শনিবার, ২২ জুলাই, ২০১৭, ০১:১৬:৫৫

এবারের বিপিএলে আরও বাড়ছে বিদেশি

   এবারের বিপিএলে আরও বাড়ছে বিদেশি

স্পোর্টস ডেস্ক: অদ্ভুতুড়ে এক গোঁ ধরেছে ফ্র্যাঞ্চাইজিরা—বাংলাদেশ প্রিমিয়ার লিগে (বিপিএল) ম্যাচপ্রতি বিদেশির সংখ্যা বাড়াতে হবে। সুযোগ দিতে হবে একাদশে চারজনের পরিবর্তে পাঁচ বিদেশি খেলার। মানসম্পন্ন পর্যাপ্ত দেশি খেলোয়াড় নেই—এই অজুহাতে বিপিএল গভর্নিং কাউন্সিলও ওই দাবি মেনে নিতে নিমরাজি যেন। কিন্তু মান বিবেচনায় বিদেশি খেলোয়াড়দের মজুদটাও যে অপর্যাপ্ত হওয়ার আশঙ্কা, সেটি তো ভেবে দেখছেন না কেউ।

গত বিপিএলে এক ঝলক আলো ফেলা যাক। তাহলেই ব্যাপারটি স্পষ্ট হবে দিবালোকের মতো। ২০১৬ সালের এই টি-টোয়েন্টি আসরে সাকুল্যে বিদেশি আসেন ৫৪ জন। সবচেয়ে বেশি পাকিস্তানের ১৫ জন। ওয়েস্ট ইন্ডিজ (১৩), শ্রীলঙ্কা (১০), ইংল্যান্ড (১০) থেকেও বিপিএল জোয়ারে গা ভাসানো ক্রিকেটারের সংখ্যা কম নয়। এর বাইরে নিউজিল্যান্ডের দুই, আফগানিস্তানের তিন এবং নেদারল্যান্ডসের একজন খেলে গেছেন বাংলাদেশে। টেস্ট খেলুড়ে দেশগুলোর মধ্যে ভারত, অস্ট্রেলিয়া, দক্ষিণ আফ্রিকা ও জিম্বাবুয়ের কেউ আসেননি সেবার। এর মধ্যে প্রথম তিন দলের কোনো ক্রিকেটারের এবারও বিপিএলে আসার সম্ভাবনা ক্ষীণ, অন্তত মানসম্পন্ন কেউ তো নিশ্চিতভাবেই আসছেন না। আর জিম্বাবুয়ের ক্রিকেটাররা বিপিএলের মানদণ্ড বিবেচনায় ‘মেয়াদোত্তীর্ণ’ হয়ে গেছেন আগেই! অবশ্য এবারের বিপিএলে একাদশে পাঁচ বিদেশির সুযোগ দিলে অমন মেয়াদ ফুরোনো মানহীন ক্রিকেটারের ছড়াছড়ি হওয়ার আশঙ্কা প্রবল। গতবারের সঙ্গে তুলনা করে দেখুন না। সেবার বিপিএলে দল ছিল সাতটি। প্রতি দলের প্রতি ম্যাচের একাদশে চারজন করে বিদেশি খেলানোর সুযোগ ছিল। অর্থাৎ, প্রতি রাউন্ডকে একক-ভিত্তি হিসেবে ধরলে সর্বোচ্চ ২৮ জন বিদেশি। তবে রেজিস্ট্রেশন তো আর চারজন করে নয়। দলের প্রয়োজন, ফর্মের ওঠানামা, ক্রিকেটারদের প্রাপ্যতা সব মিলিয়ে একাদশে বিদেশি খেলোয়াড় হয়েছে অদল-বদল। ২৮ জনের জায়গা পূরণ হয়েছে ৫৪ জন দিয়ে। এবারের বিপিএলে দলসংখ্যা বাড়ছে একটি। সঙ্গে একাদশেও বিদেশি বাড়ানোর প্রস্তাব। তো আট দলের প্রতি ম্যাচের একাদশে পাঁচ বিদেশি করে ধরলে মোট ৪০ জন ক্রিকেটার। গত বিপিএলে এই একক-ভিত্তি ২৮ গিয়ে দাঁড়িয়েছে প্রায় দ্বিগুণ, অর্থাৎ ৫৪-তে। সে হিসাবে এবারের ৪০ এর দ্বিগুণ প্রায় ৮০ জন বিদেশি ক্রিকেটার।

প্রশ্ন হলো, বিপিএলে খেলার জন্য এত মানসম্পন্ন বিদেশি ক্রিকেটার রয়েছে কি না!

