শুক্রবার, ২৬ মে, ২০১৭, ০৫:১২:৪৮

চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফির ইতিহাসে সেরা ৫ কীর্তি

চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফির ইতিহাসে সেরা ৫ কীর্তি

স্পোর্টস ডেস্ক: আগামী পহেলা জুন ইংল্যান্ডে এন্ড ওয়েলসে শুরু হচ্ছে আইসিসি চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফির অষ্টম আসর। ১৯৯৮ থেকে ২০১৩ সাল পর্যন্ত হওয়া সাতটি আসর পেয়েছে অনেক রেকর্ড। সেইসব রেকর্ড থেকে চ্যাম্পিয়ন্স সেরা পাঁচটি ব্যাটিং ইনিংস ও সেরা বোলিং ফিগারের ফ্লাশব্যাক করা হলো।  
সেরা পাঁচ ব্যাটিং ইনিংস:

শচীন টেন্ডুলকার (ভারত): ১২৮ বলে ১৪১
১৯৯৮ সালের ২৮ অক্টোবর বাংলাদেশের মাটিতে প্রথম আইসিসি নকআউট (বর্তমানে আইসিসি চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফি) টুর্নামেন্টের তৃতীয় কোয়ার্টারফাইনালে মুখোমুখি হয় ভারত ও অস্ট্রেলিয়া। ঢাকার বঙ্গবন্ধু জাতীয় স্টেডিয়ামের ঐ ম্যাচে টসে হেরে ব্যাটিংয়ে নেমে মহাবিপদেই পড়ে ভারত। স্কোর বোর্ডে ৮ রান উঠতেই সৌরভ গাঙ্গুলী ও মোহাম্মদ আজহারউদ্দিন আউট। এরপর রাহুল দ্রাবিড় ও অজয় জাদেজাকে নিয়ে ঘুরে দাঁড়ান টেন্ডুলকার। দ্রাবিড় ৪৮ ও জাদেজা ৭১ রানে ফিরলেও, ওয়ানডে ক্যারিয়ারের ১৯তম সেঞ্চুরি তুলে নেন ক্রিকেট লিজেন্ড। শেষ পর্যন্ত ১৩টি চার ও ৩টি ছক্কায় ১২৮ বলে ১৪১ রান করেন টেন্ডুলকার।

তার ব্যাটিং দৃঢ়তায় ভারত পায় ৮ উইকেটে ৩০৭ রানের বড় সংগ্রহ। জবাবে ২৬৩ রানে গুটিয়ে যায় অস্ট্রেলিয়া। ফলে ৪৪ রানে ম্যাচ জিতে সেমিফাইনালে ওঠে ভারত। ব্যাট হাতে দুর্দান্ত নৈপুন্যের পর বল হাতে ৩৮ রানে ৪ উইকেট নিয়ে ম্যাচসেরা হন টেন্ডুলকার।  

জ্যাক ক্যালিস (দক্ষিণ আফ্রিকা): ১০৭ বলে ১১৩*
আইসিসি নকআউট (বর্তমানে আইসিসি চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফি) ট্রফির প্রথম সেমিফাইনালে মুখোমুখি হয় দক্ষিণ আফ্রিকা ও শ্রীলঙ্কা। বৃষ্টির কারণে ৩৯ ওভারে নেমে আসা ম্যাচে টস হেরে ব্যাটিংয়ে নেমে ৮৭ রানে ৪ উইকেট হারিয়ে চাপে পড়ে যায় দক্ষিণ আফ্রিকা। সেখান থেকে  জ্যাক ক্যালিসের দৃষ্টিনন্দন ইনিংসে ভর করে ৭ উইকেটে ২৪০ রানের লড়াকু সংগ্রহ পায় প্রোটিয়ারা। ৫ নম্বরে ব্যাটিংয়ে নেমে ৫টি করে চার ও ছক্কায় ১০৭ বলে ১১৩ রান করে অপরাজিত থাকেন তিনি। প্রোটিয়া দলের দ্বিতীয় সর্বোচ্চ রান ৩০, করেছিলেন ড্যারেল কালিনান। জবাবে ১৩২ রানেই গুটিয়ে যায় শ্রীলঙ্কা। বৃষ্টি আইনে ৯২ রানের জয় নিয়ে ফাইনালে ওয়েস্ট ইন্ডিজের প্রতিপক্ষ হয় দক্ষিণ আফ্রিকা।  

অ্যান্ডি ফ্লাওয়ার (জিম্বাবুয়ে): ১৪৫ বলে ১৬৪ রান
তৃতীয় আসর থেকে আইসিসি নকআউট ট্রফি নাম বদলে হয় আইসিসি চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফি। কলম্বোর মাটিতে অনুষ্ঠিত ঐ আসরে পুল-২ এর ম্যাচে ১৪ সেপ্টেম্বর মুখোমুখি হয়েছিলো ভারত ও জিম্বাবুয়ে। টস জিতে প্রথমে ব্যাট করে মোহাম্মদ কাইফের অপরাজিত ১১১ ও রাহুল দ্রাবিড়ের ৭১ রানে ৬ উইকেটে ২৮৮ রান করে ভারত।  

