মায়ের সংগ্রাম দেখে দুঃখ ভোলেন মুমিনুল হক

স্পোর্টস ডেস্ক: বাংলাদেশ টেস্ট দলে মুমিনুল হক সৌরভ না থাকলে সবাইকে বিস্মিত হতে হবে। একমাত্র ইনজুরি না হলে তাকে দলের বাইরে রাখার উপায় খুব একটা নেই। কিন্তু ওয়ানডেতে ঠিক বিপরীত চিত্র। ২০১৫ সালের ফেব্রুয়ারির পর তাকে আর ওয়ানডে দলে দেখা যায়নি। এমনিতে টাইগারদের টেস্ট খেলতে হয় অনেক দিন পর পর তার উপর ওয়ানডে দলে জায়গা না পেলে প্রভাব পড়ে পারফরম্যান্স ও মানসিকতায়! তাকে ওয়ানডে দলে না রাখার যুক্তিটাও সোজা-‘মুমিনুলের ওয়ানডের পারফরম্যান্স টেস্টের মতো নয়।’ ২২ টেস্টে গড় যেখানে তার ৪৬.৮৮ সেখানে ২৬ ওয়ানডেতে গড় ২৩.৬০। তার সতীর্থরা যখন আয়ারল্যান্ডে ত্রিদেশীয় সিরিজ ও চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফির জন্য দেশ ছাড়তে প্রস্তুত হচ্ছিলেন ঠিক তখন বিকেএসপি-৩ মাঠে গাজী ট্যাংকের হয়ে ১২০ বলে খেলেন ১৫২ রানের দারুণ এক ইনিংস। মুমিনুলের এই ইনিংসটি কারও কাছে জবাব আর কারও কাছে প্রমাণ করার চেষ্টা মনে হয়েছে। কিন্তু তিনি তা মনে করেন না। ওয়ানডে দলে না থাকার দুঃখ থাকলেও কাউকে প্রমাণের জন্য তার ব্যাট চলে না বলেই জানান। নিজের ক্রিকেট সংগ্রাম ও লক্ষ্য নিয়ে মুমিনুল হক কথা বলেন। সেই কথোপকথনের মূল অংশ তুলে ধরা হলো-

প্রশ্ন: এমন একটি ইনিংসে কি নিজেকে প্রমাণ করার চেষ্টা করলেন?
মুমিনুল: আমি এই প্রমাণ কথাটির সঙ্গে একমত নই। অনেকেই এমন প্রশ্ন করে- জবাব দিলাম কিনা, প্রমাণ করলাম কিনা? সেই সবার জন্য বলছি আমি খেলি দলের প্রয়োজনে। আমি সেদিন মাঠে মনে করেছি আমার বড় একটা স্কোর করা দরকার দলের জয়ের জন্য। তাই করার চেষ্টা করেছি। শুরুতে ইনিংসটা বড় করেছি। যখন সেঞ্চুরি হয়ে যায় তখন মনে হয় দলের আরও রান চাই। সেই জন্য ব্যাট চালিয়েছি। ওয়ানডে দলে আমি নেই, আমি মনে করি এটা আমার ব্যর্থতা। তাই বলে আমি খেলছি কাউকে প্রমাণ করার জন্য তা নয়। আমি খেলে যাচ্ছি। যদি কোন দিন নির্বাচকরা মনে করে আমাকে ওয়ানডেতে দরকার তখন নিবে। যারা লীগে সেঞ্চুরি করে তারা আন্তর্জাতিক ম্যাচে সেঞ্চুরি করবে তার গ্যারান্টি কি? আবার লীগে সেঞ্চুরি করেনি এমন ক্রিকেটারও কিন্তু জাতীয় দলে ঠিকই সেঞ্চুরি করছে, ভালো খেলছে। আমি আমার খেলাটা বুঝি অন্য কিছু না।

