রবিবার, ১৬ জুলাই, ২০১৭, ০৯:৪৫:২২

ভারতের সবচেয়ে দরিদ্র ১০ ক্রিকেটারের জীবনের করুণ কাহিনী

ভারতের সবচেয়ে দরিদ্র ১০ ক্রিকেটারের জীবনের করুণ কাহিনী

স্পোর্টস ডেস্ক: ভারতীয় এসব ক্রিকেটারদের সাফল্য ভাবিয়ে তুলবে আপনাকে। জেনে নিন,  ভারতের সবচেয়ে দরিদ্র ১০ ক্রিকেটারের জীবনের করুণ কাহিনী।    

১) পাঠান ব্রাদার্স: ভারতীয় ক্রিকেটে পাঠান ভাইদের ছোটবেলা কেটেছে মসজিদে।  যে মসজিদে মাত্র মাসিক ২৫০ টাকায় ঝাঁট দেওয়ার কাজ করতে ইরফান ও ইউসুফের বাবা।  পরে একটি ঘর নিলেও সেখানেই থাকতেন পরিবারের পাঁচজন।  নতুন জুতা কেনার পয়সা না-থাকায় পুরনো জুতা কিনে তা নিজেই সেলাই করতেন ইরফান।  বাকিটা ইতিহাস।

২) মুনাফ প্যাটেল: গুজরাটের ইকহারে জন্ম মুনাফ মুসা প্যাটেলের ছোটবেলা কেটেছে অত্যন্ত দরিদ্র পরিবারে।  বাবা ছিলেন একজন দিনমজুর।  শিশুশ্রমিক হিসেবে ভারতীয় দলের প্রাক্তন পেসার দৈনিক ৩৫ টাকা বেতনে কাজ করতেন টাইলস ফ্যাক্টরিতে।  গ্রামের এক ব্যক্তি এ দেখে মুনাফকে জুতো কিনে দেন এবং বরোদার এক ক্রিকেট ক্লাবে ওকে ভর্তি করার ব্যবস্থা করেন।  পরে এমআরএফ পেস ফাউন্ডেশনে ট্রায়ালে সুযোগ পান মুনাফ।  সেখানে কিংবদন্তি অজি পেসার ডেনিস লিলির তত্ত্বাবধানে প্র্যাকটিস করেন বরোদার ডানহাতি।  পের স্টিভ ওয়া মুনাফের জন্য সচিনের কাছে দরবার করেন।  ২০০৬-এ টেস্ট অভিষেক হয় মুনাফের।  দেশের হয়ে ১৩টি টেস্ট ও ৭০টি ওয়ান ডে খেলেছেন তিনি।

৩) জহির খান: কপিল দেবের পর একমাত্র ভারতীয় পেসার যার দখলে তিনশোর বেশি টেস্ট উইকেট রয়েছে।  কিন্তু জহিরের ক্রিকেটার হয়ে ওঠার রাস্তা ছিল অমসৃণ।  মুম্বাই ন্যাশানাল ক্রিকেট ক্লাবে সুযোগ পাওয়ায় জহিরকে আন্টির সঙ্গে মুম্বাইয়ে এক হাসপাতালের একটি বেডের মধ্য দিন কাটাতে হয়।  কারণ তার আন্টি হাসপাতালে হেল্পারের কাজ করতেন।  দু-বেলা খাবারের পয়সাও ছিল জহিরের কাছে।  না-খেয়ে সকালে প্র্যাকটিসে যেতেন জহির।  মেন্টর সুধীর নায়েক জহিরকে মাসে পাঁচ হাজার টাকার কাজ দেন৷ তা দিয়েই সমস্ত খরচ চালাতেন ভারতীয় বোলিংয়ের ‘জ্যাক’।  ২০০০ সালে কেনিয়ার বিরুদ্ধে ওয়ান ডে এবং বাংলাদেশের বিরুদ্ধে টেস্ট অভিষেক হয় ভারতীয় ক্রিকেটে সেরা বাঁ-হাতি পেসারের।  ভারতের হয়ে ৯২টি টেস্ট এবং ২০০টি ওয়ান ডে খেলেছেন জহির।

৪) রবীন্দ্র জাদেজা: সৌরাষ্ট্রে জন্ম রবীন্দ্র অনিরুদ্ধ জাদেজার বাবা একটি বেসরকারি সংস্থায় সিকিউরিট গার্ডের কাজ করতেন।  দ্ররিতার সঙ্গে লড়াই করা জাদেজার ক্রিকেটার হওয়ার স্বপ্ন ছিল অলীক।  তবুও চেষ্টা চালিয়ে যান।  কিন্তু ২০০৫-এ দুর্ঘটনায় মায়ের মৃত্যুর পর ক্রিকেট ছেড়ে দিতে চেয়েছিল জাদেজা।  কিন্তু বোন পার্টটাইম কাজ করে তার খেলার খরচ চালাতেন।  ২০০৮-এ বিরাট কোহলির নেতৃত্বে ভারতের অনূর্ধ্ব-১৯ বিশ্বকাপ জয়ী দলের সহ-অধিনায়ক ছিলেন জাদেজা।

