শনিবার, ১৫ সেপ্টেম্বর, ২০১৮, ০৪:০২:০৭

তখন জেতার চেয়ে অংশগ্রহণটাই বড় ছিলো

তখন জেতার চেয়ে অংশগ্রহণটাই বড় ছিলো

আরিফুর রহমান বাবু, ঢাকা: যদিও ওয়ানডে অভিষেক '৮৬ সালের ৩১ মার্চ। তারপরও ২০০০ সালে টেস্ট খেলা শুরুর আগপর্যন্ত এক যুগের বেশি সময়ে একদিনের ক্রিকেটে ‘শিশুই’ ছিল বাংলাদেশ। তখন জেতার চেয়ে অংশগ্রহণটাই বড় ছিল। তা থাকার কারণও ছিল। কেননা এখন যেমন নিয়মিত সিরিজ, টুর্নামেন্ট হচ্ছে তখন তা ছিলনা। প্রতি বছর গড়ে ২/৩ টি ওয়ানডে খেলার সুযোগ হতো।

তার প্রমাণ ১৯৮৬ থেকে ১৯৯৯ সালের বিশ্বকাপ অবধি টাইগাররা ১৩ বছরে খেলেছেন মোট ৩৭টি ওয়ানডে। এর মধ্যে আবার ১৯৮৭, ১৯৮৯, ১৯৯১, ১৯৯২, ১৯৯৩, ১৯৯৪ ও ১৯৯৬ সালে কোনো ম্যাচই খেলার সুযোগ ঘটেনি। ১৯৯৭ সালে আইসিসি চ্যাম্পিয়ন হবার সুবাদে ১৯৯৯ সালে প্রথম বিশ্বকাপ খেলার বছরেই ১২ টি ওয়ানডে খেলে বাংলাদেশ।

ইতিহাস জানাচ্ছে, প্রায় দুই যুগ আগে ১৯৯৫ সালে এই আরব আমিরাতের শারজায় শেষ বারের মত এশিয়া কাপের আসর বসেছিল। তাতে ভারত, পাকিস্তান ও শ্রীলঙ্কার সাথে অংশ নিয়েছিল বাংলাদেশও। বলার অপেক্ষা রাখেনা ঐ তিন সাবেক এশিয়া ও বিশ্বচ্যাম্পিয়নদের সাথে কুলিয়ে উঠতে পারেনি আকরাম খানের বাংলাদেশ। হেরেছিল তিন খেলাতেই।

তবে সনাৎ জয়াসুরিয়া, অরভিন্দ ডি সিলভা ও অর্জনা রানাতুঙ্গার শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে বোলিংয়ে দারুণ নৈপূণ্য দেখিয়েছিল বাংলাদেশ। সে ম্যাচে পেস বোলার সাইফুল ইসলামের ক্যারিয়ার সেরা (৪/৩৬) বোলিং ও হাসিবুল শান্ত, মোহাম্মদ রফিকের সাড়াশি বোলিংয়ে ২৩৩ রানে অলআউট হয়েছিল লংকানরা। একটু জানিয়ে দেই পুরো দস্তুর টেস্ট দলের বিপক্ষে সাইফুলের এই বোলিং ফিগারই ছিল বাংলাদেশ দলের সেরা বোলিং ফিগার। সেই ম্যাচেই প্রথমবারের মতো কোনো পরাশক্তিকে অলআউট করতে সক্ষম হয়।

না হেরে উপায়ও ছিল না। বাংলাদেশ তখন সবে ওয়ানডে খেলতে শুরু করেছে। আর প্রতিপক্ষ ভারত, পাকিস্তান ও শ্রীলঙ্কা তখন শুধু এশিয়ার নয় বিশ্ব ক্রিকেটেরও পরাশক্তি।

