রবিবার, ০৮ অক্টোবর, ২০১৭, ০২:২৬:১০

না পাওয়া ভালবাসা

না পাওয়া ভালবাসা

জাকারিয়া আহমেদ : জাকারিয়া আর ওয়াহিদার বন্ধুত্ব শুরু হয় ভার্সিটিতে। একি ক্লাসে পড়ে তারা জাকারিয়া সবসময় চুপচাপ থাকে। কারো সাথে তেমন কোনো কথা বলে না।তাই বন্ধু বলতে তার কেউ নেই।সবসময় একা থাকে। একাকীত্ব তার একমাত্র বন্ধু।

শূণ্যতা যখন তাকে গ্রাস করে ফেলেছিল ঠিক সেই মূহুর্তে বন্ধুত্বের হাত বারায় ওয়াহিদা। তখন থেকে শুরু হয় জাকারিয়ার জিবনের নতুন অধ্যায়। খুব চঞ্চল প্রকৃতির মেয়ে ওয়াহিদা।সারাক্ষন কিছুনা কিছু করছেই। দুষ্টমি ফাইজলামিতে সবাইকে মাতিয়ে রাখে। জাকারিয়া আর ওয়াহিদার মাঝে প্রতিদিন খুনসুটি লেগেই থাকে। প্রতিদিন ঝগড়া করে একে অপরকে মানানো তাদের নিত্যদিনের অভ্যাস।

এভাবে ধীরে ধীরে বদলে যেতে থাকে জাকারিয়া,যেন তার অন্ধকার মেঘাছন্ন জীবনটা কে ভোরের আলোয় ভরিয়ে দিয়েছে ওয়াহিদা। যে ছেলের কাছে শূণ্যতা আর একাকীত্বই ছিল তার জিবনের চলার পথের সাথী,আজ সে আর একা নেই। জাকারিয়ার এখন অনেক বন্ধু যার সবসময় তার সাথে থাকবে তাকে আগলে রাখবে।

তবে মাবাবার পর জাকারিয়ার কাছে আপন একজনি সে হচ্ছে ওয়াহিদা।জাকারিয়া কোনো কিছুর বিনিময়ে ওয়াহিদা কে হারাতে চায় না।তাই তো যেই ঝগড়া শুরু করুক না কেন জাকারিয়া আগে সরি বলে।ওয়াহিদার মুখের হাসি দেখার জন্য জাকারিয়া সব কিছু করতে রাজি।

সে দিন আকাশ ছিল মেঘলা এবং হঠাং  করে বৃষ্টি শুরু হয়।ক্লাস ফাঁকি দিয়ে ভার্সিটি বারান্দায় দাঁড়িয়ে বৃষ্টি উপভোগ করতেছিল জাকারিয়া।হঠাং  একটি মেয়ে দৌড়ে এসে তার পাশে দাড়াল।তাকাতেই মনে হল মেয়েটি যেন বর্ষাস্নাত কদম ফুল।

মেয়েটির টানাটানা চোখ আর মায়াবি চেহারা মন কেড়ে নিয়েছে জাকারিয়ার।অপলক দৃষ্টিতে চেয়ে আছে মেয়েটির দিকে।জাকারিয়া বলে ডাকতেই চমকে উঠল সে।(তার মানে এতক্ষণ ওয়াহিদাকে নিয়ে কল্পনা করতেছিল সে)কিরে জাকারিয়া ঠিক আছিস তো ( ওয়াহিদা)
অই তুই কখন এলি (জাকারিয়া)
কখন এলি মানে,এতক্ষন ধরে দাঁড়িয়ে ডাকছি আর তুই আমার দিকে ড্যাবড্যাব করে তাকিয়ে আছিস কেন (ওয়াহিদা)
নাহ এমণি (জাকারিয়া)
অহ তাই বল।আচ্ছা ক্লাস না করে এভাবে বারান্দায় দাঁড়িয়ে থাকলে হবে?চল ক্লাসে যাই (ওয়াহিদা)
নারে আজ আর ক্লাস করব না,তুই যা।আমি যাই বলেই হাটা শুরু করল জাকারিয়া।ওদিকে ডেকেই চলেছে ওয়াহিদা, কিন্তু আজকে যেন কেন সাড়া দিতে ইচ্ছে হলনা।

ওয়াহিদাকে নিয়ে আজ সারাক্ষণ ভাবল জাকারিয়া। নাহ কোনো কাজেই মন বসাতে পারছে না সে।কিন্তু কি অদ্ভুত। যতবার সে ওয়াহিদার কথা ভাবছে মনে কি রকম যেন অনুভূতি হচ্ছে যা আগে কখন ও অনুভব হয় নি। তবে কি আমি প্রেমে পরেছি? যে ছেলেটি প্রেম ভালবাসা থেকে একশ হাত দূরে থাকে সে কি একটু একটু করে ভালবাসতে শিখে গেল?

