শুক্রবার, ০৪ নভেম্বর, ২০১৬, ১২:৪৩:৩০

মেয়ের উত্ত্যক্তকারীর হাতে খুন হলেন পিতা

মেয়ের উত্ত্যক্তকারীর হাতে খুন হলেন পিতা

মানিকগঞ্জ থেকে : স্কুলছাত্রীকে পথেঘাটে বিরক্ত, বিয়ের প্রস্তাব এমনকি হুমকি-ধমকি দিয়ে যখন পরিবারকে বশে আনতে পারেনি তখনই মেয়ের উত্ত্যক্তকারীর হাতে নির্মমভাবে খুন হলেন বিল্লাল হোসেন (৪৫) নামের এক পিতা। নিহত বিল্লাল হোসেন টেইলারিং পেশার পাশাপাশি পপুলার ইন্স্যুরেন্স কোম্পানির স্থানীয় সহকারী পরিচালক হিসেবেও কাজ করতেন।

তার বাড়ি মানিকগঞ্জের শিবালয় উপজেলার কাক্কোল গ্রামে। বৃহস্পতিবার সকালে তার লাশ হরিরামপুর উপজেলার মাচাইন গ্রামের পার্শ্ববর্তী একটি খাল থেকে উদ্ধার করা হয়। ঘটনার পর এলাকা ছেড়ে পালিয়েছে ঘাতক সুমন। নিহত বিল্লাল হোসেনের ভাই জিলাল হোসেন জানান, স্থানীয় রূপসা ওয়াহেদ আলী উচ্চ বিদ্যালয়ের দশম শ্রেণিতে পড়ুয়া ভাতিজি শাবনুরকে স্থানীয় বখাটে এখলাস মাতবরের ছেলে সুমন উত্ত্যক্ত করতো।

এনিয়ে সুমনের পরিবারের লোকজনের কাছে নালিশও করা হয়। উপরন্তু সুমনের পরিবারের পক্ষ থেকে তার ভাই (বিল্লাল হোসেনের পরিবার)কে হুমকি দেয়। এরপর দেয়া হয় বিয়ের প্রস্তাব। একদিকে মেয়ে অপ্রাপ্তবয়স্কা আর অন্যদিকে সুমনের নৈতিক চরিত্র ভালো না থাকায় বিয়ের প্রস্তাবে রাজি  না হওয়ার জের ধরেই পরিকল্পিত ভাবে তার ভাইকে খুন করা হয়েছে বলে দাবি করেন জিলাল হোসেন।

জিলাল হোসেন আরো জানান, তার ভাই বিল্লাল হোসেন টেইলারিং পেশার পাশাপাশি পপুলার ইন্স্যুরেন্স কোম্পানির স্থানীয় সহকারী পরিচালক হিসেবেও কাজ করতেন।  মাচাইন বাজারের দোকানের  টেইলারিংয়ের কাজ শেষে বুধবার রাতে বাইসাইকেলযোগে বাড়ি ফেরার পথে সে নিখোঁজ হয়। রাতভর পরিবারের পক্ষ থেকে বিভিন্ন স্থানে খোঁজাখুঁজি করা হয়। রাত পেরিয়ে ভোরের দিকে মাচাইন ব্রিজের নিচে একটি  বাইসাইকেল ও পাশে বিল্লাল হোসেনের রক্তমাখা লাশ পড়ে থাকতে দেখেন স্থানীয় লোকজন। তিনি জানান, তার ভাইয়ের মাথায় কয়েকটি ধারালো কিছু দিয়ে কয়েকটি কোপের চিহ্ন রয়েছে। এছাড়া, শরীরে বিভিন্ন অঙ্গেও কোপের দাগ রয়েছে।

নিহত বিল্লাল হোসেনের স্ত্রী আফরোজা বেগম জানান, তার দুই মেয়ে। বড় মেয়ে আগামী বছর এসএসসি পরীক্ষা দেবে। গ্রামের বখাটে সুমনের ভয়ে মেয়ের স্কুলে যাওয়া খুবই কঠিন হয়ে পড়েছিল। সুমনের সঙ্গে ওর বন্ধু আশিক ও হাবিব মিলে মোটরসাইকেলে রাস্তাঘাটে গতিরোধ করে বিরক্ত করতো। এ নিয়ে কয়েক দিন আগে সুমনের বাবার কাছে বিচার দেয়া হলে বিচার না করে উল্টো তার ছেলের সঙ্গে মেয়ের বিয়ের প্রস্তাব দেয়। বাড়ি এসে হুমকি দিয়ে যায় সুমন। বলা হয় মেয়েকে বিয়ে না দিলে তুলে নিয়ে যাবে। কেউ বাধা দিলে তাকে মেরে ফেলা হবে।

আফরোজা বেগম জানান, ওই সুমন ও তার পরিবার  ছাড়া তার স্বামীর কোনো শত্রু নেই। মেয়েকে বিয়ে না দেয়ার কারণেই তার স্বামীকে হত্যা করা হয়েছে বলে তিনি জানান।

হরিরামপুর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা মো. নজরুল ইসলাম জানান, সাংবাদিকদের খুনের ঘটনার সত্যতা নিশ্চিত করে জানান, হত্যাকাণ্ডটি পরিকল্পিত। বুধবার রাত দশটার দিকে বিল্লাল হোসেন মাচাইন বাজারে তার দোকান বন্ধ করে বাইসাইকেল যোগে নিজ বাড়ি ফিরছিল। কিন্তু রাতে সে বাড়িতে না ফেরার কারণে পরিবারের লোকজন রাতভর খোঁজাখুঁজি করে।

ভোরে মাচাইন সড়কের একটি ব্রিজের পাশে তার বাইসাইকেল ও টর্চলাইট পড়ে থাকতে দেখে স্থানীয় লোকজনের সন্দেহ হয়। পরে ব্রিজের নিচে রক্তাক্ত মরদেহ দেখে লোকজন থানায় খবর দেয়। সকালে লাশ উদ্ধার করে ময়নাতদন্তের জন্য মানিকগঞ্জ সদর হাসপাতাল মর্গে পাঠানো হয়। এ ঘটনায় সন্দেহভাজন দুইজনকে আটক করা হয়েছে। এমজমিন
০৪ নভেম্বর ২০১৬/এমটিনিউজ২৪/এসএস/এসবি‌

Follow করুন এমটিনিউজ২৪ গুগল নিউজ, টুইটার , ফেসবুক এবং সাবস্ক্রাইব করুন এমটিনিউজ২৪ ইউটিউব চ্যানেলে