নিউজ ডেস্ক: রাজনৈতিক অঙ্গনে বহুল আলোচিত এবং সমালোচিত হুসেইন মুহম্মদ এরশাদের সাবেক স্ত্রী বিদিশা। বর্তমানে রাজনীতি থেকে বহুদূরে থাকলেও একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনকে সামনে রেখে তিনি সক্রিয় হতে চান রাজনীতির মাঠে।
বিদিশার ঘনিষ্ঠ একটি সূত্র জানায়, এরশাদের বিরুদ্ধে নির্বাচন করবেন সাবেক স্ত্রী বিদিশা! এরশাদকে মোকাবিলা করার জন্য বিদিশার আগ্রহ এরশাদ যেখানে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করবেন সেখান থেকেই তিনি প্রার্থী হতে পারেন। বিদিশা বর্তমানে ভারতের দাজিলিংয়ে অবস্থান করছেন। সেখান থেকে ফিরেই নির্বাচনের ব্যাপারে সিদ্ধান্ত নেবেন তিনি।
এরশাদের সঙ্গে ছাড়াছাড়ির পর রাজনীতির মাঠে নিজেকে প্রতিষ্ঠিত করতে বহু চেষ্টা চালিয়েছেন বিদিশা। রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের বাংলার অধ্যাপক কবি আবু বকর সিদ্দিকের বড় কন্যা বিদিশা সিদ্দিকী। এরশাদকে বিয়ে করার সুবাদে জাতীয় পার্টির রাজনীতিতে সক্রিয় হয়েছিলেন তিনি। একসময় পার্টি চেয়ারম্যানের উপদেষ্টার পদও বাগিয়ে নিয়েছিলেন।
জাতীয় পার্টিকে তরুণ প্রজন্মের কাছে আকৃষ্ট করতে নানামুখী পদক্ষেপের অংশ হিসেবে জাতীয় পার্টির রিসার্চ সেল খুলেছিলেন। যার মূল নেতৃত্বে ছিলেন বিদিশা। একসময়ে জাতীয় পার্টির রাজনীতির নিয়ন্ত্রকও ছিলেন এই বিদিশা। কিন্তু বিধিবাম এরশাদ পরিবারের কেউ বিদিশার রাজনীতিতে আসার বিষয়টি সহজভাবে মেনে নিতে পারেননি।
এরশাদ পরিবার থেকেই এনিয়ে শুরু হয় গৃহবিবাদ। পরবর্তীতে বিদিশার সঙ্গে এরশাদের বড় স্ত্রী বেগম রওশন এরশাদ এবং ভাই জি. এম. কাদের এর দ্বন্দ্ব চূড়ান্ত রূপ নেয়। যার শেষ পরিণতি হয় এরশাদ-বিদিশা বিচ্ছেদ।
এরশাদের সঙ্গে বিচ্ছেদের পর জাতীয় পার্টির অভিমানী এবং ত্যাগী নেতা-কর্মীদের নিয়ে ভিন্ন প্লাটফর্ম করার চেষ্টা করেও সফল হননি বিদিশা। তবে বিদিশা ফাউন্ডেশন এর মাধ্যমে সামাজিক কর্মকাণ্ডে নিজেকে নিয়োজিত রাখেন তিনি। বর্তমানে অসহায় এবং দু:স্থ নারীদের কল্যাণে কাজ করছে বিদিশা ফাউন্ডেশন। তবে এরশাদ-বিদিশা দম্পতির একমাত্র সন্তান এরিখ এরশাদ আদালতের নির্দেশনায় পালা করে দু’জনের কাছেই থাকছে।
একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে রংপুর কিংবা রাজশাহীর যেকোনো একটি আসন থেকে নির্বাচন করার ইচ্ছে রয়েছে বিদিশার। তবে কোন দলের হয়ে করবেন নাকি স্বতন্ত্র প্রার্থী হয়ে করবেন তা এখনো ঠিক করেননি তিনি।
১৯৯৮ সালে সাবেক প্রেসিডেন্ট হুসেইন মুহম্মদ এরশাদের সঙ্গে গোপনে বিয়ে হয় বিদিশার। অতঃপর পুত্র এরিকের প্রথম জন্মদিনে এরশাদ বিদিশাকে আনুষ্ঠানিকভাবে ঘরে তোলেন। এই দম্পতির সন্তান এরিক। এরশাদের স্ত্রী হিসেবে বিদিশা জাতীয় পার্টি পুনর্গঠনে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখেন। সে সময় কেন্দ্র থেকে শুরু করে শেকড় পর্যায়ের নেতাকর্মীদের সঙ্গে গড়ে উঠে তার হৃদ্যতাপূর্ণ সম্পর্ক।
এরশাদের সম্পত্তি নিয়ে এইচ এম গোলাম রেজার সঙ্গে বিরোধের কারণে এরশাদের সংসারে কোণঠাসা হয়ে পড়েন বিদিশা। তার পরিণতি ২০০৫ সালে নাটকীয় ঘটনার মধ্য দিয়ে দাম্পত্য জীবনের অবসান বিবাহ বিচ্ছেদ। অতঃপর বিদিশা গ্রেফতার হয়ে কারাবন্দী। মুক্তির পর পুত্র এরিক এরশাদকে নিয়ে বিরোধ স্বামী স্ত্রীর বিরোধ। দীর্ঘ বিরোধের পর দুইজন সাংবাদিকের মধ্যস্থতায় বিদিশা পুত্র এরিককে এরশাদের হাতে তুলে দেন। বিদিশা যে শর্তে এরিককে এরশাদের হাতে তুলে দেন এরশাদ সে শর্ত ভঙ্গ করেন। অতঃপর শিশু এরিককে নিয়ে আদালত পর্যন্ত যেতে হয় তাদের। আদালতের নির্দেশ মতো এরিক সেই থেকে এখনো এরশাদ ও বিদিশার কাছে ভাগাভাগি করে থেকেই বড় হচ্ছে।
সেই বিদিশা এখন আলোচনার কেন্দ্রবিন্দু। জাপার বেশ কয়েকজন নেতা জানান, এরশাদের জাপায় এখনো অনেক বিদিশা অনুসারী নেতাকর্মী রয়েছেন। বিদিশা যদি রাজনীতিতে নামেন তাহলে ওই সব নেতা তার দিকেই যাবেন। কারণ অনেক নেতাই রওশনের প্রতি এরশাদের আত্মসমর্পণ মেনে নিতে পারছেন না। দেখা যাক কি হয়। তবে জাতীয় পার্টির প্রেসিডিয়ামের এক সদস্য প্রসঙ্গক্রমে জানান, যদি ম্যাডাম (বিদিশা) জাতীয় পার্টি বা যে কোনো নামে নতুন দল গঠন করে সভাপতি হন আমি সে দলে সাধারণ সম্পাদক হতে রাজী।