সোমবার, ২৩ অক্টোবর, ২০১৭, ০৮:১৮:৪৩

সৌদি আরব, লেবানন গিয়ে নারী কর্মীরা ফিরছেন অন্ত:সত্ত্বা হয়ে

সৌদি আরব, লেবানন গিয়ে নারী কর্মীরা ফিরছেন অন্ত:সত্ত্বা হয়ে

প্রবাস ডেস্ক : বিদেশে বাংলাদেশি নারী শ্রমিকরা নানা ভাবে নির্যাতনের শিকার হচ্ছে। অভিবাসী কর্মী উন্নয়ন প্রোগ্রাম ওকাপ নামে একটি বেসরকারি সংস্থার মতে ওকাপ এর তথ্যমতে, নির্যাতনের শিকার নারী কর্মীদের ৩০ শতাংশই অন্ত:সত্ত্বা হয়ে দেশে ফেরেন। চিকিৎসকের পরামর্শে এদের মধ্যে ৮০ শতাংশ গর্ভপাতের সুযোগ পেলেও বাকীরা অনাকাঙ্ক্ষিত সন্তান প্রসবে বাধ্য হন।

এক্ষেত্রে, প্রবাসী নারী শ্রমিকের সুরক্ষার পাশাপাশি, বিদেশে নিয়োগকর্তা ও সংশ্লিষ্ট দায়ী ব্যক্তির বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে দক্ষ আইনজীবী নিয়োগের পরামর্শ বিশেষজ্ঞদের।

সৌদি আরব, লেবাননসহ বিভিন্ন দেশে নারী শ্রমিকের চাহিদা বাড়লেও, বিদেশে গিয়ে নানা হয়রানির পাশাপাশি শারীরিক ও মানসিক নির্যাতনের শিকার হচ্ছেন অধিকাংশ নারী কর্মী। চুক্তি অনুসারে কর্মীদের দেয়া হচ্ছে না, নির্ধারিত বেতন, সাপ্তাহিক ছুটি এবং চিকিৎসাসহ অন্যান্য সুযোগ সুবিধা। বিশেষজ্ঞদের মতে, নিয়োগ কর্তাকে চুক্তির শর্ত মানতে বাধ্য করাসহ, দায়ী ব্যবসায়ী ও দালালদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়া না গেলে নির্যাতন বন্ধ হবেনা।

এসব নির্যাতন নিয়ে সরকারী তথ্য না মিললেও, বেসরকারি সংস্থা ওকাপ এর এক গবেষণা মতে, সৌদি আরব থেকে ফিরে আসা নারী কর্মীর ৫৬ শতাংশ এবং লেবানন থেকে আসা ৫৮ শতাংশই শারীরিক নির্যাতনের শিকার। বিদেশ ফেরত কর্মীদের নিয়ে কাজ করা এই সংস্থাটির মতে, তিন বছরে বিভিন্ন দেশ থেকে আসা নারী কর্মীর ৩১ শতাংশই শারীরিক নির্যাতনের শিকার। সম্প্রতি সময় নিউজের এক প্রতিবেদনে নারী শ্রমিকদের নিপীড়নের নানা চিত্র প্রকাশ হয়েছে।

প্রায় এক দশক ধরে বাড়ি বাড়ি গিয়ে বিদেশ ফেরত কর্মীদের তথ্য সংগ্রহ করেন বেসরকারি সংস্থা ওকাপ এর কর্মী লুৎফা বেগম ও তার সহযোগীরা। তাদের মতে, বিদেশে নির্যাতনের শিকার হয়ে অন্ত:স্বত্তা হয়ে পড়ায় লজ্জা আর অপমানে পরিবার ও সমাজ থেকেও বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়েন অনেক কর্মী।

ওকাপের একজন মাঠকর্মী বলেন, এসব বিদেশ ফেরত নারীদের অনেক সময় তাদের স্বামীরা মেনে নেন। কারণ তাদের স্বামীরা তো জানেন অভাবের তাড়নায় তাদের স্ত্রীদের বিদেশ পাঠিয়েছিলেন তারা।

ওকাপের আরো একজন মাঠকর্মী বলেন, ‘আমার দেখা মতে অনেকেই গর্ভবতী হয়ে দেশে ফিরেছেন। সমাজেও তাদেরকে হীন দৃষ্টিতে দেখা হয়। আমরা এমআর এর মাধ্যমে তাদের এই পরিস্থিতি থেকে মুক্তি দিয়েছি।’

