মাহবুব মিলন: কী ঠান্ডা মাথায় নেতৃত্ব দিয়ে গেলেন মাহমুদউল্লাহ! কী ঠান্ডা মাথায় নেতৃত্ব দিয়ে গেলেন মাহমুদউল্লাহ!
অল্পের জন্য পারলো না রংপুর রাইডার্স! গত দু’ম্যাচে পারলেও এবার তীরে এসে ডুবলো তরী! মাশরাফির দল হেরে গেল ৯ রানে!
এই পরাজয় যতটা না খুলনা টাইটান্সের কাছে, তারচেয়েও বেশি বোধহয় মাহমুদউল্লাহ রিয়াদের কাছে!
কী ঠান্ডা মাথায় নেতৃত্ব দিয়ে গেলেন মাহমুদউল্লাহ! স্নায়ুক্ষয়ী ম্যাচের লাগাম হারাতে বসার পরও বোলারদের ব্যবহার করলেন কী নিপুণ দক্ষতায়! তরুণ আফিফ হোসেন ২ ওভারে ৪ রানে ২ উইকেট নেয়ার পরও ম্যাচের কন্ডিশন বিবেচনায় আর বল হাতে দেন নি।
এদিকে আজই টি-টোয়েন্টিতে অভিষিক্ত ২১ বছর বয়সী বাঁহাতি স্পিনার তানভির ইসলামের হাতে মাঠে ২ ওভার করিয়ে ৯ রান দিয়ে লাগাম পরিয়েছেন রংপুরের রান গতিতে। সিনিয়র বোলারদের অদল-বদল করে আক্রমনে এনে ফল নিয়ে এসেছেন নিজ দলের অনুকুলে।
তারও আগে ম্যাচের প্রথমার্ধে করেছেন দলের পক্ষে সর্বোচ্চ ৫৯ রান। ৩৬ বলের ইনিংসে ছিল ৬টি চার ও ২টি ছক্কা! এই ইনিংসের সুবাদে মাহমুদউল্লাহ সাময়িকভাবে হয়ে গিয়েছিলেন বিপিএলের চলতি আসরের সর্বাধিক রান সংগ্রাহক (৭ ম্যাচে ৪১.৪৪ গড়ে ২৪৮ রান)। যদিও পরে ফিফটি করে তাকে টপকে শীর্ষে উঠে গেছেন রংপুর রাইডার্সের রবি বোপারা (৭ ম্যাচে ২৭৮ রান)।
তবে বিপিএলে সব আসর মিলিয়ে সবার চেয়ে বেশি রান করার গৌরব অর্জন করলেন মাহমুদউল্লাহ। এ পর্যন্ত ৫৮ ম্যাচের ৫৪ ইনিংসে তার রান ১৩৩৬, গড় ২৯.০৪, ফিফটি ৭টি এবং সর্বোচ্চ ৬২। ৫৩ ম্যাচে ১২৯২ রান নিয়ে এতদিন শীর্ষে থাকা রাজশাহী কিংসের মুশফিকুর রহিম চলে গেলেন দুই নম্বরে।
বাংলাদেশের ক্রিকেটের ‘পঞ্চরত্নের’ একজন তিনি। কিন্তু অন্য চারজন- মাশরাফি বিন মর্তূজা, সাকিব আল হাসান, তামিম ইকবাল ও মুশফিকুর রহিমের মতো তার অতটা নামডাক নেই! দর্শকদের আগ্রহের শীর্ষে থাকেন না, মিডিয়ার ফোকাসও তার উপর পড়ে কম!
অথচ নীরবে-নিভৃতে নিজের কাজটা ঠিকই করে যান! বেশিরভাগক্ষেত্রে আড়ালে-আবডালেই তার যত কাজ-কারবার! বীরোচিত নৈপূণ্যের পরও অধিকাংশ সময় নায়ক হওয়া হয়না তার! থেকে যেতে হয় পার্শ্বনায়ক হিসেবেই! আজ অবশ্য ঠিকই নায়কের মর্যাদা পেয়েছেন! ব্যাটিংয়ে ফিফটি ও নেতৃত্বের ক্যারিশমা মিলিয়ে পেয়েছেন ম্যাচ সেরার পুরষ্কার!
গত জুনে ইংল্যান্ডে অনুষ্ঠিত চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফিতে নিউজিল্যান্ডের বিপক্ষে ৩৩ রানে ৪ উইকেট হারানোর পরও ২৬৫ রান চেজ করে অবিশ্বাস্য এক ম্যাচ ৫ উইকেটে জিতেছিল বাংলাদেশ। মাহমুদউল্লাহ অপরাজিত ছিলেন ১০২ রানে। কিন্তু প্লেয়ার অব দ্য ম্যাচ হন ১১৪ রান করা সাকিব আল হাসান! এরকম উদাহরণ খুঁজলে অনেক পাওয়া যাবে।
নিজেকে যথাসাধ্য উজাড় করে দেয়ার পরও অন্য সিনিয়রদের মতো মাহমুদউল্লাহকেও পড়তে হয়েছিল কোচ চান্দিকা হাথুরুসিংহের রোষানলে! গত মার্চ-এপ্রিলে শ্রীলংকা সফরে শততম টেস্টের দল থেকে বাদ পড়ার পর তাকে এমনকি বাংলাদেশেই ফেরত পাঠিয়ে দেয়ার উদ্যোগ নেয়া হয়েছিল! কিন্তু অধিনায়ক মাশরাফির দৃড় ভুমিকায় দলে টিকে গিয়েছিলেন মাহমুদউল্লাহ। এবং চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফিতে ঠিকই দিয়েছেন মাশরাফির আস্থার প্রতিদান!
গতবার নিচের সারির একটা দল নিয়েও খুলনা টাইটান্সকে দারুণ সাফল্য এনে দিয়েছিলেন। ব্যাটে-বলে নৈপূণ্যের পাশাপাশি তার ক্যাপ্টেন্সির যাদু সবার নজর কেড়েছে। এতটাই যে, মাশরাফি বিন মর্তূজা পর্যন্ত মাহমুদউল্লাহর ভূয়সী প্রশংসা করেছিলেন।
আজ মাশরাফি হারলেন সেই মাহমুদউল্লাহর কাছে! ব্যক্তিগত পারফরম্যান্সে! এবং ক্যাপ্টেন্সিতেও!
সবাই তো নিজ নিজ দলের জয় চাইবেই। এবং শেষ হাসি হাসবে এক দল। তবে তার দেখানো পথ অনুসরণ করে মাহমুদউল্লাহ দারুণভাবে এগিয়ে যাচ্ছেন দেখে ‘ম্যাশ’ নিজেও হয়তো খুশি হয়ে থাকবেন!-খেলাধুলা
এমটিনিউজ২৪/এইচএস/কেএস