সোমবার, ১৫ জানুয়ারী, ২০১৮, ০৬:৩৭:২৪

মাশরাফির নেতৃত্বের শক্তি দেখল জিম্বাবুয়ে

মাশরাফির নেতৃত্বের শক্তি দেখল জিম্বাবুয়ে

স্পোর্টস ডেস্ক: সহজ জয়ে ত্রিদেশীয় সিরিজ শুরু করলো বাংলাদেশ দল। বোলারদের পর ব্যাটসম্যানরাও অভিজ্ঞতার সঠিক ব্যবহার করেছে। জিম্বাবুয়ের দেয়া ১৭১ রান তুলতে মাত্র দুই উইকেট ও ২৯তম ওভার খরচা করেছে বাংলাদেশ।

কোন রকম ঝুঁকি ছাড়াই তামিমের ব্যাট থেকে এসেছে অপরাজিত ৮৪ রানের ইনিংস। ৯৩ বলে ৮ চার ও ১ ছয়ে ম্যাচের সর্বোচ্চ রান করেন তিনি। তবে উড়ন্ত সূচনা এসেছে বিজয়ের ব্যাট থেকে। শুরু থেকেই বাজে বল শাসন করে ইনিংসের দলের স্কোর বাড়িয়ে নেন তিনি।

বাউন্ডারির সাথে সিঙ্গেলের মিশেলে দ্রুত রান তুলছিল এই জুটি। তবে অতিরিক্ত শট খেলার প্রবণতা কাল হয়ে দাঁড়ায় বিজয়ের জন্য। চতুর্থ ওভারে ডানহাতি স্পিনার সিকান্দার রাজার বলে ডিপ মিড উইকেটে থাকা একমাত্র ফিল্ডারের হাতে ক্যাচ তুলেন তিনি।

আউট হওয়ার আগে ১৪ বলে ১৯ রান যোগ করে দলীয় ৩০ রানে আউট হন তিনি। বড় স্কোরের সুযোগ হাতছাড়া করা বিজয়ের বিদায়ে ক্রিজে নামা সাকিবকে নিয়ে ঝুঁকিহীন ব্যাটিং করেন তামিম।

ব্যাটিং পাওয়ারপ্লেতেই বাংলাদেশের স্কোর অর্ধ শত ছাড়িয়ে যায়। উইকেটে জমে গিয়ে হাত খুলে খেলতে থাকেন সাকিব আল হাসান। মুজারাবানির এক ওভারে টানা তিন চার তুলে নিয়ে খোলস থেকে বেরিয়ে আসেন তিনি।

ইনিংসের ১৫তম ওভারে তামিম ও সাকিবের জুটির ফিফটি পূর্ণ হয়। প্রান্ত বদল করে খেলে বাংলাদেশকে ইনিংসের ১৮তম ওভারেই একশ রানে পৌঁছে দেয় এই জুটি। সহজ জয়ে এগোতে থাকা বাংলাদেশ ইনিংসে উত্তেজনা ফিরিয়ে আনে গ্রাহাম ক্রিমার।

১৯তম ওভারে তামিম ইকবাল লেগ সাইড দিয়ে বের হয়ে যাওয়া বল খেলতে গিয়ে ব্যর্থ হন। জিম্বাবুয়ের ফিল্ডাররা কট বিহাইন্ডের আবেদন করার পর আম্পায়ারের সাড়াও পেয়ে যায়।

কিন্তু রিভিউ নিয়ে রক্ষা পান তামিম ইকবাল। কিন্তু ঠিক পরের ওভারেই ফের সুযোগ সৃষ্টি করে জিম্বাবুয়ে। অফ স্পিনার সিকান্দার রাজার বলে টার্নের জন্য খেলতে গিয়ে পরাস্ত হন সাকিব। ৩৭ রান করে দলীয় ১০৮ রানে আউট হন তিনি।

সাকিব সহজ ফিফটির সুযোগ হাতছাড়া করলেও তামিম ভুল করেননি। ইনিংসের ২৩তম ওভারে জোড়া বাউন্ডারি হাঁকিয়ে ফিফটি তুলে নেন এই অভিজ্ঞ টাইগার ওপেনার। ক্রিজে আসা মুশফিকের সাথে জুটির ফিফটি গড়ে বাংলাদেশ জয় নিশ্চিত করেন তামিম।

