রবিবার, ১৮ নভেম্বর, ২০১৮, ১০:০২:২৩

ক্ষুব্ধ অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিত

 ক্ষুব্ধ অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিত

নিউজ ডেস্ক: বঙ্গবন্ধু স্যাটেলাইট-১ ক্রয়ের জন্য নেওয়া বিদেশি ঋণের কিস্তি পরিশোধে ব্যর্থ হয়েছে বাংলাদেশ টেলিযোগাযোগ নিয়ন্ত্রণ কমিশন (বিটিআরসি)। এতে ঋণ পরিশোধে বাংলাদেশের সুনাম ক্ষুণ্ণ হয়েছে। এ কারণে অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিত ক্ষুব্ধ। এ কাজে সংস্থাটিকে অনুপযুক্ত বলে মন্তব্য করেছেন তিনি। দায়িত্ব অন্য কোনো সংস্থাকে দেওয়ার সুপারিশও করেছেন তিনি।

সম্প্রতি অর্থ বিভাগের নগদ ও প্রচ্ছন্ন দায় ব্যবস্থাপনা শাখার কার্যপত্রে অর্থমন্ত্রী বিটিআরসির ওপর অর্পিত এই দায়িত্ব অন্য কোনো প্রতিষ্ঠানকে দেওয়ার আদেশ দেন।

অর্থমন্ত্রী বলেন, ‘আমার মনে হয় বিটিআরসি এই ঋণ পরিশোধের দায়িত্ব পালন করার অনুপযুক্ত। সুতরাং গ্যারান্টির বকেয়া পরিশোধের দায়িত্ব অন্য কেউ নিতে পারেন এবং সেজন্য যথা সময়ে বিটিআরসি থেকে প্রয়োজনীয় অর্থ আগেই নিয়ে নিতে পারেন।’

সূত্র জানায়, গত অক্টোবর মাসে বঙ্গবন্ধু স্যাটেলাইট-১ এর নির্মাণকারী প্রতিষ্ঠান ফ্রান্সের থ্যালাস অ্যালেনিয়া স্পেসের ঋণের গ্যারান্টির কিস্তি দিতে ব্যর্থ হয় বিটিআরসি। বাংলাদেশের ৪৭ বছরের ইতিহাসে এই প্রথম কোনো বৈদেশিক ঋণ পরিশোধে দেশের কোনো সরকারি প্রতিষ্ঠান ব্যর্থ হলো। গত ৫ নভেম্বর চিঠি দিয়ে বিটিআরসির সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়ার নির্দেশ দেয় অর্থ বিভাগ।

চিঠিতে সরকারের আর্থিক ক্ষতি করায় দায়ী ব্যক্তিকে চিহ্নিত করে প্রয়োজনে জরিমানার সুদ বাবদ সমপরিমাণ অর্থ দোষী ব্যক্তির কাছ থেকে আদায় করার নির্দেশনা দেওয়া হয়। এমনকি পরবর্তীতে কী ব্যবস্থা নেওয়া হলো সে বিষয়ে অর্থ বিভাগকে অবহিত করতে বলা হয়।

গত ২২ অক্টোবর পর্যন্ত বঙ্গবন্ধু স্যাটেলাইটের গ্যারান্টির পরিমাণ ছিল মাত্র ৭৮ লাখ ২৬ হাজার ৪১৬ দশমিক ৩৮ ইউরো। গত ৫ নভেম্বর প্রকল্পের অর্থায়নের বিপরীতে প্রদত্ত রাষ্ট্রীয় গ্যারান্টির হালনাগাদ অবস্থা পর্যালোচনা সভায় বিষয়টি অর্থ বিভাগের নজরে আসে।

