রবিবার, ২২ জুলাই, ২০১৮, ১২:৪০:০৪

অবশেষে মেসির ঝগড়ার গোপন তথ্য ফাঁস

অবশেষে মেসির ঝগড়ার গোপন তথ্য ফাঁস

স্পোর্টস ডেস্কঃ ২০১৮ রাশিয়া বিশ্বকাপের অন্যতম আলোচিত বিষয় ছিল আর্জেন্টিনার কোচের বিরুদ্ধে খেলোয়াড়দের বিদ্রোহের খবর। গ্রুপপর্বে নিজেদের দ্বিতীয় ম্যাচে ক্রোয়েশিয়ার কাছে ৩-০ গোলে হেরে যায় আর্জেন্টিনা। ওই হারের পরই বিশ্বজুড়ে ছড়িয়ে পড়ে, কোচ হোর্হে সাম্পাওলির বিরুদ্ধে বিদ্রোহ শুরু করে দিয়েছেন লিওনেল মেসিরা। গুঞ্জন নয়, ঘটনা ছিল সত্যি। ম্যাচ শেষে সত্যি সত্যিই কোচ সাম্পাওলির বিরুদ্ধে বিদ্রোহ করেন মেসিরা। খেলোয়াড়দের সেই বিদ্রোহে নেতৃত্ব দেন অধিনায়ক মেসি। কোচ সাম্পাওলির বিরুদ্ধে অনাস্থা প্রকাশ করেন তিনিই! কোচকে মেসি সরাসরিই বলে দেন, ‘আপনার উপর আমাদের আর আস্থা নেই।’

মেসি নিজেদের এই অভিমতটা কোচকে জানিয়ে দেন ম্যাচ শেষে বসা রুদ্ধদ্বার বৈঠকে। জরুরী ভিত্তিকে ডাকা বৈঠকে কোচ সাম্পাওলি ছাড়াও উপস্থিত ছিলেন তার দুই সহকারী সেবাস্তিয়ান বেক্কাসেসে ও লিওনেল স্কালোনি। খেলোয়াড়দের প্রতিনিধি হিসেবে অধিনায়ক মেসি ও হাভিয়ের মাচেরানো।

সশরীরে উপস্থিত না থাকলেও বৈঠকের নেপথ্যে ছিলেন আরও একজন। তিনি আর্জেন্টিনার ফুটবল অ্যাসোসিয়েশনের (এএফএ) সভাপতি ক্লদিও তাপিয়া। বোর্ড সভাপতির সঙ্গে পরামর্শ করেই কোচদের বিরুদ্ধে অনাস্থা জানাতে যান মেসিরা!

এতোদিন পর সেই বৈঠক এবং ঝগড়ার বিষয়টি ফাঁস করে দিয়েছেন আর্জেন্টিনার প্রতিথযশা সাংবাদিক, দেশটির জনপ্রিয় দুই পত্রিকা ‘টিওয়াইসি স্পোর্টস’ ও ‘ওলে’র কলামিস্ট অ্যারিয়েল সেনোসিয়াইন। নিজের লেখা বই ‘মুন্ডিয়াল এস হিস্টোরিয়াস’-এ ঘটনাটা স্পষ্টভাবে ফুটিয়ে তুলেছেন তিনি।


তিনি লিখেছেন বৈঠকের এজেন্ডা ছিল পরিস্কার, কোচের বিরুদ্ধে খেলোয়াড়দের অনাস্থা প্রকাশ। তার কথা, বেশ উচ্ছ্বাসের সঙ্গেই শুরু হয় বৈঠক। শুরুটা ছিল বেশ প্রানবন্ত। কিন্তু খুব দ্রুতই বৈঠকের পরিবেশ উত্তপ্ত হয়ে ওঠে এবং পণ্ড হয়ে যায়। কারণ, দু-এক কথা হওয়ার পরই মেসি স্পষ্ট কণ্ঠে জানিয়ে দেন, ‘আমরা যা চাই, তা পাই না। আপনার উপর আমাদের আর আস্থা নেই। (দল পরিচালনার বিষয়ে) আমাদেরও মতামত আছে। আমরা আমাদের মতামতের প্রতিফলন ঘটাতে চাই।’ মানে একাদশে কে খেলবে, কে খেলবে না, সেই সিদ্ধান্ত নেবেন মেসিরা, কোচরা নন!

