রবিবার, ০৮ জুলাই, ২০১৮, ০৪:০৮:২২

‘মা তোর সাথে মিশতে মানা করছে, তুই ডিভোর্সী’

‘মা তোর সাথে মিশতে মানা করছে, তুই ডিভোর্সী’

এখন আমাকে নখ বড় রাখার জন্য খাচ্চর নামক শব্দ টা শুনতে হয় না।

এখন আমার একটু দেরিতে ঘুম ভাঙ্গলে শুনতে হয় না আমার বাবা মা আমাকে কিছু শিখায় নি।

এখন আমার জর আসলে কেউ বলে না বেড়াইম্মা মাইয়া বৌ করে ঘরে আনছি।

এখন আমি ভাত রান্না করতে গেলে কেউ এসে বলে না চাল কি আমার বাবা বাড়ি থেকে আনছি কিনা।

এখন আমি বারান্দায় একটু মন খারাপ করে দাড়ালে কেউ বলে না আমি বাইরের পুরুষ মানুষ দেখার জন্য দারাইছি।

এখন আমার মায়ের ফোন আসলেই কেউ বলে না এত বারবার মেয়ের খোজ নেওয়ার কি আছে?

এখন আমি না খেয়ে কারো জন্য অপেক্ষা করার পর কেউ বলে না এসব ঢং কইর না.

এখন আমি কাদতে গেলে কেউ বলে না আমি নাটক করি.

এখন আমি আমার পছন্দের একটা জামা কিনতে গেলে আমাকে ভাবতে হয় না এই রং টা আমার জন্য নিষিদ্ধ।

এখন আমি চুল টা খুলে আয়নার সামনে দাড়ালে আমাকে কেউ বলে না আমি বেহায়া।

এখন আমি রান্না করতে গিয়ে আমার হাত পুরিয়ে ফেললে আমাকে শুনতে হয় না আমি কোন কাজ ই পারি না।

এখন আমার মা এর বাসা থেকে আমাকে একটা জামা দিলে কেউই বলে না এত সস্তা জিনিষ মেয়েকে কিভাবে দেয়?

এখন আমাকে আমার আশেপাশের মানুষ কেমন আছি জিজ্ঞেস করলে আমাকে মিথ্যা বলতে হয় না আমি ভাল আছি।

এখন আমি প্রতিবাদ করতে গেলে আমাকে আমার সামীর হাতের মাইর খেতে হয় না।

এখন আমি আমার অধিকার চাইলে গালি শুনতে হয় না।

এখন আমি ক্লান্ত থাকলেও আমার উপর কারো শরীরের খিদা মিটানোর অধিকার নাই।

এখন আমি চাকরি করতে গেলে আমাকে কেউ বলে না তার পরিবারের কোন মেয়ে বাইরে গিয়ে নিজের ট্যালেন্ট দেখায় না।

এখন কেউ আমাকে বলে না আমার সার্টিফিকেট গুলো শুধু মানুষকে বলার জন্য যে আমি শিক্ষিত।

এখন আমাকে শুনতে হয় না কারো ঘরের অশান্তির কারনটা আমি।

এখন আমাকে কোন বিয়ের অনুষ্ঠানে গিয়ে কেউ অইখানের বৌ কে উদ্দেশ্য করে দেখায় না আমার বাপের বাড়ি থেকে আমাকে ভরি ভরি গহনা দেয় নি।

এখন আমার মা অসুস্থ হলেও আমাকে দুদিন যাবত কাউকে বুঝিয়ে আমার মা কে দেখতে আসতে হয় না।

এখন আমার শুনতে হয় না অই মেয়েটার সাথে বিয়ে করলে আমি সুখী হতাম।তোমার সাথে আমি সুখী নই।

এখন আমাকে রাতের পর রাত জেগে একটা ঘুমিয়ে থাকা মানুষের মুখের দিকে তাকিয়ে ভাবতে হয় না এই মানুষটাকেই কি ভালবাসছিলাম যে আজ রাতে অনেক মদ খেয়ে বাসায় ফিরে আমাকে মেরেছে?

এখন আমি শাস নেওয়ার সময় কারও অনুমতির প্রয়োজন হয় না……।

আমাকে এখন শুনতে হয় অন্য কিছু। আমি ভাল না তাই আমি সংসার করতে পারি নাই।দোষটা আমারই .আরো কিছুদিন নাকি আমার দেখা দরকার ছিল। আমার নাকি চুপ করে সহ্য করা উচিত ছিল।

আমি এখন দুশ্চরিত্রা একটা মেয়ে.অনেক সিঙ্গেল ছেলে আমাকে দেখে বলে “ডিভোর্সী মাল.একটু পটাইলে খায়া দেয়োন যাইব” .

