স্পোর্টস ডেস্ক: বাংলাদেশের টেস্ট ইতিহাসে ওপেনিংয়ে ৩১২, ২২৪ ও ১৮৫ রানের শীর্ষে থাকা সেরা তিন জুটির মালিক তামিম ইকবাল ও ইমরুল কায়েস। শুধু তাই নয়, ওপেনিং জুটিতে এই দু’জনের ব্যাট থেকে এসেছে প্রথম হাজার রানও। এই পর্যন্ত দু’জন মিলে ৪৮ টেস্টে করেছেন ২২০৫ রান। তাদের পরেই অবস্থান ৬৬৫ রান করে জাভেদ ওমর ও নাফিস ইকবালের। তারা খেলেছিলেন ২০০৪ থেকে ২০০৬ পর্যন্ত। এ পরিসংখ্যানই বলে ওপেনিংয়ে তামিম-ইমরুল দেশের সেরা জুটি। কিন্তু সেই সেরা জুটি ভেঙেই চলছে অস্ট্রেলিয়াকে হারানোর পরিকল্পনা।
ইমরুল কায়েসকে শেষ টেস্টে কোচ খেলিয়েছিলেন তিনে। এবারো ইমরুলকে তিনে খেলারই নিশ্চয়তা দিয়েছেন কোচ চন্ডিকা হাথুরুসিংহে। এদিকে চোখ বিসিবির। এর ফলে অনেক নাটকীয়তা করে দলে ফেরানো দেশের তিন নম্বরে খেলা সেরা ব্যাটসম্যান মুমিনুলের জায়গা থাকছে না বললেই চলে। ওপেনিংয়ে ইমরুল ও তিন মুমিনুলের মতো সেরা ব্যাটসম্যানকে সরিয়ে অজিদের বিপক্ষে টাইগারদের প্রধান কোচের পরিকল্পনা আপাতত বোঝা অনেকটাই কঠিন। নতুন এই পজিশনে ইমরুল অস্বস্তি বোধ করলেও দলের জন্য নিজে মানিয়ে নিতেই যুদ্ধ করছেন।
ইমরুল বলেন, ‘সবশেষ টেস্ট ম্যাচ, যেটা শ্রীলঙ্কায় খেলেছি, সেখানেও কিন্তু আমি তিনে ব্যাটিং করেছি। আমি আসলে কোচের সঙ্গে কথা বলেছি, কোচ আমাকে বলেছেন তিনে ব্যাটিং করার জন্য। নেটে সেভাবেই ব্যাটিং করছি। এ ছাড়া ঘরোয়া ক্রিকেটেও তিন নম্বরে ব্যাটিং করেছি। ওপেনার থেকে তিন নম্বরে ব্যাটিং করা কঠিন, তবে মানিয়ে নিতে হচ্ছে।’
চাপের মুখে বোর্ড সভাপতির হস্তক্ষেপে মুমিনুল হককে অস্ট্রেলিয়ার বিপক্ষে ঘোষিত ১৪ সদস্যের দলে জায়গা দিলেও তার একাদশে থাকা অনেকটাই যে অনিশ্চিত তা বোঝাই যাচ্ছিল। কোচের ছক অনুসারে ওপেনিংয়ে তামিম ইকবালের সঙ্গী হবেন সৌম্য সরকার। এখন পর্যন্ত টেস্টে ওপেনিংয়ে তামিম-সৌম্য জুটির সংগ্রহ ৮ ম্যাচে ৩৭৫ রান। হাথুরুসিংহে এখন তামিম- সৌম্যকে নিয়েই সাজাচ্ছেন তার ওপেনিং জুটির পরিকল্পনা। আর মুমিনুলকে সরিয়ে জায়গা দেয়া হচ্ছে ইমরুলকে। কিন্তু এখানে মানিয়ে নিতে পারবেনতো ইমরুল! কতটা কঠিন হবে তার জন্য নতুন পজিশনে নিজেকে প্রমাণ করার। ইমরুল বলেন, ‘আমি যখন ব্যাটিংয়ে নামার জন্য প্যাড পরে বসে থাকি, তখন নিজের মধ্যে অস্থিরতা কাজ করে, কখন মাঠে যাবো। এটা আসলে মানিয়ে নিতে হয়। তামিমকে যদি দেন, ও পারবে না (ওপেনিং থেকে হঠাৎ তিনে)। একটা সময় আমিও পারতাম না। তারপরও মানিয়ে নিতে হচ্ছে। দলের জন্য, দলের প্রয়োজনে খেলতে হচ্ছে।’