আন্তঃমন্ত্রণালয় বৈঠকের কার্যপত্রে বলা হয়েছে, গত মার্চে বহুজাতিক ব্যাংক এইচএসবিসির কাছ থেকে সরকার স্যাটেলাইট বানানোর জন্য যে ঋণ নিয়েছিল সেই ঋণের গ্যারান্টির অর্থ পাঠায় বিটিআরসি। গত ১১ অক্টোবর বিটিআরসি ৭ দশমিক ৮২ মিলিয়ান ইউরো এইচএসবিসি ব্যাংকে দেওয়া কথা থাকলেও তা ২২ অক্টোবর জমা দেওয়া হয়। ফলে বাংলাদেশকে ৮ হাজার ৩৯৫ ইউরো জরিমানা দিতে হয়। বিটিআরসি এইচএসবিসির কাছ থেকে গ্যারান্টিযুক্ত ১১ কিস্তিতে পরিশোধ যোগ্য ১৪৭ মিলিয়ান ইউরো ঋণ নেয়। মার্চ মাসের ১১ তারিখ থেকে বিটিআরসি ঋণের গ্যারান্টি দেওয়া শুরু করে।

কার্যপত্রে বলা হয়েছে, বঙ্গবন্ধু স্যাটেলাইটে প্রকল্প বাস্তবায়নের জন্য রাষ্ট্রীয় গ্যারান্টির বিপরীতে গৃহীত ঋণের প্রতিটি কিস্তি বিটিআরসিকে বিনা ব্যর্থতায় যথা সময়ে পরিশোধ করতে হবে। কিস্তি বাবদ পাওনা অর্থ বিটিআরসির তহবিলে জমা না থাকলে সে বিষয়ে কিস্তি পরিশোধের তারিখের আগেই অর্থ সরবরাহের ব্যবস্থা গ্রহণ করতে হবে। এ বিষয়ে কার্যক্রম গ্রহণে যাতে কোনো বিলম্ব না হয় সে বিষয়ে বিটিআরসিকে তৎপর থাকতে হবে।

বহুল প্রত্যাশিত বঙ্গবন্ধু স্যাটেলাইট-১ গত মে মাসের ১১ তারিখে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের কেনেডি স্পেস সেন্টার থেকে উৎক্ষেপণ করা হয়। বঙ্গবন্ধু স্যাটেলাইট উৎক্ষেপণে ১৫ বছরের জন্য রাশিয়ার কাছ থেকে অরবিটাল স্পট কিনেছে সরকার। তবে বিএস ওয়ানের স্থায়ীত্ব হতে পারে ১৮ বছর পর্যন্ত। ৩ দশমিক ৭ টন ওজনের বঙ্গবন্ধু স্যাটেলাইটটির ডিজাইন এবং তৈরি করেছে ফ্রান্সের কোম্পানি থ্যালাস অ্যালেনিয়া স্পেস। আর এটাকে মহাকাশে নিয়ে গেছে যুক্তরাষ্ট্রের স্পেসএক্স। প্রথম ৩ বছর থ্যালাস অ্যালেনিয়ার সহায়তায় এটির দেখভাল করছে বাংলাদেশ। পরে পুরোপুরি বাংলাদেশি প্রকৌশলীদের হাতেই গাজীপুর ও রাঙামাটির বেতবুনিয়া আর্থ স্টেশন থেকে নিয়ন্ত্রিত হবে এটি।

বঙ্গবন্ধু স্যাটেলাইট-১ উৎক্ষেপণ হওয়ার পর বাংলাদেশের যোগাযোগ ব্যবস্থায় নতুন দিগন্তের সৃষ্টি হয়েছে। এছাড়া স্যাটেলাইটটির সঙ্গে বাংলাদেশের জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের নাম জড়িয়ে থাকায় বিষয়টি অনেক গুরুত্ব পেয়েছে। বিটিআরসি ঋণের কিস্তি সময়মত পরিশোধ না করায় বাংলাদেশের সুনাম ক্ষুণ্ণ হয়েছে বলে সংশ্লিষ্টরা মন্তব্য করেছেন। বিষয়টি অর্থ বিভাগ খুবই গুরুত্বের সঙ্গে দেখছে বলে অর্থবিভাগের সংশ্লিষ্টরা জানিয়েছেন।-রাইজিংবিডি 

Follow করুন এমটিনিউজ২৪ গুগল নিউজ, টুইটার , ফেসবুক এবং সাবস্ক্রাইব করুন এমটিনিউজ২৪ ইউটিউব চ্যানেলে