৫) বিনোদ কাম্বলি: মুম্বাইয়ের বস্তি থেকে ক্রিকেটের রাজপথে আগমন ঘটে কাম্বলির।  বাবা ছিলেন এক সামান্য মেকানিক।  মাসে যার আয় ছিল মাত্র ৫০০ টাকা।  একটি ঘরের ১৮জন থাকত।  শোনা যায় ব্যাট কেনার জন্য চুরিও করেছিলেন কাম্বলি।  কিন্তু চমক ঘটে স্কুল ক্রিকেটে সারদাশ্রম বিদ্যামন্দিরের হয়ে শচিন টেন্ডুলকারের সঙ্গে তার ৬৬৪ রানের পার্টনারশিপ শুধু ভারতেই নয়, ক্রিকেটবিশ্বেও নজর কাড়ে।   

৬) মোহাম্মদ শামি: উত্তরপ্রদেশের আমরোহা জেলার সাহসপুর নামে এক প্রত্যন্ত গ্রামে জন্ম শামির বাবা ছিলেন এক দরিদ্র কৃষক।  ক্রিকেটের প্রতি ছেলের আগ্রহ দেখে গ্রাম থেকে ২২ কিলোমিটার দূরে মোরাদাবাদে এক ক্রিকেট কোচিং সেন্টারে তাকে ভর্তি করেন বাবা।  উত্তরপ্রদেশে অনূর্ধ্ব ১৯ দলে সুযোগ না পাওয়ায় শামিকে কলকাতায় পাঠান কোচ বদরুদ্দিন সিদ্দিকি।  এখান থেকেই প্রথমে বাংলা এবং ২০১৬ পাকিস্তানের বিরুদ্ধে ওয়ান ডে সিরিজে ভারতীয় দলে ডাক পান শামি।  যিনি এখন টিম ইন্ডিয়ার পেস বোলিংয়ের মূল সম্পদ।

৭) হরভজন সিং: ভারতের টেস্ট ক্রিকেটের ইতিহাসে তৃতীয় সর্বোচ্চ উইকেট প্রাপক ভাজ্জি বাবার মৃত্যুর পর পরিবারের আর্থিক হাল ধরতে কানাডায় ট্রাক ড্রাইভার হওয়ার কথা ভেবেছিলেন।  ১৯৯৮-এ দেশের হয়ে টেস্ট অভিষেক হলেও প্রথম আটটি টেস্টের পর দল থেকে বাদ পড়েছিলেন।  কিন্তু ২০০১-এ অস্ট্রেলিয়া সিরিজে ফের ভারতীয় দলে ডাক পান হরভজন।  বাকিটা ইতিহাস।

৮) বীরেন্দ্র সেওয়াগ: নজফগড়ের নবাব বলে পরিচিত সেওয়াগ একান্নবর্তী পরিবারে বড় হয়েছেন।  ৫০ জনের বেশি লোক এক সঙ্গে থাকতেন।  সেওয়াগের বাবার গমের ব্যবসা ছিল।  বাবা চাইতেন সেওয়াগ বড় হয়ে এই ব্যবসা দেখুক।  কিন্তু বীরুর তা না-পসন্দ ছিল।  প্রায় ৮৪ কিলোমিটার দূরে ক্রিকেট খেলতে যেতেন।  শচিন টেন্ডুলকরের ব্যাটিং টিভিতে দেখে প্র্যাকটিস করতেন বীরু।  বকিটা ইতিহাস।  দেশের হয়ে ১০৪টি টেস্ট এবং ২৫১টি ওয়ান ডে খেলেছেন সেহওয়াগ।  ১৯৯৯-এ মোহালিতে পাকিস্তানের বিরুদ্ধে ওয়ান ডে সিরিজে প্রথমবার ভারতীয় দলের জার্সি পড়েন বীরু।

৯) উমেশ যাদব: ভারতীয় দলের পেসার উমেশের বাবা ছিলেন একজন খনি শ্রমিক।  ক্রিকেট খেলার মতো অর্থ ছিল না।  ছোটবেলায় টেনিস বলেই খেলতেন উমেশ।  কিন্তু বড় হয়ে পুলিশের চাকরি করার ইচ্ছে ছিল বিদর্ভের এই ডানহাতি পেসারের।  কিন্তু ট্রায়ালে সুযোগ পাওয়ার পর ধীরে ধীরে ক্রিকেটার হওয়ার স্বপ্ন দেখতে শুরু করেন তিনি।  ২০১০-এ ভারতের জিম্বাবোয়ে সফরের দলে সুযোগ পান উমেশ।  পরের বছর ঘরের মাঠে ওয়েস্ট ইন্ডিজের বিরুদ্ধে টেস্ট অভিষেক হয় ভারতীয় দলের এই স্পিডস্টারের।

১০) রমেশ পওয়ার: দেশের হয়ে ২টি টেস্ট ও ৩১টি ওয়ান ডে খেলা মুম্বাইয়ের এই অফ-স্পিনার জীবন সংগ্রাম অন্যদের অনুপ্রেরণা দেওয়ার মত।  ছোটবেলায় মা মারা যাওয়ায় পর রমেশের বোন তাকে সাহায্য করেন।  মোটা থাকার জন্য কেরিয়ারের শুরুতে অনেক কটুক্তি শুনতে হয়েছিল রমেশকে।  কিন্তু ২০০৪-এ ভারতের পাকিস্তান সফরে জাতীয় দলে ডাক পাওয়ার পর নিঃশব্দে সবকিছুর জবাব দেন মুম্বাইয়ের এই অফ-স্পিনার।
১৪ জুলাই ২০১৭/এমটিনিউজ২৪/হাবিব/এইচআর

Follow করুন এমটিনিউজ২৪ গুগল নিউজ, টুইটার , ফেসবুক এবং সাবস্ক্রাইব করুন এমটিনিউজ২৪ ইউটিউব চ্যানেলে