বৃহস্পতিবার, ০৩ আগস্ট, ২০১৭, ০৯:৫২:১১

সেচ ইরিগ্রেশন প্রকল্পের শত কোটি টাকার পাকাখাল ধ্বংসের মুখে

সেচ ইরিগ্রেশন প্রকল্পের শত কোটি টাকার পাকাখাল ধ্বংসের মুখে

নরসিংদী থেকে তারেক পাঠান: নরসিংদীর পলাশে শত শত কোটি টাকার ব্যয়ে নির্মিত বাংলাদেশ সেচ ইরিগ্রেশন প্রকল্পের পাকা খাল এখন ধ্বংসের পথে। পলাশ উপজেলায় কৃষি জমির উপকরণ হিসাবে ১৯৯২ সালে সেচ ইরিগ্রেশন প্রকল্পের আওতায় কৃষি জমি চাষাবাদের জন্য কৃষকদের সুবিদার্থে খাল কেটে পাকা করণের উদ্যোগ নেয় সরকার। পরবতীর্তে ধাপে ধাপে খালের নির্মাণ কাজে শত শত কোটি টাকা ব্যয় করে কৃষকদের কৃষি চাষাবাদের সুবিধা করে দেওয়া হয়। যার ধারাবাহিকতা এখনও বিদ্যমান।

ঘোড়াশাল তাপ বিদ্যুৎ কেন্দ্রের বিদ্যুৎ উৎপাদন কাজে ব্যবহারিত পরিত্যক্ত পানির কিছু অংশ  শীতলক্ষ্যা নদীতে আর কিছু অংশ পানি কৃষি চাষাবাদের জন্য এ খালে ছেড়ে দেয়া হয়। যা বর্ষা মৌসমে বন্ধ থাকে। বর্ষা মৌসমে চাষাবাদের জমির পানি এই খালে নেমে যায়।

ঘোড়াশাল তাপ বিদ্যুৎ কেন্দ্র থেকে শুরু করে পলাশ নতুন বাজার এলাকার পাশ দিয়ে গড়পাড়া, দড়িহাওলা পাড়া, আতশী পাড়া হয়ে শালদের খালে গিয়ে মিশেছে। এ খালের বিভিন্ন সংযোগ রয়েছে। কুঠির পাড়া, গোরায়ের পাড়া, রাবান, কুড়াইতুলি সহ উপজেলার বিভিন্ন স্থান দিয়ে রয়েছে এ খালের বিস্তার। এই খালে রয়েছে অসংখ্য সুইচ গেইট। এক সময়ে এই অঞ্চলের মানুষ খুব অভাবে জীবনযাপন করতো। কারণ, এক সময় এ অঞ্চলে সুস্ক মৌসমে খড়ার কারণে সেচ ব্যবস্থা না থাকায় মাটি ফেটে ছৌচির হয়ে থাকত। কোন সফল হত না। আর বৃষ্টির মৌসমে পানিতে সব ফসলি জমি তলিয়ে যেত।

এ অঞ্চলের মানুষ জীবিকা নির্বাহ করত পদ্মা পাতা, শাপলা, শালুক, ছালুন, কুলা-ডালা ও পাতলা তৈরী করে তা এলাকার বিভিন্ন বাজারে বিক্রি করার মাধ্যমে। অভাব-অনোটনে দিন কাটত না খেয়ে। ছিল না শিক্ষার কোনো আলো। এই খালটি পাকা হওয়ার পর থেকে পানির সমস্যা সমাধান দূর হওয়ার পর হইতে এ অঞ্চলের মানুষের ভাগ্যের পরিবর্তনের সুচনা হয়। ধীরে ধীরে খালের পরিধি বাড়তে থাকে। মানুষ কৃষি চাষাবাদ শুরু করে তাদের ভাগ্য বদলের প্রতিযোগিতায় নামে। প্রকল্পের কর্তৃপক্ষের খেয়ালিপনা, মানুষের অবৈধ দখলের কারণে বর্তমানে খালটি ধ্বংসের পথে পড়েছে।

১৯৯২ সালে খালটি পাকা করার পূর্বে খালটির দুই পাশে কোনো বাড়িঘর ছিল না। সেচ প্রকল্পের নিয়ম অনুযায়ী খালের দুই পাশে ছয় ফুট করে ১২ ফুট জমির মাটি ফাঁকা রেখে ছিল। যাতে করে খালের দেয়ালে মাটির কোনো প্রকার চাপ না পড়ে। কিন্তু ধীরে ধীরে খালটির দুই পাশের মাটি ভরাট করে বাড়িঘর ও বহুতল ভবন গড়ে উঠে।

খালটির ১২ ফুট জমি অবৈধ দখলে চলে যায়। শুধু তাই নয়, এসমস্ত ভবনের ভাথরুমের ময়লা অবৈধভাবে খালের দেয়ালে হাজার হাজার ছিদ্র করে খালটি দুর্বল করে ফেলেছে। কোথাও কোথাও খালের দেয়াল হেলে পড়েছে। আবার কোথাও কোথাও খালের দেয়ালের উপরে অবৈধ ব্রিকসলিং করার কারণে, দেয়াল ঝুকিপূর্ণ হয়ে পড়েছে। এ খালের পানিতে এলাকার আশেপাশের হাজারও মানুষ অজু-গোছল করতেন। পানি ছিল খুব পরিষ্কার। বর্তমানে ভাথরুমের ময়লা পানি, ঘোড়াশাল পৌর এলাকার বাসা-বাড়ির ময়লা-আর্বজনার স্তুপ জমে পানি নিষ্কাশন ব্যাঘাত ঘটছে। এ অবস্থা চলতে থাকলে যেকোন সময় খালের দেয়াল ধসে পড়তে পারে। এতে করে সরকারের শত শত কোটি টাকা গচ্ছা দিতে হবে।

পলাশ উপজেলা সেচ ইরিগ্রেশন প্রকল্পের সহকারী প্রকৌশলী মোশাররফ হোসেন জানান, আমরা বার বার জনপ্রতিনিধীদের কে জানাচ্ছি, প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়ার জন্য। মানুষ সচেতন নয়, সরকার প্রতি শতাংশ জমিতে পানির মূল্য নির্ধারণ করেছে খাল থেকে মেশিনে উঠানোর খরচ দুই টাকা আর সরাসরি খালের পানি জমিতে নিলে ৪ টাকা। অথচ এই টাকাই মানুষ পরিশোধ করছে না বিধায় ৭০ লাখ টাকা কৃষকদের নিকট পাওনা রয়েছে সেচ ইরিগ্রেশন প্রকল্প। তাই,আমরাও খুব চাপে রয়েছি। সরকার এই প্রকল্পে প্রতি বছর ২০ কোটি টাকা বরাদ্দ দেয়। তার থেকে ৬০ ভাগ আশুগঞ্জ আর ৪০ ভাগ পলাশে। এসব বিষয়ে নির্বাহী প্রকৌশলী উপ-পরিচালক ফয়সাল আহম্মেদ ও সহকারী প্রকৌশলী মোসফিকুল রহমানের সাথে কথা বললে তারা বলেন, বিষয়গুলো তদন্ত করে জেলা প্রশাসনের সমন্বয়ে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়ার চেষ্টা করছি।
০৩ আগস্ট ২০১৭/এমটনিউিজ২৪ডটকম/ প্রতিনিধি/আ শি

Follow করুন এমটিনিউজ২৪ গুগল নিউজ, টুইটার , ফেসবুক এবং সাবস্ক্রাইব করুন এমটিনিউজ২৪ ইউটিউব চ্যানেলে