আগেই সম্ভাব্য প্রার্থীদের সবুজ সংকেত দিয়ে দেওয়া হবে। এতে এই সময়ের মধ্যে প্রার্থীরা মনোনয়ন পত্র সংগ্রহ করতে বা নির্বাচনের আগাম প্রস্তুতি গ্রহণ করতে পারবেন।
সূত্র: বাংলা ইনসাইডার

Follow করুন এমটিনিউজ২৪ গুগল নিউজ, টুইটার , ফেসবুক এবং সাবস্ক্রাইব করুন এমটিনিউজ২৪ ইউটিউব চ্যানেলে