মোহাম্মদ আজহার উদ্দীনের নেতৃত্বে ভারতে তখন তারার মেলা। শচীন টেন্ডুলকার, সঞ্জয় মাঞ্জ্রেকার, বিনোদ কাম্বলি, নভোজাত সিং সিধু , মনোজ প্রভাকর, জাভাগাল শ্রীনাথ ও অনিল কুম্বলের মত প্রতিভাবান ক্রিকেটারে গড়া তখন দুর্ধর্ষ দল।

আর শারজা যাদের সাফল্যের স্বর্গ সেই পাকিস্তানও এক ঝাঁক নামী তারকায় ঠাসা। ওয়াসিম আকরামের নেতৃত্বে পাকিস্তান তখন দুর্দমনীয় দল। সাইদ আনোয়ার, আমির সোহেল, ইনজামাম উল হক, মঈন খান ও আকিব জাভেদের মত নামী পারফরমররা ছিলেন দলে।

লঙ্কান লাইন আপও দারুণ সমৃদ্ধ। শ্রীলঙ্কার সব সময়ের অন্যতম সেরা দল। অর্জুনা রানাতুঙ্গা, অরবিন্দ ডি সিলভা, রোশান মহানামা, অশাঙ্কা গুরুসিংহে, সনাৎ জয়াসুরিয়া, চামিন্দা ভাস ও মুত্তিয়া মুরালিধরনের মত বিশ্ব তারকারা জ্বল জ্বল করে জ্বলছিলেন।

সেই তিন পরাশক্তির সামনে বাংলাদেশ ছিল নেহায়েত দূর্বল ও অনভিজ্ঞ দল। আকরাম খান, আমিনুল ইসলাম বুলবুল, আতহার আলী ও মিনহাজুল আবেদিন নান্নুর সাথে সেবার বাংলাদেশ দলে অভিষেক ঘটেছিল এক ঝাঁক ক্রিকেটারের। সংখ্যায় আটজন। যাদের তিনজন আবার পরবর্তীতে বাংলাদেশ জাতীয় দলের অধিনায়কত্বও করেছেন।

তারা হলেন হাবিবুল বাশার, খালেদ মাসুদ পাইলট আর নাইমুর রহমান দুর্জয়। ২৩ বছর আগে এই আরব আমিরাতের শারাজায় অভিষেক ঘটেছিল আরও পাঁচ ক্রিকেটার জাভেদ ওমর বেলিম গোল্লা, সাজ্জাদ আহমেদ শিপন, মোহাম্মদ রফিক, হাসিবুল হোসেন শান্ত ও আনিসুর রহমানের।

১৯৯৫ সালের ৫ এপ্রিল এই আরব আমিরাতের আরেক শহর শারজার ক্রিকেট স্টেডিয়ামে ভারতের সাথে একদিনের আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে যাত্রা শুরু করেছিলেন দুই ওপেনার জাভেদ ওমর বেলিম গোল্লা ও সাজ্জাদ আহমেদ শিপন, উইকেটরক্ষক ব্যাটসম্যান খালেদ মাসুদ পাইলট, বাঁহাতি স্পিনার মোহাম্মদ রফিক এবং বাঁহাতি পেসার আনিসুর রহমান।

ঠিক পরদিন ৬ এপ্রিল ছিল শ্রীলঙ্কার সাথে ম্যাচ। ঐ ম্যাচ দিয়ে ওয়ানডে ক্যারিয়ার শুরু করেছিলেন হাবিবুল বাশার ও হাসিবুল হোসেন শান্ত। ওয়েস্ট ইন্ডিজের মাটিতে ২০০৭ সালে বিশ্বকাপে টিম বাংলাদেশের ক্যাপ্টেনও ছিলেন হাবিবুল বাশার সুমন। আর তার ৪৮ ঘন্টা পর ৮ এপ্রিল পাকিস্তানের বিপক্ষে অভিষেক ঘটেছিল নাইমুর রহমান দুর্জয়ের। পাঁচ বছর ২০০০ সালে সেই নাইমুর রহমান দুর্জয় বনে যান বাংলাদেশ টেস্ট দলের প্রথম অধিনায়ক ।

