সোমবার, ২৭ নভেম্বর, ২০১৭, ০১:১৬:২৯

কেমন আছেন প্রবীণ রাজনীতিবিদ রাবেয়া চৌধুরী?

কেমন আছেন প্রবীণ রাজনীতিবিদ রাবেয়া চৌধুরী?

মাহমুদ আজহার : কেমন আছেন কুমিল্লার প্রবীণ রাজনীতিবিদ ৮৩ বছর বয়সী বেগম রাবেয়া চৌধুরী। বিএনপির সাবেক এই ভাইস চেয়ারম্যানকে নিয়ে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকে গুজব ছড়ানো হয় যে, তিনি আর নেই।

বাস্তবতা হলো এই বয়সেও শারীরিকভাবে ভালো আছেন কুমিল্লা দক্ষিণ জেলা দলের সভাপতি বেগম রাবেয়া চৌধুরী। নামাজ পড়ছেন, চলাফেরা করছেন। তার বাসায়ও নেতা-কর্মীদের আনাগোনা রয়েছে। এ ছাড়াও টিভি দেখে, পত্রিকা পড়ে দেশের রাজনীতির সর্বশেষ অবস্থা সম্পর্কে খোঁজ-খবর রাখছেন প্রবীণ এই নারী নেত্রী।

সম্প্রতি দলীয় এক কর্মকাণ্ডে জেলা বিএনপির অফিসেও যান। সেখানে বেশকিছু সময়ও কাটান তিনি। গতকাল তিনি জানালেন, ‘আমি রাজনীতি করেছি, এখনো করি। তবে আগের মতো আর দৌড়ঝাঁপ করতে পারি না। বাসায় অনেকটা সময় থাকি। মাঝে-মধ্যে পার্টি অফিসেও যাই। সবার দোয়ায় ভালো আছি। কে বা কারা বলছেন, আমি নাকি মারা গেছি। এটা অপপ্রচার। বিভ্রান্তিকর তথ্য।’

বিএনপি চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়ার সঙ্গে যোগাযোগ আছে কিনা জানতে চাইলে রাবেয়া চৌধুরী বলেন, ‘এর মধ্যে ম্যাডামের (খালেদা জিয়া) সঙ্গে কোনো কথা হয়নি। তিনি এখন সরাসরি কথাও বলেন না। তবে ম্যাডাম সেদিন দলের ভাইস চেয়ারম্যান মো. শাহজাহানকে পাঠিয়েছিলেন। তার সঙ্গে কথাবার্তা হয়েছে। তার কাছে ম্যাডামের শারীরিক অবস্থা জানতে পেরেছি। তিনিও আমার খোঁজ-খবর নিয়ে ম্যাডামকে জানাবেন বলে জানিয়েছেন।’

পরিবারের কে কোথায় আছেন জানতে চাইলে রাবেয়া চৌধুরী বলেন, ‘আমার দুই ছেলে, এক মেয়ে। স্বামী নাসির উদ্দিন চৌধুরী বাসায় আছেন। মেয়ে পবিত্র ওমরাহ করতে সৌদি আরব গেছে। বড় ছেলে থাকে অস্ট্রেলিয়া সপরিবারে। সবাই আমার পরিবারের জন্য দোয়া করবেন।’

উল্লেখ্য, গত শনিবার রাতে কুমিল্লা জেলা ছাত্রদল নামের একটি ফেসবুকের ফেক আইডি থেকে বেগম রাবেয়া চৌধুরীর মৃত্যুর খবর প্রচার করা হয়। সেখানে লেখা হয়— ‘বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান বেগম রাবেয়া চৌধুরী আর নেই (ইন্না লিল্লাহি ... রাজিউন)। বার্ধক্যজনিত কারণে ৯৫ বছর বয়সে আমাদের কুমিল্লা বিএনপি, ছাত্রদল, যুবদলকে শোক সাগরে ভাসিয়ে না ফেরার দেশে চলে গেলেন আমাদের প্রিয় নেত্রী বেগম রাবেয়া চৌধুরী। আমরা শোকাহত কুমিল্লা জেলা ছাত্রদল। মরহুমার জানাজার সময় পরে জানিয়ে দেওয়া হবে। ’

বিভিন্নজনকে ট্যাগ করা বেগম রাবেয়া চৌধুরীর ছবিসহ পোস্ট এর মধ্যেই ভাইরাল হতে থাকে। রাত গভীর হওয়ায় রাবেয়া চৌধুরী তখন ঘুমে। কিছুই জানতে পারেননি। সকালে তার বাসায় নেতা-কর্মীর ভিড় জমে। এ প্রসঙ্গে কুমিল্লা জেলা ছাত্রদলের সাধারণ সম্পাদক নিজাম উদ্দিন কায়সার বলেন, ‘এই আইডিটি কুমিল্লা জেলা ছাত্রদলের নয়। একটি স্বার্থান্বেষী মহল আমাদের প্রিয় নেত্রী বেগম রাবেয়া চৌধুরী সম্পর্কে এই অপপ্রচার করেছে। এই আইডিতে যাদের কর্মকাণ্ডের ছবি বেশি আছে এটি তাদেরও হতে পারে।

