বৃহস্পতিবার, ২৫ আগস্ট, ২০১৬, ০৫:০৮:১৮

‘ভক্তদের জন্যই ইংল্যান্ড আসবে’

‘ভক্তদের জন্যই ইংল্যান্ড আসবে’

মেজবাহ্-উল-হক : বাংলাদেশের ক্রিকেটপাগল ভক্তদের কথা গোটা ক্রিকেট বিশ্বই জানে! রাজনৈতিক, ধর্মীয় কিংবা অন্যান্য কারণে এদেশের সাধারণ মানুষের মধ্যে বিভক্তি থাকলেও  ১৬ কোটি মানুষকে ‘একাট্টা’ করতে পেরেছে ক্রিকেট। টাইগারদের এক একটি জয়ে গোটা দেশ মেতে ওঠে উৎসবে—পৃথিবীর আর কোনো দেশে এমন চিত্র দেখা যায় না! আর এই ক্রিকেট ভক্তদের কথা ভেবেই বাংলাদেশ সফরে আসবে ইংল্যান্ড— এমন সবুজ সংকেতই নাকি দিয়েছেন বাংলাদেশে পর্যবেক্ষণে আসা ইংলিশ নিরাপত্তা পর্যবেক্ষকরা!

বাংলাদেশ ক্রিকেট বোর্ডের(বিসিবি) মিডিয়া কমিটির চেয়ারম্যান জালাল ইউনূস বলেন, পরিদর্শকরা এটা উপলব্ধি করতে পেরেছেন যে, বাংলাদেশের মানুষ খুবই ক্রিকেটপাগল। তারা বলেছে, আমরা চাই না তাদেরকে (ক্রিকেট-ভক্ত) হতাশ করতে, আমরা এখানে আসতে চাই। তবে এটা তো তাদের নিজস্ব সিদ্ধান্ত নয়। ইসিবির সিদ্ধান্ত রয়েছে। তাদের ক্রিকেটারদের সিদ্ধান্ত রয়েছে। সব মিলিয়েই তারা সিদ্ধান্ত নেবে।

তিনি আরো বলেন, আজ ইংল্যান্ড ক্রিকেট দলের সঙ্গে তাদের একটা ব্রিফিং আছে। যাই হোক, আমরা আশাবাদী ইংল্যান্ড দল আসবে। তবে আজ সন্ধ্যার মধ্যেই জানা যেতে পারে।

ইংলিশ নিরাপত্তা পরিদর্শকদের সঙ্গে বিভিন্ন বৈঠকে অংশ নিয়েছেন জালাল ইউনুস। সে সময় পরিদর্শকদের ইতিবাচক মনোভাবই লক্ষ্য করেছেন তিনি।

এ ব্যাপারে তিনি বলেন, বাংলাদেশ সফরের ব্যাপারে ইংল্যান্ড খুবই আন্তরিক। ইসিবির পরিদর্শকরা এখানে প্রতিটি জায়গা পরিদর্শন করেছে। তারা চার দিনে খুবই ব্যস্ত সময় কাটিয়েছে। এখানে ক্রিকেটারদের থাকার জায়গা তো দেখেছেই, কোথায় অনুশীলন করা হবে তাও দেখেছে। আমাদের বিভিন্ন নিরাপত্তাবাহিনীর সদস্যদের সঙ্গে বৈঠক করেছেন। তারা আসার ব্যাপারে আন্তরিক বলেই সব বিষয়ে আমাদের কাছ থেকে অনেক বেশি ব্রিফিং নিয়েছে।

ইংল্যান্ড ক্রিকেট দল ৩০ সেপ্টেম্বর বাংলাদেশে আসবে— সব কিছু ঠিকই ছিল! কিন্তু গত ১ জুলাই গুলশানের হলি আর্টিজান বেকারি রেস্তোরাঁয় ভয়াবহ জঙ্গি হামলার পর পরিস্থিতি পাল্টে যায়। নিরাপত্তার বিষয়টি দেখভালের জন্য তিন সদস্যের ইংলিশ নিরাপত্তা পরিদর্শক দল বাংলাদেশ সফরও করছেন। তাদের প্রতিবেদনের ওপরই নির্ভর করছেন বাংলাদেশ-ইংল্যান্ড সিরিজের ভাগ্য।

এদিকে নিরাপত্তা পর্যবেক্ষক দলের প্রতিবেদনেই আগেই ইংলিশ মিডিয়া যেন বাংলাদেশের বিরুদ্ধে প্রচারণা চালাতে আদাজল খেয়ে মাঠে নেমে পড়েছে। ইংল্যান্ড ক্রিকেট দলের বাংলাদেশ সফরকে কেন্দ্র করে সব শেষ নেতিবাচক প্রতিবেদন প্রকাশ করেছে ইংল্যান্ডের পত্রিকা ‘দ্য টেলিগ্রাফ’। অথচ নিরাপত্তার মতো ‘স্পর্শকাতর’ বিষয় নিয়ে প্রতিবেদনে তারা কোনো উদ্ধৃতি ব্যবহার করে নি। এর আগে গার্ডিয়ানও নেতিবাচক প্রতিবেদন করেছিল বাংলাদেশ নিয়ে।

