বুধবার, ২১ ডিসেম্বর, ২০১৬, ০৯:১৭:১৪

ক্ষতবিক্ষত ভালবাসা........

ক্ষতবিক্ষত ভালবাসা........

লেখকঃ নিলয় আহসান নিশো
..
...
[1]
..
..
সকাল ৭:৩০...
ছেলেটি গোসল করে এসে দেখে প্রতিদিনের মত বিছানায় স্যুট, টাই, ঘড়ি, ল্যাপটপ, মানিব্যাগ সব গুছিয়ে রাখা। সব কিছু নিয়ে বের হয়েই দেখবে টেবিলে নাস্তা রেডি। নাস্তা টা করেই দরজার কাছে গিয়ে শুধু বলবে,
ঘুমালে মেইন দরজা লাগিয়ে ঘুমাইও।
বলেই অফিসে চলে যাবে.....
আসবে রাত ৮:৩০ এ।
এসেই চেঞ্জ করে ফ্রেশ হয়ে কিছুক্ষন টিভি দেখবে।
৯:৩০ এ টেবিলে গিয়ে দেখবে ডিনার রেডি। ডিনার করে তারপর ছাদে যাবে। রাত ১১:৩০ টায় রুমে এসে ঘুমিয়ে পড়বে।
..
...
আর মেয়েটি,
সকাল বেলা খুব সকালে উঠার অভ্যাস মেয়েটির। ঘুম থেকে উঠেই গোসল করে নাস্তা বানাতে যায়। তার আগে ঘড়িতে ৭টার এলার্ম দিয়ে দেয় যেন ছেলেটির ঘুম ভাঙে। ছেলেটি ঊঠে গোসল করতে গেলে মেয়েটি রুমে এসে কাপড় গুলো বিছানায় সাজিয়ে রেখেই টেবিলে নাস্তা সাজাতে চলে যায়।
ছেলেটি রেডি হয়ে ঠিক ৭:৪৮ মিনিট এ বের হয় রুম থেকে আর নাস্তা করতে বসে।
ছেলেটি নাস্তা শেষ করে ৮টায় তারপর অফিসে যাবার আগে দরজায় দাড়িয়ে বলবে.....
"ঘুমালে মেইন দরজা লাগিয়ে ঘুমাইও"..
..
...
ছেলেটি অফিস যাওয়ার পর মেয়েটি সারা বাড়ির কাজ করে দুপুরে লাঞ্চ বানিয়ে বসে থাকে ছেলেটির একটা ফোনের জন্য। ছেলেটি ফোন করে না। মেয়েটি উদাস হয়ে বিকেলের দিকে লাঞ্চ করে নেয়। তারপর আবার ভাবনায় ডুবে যায়।
রাত ৮:৩০ এ ছেলেটি আসবে
চেঞ্জ করে ফ্রেশ হয়ে এসে টিভি দেখতে বসবে আর মেয়েটি কিছুক্ষন পর এক কাপ চা এনে দিয়ে, চলে যাবে চেঞ্জ করা কাপড় গুলো গুছিয়ে রাখতে।
রাত ৯:৩০ মেয়েটি ডিনার রেডি করে রাখবে ছেলেটি এসে খেয়ে ছাদে চলে যাবে আর মেয়েটি বেলকনি তে গিয়ে বসে জোস্না দেখবে....
ছেলেটি আর মেয়েটি দুজনেই একই ছাদের নিচে....একই জোস্না দেখছে........
আলাদা ভাবে....
সম্পর্কে কি হয় তারা???
তারা সম্পর্কে স্বামী স্ত্রী....
৩মাস হয়েছে তাদের বিয়ের....

.
...
[২]
..
...
দেশের সেরা বিদ্যাপীঠ গুলোর অন্যতম একটি হল এই ভার্সিটি টি। এখানেই হাজারো কাপলের মত একটি কাপল হল মেয়েটি আর ছেলেটি। মেয়েটি অনার্স ২য় বর্ষে আর ছেলেটি মাস্টার্সে। প্রায় ২বছরের সম্পর্ক। সম্পর্কের শুরু টা অবশ্য এই ভার্সিটির মাঠেই। মেয়েটি ভর্তিযুদ্ধে যোগ দিতে এসে সিট খুজে পাচ্ছিল না। আর ছেলেটি ক্যাম্পাসে সিগারেট ফুঁকছিল।
..