বামরুর প্রতিষ্ঠাতা চেয়ারপারসন ড. তাসনীম সিদ্দিকী বলেন, ‘প্রবাসে নারীরা ঘরের ভিতরে কাজ করেন বিধায় সেখানে নিগ্রহের বিষয়টি তদারকি কষ্টসাধ্য। দ্বিপক্ষীয় যে চুক্তি রয়েছে তার মধ্যেমেই সেখানকার আইনের মাধ্যমেই কিন্তু এ সমস্যার সমাধান করা সম্ভব।’

বায়রার যুগ্ম মহাসচিব শামীম আহমেদ চৌধুরী নোমান বলেন, ‘আমাদের উচিত কঠিন পদক্ষেপগুলো নেয়া। এগুলো যদি করতে পারি তাহলে এ ধরণের ঘটনার পুনরাবৃত্তি আর ঘটবে না।’

সৌদি আরব, লেবাননসহ বিভিন্ন দেশে নারী শ্রমিকের চাহিদা বাড়লেও, বিদেশে গিয়ে নানা হয়রানির পাশাপাশি শারীরিক ও মানসিক নির্যাতনের শিকার হচ্ছেন অধিকাংশ নারী কর্মী। চুক্তি অনুসারে কর্মীদের দেয়া হচ্ছে না, নির্ধারিত বেতন, সাপ্তাহিক ছুটি এবং চিকিৎসাসহ অন্যান্য সুযোগ সুবিধা। বিশেষজ্ঞদের মতে, নিয়োগ কর্তাকে চুক্তির শর্ত মানতে বাধ্য করাসহ, দায়ী ব্যবসায়ী ও দালালদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়া না গেলে নির্যাতন বন্ধ হবেনা। লেবাননে নির্যাতনের শিকার গৃহকর্মী ফাতেমা বেগম বলেন, ‘আমি মনে করছি আর কোনোদিন বাংলাদেশের মাটিতে ফিরতে পারবো না।’

গৃহকর্মী হিসেবে লেবাননে কাজ করার সময় নির্যাতনের শিকার হওয়ার ঘটনা বলতে গিয়ে কান্নায় ভেঙ্গে পড়েন, বরিশালের ফাতেমা বেগম। দিনের পর দিন শারীরিক ও মানসিক নির্যাতন, চুরির মিথ্যা অভিযোগ আর হয়রানির প্রতিবাদ করায় তিনতলা থেকে ফেলে দেয়া হয় তাকে। কোনভাবে প্রাণে বেঁচে গেলেও, ভাঙ্গা হাত-পা ও মেরুদন্ডের চিকিৎসায় এখন মাসের পর মাস কাটছে বিছানায় শুয়ে।

তিনি বলেন, ‘তারা টাকা না কি যেনো মেঝেতে ফেলার পর আমিতো ঐ দেশের টাকা চিনি না আমি ঝাড়ু দিয়ে ময়লার ঝুড়িতে ফেলছি। ম্যাডাম এসে দেখে আমাকে খুব মারলো। আমি জানালা মুছছিলাম আমাকে যে ধাক্কা দিলো আমি আর কিছুই জানি না স্যার।’

কর্মীদের বেতন না দেয়া, সাপ্তাহিক ছুটি না থাকা এবং চিকিৎসা না করানোর মত নানা ঘটনা। এক্ষেত্রে নিয়োগ কর্তাসহ সংশ্লিষ্ট অপরাধীর বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা নেয়ার পরামর্শ, বিশেষজ্ঞদের।

অভিবাসী উন্নয়ন প্রোগ্রাম ওকাপ চেয়ারম্যান শাকিরুল ইসলাম বলেন, ‘ভাষা সমস্যা থেকে শুরু করে সব কিছুতে সমস্যার মুখোমুখি হয়। যখন তারা তাদের কাজটা ঠিকমত করতে পারছে না। তখন কিন্তু মালিক তাদের ওপর শারীরিক নির্যাতন শুরু করে।’
এমটিনিউজ২৪.কম/টিটি/পিএস

Follow করুন এমটিনিউজ২৪ গুগল নিউজ, টুইটার , ফেসবুক এবং সাবস্ক্রাইব করুন এমটিনিউজ২৪ ইউটিউব চ্যানেলে