বৃহস্পতিবার, ২২ নভেম্বর, ২০১৮, ০৮:০৩:১৭

সেনাকুঞ্জে প্রধানমন্ত্রীর সাথে দেখা হলো মির্জা ফখরুলের

সেনাকুঞ্জে প্রধানমন্ত্রীর সাথে দেখা হলো মির্জা ফখরুলের

নিউজ ডেস্ক: আবারও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সঙ্গে দেখা হলো বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরের। বুধবার সেনাকুঞ্জে সশস্ত্র বাহিনী দিবসের সংবর্ধনা অনুষ্ঠানে যোগ দিয়েছিলেন তিনি।জাতীয় সংসদ নির্বাচনকে সামনে রেখে তিন সপ্তাহের মধ্যেই তিনবার বিএনপি মহাসচিব ও সাবেক প্রতিমন্ত্রী মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার মুখোমুখি হলেন। সাধারণত প্রায় প্রতিবছরই ২১ নভেম্বর তারিখটিতে আমরা অপেক্ষা করতাম দেশের দুই প্রধান নেত্রী আওয়ামী লীগ সভাপতি শেখ হাসিনা ও বিএনপির চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়ার মধ্যে সেনাকুঞ্জে কুশল বিনিময় হয় কিনা, তার জন্য। ১৯৯১ সালে সংসদীয় গণতন্ত্র পুন:প্রবর্তন হওয়ার পর থেকেই এ বিষয়টি সামনে এসেছে। মনে পড়ে দু-একবার রাজনৈতিক সংকটের সময় ভোরের কাগজ ও প্রথম আলোতে রিপোর্টও করেছিলাম যে ‘এবার কুশল বিনিময়’ হবে কি না ? এমনটা হয়েছে দু:সময়েই। কারণ দুজনই প্রধানমন্ত্রী ও সংসদে বিরোধী দলীয় নেত্রী ছিলেন। খুব মনে পড়ে ২০০১ সালের পরপর একবার সশস্ত্র বাহিনী দিবসে সেনানিবাস থেকে আওয়ামী লীগ সভানেত্রী শেখ হাসিনা ফেরার পর তার প্রয়াত স্বামী পরমাণু বিজ্ঞানী শ্রদ্ধেয় ড. এম ওয়াজেদ মিয়ার কাছে জানতে চেয়েছিলাম ‘দুই নেত্রীর মধ্যে কি কথা হয়েছে?’

এবারের সশস্ত্র-বাহিনী দিবসে অবশ্য বিএনপি চেয়ারপারসন সাবেক প্রধানমন্ত্রী বেগম খালেদা জিয়ার সেনাকুঞ্জের সংবর্ধনা অনুষ্ঠানে যোগ দেবার কোনো সুযোগ ছিলনা, কারণ তিনি দুর্নীতির মামলায় দণ্ডিত হয়ে কারাগারে আছেন। সেনাকুঞ্জের অনুষ্ঠানে যাবার আগেই খোঁজ নিয়েছিলাম বিএনপির কেউ অনুষ্ঠানে আমন্ত্রণ পেয়েছেন কি না? বিএনপির সূত্রে জেনেছিলাম মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর যোগ দিতে পারেন সশস্ত্র বাহিনী বিভাগ আয়োজিত সংবর্ধনায়।