...
"ভাইয়া আমার সিট টা কোন দিকে একটু বলে দিবেন প্লিজ?"
সম্পর্কের শুরু টা হয়েছিল এই কথা টা দিয়েই।ছেলেটি মেয়েটির দিকে তাকিয়ে কিছুক্ষনের জন্য বাকরুদ্ধ হয়ে গিয়েছিল। এত সুন্দর আর কিউট কোন মেয়ে হয়?
ছেলেটি মেয়েটিকে নিজে নিয়ে গিয়ে পরীক্ষার হল এ বসিয়ে দিয়ে আসে। সাথে মেয়েটি জানায় নেক্সট ফ্রাইটে তার অন্য বিভাগ এর ও একটা পরীক্ষা আছে।ছেলেটি মেয়েটিকে তার নাম্বার টা লিখে দিয়ে আসে।
তারপর মেয়েটির ভার্সিটি তে চান্স পাওয়া, একসাথে সময় কাটানো, ঘুরতে যাওয়া সব মিলিয়ে দুজন দুজনের প্রেমে হাবুডুবু খাচ্ছিল।
..
...
মেয়েটির জন্মদিনে ছেলেটি ১৪৩ টা লাল গোলাপ দিয়ে মেয়েটিকে প্রোপোজ করে। মেয়েটি আগে থেকেই ছেলেটিকে ভালবাসতো তাই হ্যা বলে দেয় সাথে সাথেই।
এভাবেই চলতে থাকে তাদের সম্পর্ক।মেয়েটির পৃথিবীটা পুরো টাই আটকে থাকে ছেলেটির কাছে। প্রতিটা মুহুর্তে তার চিন্তায় ভাবনায় শুধু ছেলেটি থাকে। ছেলেটিও সেটা বুঝতে পারে।
..
...
ছেলেটি অন্য সব সাধারণ ছেলের মতই ছিল। ভালবাসা নামক গল্প টা শুরু হবার পরই কাছে টানার ডাক টা দিতে থাকে।  কিন্তু মেয়েটি ছেলেটিকে হারাতে চায় না।মেয়েটি ছেলেটিকে তার ভবিষ্যৎ সন্তানের পিতা বানানোর স্বপ্ন দেখে প্রতিনিয়ত।
কিন্তু ছেলেটি শুধু মেয়েটিকে & মেয়েটির সুন্দর শরীর টার মাঝেই ভালবাসা খুজে পেতে চায়। মেয়েটি বুঝতে পারে কিন্তু ছেলেটিকে ছাড়ার মত ভাল সে বাসে নি।তার জীবনে প্রথম পুরুষ হল ছেলেটি।
..
...
হঠাত একদিন ছেলেটি মেয়েটিকে নিয়ে ঘুরতে যায়।সারাদিন ঘুরাফেরার পর ছেলেটির ফাকা বাসায় নিয়ে যায় মেয়েটিকে।তার পর মেয়েটিকে সরাসরি তার অভিলাষের কথা বলে দেয়,
ছেলেটি বলে,আমাদের সম্পর্কের তো ৩বছর হতেই চললো। আর আমরা তো বিয়ে করবোই। তো এখন  আমি কি তোমাকে আপন করে পেতে পারি না?
আমি তোমাকে আপন করে পেতে চাই।
মেয়েটি ছেলেটির কথা শুনছিল আর তার চোখের দিকে তাকাচ্ছিল।ছেলেটির চোখে মেয়েটি ভালবাসার ছায়াও খুজে পাচ্ছিল না।
..
...
তাই মেয়েটি ফাকা বাসায় কিছু না বলে ছেলেটিকে বলে
এটা করবে তো আগে বলবে না পাগল?
আগে বললে সব ঠিক হত।
ছেলেটি বললো, তো এখন কি সমস্যা?
মেয়েটি বলে আমার কাল থেকে.....
তো আজকে তো আর হবে না। তাই তুমি নেক্সট সপ্তাহে প্লান করিও। আজকে আমাকে হোস্টেল এ দিয়ে আসো আমার শাওয়ার নিতে হবে।
ছেলেটির চোখ লোভে চকচক করে ঊঠে। ছেলেটি ভাবতেও পারেনি মেয়েটি এত সহজে রাজি হয়ে যাবে। তাই মেয়েটিকে হোস্টেল এ রেখে আসে।
..
