মঙ্গলবার, ২১ নভেম্বর, ২০১৭, ০৭:৪৩:৪৯

শুনলে অবাক হবেন- মুশফিকদের দলে কে এই হোসেন আলী?

শুনলে অবাক হবেন- মুশফিকদের দলে কে এই হোসেন আলী?

স্পোর্টস ডেস্ক: খুলনার ইনিংসের দ্বিতীয় ওভার। হঠাতই চোখ আটকে গেল। বিস্ময়! একশ চল্লিশের উপর গতি? কে এই হালকা পাতলা গড়নের ছেলেটি?

বয়স সবে ১৯! দৈহিক গড়নে সেটার ছাপ স্পষ্ট। হালকা-পাতলা গড়ন। কিন্তু বলে দারুণ গতি। পিচ করে যখন উইকেটরক্ষকের গ্লাভসে যাচ্ছে, ছোবল তুলছে, চমৎকার ক্যারি। উইকেটের পেছনে দাঁড়ানো মুশফিকও বারকয়েক গ্লাভসে নিতে বিভ্রান্ত! দারুণ গতির সঙ্গে চলনসই বাউন্স, নিয়ন্ত্রিত লাইন-লেন্থ। খুলনা টাইটানসের বিপক্ষে সর্বোচ্চ গতি তুললেন। ঘণ্টায় ১৪৩ কিলোমিটার বেগে বল করা ছেলেটি রাজশাহী কিংসের পেসার হোসেন আলী।

উঠে এনেছেন নরসিংদী শহর থেকে ১৫ কিলোমিটার দূরের প্রত্যন্ত এক গ্রাম থেকে। যেখানে ক্রিকেট খেলার কোন অবকাঠামোগত সুযোগ-সুবিধাই নেই।

আগের ম্যাচে ঢাকা ডায়নামাইটসের এভিন লুইস, কুমার সাঙ্গাকারা, সুনিল নারিনকে সাজঘরে পাঠিয়েছিলেন আলোচনায় এসেছেন তরুণ এই পেসার। মঙ্গলবার দারুণ এক স্লোয়ারে উপড়ে দিলেন ৫৬ রানে থাকা মাহমুদউল্লাহ রিয়াদকে। একাদশে পাঁচ বিদেশির ভিড়ে স্থানীয় পরীক্ষিত ক্রিকেটাররা যেখানে সুযোগই পাচ্ছেন কম, সেখানেই এই আনকোরা পেসার বানিয়ে ফেলেছেন আবির্ভাব মঞ্চ। দল ভরসা রাখছে। আস্থার প্রতিদানও দিচ্ছেন!

গতির ঝড় তোলা নরসিংদীর সম্ভাবনাময় এই পেসার সম্পর্কে জানতে যেতে হবে দুই বছর পেছনে। ফরিদপুর জেলা স্টেডিয়ামে ১৭ বছরের পেসারকে আবিষ্কার করেন বিসিবির টুর্নামেন্ট কমিটিতে অস্থায়ীভাবে কাজ করা আমির বাবু। মাদারীপুরের এই ক্রীড়া সংগঠকের উদ্যোগেই বদলায় হোসেনের ভাগ্য।

বিপিএলে খুলনা-রাজশাহী লড়াই যখন রোমাঞ্চ ছড়াচ্ছে, তখন অজানা সেই গল্পটাই শেনালেন আমির বাবু, ‘ন্যাশনাল চ্যাম্পিয়নশিপের সমন্বয়ক হিসেবে ফরিদপুরে যাই। সেখানে নরসিংদী জেলা দলের হয়ে খেলতে দেখি হোসেন আলীকে। আম্পায়াররা ওকে চাকিং বোলার হিসেবে চিহ্নিত করছিল। জানতে পারলাম টেপ টেনিসে খেলে। চাপ দিয়ে বল করার অভ্যাস। আমি ওকে কিছুদিন ট্রেনিং করালাম। তারপর থেকে আর টেপ টেনিস বল হাতে নেয়নি। নির্বাচক মিনহাজুল আবেদিন ও হাবিবুল বাশারকে অনুরোধ করি জাতীয় দলের নেটে দেখার জন্য। ওরা কথা রাখে। হাথুরুসিংহে, কোর্টনি ওয়ালশ ওর খুব প্রশংসা করে।’