চিন্তার সাগরে ডুবে থাকতে থাকতে রাত পার হয়ে কখন ভোরের আলো ফুটতে শুরু করেছে খেয়াল করে নি জাকারিয়া।অনেক চিন্তার পর ভাবল না এভাবে বসে থাকলে তো হবে না,পাগলিটাকে জানাতে হবে যে তাকে কত ভালবাসি। ওয়াহিদাকে ছাড়া তার জিবনটাই অচল। ভাবতেই আনন্দ লাগছে জাকারিয়ার সে তার সবচেয়ে ভাল বন্দুকে এত ভালবাসে।

যে অনুভুতিকে সে বন্ধুত্ব বলে মনে করত আসলে সেটা ছিল তার ভালবাসা।এমন সময় জাকারিয়ার ফোনটা বেজে উঠলো।স্কিনে থাকাতেই দেখল ওয়াহিদার নাম।এই শোন তকে একটা জরুরি কথা বলব। এখনি ভার্সিটি চলে আয় (ওয়াহিদা)
আচ্ছা আসছি (জাকারিয়া)
তাড়াতাড়ি তৈরি হয়ে ভার্সিটি চলে গেল জাকারিয়া। এক ঘণ্টা হয়ে গেল ওয়াহিদার দেখা নাই। নাহ মেয়েটা আর ঠিক হলনা।অপেক্ষার পালা যেন শেষ হচ্ছে না। কখন যে তাকে মনের কথাগুলো বলতে পারবো।

এই জাকারিয়া, সরি অনেক দেড়ি করে ফেললাম (ওয়াহিদা)
তুই তো দেড়ি করবি।এ আর নতুন কি (জাকারিয়া)
আচ্ছা প্লিজ রাগ করিস না।তোকে একটা কথা বলব (ওয়াহিদা)

কি বলবি তাড়াতাড়ি বল কারণ আমি ও তকে একটা জরুরি কথা বলব (জাকারিয়া)
তোকে বলা হয়নি। রাহুল আমাকে গতকাল রাতে প্রপোজ করেছে। কিন্তু আমি কোনো সিধান্ত নিতে পারছি না। তাই আমি ওকে বলেছি জাকারিয়া যা বলবে আমি তাই করবো (ওয়াহিদা)
তাই নাকি? আমি যদি না বলি তখন(জাকারিয়া)

তাহলে না বলে দিব।কারণ আমি জানি তুই আমাকে সবার থেকে ভাল বুঝিস আর সবসময় আমার ভাল চাইবি (ওয়াহিদা)
তুই কি রাহুল কে পছন্দ করিস (জাকারিয়া)
আমি জানি না জাকারিয়া (ওয়াহিদা)

আমি যা বুঝার বুঝে গেছি। রাহুল অনেক ভালো ছেলে। তোকে কখনও কষ্ট দিবে না। আর যদি ওর কারনে তোর চোখে এক ফোটা পানি আসে, তাহলে আমাকে বলবি ওর খবর করে দিব (জাকারিয়া)

কি যে বলিস না। বলেই হেসে ফেল্ল ওয়াহিদা
আচ্ছা পাগলী আমি যাই। তুই তোর পাগলকে নিয়ে অনেক সুখে থাক (জাকারিয়া)
যাই মানে, তুই না কি জরুরি কথা বলবি (ওয়াহিদা)
নাহ কিছু কথা অজানা থাকাই ভাল। বলেই চলে গেল জাকারিয়া। কারণ যেখানে সুখ থাকে সেখানে শূন্যতা থাকতে নেই।

(জীবনের কাছে হয়তো একটু বেশি চেয়ে ফেলেছিলাম আমি। সবাই তো আরর সব কিছু পায়না। আমি না হয় তোর স্মৃতি আর কিছু শূন্যতা নিয়েই জীবন কাটিয়ে দেব। আসলে কি জানিস? যাদের নিজেদের ইচ্ছাগুলো অপুর্ণ থাকে অনে্যর পূর্ণতায় তারা সুখ খুঁজে নেয়।)

এমটিনিউজ/এস

Follow করুন এমটিনিউজ২৪ গুগল নিউজ, টুইটার , ফেসবুক এবং সাবস্ক্রাইব করুন এমটিনিউজ২৪ ইউটিউব চ্যানেলে