...
পরদিন দুপুর বেলা....
মেয়েটি ছেলেটিকে ক্যাম্পাসে ডেকে নিয়ে যায় এবং বলে তুমি আমাকে আজকের মধ্যে বিয়ে করতে পারবে?
ছেলেটি আচমকা এমন প্রশ্ন শুনে থতমত খেয়ে বলে
না আমি তো তোমাকে বিয়ে করতে পারবো না।
মেয়েটি বলে কেন?
ছেলেটি বলে আমার পরিবারে মানবে না। আর প্রেম করলেই বিয়ে করতে হবে এমন কোন কথা আছে নাকি?
মেয়েটি বলে, প্রেম করলে শারীরিক সম্পর্কের কথা বলা আছে বুঝি?  কাল কে আমার সমস্যা ছিল না আর আজকেও নেই।
তুমি আমাকে কখনোই ভালবাস নাই।
তুমি শুধু আমার শরীর টাকে ভালবেসেছিলা সেটা কাল তোমার চোখে কামনা দেখেই বুঝছিলাম আমি।
..
...
তুমি আজকেই আমাকে বিয়ে করবে এবং এটাই ফাইনাল। বিয়ে করার পর তোমার যা ইচ্ছে করিও বলে মেয়েটি। ছেলেটি বলে সম্ভব না তোমাকে বিয়ে করা।
আর আমাদের সম্পর্ক আজকে এখানেই শেষ। তোমার মত কয়েক টা আমার গার্লফ্রেন্ড আছে।কতজন কে বিয়ে করবো আমি?
'''i want back my life,
tmi valo thako''' বলেই ছেলেটি চলে যেতে চায়।
তখন মেয়েটি ডেকে বলে,
" তুমি হেরে গেছো ফারাবি....
আমি হারিনি আমার ভালবাসা হারে নি....
বিদায়.....
..
...
[3]
..
...
ভার্সিটির অন্যতম সেরা জুটি টি এখন লাইব্রেরি তে বসে বই পড়ছে। আপাত দৃষ্টিতে পড়ছে মনে করলেও তারা আসলে প্রেম করছে। তারা অন্য সব কাপলদের মত ক্যাম্পাসে বসে প্রেম করতে পারে না কারন তারা ছেলেটি চতুর্থ বর্ষের এর ডিপার্টমেন্ট টপার আর মেয়েটি ৩য় বর্ষের ডিপার্টমেন্ট টপার আর দুজনেই কেমিস্ট্রি ডিপার্টমেন্ট এর। তাই তাদের নিয়ে সব শিক্ষকদের অনেক আশা।
তাই তারা লাইব্রেরী তে বসেই প্রেম করার কাজ টা সেরে নেয়। কারন এখানে সবাই ভাববে তারা স্টাডি করছে। আর ক্যাম্পাসে অনেকেই জানেই না যে তারা আসলে কাপল আর লাইব্রেরী তে স্টাডি নয় প্রেম করতেই যায়।
..
...
ছেলেটি অনেক আগে থেকেই সিরিয়াস রিলেশন টা নিয়ে। তাই যেভাবে পারছে প্রতিষ্ঠিত হবার প্রস্তুতি নিচ্ছে।
কারন মেয়েটিকে সে অনেক বেশি ই ভালবাসে। তার উপর প্রায় সাড়ে ৩বছরের সম্পর্ক। ছেলেটি ছিল মধ্যবিত্ত পরিবারে আর মেয়েটি ছিল উচ্চবিত্ত পরিবারের। তাই ছেলেটির ভয় ছিল মেয়েটির পরিবার নিয়ে।
..
...
তো তবুও তাদের খুনশুটি ময় ভালবাসার গল্প টা ভালই চলছিল। সারাদিন শেয়ারিং কেয়ারিং সব মিলিয়ে তারা অনেক সুখেই ভার্সিটি জীবন টা শেষ করতেছিল।
কিন্তু হঠাত করে তাদের মধ্যে ছন্দপতন শুরু হয়।
মেয়েটি ছেলেটিকে এভয়েড করে চলা শুরু করে।
ছেলেটি কিছুই বুঝে উঠতে পারে না। তাই মেয়েটির সাথে যোগাযোগ করার চেষ্টা করে কিন্তু মেয়েটির কথা বার্তা চালচলনে ছেলেটি আকাশ থেকে পড়ে।কিছুই মেলাতে পারছে না।
..