কুমিল্লার রাজনীতিতে পরিচিত নাম বেগম রাবেয়া চৌধুরী। তার বাবা আশরাফ উদ্দীন চৌধুরী ছিলেন অবিভক্ত পাকিস্তানের শিক্ষামন্ত্রী। মা রাজিয়া খাতুন চৌধুরানী কালজয়ী কবিতা চাষা (সব সাধকের বড় সাধক আমার দেশের চাষা) কবিতার কবি। রাবেয়া চৌধুরী বিএনপি প্রতিষ্ঠাকালীন জেলা বিএনপির সদস্য। ১৯৭৯, ১৯৯১ ও ২০০১-এর জাতীয় সংসদের তিনি সংরক্ষিত মহিলা আসনের এমপি ছিলেন। বিএনপির আন্দোলন সংগ্রামে কিংবা দলের দুর্দিনে তার ব্যাপক অবদান রয়েছে। এ জন্য বিএনপিতে এক আলোচিত নাম রাবেয়া চৌধুরী।

তৎকালীন পাক-ভারত উপমহাদেশের একটি বর্ণাঢ্য রাজনৈতিক ও সাহিত্যিক পরিবারের সন্তান বেগম রাবেয়া চৌধুরী। বাবা ছিলেন প্রখ্যাত জমিদার পরিবারের ও যুক্তফ্রন্ট মন্ত্রিসভার সদস্য আশরাফ উদ্দীন চৌধুরী ও মা ছিলেন বিশিষ্ট সাহিত্যিক ‘সব সাধকের বড় সাধক আমার দেশের চাষা, দেশ মাতারই মুক্তিকামী দেশের সে যে আশা’ শীর্ষক চাষা কবিতার কবি রাজিয়া খাতুন চৌধুরানী।

বয়সের দিক থেকে বর্তমানে ৮৫-ঊর্ধ্ব বেগম রাবেয়া চৌধুরী মাত্র সাড়ে তিন বছর বয়সেই স্নেহময়ী মাকে হারান। পিতা ও পরিবারের অন্যদের স্নেহ-মমতার প্রাণকেন্দ্রে পরিণত হন তিনি। ব্রিটিশবিরোধী আন্দোলন সংগ্রাম করতে গিয়ে বার বার জেল খাটতে হয়েছে তৎকালীন মুসলিম লীগের প্রভাবশালী নেতা পিতা আশরাফ উদ্দীন চৌধুরীকে। রাজনীতির প্রথম দীক্ষাটি আসে রাজনৈতিক পিতার কাছ থেকেই।

‘রাজনীতি হলো জনগণকে দেওয়ার, নেওয়ার নয়’— পিতার এই আদর্শটি সারা জীবন আগলে রেখেছেন বেগম রাবেয়া চৌধুরী। ১৯৭৭-৭৮ সালের দিকে জাতীয় মহিলা সংস্থা কুমিল্লার চেয়ারম্যানের দায়িত্ব পালন করতে গিয়েই একজন কর্মঠ এবং সাহসী নারী নেত্রী হিসেবে সবার নজর কাড়েন তিনি। তৎকালীন রাষ্ট্রপতি বিচারপতি আবদুস সাত্তার ১৯৭৮ সালে ‘জাগদল’ গঠন করলে সাবেক মন্ত্রী ফাতেমা কবিরের সঙ্গে বেগম রাবেয়া চৌধুরীকেও বৃহত্তর কুমিল্লার (কুমিল্লা, ব্রাহ্মণবাড়িয়া ও চাঁদপুর) যুগ্ম আহ্বায়ক নির্বাচিত করেন।

এই যে রাজনীতিতে পা, তারপর আর পেছনে ফিরে তাকাতে হয়নি তাকে। লায়ন ক্লাব অব কুমিল্লার প্রেসিডেন্ট হিসেবে আর্তমানবতার সেবায়ও কাজ করেন দীর্ঘদিন। ১৯৭৯ সালে তৎকালীন রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমান কুমিল্লার দাউদকান্দি উপজেলার সুন্দরপুরে খাল কাটা কর্মসূচি উদ্বোধন করতে এলে তার নজর কাড়েন রাবেয়া চৌধুরী। রাবেয়া চৌধুরীর কর্মযজ্ঞে ঈর্ষাপরায়ণ হয়ে ওঠেন বিএনপির তৎকালীন স্থানীয় নেতারা।

যার কারণে বিএনপি প্রতিষ্ঠার পর কুমিল্লায় ৭৮ সদস্যবিশিষ্ট জেলা বিএনপির প্রতিষ্ঠাতা কমিটি করা হলে সেখানে একজন এমপি হয়েও বেগম রাবেয়া চৌধুরীকে ৭৮ নম্বর সদস্য করা হয়। সুযোগ থাকা সত্ত্বেও দলীয় হাইকমান্ডে এ নিয়ে তিনি কোনো অভিযোগ কিংবা অনুযোগ করেননি। নীরবে-নিভৃতে কাজ করে গেছেন দলের হয়ে। ১৯৮৩ সালে তার আহ্বানেই প্রথম বিএনপি চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়া প্রথমবারের মতো কুমিল্লার টাউন হল মাঠে জনসভায় অংশ নেন।

আর সে জনসভায় সভাপতি ছিলেন বেগম রাবেয়া চৌধুরী। পরে জেলা বিএনপির আহ্বায়ক ও সভাপতি নির্বাচিত হন তিনি। গত কমিটিতেও তিনি বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান ছিলেন। এবার শারীরিকভাবে একটু দুর্বল হয়ে পড়ায় জেলা নেতৃত্বেই সফলতার সঙ্গে কাজ করে যাচ্ছেন প্রবীণ এই নারী নেত্রী। তবে তার নেতৃত্বেই চলছে কুমিল্লা জেলা দক্ষিণের কার্যক্রম। -বিডি প্রতিদিন

এমটিনিউজ/এসএস

Follow করুন এমটিনিউজ২৪ গুগল নিউজ, টুইটার , ফেসবুক এবং সাবস্ক্রাইব করুন এমটিনিউজ২৪ ইউটিউব চ্যানেলে