সম্ভাবনার হাতছানি। দ্রুতই বিসিবির একাডেমি ভবনে থিতু হন হোসেন আলী। এবছর বিসিবির হাই-পারফরম্যান্স (এইচপি) দলের হয়ে অস্ট্রেলিয়া সফরেও যাওয়ার কথা ছিল। যেতে না পারায় আক্ষেপ ঝরল আমির বাবুর কণ্ঠে, ‘ছেলেটার দুর্ভাগ্য পাসপোর্টে জন্মতারিখ ও মায়ের নাম ভুল থাকায় ভিসা দেয়নি অস্ট্রেলিয়ান দূতাবাস। যেতে পারলে আরও এগিয়ে যেতে পারত।’
জাতীয় লিগ, প্রিমিয়ার লিগ তখনও স্বপ্নের অতীত! জেলা লিগ খেলে এভাবে উঠে আসার উদাহরণ যে খুব একটা নেই। অথচ সম্ভাবনার দুয়ার দ্রুতই খুলতে থাকল হোসেন আলীর। নজরে আসার পর সুযোগ মেলে জাতীয় দলের নেটেও। খেলে ফেলেছেন ১০টি প্রিমিয়ার লিগ ও ৪টি প্রথম শ্রেণির ম্যাচ।

জেলা লিগের একজন ক্রিকেটারকে হঠাৎ করে জাতীয় দলের নেটে পাঠানোর ইচ্ছে জাগল কেন? আমির বাবু পরিষ্কার করলেন কারণটা, ‘ওর বোলিং অ্যাকশন শ্রীলঙ্কার সুরাঙ্গা লাকমালের মতো। আমি একসময় জাতীয় দলের নেটে বল করেছি লিপু ভাই, বাদশা ভাই, রকিবুল ভাইদের। ভাবলাম যদি ন্যাশনাল নেট পর্যন্ত পাঠানো যায়, ভাল করে হয়তবা কারও না কারও চোখে পড়তেই পারে। যেহেতু শ্রীলঙ্কান কোচ আছে। উনাদের জানা হয়ত, লাকমালকে তো কাছ থেকেই দেখেছেন তারা। ডাকতেও পারে। তখন নরসিংদীর কোচ-ম্যানেজাররা হাসাহাসি করছিল আমার চেষ্টা দেখে। কিন্তু আমার বিশ্বাস ছিল, যদি ঠিক প্রক্রিয়ায় ও আগাতে পারে, বিসিবি ওকে রেখে দেবে।’

আমির বাবুর সঙ্গে যখন কথা হচ্ছিল, একটা কট অ্যান্ড বোল্ডের সুযোগ মিস করলেন হোসেন। টেলিভিশন পর্দায় সেটি দেখলেন আমিরও, হোসেনের পরের ডেলিভারিটায় চোখ রেখে জানালেন জহুরী চোখের বিশ্লেষণ, ‘ডেলিভারির সময় ওর মাথাটা বেশি বেকে যায়। এতে শেষ সময়ে চোখ সরে যায় টার্গেট থেকে। পরে ফলো-থ্রুতেও সমস্যা করে এটি। মাথা এক দিকে বেশি ঝুঁকে পড়ায় চোখটাও সরে যায়। ওর এটা ঠিক করতে হবে।’

বিসিবির অধীনে নানা ধরনের কাজ করেন আমির বাবু। কখনও তরুণ প্রতিভা খুঁজে আনা, কখনও কোন টুর্নামেন্টের সমন্বয়ক। অসুস্থতার কারণে টানা কাজ করতে পারেন না। এবার লেগস্পিনার খোঁজার মিশনে নেমেছেন। জামালপুরে পেয়েছেন ৬ ফুট ২ ইঞ্চি উচ্চতার একজন লেগিকে। তাকেও জাতীয় দলের নেটে এনে পরখ করানোর চেষ্টা আছেন ঝিনুক থেকে মুক্তো খুঁজে আনায় পারদর্শী এই জহুরী।-চ্যানেল আই
এমটি নিউজ/এপি/ডিসি

Follow করুন এমটিনিউজ২৪ গুগল নিউজ, টুইটার , ফেসবুক এবং সাবস্ক্রাইব করুন এমটিনিউজ২৪ ইউটিউব চ্যানেলে