বিকেল ৪টায় সেনাকুঞ্জের সংবর্ধনা অনুষ্ঠান শুরুর অল্প কিছুক্ষণ আগেই সেনাকুঞ্জে এসে পৌঁছেছিলেন বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর। প্রথমে তিনি এসে দাঁড়িয়েছিলেন অনুষ্ঠানে আমন্ত্রিত প্রবীণ অতিথিদের জন্য নির্ধারিত প্যান্ডেলটিতে। সঙ্গে সঙ্গেই প্রথমে কয়েকজন গণমাধ্যম ব্যক্তিত্বই তাঁকে স্বাগত জানিয়েছিলেন। অনেকেই এসে যখন কুশল বিনিময় করছিলেন, তখন টেলিভিশন চ্যানেলগুলোর ক্যামেরাগুলো ঘিরে ধরেছিল সজ্জন রাজনৈতিক হিসেবে পরিচিত মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরের ছবি তোলার জন্য। সবাই তাকে সাধুবাদ জানাচ্ছিলেন। বিদায়ী জাতীয় সংসদের চীফ হুইপ উপাধ্যক্ষ আব্দুল শহীদ তাঁকে একটি কমলাও এনেছিলেন সৌজন্যবশত। আশেপাশের সবাই বলছিলেন নির্বাচনের আগে দেশে একটি সৌহার্দপূর্ণ পরিবেশ তৈরি হয়েছে বলেই সশস্ত্র বাহিনী দিবসে পাওয়া গেলো বিএনপি মহাসচিবকে। এছাড়া অনুষ্ঠানে উপস্থিত হয়েছিলেন যুক্তফ্রন্টের নেতা অধ্যাপক বদরুদ্দোজা চৌধুরী এবং জাতীয় ঐক্যফ্রন্টের আহ্বায়ক ও গণফোরাম নেতা ড. কামাল হোসেন।

সাংবাদিকদের সঙ্গে আলাপে অবশ্য মির্জা ফখরুল বারবার বলছিলেন নেতা-কর্মীদের গ্রেপ্তারের কথা। তিনি আক্ষেপ করছিলেন যে দলকে নির্বাচনের পথে নিতে যারা কাজ করেছেন, তারাই এখন সমালোচনার মুখে পড়ছেন মামলা ও গ্রেপ্তারের কারণে। জানা গেলো তফসিল ঘোষণার পর থেকে বুধবার পর্যন্ত বিএনপির ৫২৯ জন নেতা-কর্মী গ্রেপ্তার হয়েছেন। এর মধ্যে পাঁচ জন আছেন যারা দল থেকে মনোনয়ন চেয়েছেন। বুধবার দুপুরে বিএনপি নেতা সালাহউদ্দিন খানের নেতৃত্বে একটি প্রতিনিধিদল দলের মহাসচিব স্বাক্ষরিত তালিকা কমিশনে জমা দিয়েছেন। কমিশন বরাবর দেয়া চিঠিতে বিএনপির নেতা-কর্মীদের বিরুদ্ধে গায়েবি মামলা প্রত্যাহার এবং গ্রেপ্তারকৃতদের হয়রানি বন্ধ ও আটকদের মুক্তি চাওয়া হয়েছে। মির্জা ফখরুল জানালেন তিনি নিজে ফোন করেছিলেন প্রধান নির্বাচন কমিশনারকে। জানালেন, ‘সিইসিকে বললাম ,আমরা নির্বাচনে অংশ নেয়ায় তো আপনারা শক্তিশালী হলেন, এখন নিজেদের ক্ষমতা প্রয়োগ করুন । যাতে সবাই সমান অধিকার পান।’ আক্ষেপ করে বললেন ‘ মনোনয়ন প্রত্যাশীদেরই যদি ধরে নিয়ে যায়, তাহলে কাদের নিয়ে নির্বাচন করবো।’

সংবর্ধনা অনুষ্ঠানে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার বক্তব্য মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর শোনেন প্রবীণদের জন্য নির্ধারিত স্থানে বসে। এসময় সেখানে সিপিবির সভাপতি মুজাহিদুল ইসলাম সেলিম ও প্রবীণ রাজনৈতিক পংকজ ভট্টাচার্যও ছিলেন। নিজের বক্তব্য শেষ করার পর অনুষ্ঠানে আগতদের সাথে কুশল বিনিময়ের জন্য শেখ হাসিনা যখন মঞ্চ থেকে নেমে আসেন, তখন অনেকটাই কাছাকাছি ছিলেন মির্জা ফখরুল। কিন্তু ভিড়ের কারণে দুজনের দেখা হয়নি। পরে অবশ্য মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরকে ডেকে নিয়ে যাওয়া হয় মূল প্যান্ডেলে। সেখানেই প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে কুশল বিনিময় হয় তাঁর।

Follow করুন এমটিনিউজ২৪ গুগল নিউজ, টুইটার , ফেসবুক এবং সাবস্ক্রাইব করুন এমটিনিউজ২৪ ইউটিউব চ্যানেলে