প্রশ্ন: দুই ফরমেটে আপনার দুই রকম চিত্র। তাহলে পার্থক্য কি মানসিকতায়?
মুমিনুল: কিছুটা মানসিক সম্পর্কতো আছেই। এছাড়া ওয়ানডে ও টেস্টের পরিস্থিতির উপরও নির্ভর করে সব।  টেস্টে দেখে শুনে বুঝে অনেক শট খেলার সময় পাই। ভুল হলে তা শুধরে নেয়ারও সময় থাকে। বল ডট দিলেও চাপ থাকে না। কিন্তু ওয়ানডেতে সেটা নয়। এখানে বল দেখে খেলতে হয়, আর বলের সঙ্গে সঙ্গে চলতে হয়। ডট দিলেই চাপ বাড়তে থাকে। আমি টেস্টটাই বেশি উপভোগ করি। হয়তো এ কারণেই দুই ফরমেটে আমার পারফরম্যান্স দুই রকম।

প্রশ্ন: টেস্টে মাঠে নামেন অনেক দিন পর পর আর ওয়ানডেও খেলা হয় না। এই অবস্থা খেলায় কতটা প্রভাব ফেলে?
মুমিনুল: সত্যি কথা, অনেক প্রভাব ফেলে। আন্তর্জাতিক অঙ্গনে টেস্ট খেলার সুযোগ আমাদের খুবই কম থাকে। অনেক দিন পর পর মাঠে নামি। একটা বা দুইটা ম্যাচ খেলার সুযোগ পাই। সেখানে নিজেকে মেলে ধরারও খুব সুযোগ থাকে না। এরপর আন্তর্জাতিক ওয়ানডে দলেও নিয়মিত নই। যে কারণে চর্চাটাও থাকে না। তবে আমি নিজেকে শক্ত রাখি। ঘরোয়া ক্রিকেটে যতটা সুযোগ পাই খেলি। এটা শুধু আমার ক্ষেত্রেই নয়, বাংলাদেশের অনেক ক্রিকেটারের বেলাতেই এমন হয়। তাই সবাইকে এই সময়টাতে মানসিকভাবে শক্ত থাকতে হয়। থাকতে হবেই, নয়তো আপনি হারিয়ে যাবেন।

প্রশ্ন: আপনার সতীর্থরা এখন ইংল্যান্ডের পথে, নিশ্চয় খারাপ লাগে? কিভাবে নিজেকে সান্ত্বনা দেন?
মুমিনুল: আসলে কষ্টতো একটু হয়ই। কিন্তু যখন মন খারাপ হয় বা খারাপ লাগে তখন আমার আম্মার দিকে তাকাই। প্যারালাইসিসে তার দেহের এক পাশ অচল হয়ে গিয়েছিল। আম্মা সেখান থেকে নিজের চেষ্টাতে এখন একাই হাঁটতে পারেন। এই নিয়ে তিনি নিজে নিজে অনেক কিছু করার চেষ্টা করেছেন এখনো করছেন। তাকে দেখে আমিও হাল ছাড়ি না, আমিও কষ্ট করি, চেষ্টা করে যাই যেন সুযোগটা আমাকে খুঁজে নেয়। আসলে এটাই জীবন। কখনও ভালোর গ্রাফ উপরে থাকবে কখনো নিচে।

প্রশ্ন: এবারের লীগ কেমন লাগছে?
মুমিনুল: বেশ ভালো লাগছে। বিশেষ করে উইকেটগুলো ব্যাটসম্যানদের জন্য। এবারের উইকেট অনেক ভালো। যে কোনো ব্যাটসম্যান যদি চায় তাহলে এবার এক হাজার রান করতে পারবে। তবে ব্যাটসম্যানদের ক্ষুধা থাকতে হবে। আমাদেরতো অনেকের মধ্যে একটা ম্যাচ ভালো রান পেলে অন্য ম্যাচে আর রানের ক্ষুধা থাকে না।
প্রশ্ন: অধিনায়ক নাসির দলে নেই, তাকে কতটা মিস করবেন?

মুমিনুল: অবশ্যই মিস করবো। সে দলের জন্য অনেক গুরুত্বপূর্ণ একজন ক্রিকেটার ছিল। তার জন্য শুভকামনা রইলো, সে যেন সুযোগ পেলে ভালো খেলে দেশে ফিরতে পারে।-এমজমিন
২৯ এপ্রিল ২০১৭/এমটিনিউজ২৪ডটকম/এপি/ডিসি