এর আগে ম্যাচের শুরুটা ফেভারিটের মত হয় বাংলাদেশের। জিম্বাবুয়ের বিপক্ষে টসে জিতে বোলিং করার সিদ্ধান্ত নেয়া বাংলাদেশ সফরকারীদের মাত্র ১৭০ রানে অল আউট করে সহজ জয়ের সুযোগ সৃষ্টি করে।

ইনিংসের শুরু থেকেই টাইগারদের উড়ন্ত সূচনা এনে দেন বোলার সাকিব। ইনিংসের প্রথম ওভারেই জিম্বাবুয়ের দুই উইকেট তুলে নিয়ে জিম্বাবুয়েকে ব্যাকফুটে ফেলে দেন তিনি।

ওপেনার সলেমন মিরেকে লেগ সাইড দিয়ে বের হয়ে যাওয়া বলে স্ট্যাম্পিংয়ের ফাঁদে ফেলেন সাকিব। সেখানেই থামেন নি সাকিব। তিন নম্বরে নামা ক্রেগ আরভিনকেও নিরীহ বলের ফাঁদে ফেলেন তিনি।

প্রথম ওভারে সাকিবের সাফল্যের পর অন্য প্রান্ত থেকেও জিম্বাবুয়ের নেমিসিস খ্যাত বাঁহাতি স্পিন চালিয়ে দেন কাপ্তান মাশরাফি। ইনিংসের ষষ্ট ওভারে এসে বল তুলে নেন মাশরাফি।

নিজের প্রথম উইকেটের জন্য বেশীক্ষণ অপেক্ষা করতে হয়নি টাইগার কাপ্তানকে। ইনিংসের সপ্তম ওভারে এসেই অফ স্ট্যাম্পের বাইরের বলে চড়াও হতে গিয়ে কট বিহাইন্ড হন ওপেনার মাসাকাদজা।

টেইলরের সাথে জুটি গড়ে জিম্বাবুয়েকে পথে ফেরানোর লড়াই করলেও মাশরাফির নিয়ন্ত্রিত বোলিংয়ে সেটা হয়ে ওঠে নি। নিয়মিত উইকেট হারিয়ে রান আটকে যায় জিম্বাবুয়ের। ব্যাটিং পাওয়ারপ্লেতে মাত্র ৩৫ রান তুলতে সক্ষম হয় জিম্বাবুয়ে।

ব্যাটিং পাওয়ারপ্লে শেষে প্রথমবারের মত মুস্তাফিজকে বল তুলে দেন মাশরাফি। প্রথম ওভার থেকেই আঁটসাঁট লাইন লেন্থে বল করে নতুন জিম্বাবুয়ের ব্যাটসম্যানদের কাজ কঠিন করে তোলেন তিনি।

স্পেলের তৃতীয় ওভারের দিকে জিম্বাবুয়ের তারকা ব্যাটসম্যান ব্র্যান্ডন টেইলরকে সাজঘরে ফেরান মুস্তাফিজ। ৪৫ বলে ২৪ রানের ইনিংস খেলে উইকেটে জমে গিয়েছিলেন তিনি।

কিন্তু মুস্তাফিজের ভালো লেন্থ থেকে বের হয়ে যাওয়া বলে কট বিহাইন্ড হয়ে ফিরে যান তিনি। টেইলরের বিদায়ে ওয়েলার ও সিকান্দার রাজা দেয়াল  হয়ে দাঁড়ায়। তবে বাকী বোলারদের মতই নিজের প্রথম ওভারে এসে সুযোগ সৃষ্টি করেছেন রুবেল হোসাইন।

ইনিংসের ২১তম ওভারে অফ স্ট্যাম্পের বাইরে করিডর ধরে বল করে ওয়েলারকে স্লিপে থাকা নাসিরের ক্যাচে পরিনত করেন। কিন্তু সহজ ক্যাচ লুফে নিতে ব্যর্থ হন নাসির। পাঁচ রানে খেলছিলেন ওয়েলার।

