বৃহস্পতিবার, ২৩ মার্চ, ২০১৭, ০৫:০১:৩২

অভাবের তাড়নায় জমি বিক্রি করেন মোসাদ্দেকের মা

অভাবের তাড়নায় জমি বিক্রি করেন মোসাদ্দেকের মা

স্পোর্টস ডেস্ক: ময়মনসিংহ জেলা ক্রীড়া সংস্থায় চাকরি করতেন বাবা আবুল কাশেম। শৈশব থেকেই ক্রিকেটের প্রতি ঝোঁক দেখে ক্রীড়াপ্রেমী বাবাই মোসাদ্দেককে ময়মনসিংহের একটি স্থানীয় ক্লাবে ভর্তি করে দেন। সে থেকেই ক্রিকেটের সঙ্গে পথ চলা শুরু। ২২ গজের যোদ্ধা জীবনে সবচেয়ে বড় অনুপ্রেরণা যোগাতেন মোসাদ্দেকের বাবাই।

ছেলেকে বড় ক্রিকেটার তারকা বানানের মাঝে পথে প্রায় ৯ বছর আগে জীবনযুদ্ধে ঠেলে দিয়ে পরলোক গমন করেন আবুল কাশেম। সংসারে শুরু হয় অনটন। অভাবের তাড়নায় শহরতলীর জমিও বিক্রি করেছেন মা হোসনে আরা বেগম। তবু নিজের স্বপ্ন থেকে এক চুলও পিছপা হননি মোসাদ্দেক, সংগ্রাম করেছেন। রপ্ত করে নিয়েছেন ২২ গজের মধ্যে যুদ্ধ করার প্রত্যেকটি কৌশল।

মিডল অর্ডারে ব্যাটিংয়ের পাশাপাশি অফ স্পিন বোলার হিসেবেও দায়িত্ব পালন করেন মোসাদ্দেক। অল্প বয়সেই ঘরোয়া ক্রিকেটে রেকর্ড গড়েছেন। প্রথম শ্রেণির ক্রিকেটে ২০১৪-১৫ সেশনে ৩টি শতক রয়েছে তার। সে সুবাদে কোচ হাথুরুসিংহে আফগানিস্তানের বিপক্ষে দ্বিতীয় ওয়ানডে ম্যাচে পরীক্ষা নেন ২১ বছর বয়সী এ ক্রিকেটারের।

প্রথম ম্যাচেই ঝলক। সপ্তম উইকেটে ব্যাট করতে নেমে ৪৫ বল থেকে ৪৫ রানের অপরাজিত ইনিংস উপহার দিয়েছিলেন দলকে। নিউজিল্যান্ডের বিপক্ষেও একটি অর্ধশতক হাকানোর রেকর্ড রয়েছে তার। ৮৬তম খেলোয়াড় হিসেবে সাদা পোশাকটা গায়ে চাড়িয়েছেন বাংলাদেশের ঐতিহাসিক শততম টেস্টেই। অষ্টম উইকেটে ব্যাট করতে নেমে ৭৫ রান তুলে গড়েছেন বিশ্বরেকর্ড।

দেশের হয়ে ১৩তম অভিষিক্ত হাফ সেঞ্চুরিয়ান। আবার শততম টেস্টে অভিষিক্ত হওয়া কোনো ক্রিকেটারের সর্বোচ্চ ইনিংসটিও এখন তার দখলে। এর আগে ১৯০৯ সালে অস্ট্রেলিয়ার বিপক্ষে ইংল্যান্ডের শততম টেস্টে অভিষিক্ত হয়ে সর্বোচ্চ ৬১ রান তুলেছিলেন জ্যাক শার্প। লঙ্কান বধে তার ইনিংসটির গুরুত্ব কোনোভাবেই এতটুকু খাটো করে দেখার উপায় নেই। বলতে গেলে মোকাদ্দেকই ইনিংসের ব্যবধানটা বাড়িয়ে জয়টা সহজ করে দেয়। ম্যাচ শেষে তামিম ইকবাল কথাটি অকপটেই শিকার করেছেন।

শততম টেস্টে বিজয়ের পর গোটা দেশে ছড়িয়ে পড়েছে বিজয় মিছিল। চিবুক বেয়ে আনন্দাশ্রু ঝড়েছে মা হোসনে আরা বেগমের। পরিবারের জ্যৈষ্ঠ সন্তান মোসাদ্দেক গোটা দেশকে এমন একটি আনন্দঘন দিনের উপহার দিতে গুরুত্বপূর্ণ অবদান রাখতে পারবে তা তো স্বপ্নেও ভাবেননি তিনি। ছেলের জন্য এখন গর্ব হয় তার। ছেলের এ ঐতিহাসিক সাফল্য মমতাময়ী মায়ের কাছে অনেকটাই আনন্দ-বেদনার কাব্যের মতোই। কিন্তু আরো বড় স্বপ্ন দেখেন হোসনে আরা বেগম। ছেলে হয়ে উঠুক দেশের ক্রিকেটের ভরসার প্রতীক, এটাই চান তিনি।
২৩ মার্চ ২০১৭/এমটি নিউজ২৪ ডটকম/আ শি

Follow করুন এমটিনিউজ২৪ গুগল নিউজ, টুইটার , ফেসবুক এবং সাবস্ক্রাইব করুন এমটিনিউজ২৪ ইউটিউব চ্যানেলে