শুক্রবার, ২৬ আগস্ট, ২০১৬, ০৫:৫৩:৩৬

কাদামাখা বর্ষা, ফুটবল আর বাঙালি

কাদামাখা বর্ষা, ফুটবল আর বাঙালি

স্পোর্টস ডেস্ক: একমাত্র এখানেই বোধ হয় বর্ষাভেজা মাঠে ফুটবল নিয়ে দাপাদাপি করতে দেখা যায় ফুটবলারদের।মাঠের মাঝখানে জল, গোটা মাঠ জুড়ে প্যাচপ্যাচে কাদা, এই অবস্থায় কি ভাল ফুটবল সম্ভব?

লিওনেল মেসির স্বর্গীয় স্কিল তো দেখেছেন! ক্রিশ্চিয়ানো রোনাল্ডোর বিদ্যুৎগতির দৌড়ও সবার চোখের সামনে ভাসে। এই দুই মহারথীকে কি বর্ষার ভেজা মাঠে বলকে কথা বলাতে কেউ দেখেছেন? এই প্রশ্ন শুনলে অনেকেই বলবেন মেসি-রোনাল্ডো অন্য গ্রহের ফুটবলার। ওঁদের নিয়ে কথা না-বলাই ভাল।

কাট টু কলকাতা। একমাত্র এখানেই বোধ হয় বর্ষাভেজা মাঠে ফুটবল নিয়ে দাপাদাপি করতে দেখা যায় ফুটবলারদের। বৃষ্টি পড়ছে, তাতেও ভ্রুক্ষেপ নেই দর্শকদের। ফুটবলের প্রতি তাঁদের যে অনন্ত টান, ভালবাসা।

খেলতে গিয়ে ফুটবলারদের পা ফুলে ঢোল, সেই দিকে কারও দৃষ্টি নেই। ক্লাবকর্তারা চান জিততে। দর্শকরাও প্রিয় দলের জয় দেখতেই বৃষ্টি মাথায় করে, দুর্যোগ উপেক্ষা করে ফুটবল দেখতে আসেন। যত সমস্যা বেচারা ফুটবলারদের।

কর্তাদের ইচ্ছাপূরণ, দর্শকদের মনোরঞ্জন করতে গিয়ে ফুটবলারদের হাল খারাপ হয়ে যায়। মাঠের মাঝখানে জল, গোটা মাঠ জুড়ে প্যাচপ্যাচে কাদা, এই অবস্থায় কি ভাল ফুটবল সম্ভব? পোড়খাওয়া ফুটবলাররাই বলেন, একেবারেই নয়। কে শুনছে কার কথা! ভারী কাদা মাঠেই তো চলতে থাকে ফুটবল।  

এতে খেলার গুণগত মান কমে যায়। চোট-আঘাতের প্রবণতা যে বহুগুণে বাড়ে, তা কি জানা নেই কারোর? সবাই সব জানেন। এই পোড়া দেশে সবাই সব জানেন। মাঠে নেমে দুটো বল মারতে বলা হলে তখনই হয় যত বিপত্তি। ভারী মাঠে খেললে পেশিতে যে বাড়তি চাপ পড়ে, সেই কথাও তো সবারই জানা। তাতে কী? কলকাতা চলে নিজের নিয়মে।

ফুটবলাররা চোট পেলে পাবেন। খেলার মান ভাল না-হলে হবে! ভাল খেলা না-হলে গ্যালারি থেকে উড়ে আসবে বাছাই করা সব বিশেষণ। উড়বে বোতল, থুতু। বাঙালির সেরা খেলা বলে কথা! ভেজা, ভারী, প্যাচপ্যাচে কাদার মাঠে খেলতে মোটেও পছন্দ করেন না ফুটবলাররা।

কারণটা আর কিছু নয়। চোটের ভয়। একবার চোট লেগে গেলেই সর্বনাশ। খেলোয়াড়জীবন আর ক’দিনের! একবার খেলার মাঠ থেকে দূরে সরে গেলেই তো সব শেষ। কেউ আর চিনবেন না। কেউ খবরও রাখবেন না। সেটা আর ক’জন ফুটবলার চান! ফুটবলাররা পছন্দ না-করলেই বা শুনছে কে! নামতে তো হবে খেলতে। ক্লাব বলবে, টাকা নিয়েছে যখন, খেলতে তো হবেই। 

ক্রীড়াবিশেষজ্ঞরা বলে থাকেন, বর্ষাভেজা মাঠ হলে ফুটবলারদের পায়ের পেশিতে মারাত্মক চাপ পড়ে। তাতে দ্রুত ক্লান্ত হয়ে পড়েন খেলোয়াড়রা। মাঠ ভেজা বলে বলও ঠিকঠাক গড়ায় না। ভেজা মাঠে কিছুক্ষণ খেলা হলেই মাঠের চরিত্র যায় বদলে।

তখন ‘বল বাবাজি’-কে নিয়ন্ত্রণ করাও হয়ে ওঠে দুষ্কর। কাজটা কঠিন বললে কি আর শোনেন দর্শকরা? তাঁরা তো পয়সা দিয়ে, বরুণদেবের ভ্রুকুটি উপেক্ষা করে গ্যালারিতে বসে রয়েছেন। খারাপ খেলা  দেখবেন কেন? ফুটবলারদের অবস্থা, মাঠের চরিত্র বুঝতে বয়ে গিয়েছে তাঁদের। 

শুধু বল নয়, নিজেদের শরীরকে নিয়ন্ত্রণ করাও হয়ে ওঠে খুব কঠিন। ভারী চেহারার ফুটবলার হলে ভারসাম্য রক্ষা করতে পারেন। হালকা, পাতলা চেহারার হলে তো কথাই নেই। পা পিছলে, শরীরের ভারসাম্য রাখতে না-পেরে সেই ফুটবলার তো ততক্ষণে মাটিতে কুপোকাৎ।   

কাদা, ভারী মাঠে ভাল ফুটবল! নৈব নৈব চ! সব কিছু বুঝতে পেরে বঙ্গীয় ফুটবলের নিয়ামক সংস্থা আবার কৃত্রিম ঘাসের মাঠের ব্যবস্থা করেছে। তাতেও বিপত্তি। এই পোড়া দেশের কৃত্রিম ঘাসের মাঠ যে ফুটবলারদের বধ্যভূমি।

মাঠের ভিতর থেকে যে তাপ বেরোতে থাকে, তাতে ফুটবলারদের অবস্থা খারাপ। পায়ের পেশীতে যে কোনও সময় টান ধরার আশঙ্কা রয়েছে। তবুও চলে বাঙালির ফুটবল। চোট-আঘাতের লাল চোখ উপেক্ষা করেই।-এবেলা

২৬ আগস্ট,২০১৬/এমটিনিউজ২৪/সবুজ/এসএ

Follow করুন এমটিনিউজ২৪ গুগল নিউজ, টুইটার , ফেসবুক এবং সাবস্ক্রাইব করুন এমটিনিউজ২৪ ইউটিউব চ্যানেলে