জবাবে ৪৩ রানে ২ উইকেট হারানোর পর জিম্বাবুয়েকে একাই সামনের দিকে টেনে নেন উইকেট কিপার অ্যান্ডি ফ্লাওয়ার। তার অসাধারণ ইনিংসের উপর ভর করে এক পর্যায়ে জয়ের স্বপ্নও দেখছিলো জিম্বাবুয়ে। ৪৯তম ওভারের চতুর্থ বলে ফ্লাওয়ার বিদায় নিলে ২৭৪ রান পর্যন্ত গিয়ে ১৪ রানে ম্যাচ হারে জিম্বাবুয়ে। তিন নম্বরে নেমে ১৩টি চারে ২১৫ মিনিট উইকেটে থেকে ১৪৫ বল মোকাবেলা করে ১৬৪ রান করেন ফ্লাওয়ার। ফ্লাওয়ারের এই ইনিংসটি চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফির ইতিহাসে সেরা পাঁচের মধ্যে জায়গা করে নেয়।

শেন ওয়াটসন (অস্ট্রেলিয়া): ১৩২ বলে ১৩৬*
২০০৯ সালে দক্ষিণ আফ্রিকায় অনুষ্ঠিত চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফির ষষ্ঠ  আসরের সেমিফাইনালে ইংল্যান্ডের বিপক্ষে ১৩২ বলে ১০টি চার ও ৭টি ছক্কায় অপরাজিত ১৩৬ রানের দারুণ ইনিংস খেলেন ওয়াটসন। তাই ইংলিশদের ২৫৮ রানের টার্গেট ৪৯ বল ও ৯ উইকেট হাতে রেখেই জিতে নেয় অস্ট্রেলিয়া। তার ঐ ইনিংসটি চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফির সেরার ইনিংসের একটি। অবশ্য ফাইনালেও নিউজিল্যান্ডের বিপক্ষে অপরাজিত ১০৫ রান করে অস্ট্রেলিয়াকে টানা দ্বিতীয়বারের মত শিরোপা এনে দেন ওয়াটসন।  

শিখর ধাওয়ান (ভারত): ৯৪ বলে ১১৪ রান
২০১৩ সালের ৬ জুন ইংল্যান্ডের কার্ডিফে 'বি' গ্রুপের প্রথম ম্যাচে লড়াইয়ে নামে ভারত ও দক্ষিণ আফ্রিকা। ঐ ম্যাচে ওয়ানডে ক্যারিয়ারের প্রথম সেঞ্চুরির স্বাদ পান ভারতের বাঁ-হাতি ওপেনার শিখর ধাওয়ান। ১২টি চার ও ১টি ছক্কায় ৯৪ বলে ১১৪ রানের ইনিংস খেলেন তিনি এবং উদ্বোধণী জুটিতে রোহিত শর্মার সাথে ১২৮ বলে ১২৭ রানের জুটি গড়েন। শেষের দিকে রবীন্দ্র জাদেজার ২৯ বলে অপরাজিত ৪৭ রানে ৭ উইকেটে ৩৩১ রানের বড় স্কোর পায় ভারত। জবাবে ৩০৫ রান পর্যন্ত যেতে সমর্থ হয় দক্ষিণ আফ্রিকা। আর ভারত জয় পায় ২৬ রানে।  
সেরা পাঁচ বোলিং ইনিংস:

শেন ও'কনর (নিউজিল্যান্ড): ৪৬ রানে ৫ উইকেট
২০০০ সালে কেনিয়ার নাইরোবিতে চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফির দ্বিতীয় আসরে সেমিফাইনালে মুখোমুখি হয় পাকিস্তান ও নিউজিল্যান্ড। ঐ ম্যাচে ৯ দশমিক ২ ওভারে ৪৬ রানে ৫ উইকেট নেন কিউই বাঁ-হাতি পেসার ও'কনর। যা ছিল আসরের সেরা বোলিং ফিগার ।

১৭৮ রানে ষষ্ঠ উইকেট হারানোর পর পাকিস্তানের হাল ধরেন আব্দুর রাজ্জাক ও ওয়াসিম আকরাম। সপ্তম উইকেটে ৫৯ রান যোগও করে ফেলেন তারা। এরপরই ভেলকি দেখান ও'কনর। রাজ্জাক-আকরামসহ লোয়ার-অর্ডারের আরও ২ উইকেট তুলে নিয়ে পাকিস্তানকে ২৫২ রানেই বেঁধে দেন তিনি।  শুরুতে পাকিস্তানের ওপেনার ইমরান নাজিরকে তুলে নিয়ে ম্যাচে নিজের উইকেটসংখ্যা ৫ এ উত্তীর্ণ করেন তিনি। তার বোলিং নৈপুন্যে শেষ পর্যন্ত ম্যাচটি ৪ উইকেটে জিতে নেয় নিউজিল্যান্ড।  