তবে শেষ রক্ষা হয়নি ওয়ালারের। ২৬তম ওভারে সানজামুলকে কাট করতে গিয়ে স্লিপে থাকা সাব্বিরের হাতে ধরা পড়েন তিনি। ৩০ বলে ১৩ রান যোগ করে আউট হন তিনি। উপরের সারির পাঁচ ব্যাটসম্যানের পতনে খেই হারায় নি উইকেটে জমে যাওয়া সিকান্দার রাজা।

সতর্ক ব্যাটিংয়ে জিম্বাবুয়ের স্কোর একশ ছাড়িয়ে নেন তিনি। একই সাথে ব্যক্তিগত ফিফটিও পূর্ণ করেন তিনি। কিন্তু বাংলাদেশি ফিল্ডারদের চাপের মুখে স্থায়ী হয়নি রাজার ইনিংস। নাসিরের করা ৪০তম ওভারে দ্রুত সিঙ্গেলের খোঁজে রান আউট হন তিনি।

৫২ রান করে স্কয়ার লেগে সিঙ্গেল নিতে গিয়ে সাকিবের দারুন থ্রো'র ফাঁদে পড়েন সিকান্দার রাজা। জিম্বাবুয়ের স্কোর তখন ১৩১ রান ছয় উইকেটে। নিজের দ্বিতীয় স্পেলে এসে ফের জিম্বাবুয়ে ক্যাম্পে আঘাত হানেন সাকিব।

শেষ দশ ওভারের খেলায় রান বাড়াতে গিয়ে সাকিবের ফাঁদে পড়েন কাপ্তান ক্রিমার। ২০ বল ১২ রান যোগ করে রুবেলের হাতে ক্যাচ তুলে দলীয় ১৬১ রানে সাজঘরে ফিরে যান ক্রিমান। বাকী কাজটা করেছেন রুবেল হোসেন।

৪৮তম ওভারে পর পর দুটি ইয়র্কারে ৩৩ রান করা পিটার মুর ও চাতারাকে বোল্ড করে হ্যাট্রিকের সম্ভাবনা জাগান তিনি। পরের ওভারে রাউন্ড দ্যা উইকেট থেকে শেষ ব্যাটসম্যান ব্লেসিং মুজারাবানিকে সরাসরি বোল্ড করে জিম্বাবুয়ের ইনিংসের ইতি টানেন।

শেষ পর্যন্ত ১৭০ রানে অল আউট হয় জিম্বাবুয়ে, আর মাশরাফির নেতৃত্বের শক্তি দেখল জিম্বাবুয়ে। বাংলাদেশের হয়ে সাকিব সর্বোচ্চ তিনটি উইকেট শিকার করেন। মুস্তাফিজ ও রুবেল দুটি করে উইকেট নিতে সক্ষম হন। মুর্তজা ও সানজামুলও উইকেটের দেখা পেয়েছেন।

বাংলাদেশ একাদশ-

তামিম ইকবাল, সাকিব আল হাসান, মুশফিকুর রহিম, মাশরাফি বিন মর্তুজা (অধিনায়ক), আনামুল হক বিজয়, মাহমুদউল্লাহ রিয়াদ,  মুস্তাফিজুর রহমান, নাসির হোসেন, রুবেল হোসেন, সাব্বির রহমান, সানজামুল ইসলাম।

জিম্বাবুয়ে একাদশ-

গ্রায়াম ক্রিমার (অধিনায়ক), ব্র্যান্ডন টেইলর, ব্লেসিং মুজারাবানি, টেন্ডাই চাতারা, ক্রেইগ আরভিন, কাইল জারভিস, হ্যামিল্টন মাসাকাদজা, সলোমন মীরে, পিটার মুর, সিকান্দার রাজা, ম্যালকম ওয়ালার।
এমটিনিউজ২৪.কম/টিটি/পিএস

Follow করুন এমটিনিউজ২৪ গুগল নিউজ, টুইটার , ফেসবুক এবং সাবস্ক্রাইব করুন এমটিনিউজ২৪ ইউটিউব চ্যানেলে