এসব প্রতিবেদনকে গুরুত্ব দেওয়ার কিছু নেই বলে উল্লেখ করে বিসিবির প্রধান নির্বাহী নিজাম উদ্দীন চৌধুরী সুজন বলেন, একটা পত্রিকার প্রতিবেদন দেখে উদ্বিগ্ন হওয়ার কিছু নেই। এটা ইংল্যান্ড ক্রিকেট বোর্ডের কথা নয়। তারা কিছু জানায় নি। আমাদের এখানে যে নিরাপত্তা দল এসেছিল আমরা তাদেরকে সর্বোচ্চ নিরাপত্তা দেওয়ার কথা বলেছি। তারা আমাদের পরিকল্পনা দেখেছেন। আমি খুবই আশাবাদী ইংল্যান্ডের বাংলাদেশ সফরের ব্যাপারে।

তিনি আরো বলেন, আমার বিশ্বাস, যথা সময়েই বাংলাদেশে আসবে ইংল্যান্ড।

নিঃসন্দেহে গুলশানে জঙ্গি হামলায় ১৭ জন বিদেশিসহ ২২ জনকে হত্যা করার ঘটনাটি বর্বরোচিত। কিন্তু এরপর এর চেয়েও বর্বরোচিত ঘটনা ঘটেছে ফ্রান্সে। বাস্তিল দিবসের র‌্যালিতে ‘ট্র্যাক চালিয়ে’ ৮৪ জনকে হত্যা করা হয়েছে। তার আগে গত বছর ফ্র্যান্সের বিখ্যাত পত্রিকা শার্লি এবদোর অফিসে হামলা করেছিল জঙ্গিরা। তারপরেও পরেও কিন্তু ইউরো কাপের মতো বড় টুর্নামেন্টের আয়োজন করেছে ফ্রান্স।

এছাড়া গুলশান হামলার পর খুব অল্প সময়ের ব্যবধানে জার্মানিতে দুই দুইবার হামলা হয়েছে। জঙ্গি হামলার ঘটনা এখন শুধু মাত্র পাকিস্তান, আফগানিস্তান, ইরাক, সিরিয়ার মধ্যে সীমাবদ্ধ নেই। একটা বৈশ্বিক রূপ পেয়ে গেছে। তবে এটাও ঠিক যে এমন হামলার পর সরকারের তত্পরতা কেমন, সে বিষয়টি গুরুত্ব পাওয়ার কথা! যেমন বাংলাদেশে গুলশান ও শোলাকিয়ার ঘটনার পর আইন-শৃঙ্খলাবাহিনী সর্বোচ্চ সতর্কতায় রয়েছে।

বাংলাদেশ জাতীয় ওয়ানডে ও টি২০ ক্রিকেট দলের অধিনায়ক মাশরাফি বিন মর্তুজার বিশ্বাস ইংল্যান্ড আসবে। তিনি বলেন, বাংলাদেশ ক্রিকেট বোর্ড, সরকারের পক্ষ থেকে যে নিরাপত্তা দেওয়া হবে, তাতে আমরা অনেক আত্মবিশ্বাসী। আমার বিশ্বাস কোনো সমস্যা হবে না। একজন খেলোয়াড় হিসেবে আমি বলব খেলা চালু রাখতে। যাতে খেলাটা হয়। পৃথিবীর সব জায়গাতেই এই ঘটনাগুলো ঘটছে। এভাবে খেলা বাদ দিলে এক সময় তো খেলাই বন্ধ হয়ে যাবে।

তিনি আরো বলেন, ফ্রান্সের মতো জায়গায় সন্ত্রাসী হামলার পর কিন্তু ইউরো হয়েছে। সব দল খেলেছে। সব জায়গাতেই এমন কম বেশি সমস্যা হচ্ছে। আমি মনে করি  খেলোয়াড়াদের উচিত খেলার দিকে ফোকাস করা।

জাতীয় দলের সাবেক অধিনায়ক রকিবুল হাসান বলেন, অবশ্যই ইংল্যান্ডের বাংলাদেশে আসা উচিত। কারণ বিসিবি ও সরকার তাদেরকে যে নিরাপত্তা দেওয়ার প্রতিশ্রুতি দিয়েছে তাতে তাদের শঙ্কিত হওয়ার কোনো কারণ নেই। আমার বিশ্বাস, ইংল্যান্ড সে বিষয়টি বুঝবে এবং বাংলাদেশে আসবে। ক্রিকেটের স্বার্থেই ইংলিশদের বাংলাদেশ সফরে আসা উচিত।-বিডি প্রতিদিন
২৫ আগস্ট ২০১৬/এমটিনিউজ২৪.কম/এমকেএইচ

Follow করুন এমটিনিউজ২৪ গুগল নিউজ, টুইটার , ফেসবুক এবং সাবস্ক্রাইব করুন এমটিনিউজ২৪ ইউটিউব চ্যানেলে