...
এভাবে ১৫-২০দিন কেটে যায়...
ছেলেটি দেখে মেয়েটি হাসতে হাসতে ক্যাম্পাসে বন্ধুদের সাথে আড্ডা দিচ্ছিল। তাই ছেলেটি জয়েন করে। সবাই কেমন জানি একটু অন্য চোখে ছেলেটির দিকে তাকায়। ছেলেটি উঠে এসে মেয়েটির একা হবার অপেক্ষা করে।
মেয়ে টি ঘন্টা খানেক আড্ডা দিয়ে বাসার উদ্দেশে যাওয়া শুরু করে। ছেলেটি মেয়েটিকে ডেকে কথা বলতে চায়,
মেয়েটি বলে কি বলবে তারাতারি বল।
..
...
ছেলেটি বলে তুমি আমাকে এভয়েড করছো কেন?
মেয়েটি বলে এভয়েড করছি নাতো। ঐ বিয়ের কেনাকাটা আর কাজ নিয়ে ব্যস্ত ছিলাম একটু আরকি...
ছেলেটি বলে সেটা আগে বলবে না...
কার বিয়ে?
মেয়েটি বলে আমার.....
ছেলেটির মাথায় বাজ পড়ার মত অবস্থা তার প্রেমিকার বিয়ে আর সেই খবর টা তার  সাড়ে ৩ বছরের প্রেমিকা হাসি মুখে দিচ্ছে।
আমার বাবার বন্ধুর ছেলে। লন্ডনে থাকে। ওখানেই সেটলট। সামনে মাসে আমার বিদায়। তুমি আসিও, এই নাও আমার বিয়ের কার্ড। বলেই ছেলেটিকে ব্যাগ থেকে একটা বিয়ের কার্ড দিয়ে দেয়।
..
...
ছেলেটি কান্না অনেক কষ্টে চেপে রেখে বলে, আমাদের এত দিনের সম্পর্কের কি হবে?
মেয়েটি অবাক হয়ে বলে, সম্পর্ক ছিল এখন নাই আবার করো কারো সাথে। আর ও আমাকে বিয়ে করেই লন্ডনে নিয়ে যাবে।
ছেলেটি বলে আমাকে যে স্বপ্ন গুলো দেখালে সেগুলোর কি হবে?
মেয়েটি বলে, আরে বাবা আমি কি তখন জানি নাকি যে আব্বু এমন বিদেশে প্রতিষ্ঠিত ব্যবসায়ী কোন ছেলের সাথে আমার বিয়ে দিবে? তখন তুমি ছিলা ভার্সিটি টপার তাই তোমার সাথেই সম্পর্ক করি। যাতে ভবিষ্যৎ ভাল হয়। কিন্তু এখন দেখো আমি তোমার থেকে অনেক ভাল বর পাচ্ছি....
সত্যি বলছি আমি এখন আর তোমাকে ভালবাসতে পারছি না।
আর হ্যা এটা সত্যি যে আমি তোমাকে অনেক ভালবাসতাম। জীবনে প্রথম তোমাকেই ভালবাসছি। কিন্তু এখন আমি আর তোমাকে ভালবাসি না। আমি এখন ওকে ভালবাসি....
বলেই মেয়েটি চলে যায়....
ছেলেটির আর কিছুই বলার থাকে না....
সুখে থেকো ঐশী....
বলেই ছেলেটিও মেয়েটির জীবন থেকে চিরতরে নিজেকে গূটিয়ে নেয়।
..
...
[4]
..
...
নজরুল সাহেবের ছোট ছেলের জন্য পাত্রী দেখতে এসেছে। পাত্রী মাশাল্লাহ অনেক সুন্দরী শিক্ষিতা, রুপে গুনে অনন্য।তাই তিনি বিয়ে পাকা করে গেছেন। তার ছেলে পাত্রী না দেখেই বিয়ের জন্য রাজি...
