মঙ্গলবার, ১৪ নভেম্বর, ২০১৭, ০২:১৯:৪০

টি-টোয়েন্টি মানে ম্যাড়মেড়ে ক্রিকেটও!

টি-টোয়েন্টি মানে ম্যাড়মেড়ে ক্রিকেটও!

স্পোর্টস ডেস্ক: টি-টোয়েন্টি ক্রিকেট মানে রুদ্ধশ্বাস উত্তেজনা। শেষ ওভারের লড়াই। রান-বলের দ্বৈরথে টানটান শিহরণ। আইপিএল, বিগব্যাশ থেকে শুরু করে বাংলাদেশের বিপিএল-টি-টোয়েন্টির সব ফ্র্যাঞ্চাইজি টুর্নামেন্টে এটাই সবচেয়ে আকর্ষণ। কিন্তু এবারের বিপিএল দিচ্ছে ভিন্ন অভিজ্ঞতা। যেখানে টি-টোয়েন্টি মানে ম্যাড়মেড়ে ক্রিকেটও।

সিলেট, ঢাকা মিলিয়ে টুর্নামেন্টে এখন পর্যন্ত ১২টি ম্যাচ হয়েছে। তিনটি ম্যাচের জয়-পরাজয়ের ব্যবধান ৮ উইকেট, দুটি ম্যাচের ৯ উইকেট। পরে ব্যাট করে জয়ী দলের সর্বনিম্ন জয়ের ব্যবধানই যখন ৪ উইকেটের, তখন অবশ্য এটাকে স্বাভাবিকই মনে হয়। আগে ব্যাট করে জেতা দলের সর্বনিম্ন জয়ের ব্যবধান হলো ১১ রানের। শেষ ওভারের উত্তেজনাও ছড়িয়েছে মাত্র একটি ম্যাচে। সেটাও কুমিল্লা ভিক্টোরিয়ানসের বিপক্ষে সহজ ম্যাচটি সিলেট সিক্সার্স কঠিন করে জেতায়।

এই অবস্থা সিলেট, ঢাকা দুই পর্বেই। সিলেটে দুটি ম্যাচে আগে ব্যাট করা দল দুই শর ওপর রান করলেও বেশির ভাগ ম্যাচেই সেই অর্থে কোনো উত্তেজনা ছিল না। ঢাকা পর্বে এসে তো বিপিএল আরও ম্রিয়মাণ। একটি ম্যাচে প্রথমে ব্যাট করা দল ১৭০ রান করলেও বাকি তিন ম্যাচে করেছে ১৩৪,১০১ ও ১১৫। এই তিন ম্যাচে অনুমিতভাবেই হেসেখেলে জিতেছে পরে ব্যাটিং করা দল।

টি-টোয়েন্টির বিচারে বিপিএল তাই হতাশাই ছড়াচ্ছে-কী হলো টুর্নামেন্টটার! স্কোরবোর্ডে রান নেই, প্রতিদ্বন্দ্বিতাপূর্ণ ম্যাচ নেই, রুদ্ধশ্বাস উত্তেজনা নেই। এই তিন ‘নেই’ এর কারণ বোধ হয় একটাই-নেই চোখ ঝলসানো ব্যক্তিগত পারফরম্যান্স। শহীদ আফ্রিদি, কাইরন পোলার্ড, ডোয়াইন ব্রাভোর মতো টি-টোয়েন্টি তারকারা এবারও আছেন। সঙ্গে বাংলাদেশের সাকিব আল হাসান, মুশফিকুর রহিম, মাশরাফি বিন মুর্তজা, সাব্বির রহমান, সৌম্য সরকাররাও। কিন্তু নেই তারার ঝলকানি, আলো-ঝলমলে পারফরম্যান্স। আফ্রিদির ১৭ বলে ৩৭, মুমিনুল হকের ৪৪ বলে ৬৩ রানের একটা ইনিংস বা আবু জায়েদের এক ম্যাচে ৪ উইকেট এই ম্লান বিপিএলকে আলোকিত করে তুলতে মোটেই যথেষ্ট নয়।

বাংলাদেশ ওয়ানডে দলের অধিনায়ক ও বিপিএলে রংপুর রাইডার্সকে নেতৃত্ব দেওয়া মাশরাফি বিন মুর্তজাও এই নিষ্প্রাণ বিপিএলে একটু অবাক। প্রথমে রসিকতা করে বললেন, ‘আমরা আছি হারা দলে, প্রাণ থাকবে কীভাবে?’ পরে চেষ্টা করলেন কারণ অনুসন্ধানের, ‘একটা কারণ হতে পারে, উইকেট হয়তো সে রকম হচ্ছে না। টি-টোয়েন্টি রানের খেলা। কিন্তু সেটাই হচ্ছে না বিপিএলে। শিশির একটা প্রভাব ফেলতে পারে। জয়-পরাজয়ের ব্যবধান বাড়িয়ে দিচ্ছে এটা।’

তবে এবারের বিপিএলে একেবারেই কিছু হয়নি, তা মানতে রাজি নন মাশরাফি, ‘সিলেটে কুমিল্লা ও ঢাকাকে হারিয়ে দিয়েছে সিলেট। এটা অবশ্যই বড় ঘটনা। ঢাকা, কুমিল্লা এবার যেকোনো বিচারে সেরা দল। অন্য দলগুলো তাদের কাছাকাছিও নেই।’ তাঁর আশা, টুর্নামেন্ট যত সামনে এগোবে, দেখা মিলবে জমজমাট ম্যাচেরও।

মিরপুরের গ্যালারি ভরতেও প্রয়োজন সে রকম ম্যাচ। সিলেটে প্রথমবারের মতো বিপিএল হয়েছে বলে উন্মাদনা ছড়িয়েছে সেটি। কাড়াকাড়ি হয়েছে টিকিট নিয়ে। কিন্তু মিরপুরে গ্যালারি পড়ে থাকছে ফাঁকা। মাঠে পারফরম্যান্সের আলো নেই, নেই টি-টোয়েন্টির রোমাঞ্চ। বিপিএল থেকে হয়তো সে কারণেই মুখ ফিরিয়ে থাকছেন দর্শকেরা।

এখন পর্যন্ত এবারের বিপিএলের একটা ভালো দিকও অবশ্য আছে। আগের আসরগুলোতে খেলার সমান্তরালে চলেছে নেতিবাচক আলোচনা। কখনো ফিক্সিং, কখনো খেলোয়াড়দের পাওনা নিয়ে অভিযোগ, কখনো ফ্র্যাঞ্চাইজির অনিয়ম, আবার কখনো বোর্ডের স্নেহধন্য দলের অন্যায় সুবিধা পাওয়া-বিপিএল বিতর্কিত হয়েছে নানা কারণে। এবার এখন পর্যন্ত সেসব কিছুই নেই। এক মাঠ বাদে সর্বত্র স্বাস্থ্যকর হাওয়া। টুর্নামেন্ট-জুড়ে এই হাওয়াটা বয়ে গেলেই ভালো। সঙ্গে যদি মাঠের খেলাটাও একটু জমে, তাহলেই হয়!
এমটিনিউজ২৪ডটকম/আ শি/এএস

Follow করুন এমটিনিউজ২৪ গুগল নিউজ, টুইটার , ফেসবুক এবং সাবস্ক্রাইব করুন এমটিনিউজ২৪ ইউটিউব চ্যানেলে