এই কথা বলেই রুম থেকে বাইরে চলে আসেন মেসি। অ্যারিয়েল সেনোসিয়াইন লিখেছেন, মেসির কথা শুনে কোচ সাম্পাওলির মাথায় নেই যেন আকাশ ভেঙে পড়ে। বিস্ময়ে, হতাশায় মুষড়ে পড়েন তিনি। একটু পর তিনিও বাইরে চলে আসেন। এবং হোটেল লবিতে দ্বিতীয় দফা কোচ সাম্পাওলি ও মেসির মধ্যে উত্তপ্ত বাক্য বিনিময় হয়। এবার তাদের উত্তপ্ত বাক্য বিনিময়ের প্রত্যক্ষ স্বাক্ষী ছিলেন বোর্ড সভাপতি ক্লদিও তাপিয়াও।

তো মেসিকে সামনে পেয়েই প্রশ্ন ছুড়ে দেন কোচ সাম্পাওলি। বলেন, ‘তোমাদের মতামতটা কি। কোন বিষয়ে মতামত দিতে চাও?’ উত্তরে মেসি বলেন, ‘সব বিষয়েই।’ এরপরই বেশ ক্ষোভের সঙ্গে কোচ সাম্পাওলি বলেন, ‘অন্তত ১০ বার তুমি আমাকে বলেছ যে, কোন খেলোয়াড়কে তুমি মাঠে দেখতে চাও। কিন্তু আমি তো একবারও তোমাকে এমনটা বলিনি। আমি কখনোই আমার পছন্দের একজন খেলোয়াড়ের নামও তোমাকে দিইনি। কখনোই না।’

এরপর কথা আর বাড়তে দেননি এএফএস সভাপতি ক্লদিও তাপিয়া। দুজনকে থামিয়ে একটা সমঝোতা করে দেন তিনি। সেই সমঝোতাটা হয় মেসিদের চাওয়ার ভিত্তিতেই। বোর্ড সভাপতি ক্লদিও তাপিয়া কোচ সাম্পাওলিকে বলে দেন, খেলোয়াড়েরা যেভাবে চায়, সেভাবেই দল পরিচালনা করতে! তাদের কথা কাটাকাটির দৃশ্যটি ধরে পড়ে হোটেলের সিসিটিভি ক্যামেরায়।

সেই সমঝোতার ভিত্তিতেই নাইজেরিয়ার বিপক্ষে গ্রুপপর্বের শেষ ম্যাচে আর্জেন্টিনার একাদশ নির্বাচন করেন মেসিরা। কোচ সাম্পাওলির কোনো ভূমিকা ছিল না! বিষয়টি ফুটে উঠে ম্যাচ চলাকালীন সময়েই। ম্যাচের শেষ দিকে মেসি পানি পান করতে টাচ লাইনের কাছে যেতেই তার সঙ্গে বিড় বিড় করে কথা বলেন কোচ সাম্পাওলি।


কোচ সাম্পাওলি ‘নেতা’ মেসিকে বিড় বিড় করে কি বলেছিলেন, সেটাও গণমাধ্যমে চাওড় হয়ে যায়। সার্গিও আগুয়েরোকে বদলি হিসেবে নামানোর জন্য কোচ সাম্পাওলি অনুরোধ করেন মেসির কাছে। বলেন, ‘লিও, আমি কি আগুয়েরোকে নামাব?’

যাই হোক, ওই ঝগড়ার পর সহকারী কোচ সেবাস্তিয়ান বেক্কাসেসে পদত্যাগ করার সিদ্ধান্ত নেন। কিন্তু কোচ সাম্পাওলি তাকে পদত্যাগ করা থেকে বিরত রাখেন। কোচ হিসেবে কতৃত্ব হারিয়েও তারা থেকে যান দলের সঙ্গে। ফ্রান্সের বিপক্ষে দ্বিতীয় রাউন্ডের ম্যাচেও দল নির্বাচন করেন মেসিরাই। কোচ সাম্পাওলিরা স্রেফ কোচের ভূমিকায় অভিনয় করেন মাত্র!

তবে সাম্পাওলিদের আর অভিনয় করতে হবে না। কারণ, বিশ্বকাপ ব্যর্থতার দায় নিয়ে এরই মধ্যে আর্জেন্টিনার কোচের পদ থেকে সরে দাঁড়িয়েছেন সাম্পাওলি। গত ১৫ জুলাই এএফএ এক বিজ্ঞপ্তির মাধ্যমে নিশ্চিত করেছে, পারস্পারিক সমঝোতার ভিত্তিতেই কোচের পদ থেকে সরে গেছেন সাম্পাওলি।

সাম্পাওলির জায়গায় এখনো কাউকে কোচ নিয়োগ দেয়নি এএফএ। তবে যাকেই দায়িত্ব দিক, যিনিই দায়িত্ব নিন, বিশ্বকাপে কোচ সাম্পাওলির সঙ্গে মেসিদের ঝগড়ার অধ্যায়টি হবে তার জন্য অনেক বড় এক শিক্ষা।

Follow করুন এমটিনিউজ২৪ গুগল নিউজ, টুইটার , ফেসবুক এবং সাবস্ক্রাইব করুন এমটিনিউজ২৪ ইউটিউব চ্যানেলে