এদিকে পাত্রী ও পাত্রকে দেখতে চায় নি। কথা বলে পরিচিত হতেও চায় নি।তাই বিয়ে টা শুধু মাত্র মুরুব্বিদের কথাতেই হয়ে যায়।
..
...
বাসর ঘরে বসে আছে মেয়েটি।
রাত ১:৩০বাজতে চললো। মেয়েটির অনেক কথা বলার আছে ছেলেটিকে...
অনেক দেরি করে ছেলেটি বাসর ঘরে আসলো। তারপর মেয়েটি তার জীবনের কথা বলে ফেললো এক নিশ্বাসে আর বললো যে সে তার ইচ্ছাতেই বিয়ে করেছে কিন্তু সে তার প্রথম ভালবাসা কে আজীবন ভুলতে পারবে না।সে একটা ছেলেকে ভালবাসতো কিন্তু ছেলেটি তাকে ধোকা দিয়েছে। তবুও সে সেই ছেলেটিকেই ভালবাসে মন থেকে এবং ভালবেসে যাবে।
..
...
ছেলেটি এতটাই অবাক হল যে কিছুই বলার ভাষা খুজে পাচ্ছিল না।বাসর রাতে বউয়ের মুখে তার সাবেক প্রেমিকের প্রতি ভালবাসার কথা শুনার ভাগ্য হয়তো বাঙালী পুরুষদের খুব একটা হয় না।
কিন্তু ছেলেটি মনে মনে অনেক খুশি। কারন ছেলেটি কখনো বিয়েই করতে চাইতো না। তাই তার পরিবার থেকে জো করে বিয়ে টা দিয়ে দেয়া হয়ছে। কারন ছেলেটি অন্য একটা মেয়েকে মনে প্রানে ভালবাসে। কিন্তু মেয়েটিকে সে কখনোই পাবে না। তাই ভেবেছিল আর কখনোই বিয়ে করবে না।
ছেলেটিও মেয়েটিকে তার সব কথা বলে ঘুমিয়ে পড়ে। কয়েক দিন পর ছেলেটির ছুটি শেষ হয়ে গেলে বউ নিয়ে ঢাকায় নিজের কর্মস্থানে আসে।
..
...
তারপর তাদের মধ্যে দিনের খুব প্রয়োজনীয় ২-১টা কথা ছাড়া আর কথা হয় না।
মেয়েটি সারাদিন তার পুরোনো প্রেমিকের কথা ভেবেই সারাদিন বিষন্বতায় দিন কাটায় বেলকনিতে বসে।আর ছেলেটিও নিজেকে যন্ত্রমানব বানিয়ে নিয়েছে।
..
...
[5]
..
...
ছেলেটি ভাবে,
এত সুন্দর একটা মেয়ে নিজের জীবন টা এভাবে নষ্ট করে দিচ্ছে?
আমি কি কোন ভাবেই পারি না মেয়েটিকে একটা নতুন জীবন দিতে...  একটু আশার আলো দিতে।বেঁচে থাকার মানে বুঝাতে?
আমি না হয় সুখি হব না।তবু আমাকে পেয়ে যদি মেয়েটি সুখি হয় হোক।আমি নিজে আজ তাকে বলবো আমাকে স্বামীর অধিকার দিতে....
আমি তাকে আমার মনের রানী তো এতদিনে বানিয়ে ফেলেছি... এখন ভালবেসে তার অধিকার টাও তাকে দিতে চাই.....
..
...
মেয়েটি ভাবে,
এত ভাল একটা ছেলে কিভাবে হয়?
আমি এত সুন্দরী ভরা যুবতী একটা মেয়ে তার বাড়িতে তারই বিবাহিতা স্ত্রী হয়ে ২৪ঘন্টা আছি। একবার তার চোখে কামনা দেখতে পেলাম না।যখনি দেখি কত গভীর ২টি চোখ। সেই চোখে আমার জন্য এত সম্মান দেখতে পাই কিভাবে?
আচ্ছা আমি তো তার সাথে তারই বিছানায় থাকি।ভুল করেও কোনদিন ঘুমের ঘোরেও আমার গায়ে হাত স্পর্শ হয়নি তার।
এত ভাল একটা ছেলে মানুষ হয় কিভাবে?