স্মরণীয় অভিষেক বলতে যা বোঝায়, ২৩ বছর আগে ওয়ানডে ক্যারিয়ার শুরু করা জাভেদ ওমর, সাজ্জাদ আহমেদ শিপন, হাবিবুল বাশার সুমন, নাইমুর রহমান দুর্জয়, খালেদ মাসুদ পাইলট, আনিসুর রহমান আনিস ও হাসিবুল হোসেন শান্তর কারোই তা হয়নি। কি করে হবে? তখনকার বাংলাদেশ দলই তো ছিল আজকের তুলনায় অনেক দুর্বল।

পরিসংখ্যান ঘেটে দেখা যাচ্ছে প্রায় দুই যুগ আগের দুর্বর ও কমজোর বাংলাদেশ দলের হয়ে ঐ প্রথম খেলতে নেমে কেউ আহামরি কিছু করতে পারেননি। ওপেনার জাভেদ ওমর (১৮), সাজ্জাদ আহমেদ শিপন (৪), খালেদ মাসুদ পাইলট (৪) এবং মোহাম্মদ রফিক ১৫ রানে এক উইকেট দখল করেছিলেন।

ভারতের কাছে ৯ উইকেটে হার মানা বাংলাদেশের একমাত্র উইকেট শিকারিই ছিলেন রফিক। ওয়ানডে ক্যারিয়ারের প্রথম ম্যাচে বাঁহাতি স্পিনার রফিকের ঘূর্ণি বলে ফিরে গিয়েছিলেন বিশ্বসেরা উইলোবাজ শচীন টেন্ডুলকার। পরবর্তীতে সেই রফিকই বাংলাদেশ দলের এক নম্বর স্পিনার বনে যান। দেশের হয়ে টেস্ট এবং ওয়ানডেতে সবার আগে ১০০ উইকেট শিকার করেন তিনি।

একই ভাবে পরের দিনগুলোয় দীর্ঘ দিন বাংলাদেশের সেরা টেস্ট ব্যাটসম্যান হিসেবে প্রতিষ্ঠিত হওয়া এবং ওয়ানডেতেও দীর্ঘ দিন খেলা হাবিবুল বাশার শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে প্রথম ম্যাচে করেছিলেন ১৬ রান।

পেসার আনিুসর রহমান আনিস বল হাতে সূচনা করলেও উইকেট পাননি। তার ৫ ওভারে রান ওঠে ৪২। হাসিবুল শান্তর সাথে শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে ওয়ানডে অভিষেকে প্রথম দিকে বেশ ভাল বল করেছিলেন। ৬ ওভারের স্পেলে দুটি মেডেন সহ মহানামার উইকেট পেয়েছিলেন শান্ত। তার বলে পরিষ্কার বোল্ড হয়েছিলেন লঙ্কান ক্রিকেটের তখনকার উজ্জ্বল নক্ষত্র রোশান মহানামা।

বাংলাদেশের প্রথম টেস্ট অধিনায়ক নাইমুর রহমান দুর্জয় অলরাউন্ডার হিসেবে পাকিস্তানের বিপক্ষে ক্যারিয়ারের প্রথম ম্যাচে ৩ রান করে রান আউট হয়ে গিয়েছিলেন। আর বল হাতে এক উইকেট পেয়েছিলেন। তার বলে ফেরত গিয়েছিলেন ঐ সময় পাকিস্তান টপ অর্ডার গোলাম আলী।
এমটিনিউজ২৪.কম/হাবিব/এইচআর

Follow করুন এমটিনিউজ২৪ গুগল নিউজ, টুইটার , ফেসবুক এবং সাবস্ক্রাইব করুন এমটিনিউজ২৪ ইউটিউব চ্যানেলে