শুক্রবার, ০১ জুলাই, ২০১৬, ০৭:৩৭:০৪

আমার কাছে বেলজিয়ামই ফেবারিট : ম্যারাদোনা

আমার কাছে বেলজিয়ামই ফেবারিট : ম্যারাদোনা

দিয়েগো ম্যারাদোনা : ইউরোপে সবসময় যে বড় দলগুলোর মধ্যে লড়াই হয়, তা নয়। খেতাব জেতার সেরকম ঐতিহ্য না থাকা দলগুলোও দু–‌একটা অঘটন ঘটিয়ে দিতে পারে। ২০০৪–‌এর গ্রিস, বা ১৯৯২–‌এর ডেনমার্ক এর উদাহরণ। এবার ওদের যা প্রতিভা এবং ক্রীড়াসূচির কিছুটা সুবিধে নিয়ে বেলজিয়ামের ফাইনালে ওঠার সম্ভাবনা আছে। বিশ্বমানের ফুটবলার জন্ম দিয়েও বেলজিয়াম বড় প্রতিযোগিতার নক আউটে সেভাবে দাগ কাটতে পারেনি কখনও।

বিশ্বকাপ সেমিফাইনালে একবারই উঠেছে, ১৯৮৬ সালে। সেই ম্যাচে আজেন্টিনার জয়ে আমার জোড়া গোল ছিল। ইউরোর সেমিফাইনালে বেলজিয়াম শেষ উঠেছিল ১৯৮০ সালে। সেবার রানার্স হয়েছিল। সেটাই এখনও পর্যন্ত ওদের সেরা পারফরমেন্স। এবার বেলজিয়ামের সামনে দৃঢ়প্রতিজ্ঞ ওয়েলস। ওরা খুব বাস্তবসম্মত এবং ট্যাকটিক্সের দিক দিয়ে স্মার্ট ফুটবল খেলছে। ওরা নতুন ফর্মেশনে খুব ভাল মানিয়ে নিয়েছে। বেলকে দেখে মনে হচ্ছে ও দেশকে কিছু দেওয়ার জন্য বদ্ধপরিকর। বেলজিয়ামের ‘‌সোনালি প্রজন্ম’‌–‌কে এই বাধাটা টপকাতে হবে। আর দুটো ম্যাচ জিতলেই ওরা ফাইনালে উঠে যাবে, নক আউটে একটাও সাবেক চ্যাম্পিয়ন দলকে না সামলেই।

দুটো ভিন্ন ঘরানার লড়াই হবে। মার্ক উইলমটসের আক্রমণাত্মক ৪–‌২–‌৩–‌১ ছকের বিরুদ্ধে ওয়েলস কোচ ক্রিস কোলম্যানের ৩–‌৫–‌২ ছকের লড়াই। গ্রুপ পর্বের পর কোলম্যান চার ডিফেন্ডার খেলানোর পরিকল্পনা থেকে সরে এসেছিল। তার জন্য ওর সমালোচনাও হয়েছিল। কিন্তু ওয়েলসকে বেশ সংগঠিত মনে হচ্ছে। উইং ব্যাক গুন্টার আর টেলর আক্রমণে উঠছে, বিপক্ষের উইং প্লে নষ্ট করে দিচ্ছে। এই পরিকল্পনায় সবথেকে গুরুত্বপূর্ণ এই দুটো জায়গা। ইতালির কান্দ্রেভা আর দার্মিয়ান যে রকম খেলছে।

উইলিয়ামসের চোট ওয়েলসের কাছে এই ম্যাচের আগে একটা চিন্তার কারণ। অধিনায়কের উপস্থিতিটা খুব গুরুত্বপূর্ণ। কোলম্যানকে বিকল্পের জন্য প্রস্তুত থাকতে হবে। বেল এখনও পর্যন্ত খুব ভাল খেলেছে। আরও একবার ওর দিকেই তাকিয়ে থাকবে দল। বল নিয়ে ওর দৌড় এবং ঠিকানা লেখা সেন্টারগুলো ওকে ভয়ঙ্কর করে তুলেছে। ও যে ফর্মে আছে, তাতে একটু জায়গা পেলেই যে কোনও ডিফেন্সকে ছারখার করে দেবে।

বেলজিয়াম সাধারণত ঠাসা মাঝমাঠ নিয়ে খেলে। ওরাই খেলাটা নিয়ন্ত্রণ করে। রক্ষণে চারজন থাকে। তাদের সামনে থাকে দুজন। তারাই খেলাটা শুরু করে। ডিব্রুইন আর হ্যাজার্ড সুযোগ তৈরি করার দায়িত্বটা নেয়। চেলসির বিরুদ্ধে মরশুমটা ভাল না গেলেও আগের ম্যাচে হ্যাজার্ড দুর্দান্ত খেলেছে। ওদের উইং দুটো সক্রিয়। গোল করার জন্য অনেক ফুটবলার তৈরি। ফলে ওদের ফরোয়ার্ড লাইনও খুব ভাল।

তবে প্রতিযোগিতার এই পর্যায়ে অনেক কিছুই নির্ভর করে রক্ষণের ওপর। এই জায়গায় বেলজিয়াম একটু পিছিয়ে। সমস্যাটা আরও বেড়েছে কার্ড দেখে ভার্মেলেন এই ম্যাচে খেলতে না পারায়। গত বিশ্বকাপে লেফট ব্যাক হিসেবে খুব ভাল খেলেছিল। এবারও ভাল খেলছে। বেলজিয়ামকে আরও একটা ব্যাপার মনে রাখতে হবে, ওরা কিন্তু ইতালির কাছে হেরেছিল। ইতালিও ওয়েলসের মতো ৩–‌৫–‌২ ছকে খেলে।

যা–‌ই হোক, ফর্মেশন দিয়ে ম্যাচ জেতা যায় না। সামান্য হলেও আমার কাছে বেলজিয়ামই ফেবারিট হিসেবে শুরু করবে। কারণ, ওয়েলস আর যা–‌ই হোক ইতালির মতো শক্তিশালী নয়। বাঁদিক থেকে হ্যাজার্ড কতটা ভাল খেলছে, এবং ডিব্রুইনের সঙ্গে ওর জুটিটা কতটা জমছে, তার ওপর অনেক কিছু নির্ভর করবে। দুই দলের ফুটবলাররা নিজেদের কতটা উদ্বুদ্ধ করতে পারছে, সেটাও একটা বিষয়। দুই দলের মানসিকতাই এখনও পর্যন্ত ইতিবাচক। দুটো ভিন্ন ঘরানার লড়াই দেখার জন্য মঞ্চ প্রস্তুত। খেলাটা লিলেতে। অর্থাৎ বেলজিয়ামের খুব কাছে। ফলে ওদের সমর্থকই বেশি থাকবে। এটা দলকে উদ্বুদ্ধ করবে, না চাপে ফেলবে, সেটা সময়ই বলবে।‌‌

১ জুলাই ২০১৬/এমটি নিউজ২৪/এসবি/এসএস

Follow করুন এমটিনিউজ২৪ গুগল নিউজ, টুইটার , ফেসবুক এবং সাবস্ক্রাইব করুন এমটিনিউজ২৪ ইউটিউব চ্যানেলে