এই মানুষ টাকে আমি আর কষ্ট দিতে পারবো না।
আমি আজকেই তাকে বলবো আমি তার স্ত্রীর অধিকার চাই।
আমার মনে তো সেই কবে থেকেই রাজা হয়ে আছে।এখন আমি তাকে ভালবাসা অধিকার টুকুও চাই.....
..
...
রাত ৯:৪৫....
ছেলেটি ছাদে বসে জোস্না বিলাস করছে কিন্তু মন টা আজ ভাল লাগছে না।আজ প্রথম বারের মত মেয়েটির নাম্বারে কল দিল। মেয়েটিও যেন ছেলেটির কলের অপেক্ষায় ছিল।তাই কল পেয়েই রিসিভ করে বললো কিছু বলবা???
প্রথম বারের মত মেয়েটি ছেলেটিকে তুমি করে বলে...
ছেলেটি বলে আমাদের বিয়ের শাড়ী টা পড়ে একটু ছাদে আসতে পারবে?
মেয়েটি ৫মিনিটের মধ্যে চেঞ্জ করে ছাদে ছেলেটির পাশে যায়।
..
...
ছেলেটি বলা শুরু করে,
শুনেছিলাম মানুষ ভুল মানুষ টাকে অনেক বেশি ই ভালবেসে ফেলে।আমি ভাবি যদি ভুল মানুষ টাকে এত ভালবাসতে পারি তাহলে সঠিক মানুষ টাকে কতটা ভালবাসতে পারবো?
আচ্ছা,
আমার তো ভালবাসার মত একটা সঠিক মানুষ আছে,আমি কি তাকে ভালবাসতে পারি?
প্রতিরাতে ছাদে বসে একলা জোস্না দেখতে দেখতে আমি ক্লান্ত...
তুমি কি আমার জোস্নার ভাগ নিবে?
..
...
মেয়েটি কিছুই না বলে ছেলেটির সামনে যায় ছেলেটি দাড়িয়ে যায়। মেয়েটি ছেলেটিকে খুব জোরে নিজের বুকে জড়িয়ে ধরে বলে ঊঠে, এই বুক টা আর বুকের মালিক টা সাথে তার মন টা সবটাই আমি চাই.... আমার করে চাই.... ভালবাসায় কিনে নিতে চাই....
তুমি কি দিবে আমাকে নিলয়???
আমি এখন থেকেই তোমার সব টা নিজের করে পেতে চাই,
নিলয় বলে ঊঠে নিজেকে অনেক আগেই তোমাকে লিখে দিয়েছি নিরুপমা....
আমি সব টাই তোমার.....
তারপর শুরু হল তাদের নতুন জীবনের পথ চলা...
দুটি ক্ষত বিক্ষত হৃদয়ে ভালবাসার নতুন স্পর্শ নতুন এক স্বপ্নের সুচনা হয়......
তার তাদের ভালবাসার চিহ্ন স্বরুপ আসে সবার নয়নের মনি.....
নিলীমা ....
নাভিয়া নভেলী ঐশী ( নিলীমা).....

৩জন মিলে তারা সুখেই থাকুক....
..
....
কি ভাবছেন??
মেয়েটি কে ছিল? ছেলে টি কে ছিল?
মেয়েটি ছিল সেই ফারাবির সাথে সম্পর্ক ছিন্ন করা মেয়েটি। যাকে ফারাবি ভালবাসার নামে ধোকা দিতে চেয়েছিল.....
সেই মেয়েটিই হল নিরুপমা.....
আর ছেলেটি??
ছেলেটি সেই ভার্সিটি টপার। যাকে ঐশী ধোকা দিয়ে লন্ডন প্রবাসী কে বিয়ে করে।
সেই ভার্সিটি টপার ই হল এই নিলয়.....

..
...
সবশেষে,
শুধু বলতে চাই.....
" ভুল মানুষ টাকেই যদি আপনি এত ভালবাসতে পারেন,
তাহলে ভাবুন, আপনি আপনার সঠিক মানুষ টাকে কত কত কত ভালবাসতে পারবেন......
২১ ডিসেম্বর, ২০১৬/এমটিনিউজ২৪/এইচএস/কেএস

Follow করুন এমটিনিউজ২৪ গুগল নিউজ, টুইটার , ফেসবুক এবং সাবস্ক্রাইব করুন এমটিনিউজ২৪ ইউটিউব চ্যানেলে