সোমবার, ১৯ নভেম্বর, ২০১৮, ০৪:৫৮:০৭

বিএনপিতে জোটের মনোনয়ন নিয়ে ‘বিভ্রান্তি’, চিঠি দিয়েছে বিএনপি মহাসচিব

বিএনপিতে জোটের মনোনয়ন নিয়ে ‘বিভ্রান্তি’, চিঠি দিয়েছে বিএনপি মহাসচিব

নিউজ ডেস্ক: ২০ দলীয় জোট ও ঐক্যফ্রন্ট অভিন্ন প্রতীকে ভোট করার সিদ্ধান্তের পরই নতুন করে বিভ্রান্তিতে পড়েছে বিএনপি।
এক্ষেত্রে একটি আসনে একাধিক প্রার্থীকে প্রাথমিক মনোনয়ন দেয়ার পর চূড়ান্তভাবে একক প্রার্থী ও প্রার্থীর প্রতীক কীভাবে নির্ধারিত হবে তা নিয়ে ‘স্পষ্ট’ ধারণা নিতে নির্বাচন কমিশনে  চিঠি দিয়েছে দলটি।

সোমবার নির্বাচন কমিশন সচিব বরাবর ‘আরপিও ১২(৩) (বি) এর আলোকে প্রাথমিক মনোনয়ন এবং ১৬(২) এর আলোকে চূড়ান্ত মনোনয়ন নিয়ে অস্পষ্টতা দূরীকরণ’ সংক্রান্ত চিঠি দিয়েছে বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর।
ইসি সচিবের দপ্তরে চিঠি জমা দেওয়ার পর বিএনপির উপদেষ্টা পরিষদের সদস্য বিজন কান্তি সরকার বলেন, “আমাদের জোটগত প্রতীক ব্যবহার ও প্রার্থী মনোনয়ন প্রক্রিয়া নিয়ে কিছু বিষয়ে স্পষ্টতা দূরীকরণ চাওয়া হয়েছে। সেই সঙ্গে স্থানীয় জনপ্রতিনিধিদের ভোটে অংশগ্রহণ করতে পদত্যাগ করতে হবে কিনা তা নিয়ে স্পষ্টীকরণ বিষয়ে আলাদা একটি চিঠি  দেওয়া হয়েছে।”
একাদশ সংসদ নির্বাচনে বিএনপি ২০ দলীয় জোটের বিএনপিসহ ৮টি দল অভিন্ন প্রতীকে ভোট করার বিষয়ে কমিশনকে চিঠি দিয়েছে।

সেই সঙ্গে ঐক্যফ্রন্টভুক্ত আরও তিনটি দল বিএনপির প্রতীকে ভোট করার বিষয়ে কমিশনকে অবহিত করেছে।
এ অবস্থায় জোটগত প্রার্থী মনোনয়ন ও চূড়ান্ত প্রার্থীর প্রতীক নিয়ে ‘বিভ্রান্তি’ দুর করতে কমিশনের কাছে ব্যাখ্যা চেয়েছে দলটি।
চিঠিতে বলা হয়েছে- মনোনয়নপত্রের ফরম-২ এ প্রাথমিক মনোনয়ন মর্মে উল্লেখ নেই। এতে কিছুটা বিভ্রান্তি সৃষ্টি হয়েছে। এক্ষেত্রে প্রাথমিক ও চূড়ান্ত মনোনয়ন কীভাবে দেওয়া হবে তা উল্লেখ করা হয়-
২০ দলীয় জোট/জাতীয় ঐক্যফ্রন্ট/নিবন্ধিত রাজনৈতিক প্রাথমিক মনোনয়ন দিয়ে মনোনয়নপত্র জমা দেওয়ার ক্ষেত্রে জোট /দল/ঐক্যফ্রন্ট কী প্রক্রিয়ায় তা সম্পন্ন করবে- অর্থাৎ জোটভূক্ত দলগুলো ভিন্ন ভিন্ন প্রাথমিক মনোনয়ন দেবে কিনা?
জাতীয ঐক্যফ্রন্টের/২০ দলীয জোটের প্রত্যেক নিবন্ধিত দল একটি আসনে এক বা একাধিক প্রার্থী প্রাথমিক মনোনয়ন দেয়ার পর চূড়ান্ত মনোনয়নে ফ্রন্টের/জোটের একটি দলের একজন প্রার্থীকে ওই আসনে মনোনয়ন দেয়ার পর জোট/ফ্রন্টভুক্ত ওই আসনের বৈধ প্রার্থীদের মনোনয়ন বলবৎ থাকবে কিনা?