আমার আত্মীয়সজন আমার বাবা মাকে বলে ” তোমাদের আল্লাদে মেয়ে খারাপ হইছে্‍ ”

বন্ধুবান্ধব বলে ” মা তোর সাথে মিশতে মানা করছে .তুই ডিভোর্সী”

হাহাহাহাহা

আমার প্রশ্ন কই ছিলেন আপনারা যখন আমি রাত জেগে কাদতাম।কই ছিল আমাকে নিয়ে এত সমালোচনা যখন আমার চোখের নিচে এত কালি পরেছিল যে আমার চোখ গুলোই দেখা যেত না। কোথায় ছিলেন আপনারা যখন আমার সামী আমাকে নোঙ্গরা ভাষায় গালাগালি করত?কোথায় ছিল আপনাদের সম্মান যখন আমাকে আমার বাবা মা কে প্রতি মুহুর্তে অপমান করা হত?

কোথায় ছিল আমার বন্ধু বান্ধব দের চিন্তা যখন আমার বিয়ের পিরিতে আমার শশুর শাশুরি আমার বাবা মা কে অপমান করছিল আর তারা অই মুহুর্তে সেলফি তুলায় ছিল ব্যস্ত। কোথায় ছিল সবার এই বিবেক যখন আমি শরীরের ব্যথায় কাদতে কাদতে ক্লান্ত হয়ে ঘুমায় পরতাম।

সত্যি করে বলেন তো কেউ কি ছিলেন? সংসার ছেড়েছি অন্যায় করেছি আর যেগুলা আমার সাথে হচ্ছিল সেগুলা কি ন্যায় হচ্ছিল? তখন তো কেউ এভাবে আমাকে নিয়ে একটু সচেতনতা দেখান নি এখন কেন আপনাদের গল্পের আসরের মূল বিষয় টা আমি? এই দুনিয়ার কোন মেয়ে ই চায় না তার সংসার ভাঙ্গুক।

সবাই সুখের আশা তেই আরেকটা মানুষের হাত ধরে। আমিও তো তাই চাইতাম। ভুল কয়েকটা মানুষের মাঝে পরে গেছিলাম.. আপনআর মেয়ে অথবা বোনের সাথে যদি এমনটা হত তাহলে ভেবে দেখেছেন আপনি কি করতেন সে জায়গায় আমার এই অবস্থায় আমার বাবা মা আমাকে আশ্রয় দেওয়াতে আপনারা তাকে খারাপ বলছেন?

কোনটা ভাল হত বলেন তো? আমি আত্মহত্যা করলে? তখন হয়ত সবার টনক নড়ত .বলতেন “আহারে মেয়েটা ভাল ছিল।অনেক সহ্য করছে আল্লাহ ওর আত্মাকে শান্তি দেক”

ফেসবুকে আমাকে নিয়ে তোলপাড় পরত “নিড জাস্টিস ফর অমুক/তমুক”

কিন্তু যারা জন্ম দিছে তারা কি করত? আমি অন্তত বেচে আছি এতেই তারা খুশী। আপনারা কিছু হলেই কেন মেয়েটার দোষ বের করেন? সম্পূর্ণ ঘটনাটা জেনেই কি সমালোচনা টা করছেন? আমি বেচে আছি।ভাল না থাকি অন্তত খারাপ নাই। কাদছি না।

আমি মনে করি এটা আমার ব্যার্থতা না যে আমি সংসার ছেড়ে এসেছি এটা তার ব্যার্থতা যে এটা বুঝতে পারে নাই যে একটা মেয়ে তার জন্য একটা পৃথিবী ছেড়ে শুধু মাত্র তার হাত ধরে সম্পূর্ণ জীবন পারি দেওয়ার আশা করেছিল।

সম্মান,ভালবাসা, অধিকার ছিল আমার প্রাপ্য.যেটা সে দিতে পারে নি।সে পেরেছে আমাকে ভিতর থেকে শেষ করে দিতে।

দয়া করে একটা মেয়ের সম্পর্কে আঙ্গুল তোলার আগে অন্তত সম্পূর্ণ ঘটনা টুক জানুন।তারপর বিচার করুন।

Follow করুন এমটিনিউজ২৪ গুগল নিউজ, টুইটার , ফেসবুক এবং সাবস্ক্রাইব করুন এমটিনিউজ২৪ ইউটিউব চ্যানেলে