তবে টেস্ট শুরুর আগে একাদশ কেমন হবে তা বলা খুবই কঠিন। তাই তিনে ইমরুলের অন্যতম প্রতিদ্বন্দ্বী মুমিনুল দলে থাকাতে একটা বাড়তি চাপও থাকছে তার উপর। ইমরুল মনে করেন প্রতিযোগিতা থাকা তার জন্যই নয়, দলের সবার জন্য বেশ ভালো। বরং তিনি এই প্রতিযোগিতা উপভোগই করবেন। ইমরুল বলেন, ‘এটা ইতিবাচক দিক। টিমে খেলোয়াড়দের মধ্যে প্রতিযোগিতা থাকলে সেটা ভালো। প্রতিযোগিতা বেশি থাকলে ম্যানেজমেন্ট সবচেয়ে ভালো খেলোয়াড়কে খেলানোর জন্য বেছে নিতে পারে। আমি বলবো এটা একটা ভালো দিক দলের জন্য এবং তারা পারফর্মও করবে।’ কী কারণে দেশের সেরা ওপেনিং জুটিকে ভাঙ্গা হচ্ছে? আর কেনই বা তিনের সেরা ব্যাটসম্যান মুমিনুলকে সরিয়ে অস্ট্রেলিয়ার বিপক্ষে ইমরুলকে চ্যালেঞ্জ নিতে ঠেলে দেয়া হচ্ছে। একি কোনো কৌশল নাকি মুমিনুলকে কোচ পছন্দই করেন না। ইমরুল মনে করেন এটি নিছকই কোনো কৌশল। তিনি বলেন, ‘আমার মনে হয় পরিকল্পনার কারণেই আমি তিন নম্বরে। ম্যানেজমেন্ট এটাই ভাবছে। সৌম্য ওপেনিংয়ে গত কয়েকটা ম্যাচে ভালো করেছে। এ কারণে কোচ ভেবেছেন আমাকে তিন নম্বরে খেলানোর।’
অন্যদিকে অস্ট্রেলিয়ার বিপক্ষে ইমরুলকে তিনে খেলার নিশ্চয়তা দিলেও তিনি যে সব সময় তিনেই খেলবেন তা নিয়ে কোচ কোনো কিছু বলেননি। এই ব্যাটসম্যানের বিশ্বাস তাকে আসলে এখানে পরীক্ষাই করা হচ্ছে। পাস করলে হয়তো এই নয়া পজিশনে খেলে যাওয়ার নিশ্চয়তাও মিলবে। তিনি বলেন, ‘নিয়মিত তিনে খেলবো কিনা এই বিষয়ে কিছু বলা হয়নি। এটি নির্ভর করছে আমার খেলার ওপর। পারফর্ম করলে হয়তো তিনে থাকবো। সেটা না পারলে হয়তো দলেই থাকবো না। আর একটা বিষয় এখন আমি এই সব নিয়ে ভাবছি না। দলের প্রয়োজনে যেন পারফর্ম করতে পারি- সেটাই আমার কাছে আসল। আর তিনে খেলেই বিশ্বের অনেক ব্যাটসম্যান নিজেকে সেরা পজিশনে নিয়ে গেছেন। তাই আমি চেষ্টা করবো আমার সাধ্য মতো।’
'২২ আগস্ট ২০১৭/এমটিনিউজ২৪.কম/হাবিব/এইচআর