তিনি জানান, গণপ্রতিনিধিত্ব আদেশ অনুসারে, দলের জন্য সংরক্ষিত প্রতীক দলীয় প্রার্থীরা বরাদ্দ পাবে। তবে জোটভুক্ত হলে [আরপিও ২০[১] দলীয় সভাপতি বা সমমর্যাদার কারো অনুমুতি লাগবে।

ইসি কর্মকর্তারা জানান, কোনো আসনে একই দলের একাধিক প্রার্থী প্রাথমিক মনোনয়নপত্র জমা দিতে পারবে। সেক্ষেত্রে দলীয় সভাপতি/সাধারণ সম্পাদক/সম পদমর্যাদার একজন বা ক্ষমতাপ্রাপ্তব্যক্তির স্বাক্ষরিত মনোনয়নের বিষয়ে প্রত্যয়ন থাকতে হবে মনোনয়নপত্রের সঙ্গে।

প্রার্থিতা প্রত্যাহারের আগে দল চূড়ান্ত মনোনীত একজনকে প্রত্যয়ন দেবে। সেক্ষেত্রে বাকিরা স্বয়ংক্রিয়ভাবে প্রত্যাহারের তালিকায় চলে যাবে।

কিন্তু জোটভুক্ত অভিন্ন প্রতীক ব্যবহারের বিষয়ে সংশ্লিষ্ট আসনে দুই দলের সম্মতিপত্র (যার প্রতীক ব্যবহার করবে এবং যে দল ব্যবহার করবে) রিটার্নিং অফিসারের কাছে জমা দিতে হবে।

“প্রার্থিতা প্রত্যাহারের আগেই এ কাজটি সম্পন্ন করতে হবে; পরদিন প্রতীক বরাদ্দ ও প্রচারের সুযোগ পান প্রার্থী” বলেন একজন কর্মকর্তা।

একই দলের একাধিক প্রার্থীর কেউ প্রার্থিতা প্রত্যাহার না করলে সবার মনোনয়নপত্র বাতিল বলে গণ্য হবে বলে জানান ইসি যুগ্মসচিব ফরহাদ আহাম্মদ খান।

নবম সংসদ নির্বাচনে আওয়ামী লীগ নেতৃত্বাধীন মহাজোট ও বিএনপি নেতৃত্বাধীন চারদলীয় জোট একক প্রার্থী দিয়েছিলেন।কিন্তু অনেক আসনে মনোনয়নপত্র প্রত্যাহারের সময় প্রধান দুই দলকে বিভিন্ন কারণে ‘ঝামেলায়’ পড়তে হয়েছে।

২০০৮ সালের ওই নির্বাচনে মহাজোটের আওয়ামী লীগ ২৬৪ আসনে, জাতীয় পার্টি ৪৯ আসনে, জাসদ ৭ আসনে, ওয়ার্কার্স পার্টি ৫ আসনে এবং চারদলীয় জোটের বিএনপি ২৬০ আসনে, জামায়াতে ইসলামী ৩৯ আসনে, বিজেপি দুই আসনে প্রার্থী দিয়েছিল।
আর স্বতন্ত্র প্রার্থী হয়ে নির্বাচন করেন ১৫১ জন। দলের মনোনয়ন না পেয়ে এদের অনেকে যেমন স্বতন্ত্র প্রার্থী হয়েছেন, মতবিরোধে তেমনি মহাজোট ও চারদলীয় জোট বেশ কিছু আসনে একক প্রার্থী দিতে পারেনি।

২০১৩ সালে দশম সংসদ নির্বাচনের আগে ‘বিদ্রোহী প্রার্থী’ ঠেকাতে ইসির সংলাপে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ আরপিও সংশোধনের প্রস্তাব দেয়। দলের প্রতিনিধি দলের নেতা সৈয়দা সাজেদা চৌধুরী তখন বলেছিলেন, দলের কোনো কর্মী যখন মনোনয়ন অগ্রাহ্য বা অমান্য করে, তখন দলের শৃঙ্খলাই শুধু নয়, গণতন্ত্রের ভিতও নড়ে যায়।

নবম সংসদ নির্বাচনে এনিয়ে সমস্যায় পড়ায় তা কাটিয়ে তুলতে তৎকালীন ইসি দলের ‘ সভাপতি/সাধারণ সম্পাদক মনোনীত একজনের মনোনয়নপত্র রিটার্নিং কর্মকর্তা গ্রহণের পর অন্যদের মনোনয়নপত্র স্বয়ংক্রিয়ভাবে বাতিল করার বিষয়টি যুক্ত করে।
একাদশ সংসদ নির্বাচনে জোটের মেরুকরণে নিবন্ধিত ৩৯ দলের প্রায় অর্ধেকই নিজেদের নির্বাচনী প্রতীক তুলে রেখে শামিল হয়েছে বড় শরিকের পতাকা তলে।

Follow করুন এমটিনিউজ২৪ গুগল নিউজ, টুইটার , ফেসবুক এবং সাবস্ক্রাইব করুন এমটিনিউজ২৪ ইউটিউব চ্যানেলে