গতবার যে ৫৪ বিদেশি খেলে গেছেন, তাঁদের সবাই-ই তো ক্রিকেটীয় সামর্থ্যে মানোত্তীর্ণ নন। বরিশাল বুলসে সাত বিদেশির মধ্যে পাকিস্তানি রুম্মান রাইস চার ম্যাচে নেন মোটে চার উইকেট; শ্রীলঙ্কার জীবন মেন্ডিস আট ম্যাচে ১৪৬ রান এবং দিলশান মুনাবীরা ৬ ম্যাচে করেন ৪৪ রান। চিটাগং ভাইকিংসের আট বিদেশির মধ্যে গ্রান্ট এলিয়ট তিন ম্যাচে করেন মোটে আট রান; চতুরঙ্গ ডি সিলভার একমাত্র ম্যাচ কেটেছে উইকেটহীন, করেছেন ১৯ রান। কুমিল্লা ভিক্টোরিয়ান্সের আটজনের মধ্যে বিবর্ণ বিদেশির সংখ্যা কম নয়। তিন খেলায় রায়ান টেন ডেসকাটের ব্যাট থেকে আসে মোটে ৩৭ রান, আসহার জাইদি উইকেটহীন তিন ম্যাচে করেন ২৯ রান, ইমাম ওয়াসিম দুই ম্যাচে দুই উইকেট নেওয়ার পাশাপাশি করেন ৫ রান। গতবার সবচেয়ে বেশি ৯ জন বিদেশি খেলিয়েছে ঢাকা ডায়নামাইটস। কুমার সাঙ্গাকারা (১৩ ম্যাচে ৩৭০ রান), ডোয়াইন ব্রাভোদের (১৩ ম্যাচে ২১ উইকেট ও ১০৪ রান) পারফরম্যান্স প্রত্যাশা মেটালেও তা পারেননি মাহেলা জয়াবর্ধনে (২ ম্যাচে ৪২ রান), রবি বোপারা (৬ ম্যাচে ৫ উইকেট ও ৩৫ রান), ইংল্যান্ডের ম্যাট কোলস (৩ ম্যাচে ২ উইকেট ও ২৩ রান), ওয়েস্ট ইন্ডিজের রন্সফোর্ড বিটনরা (২ ম্যাচে ২ উইকেট)।

খুলনা টাইটানসকে বিদেশিরা ভুগিয়েছেন খুব। ৯ ম্যাচ খেলে রিকি ওয়েসেলস, ১২ ম্যাচ খেলে নিকোলাস পুরান এবং ৬ ম্যাচ খেলে আন্দ্রে ফ্লেচারের কেউ একটিও পঞ্চাশ পেরোনো ইনিংস খেলতে পারেননি। পাকিস্তানি বাঁহাতি স্পিনার মোহাম্মদ আসগরের ২ ম্যাচে ১ উইকেটও ভীষণ হতাশার। সাত বিদেশির মধ্যে একমাত্র জুনায়েদ খানই (১৪ ম্যাচে ২০ উইকেট) আস্থার প্রতিদান দিতে পেরেছেন। রাজশাহী কিংসের সাত বিদেশির মধ্যে উমর আকমল (৯ ম্যাচে ১০৬ রান), মোহাম্মদ সামি (৯ ম্যাচে ৫ উইকেট), মিলিন্দা সিরিবর্ধনের (১ ম্যাচে ৪ রান, উইকেট নেই) চেয়ে দেশি ক্রিকেটারদের পারফরম্যান্স ছিল বেশ ভালো। আর রংপুর রাইডার্সে গত মৌসুমে বিদেশি খেলেছেন আট জন। এর মধ্যে পাকিস্তানের নাসির জামশেদ (৩ ম্যাচে ৪৯ রান), আনোয়ার আলী (৬ ম্যাচে দুই উইকেট), শ্রীলঙ্কার জিহান রুপাসিংহে (এক ম্যাচে ৮ রান), সচিত্র সেনানায়েকেদের (এক ম্যাচে ৪ ওভারে ৪৯ রান দিয়ে উইকেটশূন্য) ব্যাট-বল কথা বলেনি একেবারেই।

গতবার সাত ফ্র্যাঞ্চাইজির ৫৪ বিদেশি ক্রিকেটারদের মধ্যে এমন ধারহীন ব্যাটিং, রংহীন বোলিং কতজনের! এবার আট ফ্র্যাঞ্চাইজির সম্ভাব্য প্রায় ৮০ বিদেশি ক্রিকেটারের মধ্যে সংখ্যাটি আরো কত বাড়ার শঙ্কা! একাদশে বিদেশি সংখ্যা না বাড়িয়ে ওই জায়গায় সুযোগটা কি তাই দেশি ক্রিকেটারদেরই প্রাপ্য নয়?
২২ জুলাই ২০১৭/এমটিনিউজ২৪.কম/হাবিব/এইচআর

Follow করুন এমটিনিউজ২৪ গুগল নিউজ, টুইটার , ফেসবুক এবং সাবস্ক্রাইব করুন এমটিনিউজ২৪ ইউটিউব চ্যানেলে