রবিবার, ০৬ আগস্ট, ২০১৭, ১১:২৮:০৯

মনে হাজার কষ্ট নিয়েও শার্ট-প্যান্ট-টাই পরেই রিকশা চালান ‘স্মার্ট রিকশাচালক’ ফারুক হোসেন

মনে হাজার কষ্ট নিয়েও শার্ট-প্যান্ট-টাই পরেই রিকশা চালান ‘স্মার্ট রিকশাচালক’ ফারুক হোসেন

লক্ষ্মীপুর  থেকে :  পোশাক-পরিচ্ছদে পরিপাটি। কেতাদুরস্ত বলতে যা বোঝায় তাই-ই। রং মিলিয়ে বানানো শার্ট-প্যান্ট-টাই। বানানো আছে বেশ কয়েক সেট। পর্যায়ক্রমে পরেন। রং করা চুল, হাতে ঘড়ি, মাথায় ক্যাপ, চোখে সানগ্লাস, পায়ে পলিশ করা জুতো।

এগুলো পরে রোজ কাজে বের হন। সরকারি কিংবা বেসরকারি চাকুরে নন, নন কোনো কোম্পানির প্রতিনিধিও। তিনি হচ্ছেন একজন রিকশাচালক, মনে হয়তো হাজার কষ্ট তবুও সে সুখী । লক্ষ্মীপুর শহরের অলিগলিতে যাত্রী নিয়ে ঘুরে বেড়ান ফারুক হোসেন। লক্ষ্মীপুর সদরের বাঞ্ছানগর এলাকার বাসিন্দা তিনি। বাবার নাম মো. শাহজাহান।

লেখাপড়া তেমন না জানলেও কথা খুব গুছিয়ে বলেন ফারুক। কখনো কোনো যাত্রীর সঙ্গে বাজে আচরণ করেন না। ভদ্রলোক বলে প্রশংসিত। বললেন, তাঁর এমন পরিপাটি চালচলন মুগ্ধ করে যাত্রীদের। বেশির ভাগ সময়ে খুশি হয়ে ভাড়া বেশি দেন তাঁরা।

এলাকার মানুষ তাঁর রিকশায় করে ঘুরতে বের হন। শহরের কমপক্ষে ৫০০ লোকের কাছে তাঁর ফোন নম্বর আছে। অনেক সময় যাত্রীরা অপেক্ষা করেন তাঁর রিকশায় চড়তে। ছবি তোলেন, সেই ছবি সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে দেন। বেশ নামডাক এখন ফারুকের। কেউ কেউ খুশি হয়ে ২০ টাকার ভাড়া ১০০ টাকাও দেন। এলাকায় সে স্মার্ট রিকশাচালক নামে পরিচিত। অনেকে ডাকেন ডিজিটাল ফারুক নামে।

আগে রাজমিস্ত্রির কাজ করতেন ফারুক। দৈনিক ৩০০ টাকা আয় হতো। একসময় কাজ নেন খাবারের হোটেলে। তবে কোনো কিছুই সংসারের কষ্ট ঘোচাতে পারেনি। দুই বছর আগে ভাবতে শুরু করেন নতুন কিছু করার। একদম আনকোরা কিছু। শুরু করেন শার্ট-প্যান্ট পরে সেজেগুজে রিকশা চালানো। এখন প্রতিদিন তাঁর আয় প্রায় ৭০০ থেকে ৮০০ টাকা। সংসারের কষ্টও অনেক কমেছে।

ফারুক বলেন, ‘নিয়ম করে প্রতিদিন রিকশা চালাই। সকাল নয়টায় বাসা থেকে বের হই। বেলা দেড়টার দিকে বাসায় চলে আসি। আবার তিনটার দিকে বের হয়ে রাত ১০-১১টায় বাসায় ফিরি।’ গত শুক্রবার বাঞ্ছানগর এলাকায় ফারুকের ভাড়া বাসায় গিয়ে দেখা যায় ফারুকের মতো পরিপাটি তাঁর ঘরটিও। দোতলা বাড়িটির নিচতলায় থাকেন তিনি।

বাড়ির মালিক কামাল হোসেন বলেন, কিছুদিন আগে ফারুক ছয় হাজার টাকায় ফ্ল্যাটটি ভাড়া নেন। আশপাশের উৎসুক ব্যক্তিরা তাঁকে দেখতে আসেন। সবার সঙ্গেই ভালো ব্যবহার করেন ফারুক।

তাঁর আচার-আচরণের কারণে যাত্রীরা অন্য চালকের চেয়ে ভাড়া একটু বেশি দেন। ফারুকের স্ত্রী নিপু আক্তার বলেন, এক ছেলে ও এক মেয়ে রয়েছে তাঁদের। দুজনেই চান ছেলেমেয়ে ভালো পরিবেশে মানুষ হোক। চান নিজেরাও ভালো পরিবেশে থাকতে।

এমটিনিউজ২৪/জয়নাল

Follow করুন এমটিনিউজ২৪ গুগল নিউজ, টুইটার , ফেসবুক এবং সাবস্ক্রাইব করুন এমটিনিউজ২৪ ইউটিউব চ্যানেলে