অরবিন্দ ডি সিলভা (শ্রীলঙ্কা): ১০ ওভারে ১৬ রানে ১ উইকেট

২০০২ সালের আসরে কলম্বোতে অস্ট্রেলিয়ার বিপক্ষে টুর্নামেন্টের দ্বিতীয় সেমিফাইনালে ১০ ওভারে ২ মেডেনসহ ১৬ রানে ১ উইকেট নেন শ্রীলঙ্কার অফ-স্পিনার অরবিন্দ ডি সিলভা। শেষ পর্যন্ত ঐ বোলিং ফিগারের জন্যই ম্যাচ সেরা হন তিনি। আর চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফির ইতিহাসে দ্বিতীয় সেরা ইকোনমি বোলার হিসেবে নিজের নামটি রেকর্ড বইয়ে লিখে রাখেন ডি সিলভা।  

ম্যাচে টস জিতে প্রথমে ব্যাট করে ১৬২ রানেই গুটিয়ে যায় অস্ট্রেলিয়া। পরবর্তীতে ৩ উইকেট হারিয়ে ৪০ ওভারেই জয় তুলে ফাইনালে উঠে শ্রীলঙ্কা। এরপর বৃষ্টির কারণে ফাইনাল ম্যাচটি পুরোপুরি শেষ না হওয়াতে ভারতের সাথে শিরোপা ভাগাভাগি করে নেয় লঙ্কানরা।  

পারভেজ মাহরুফ (শ্রীলঙ্কা): ১৪ রানে ৬ উইকেট
ভারতে ২০০৬ আসরে মুম্বাইয়ে কোয়ালিফাইং রাউন্ডের শেষ ম্যাচে ওয়েস্ট ইন্ডিজে বিপক্ষে ৯ ওভারে ২ মেডেন নিয়ে ১৪ রানে ৬ উইকেট নেন শ্রীলঙ্কার পারভেজ মাহরুফ। এটি চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফির ইতিহাসে সেরা বোলিং ফিগার। এমনকি তার ক্যারিয়ারের সেরা ফিগারও এটি।  মাহরুফের বিধ্বংসী বোলিংয়ে ৮০ রানেই গুটিয়ে যায় ওয়েস্ট ইন্ডিজ। পরবর্তীতে ৯ উইকেটে ম্যাচ জিতে শ্রীলঙ্কা। কোয়ালিফাইং রাউন্ডে চ্যাম্পিয়ন হলেও, গ্রুপ পর্বের বাঁধা পরবর্তীতে আর পেরোতে পারেনি লঙ্কানরা।

মাখায়া এনটিনি (দক্ষিণ আফ্রিকা): ২১ রানে ৫ উইকেট
২০০৬ সালের চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফিতে মোহালিতে 'বি' গ্রুপের ম্যাচে মুখোমুখি হয় পাকিস্তান ও দক্ষিণ আফ্রিকা। পাকিস্তানের বোলারদের নিয়ন্ত্রিত বোলিংয়ে ৮ উইকেটে ২১৩ রানের পুঁিজ পায় প্রোটিয়ারা।  
জবাব দিতে নেমে দক্ষিণ আফ্রিকার পেসার মাখায়া এনটিনির তোপে পড়ে খাদের কিনারায় পড়ে যায় পাকিস্তান। এনটিনি প্রথম ৫ ওভারে ৮ রানে ৫ উইকেট শিকার করেন। তার পুরো বোলিং ফিগার ২১ রানে ৫ উইকেটের সুবাদে ৪৭ রানের মধ্যে ৮ উইকেট হারিয়ে বসে পাকিস্তান। শেষ পর্যন্ত ৮৯ রান করতে পারে পাকিস্তান। দলকে ১২৪ রানের বড় ব্যবধানে জয় এনে দেয়ায় ম্যাচ সেরা হন এনটিনি।  

লাসিথ মালিঙ্গা (শ্রীলঙ্কা): ৩৪ রানে ৪ উইকেট
চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফির গত আসরে কার্ডিফে 'এ' গ্রুপে নিউজিল্যান্ড ও শ্রীলঙ্কার মধ্যকার ম্যাচটি ছিল লো-স্কোরিং। ফ্লাট-পিচে ১৩৮ রানেই অলআউট হয় লঙ্কানরা। জয়ের জন্য মাত্র ১৩৯ রানের টার্গেট পেরিয়ে যেতে ৯ উইকেট হারাতে হয় নিউজিল্যান্ড। কিউইদের কর্ষ্টাজিত জয়ের স্বাদ দেন শ্রীলঙ্কার পেসার লাসিথ মালিঙ্গা। ম্যাচে ৩৪ রানে ৪ উইকেট নেন তিনি।
২৬ মে ২০১৭/এমটিনিউজ২৪ডটকম/আ শি/এএস

Follow করুন এমটিনিউজ২৪ গুগল নিউজ, টুইটার , ফেসবুক এবং সাবস্ক্রাইব করুন এমটিনিউজ২৪ ইউটিউব চ্যানেলে