রাজবাড়ী : ঠিকমতো ভোরের আলো ফোটেনি। ঝোপের মধ্য হতে ভেসে আসছে এক নবজাতকের আর্তচিৎকার। এমন চিৎকার কানে আসতেই এগিয়ে গেলেন এক বৃদ্ধা। গিয়ে দেখলেন ফুটফুটে একটি কন্যাশিশু আর্তচিৎকার করছে।
সামান্য কাপড় পেঁচানো শিশুটির সারা দেহ রক্তে ভেজা। রক্তের স্বাদ নিতে শিশুটির সারা দেহ ছেয়ে গেছে অসংখ্য লাল পিঁপড়ায়।
এ অবস্থা দেখে নিজের মন বোঝাতে পারছিলেন বদ্ধা আন্না বেগম (৬০)। পরম মমতা দিয়ে শিশুটিকে তুলে নিয়ে শুরু করলেন পরিচর্যা।
শনিবার ঢাকা-খুলনা মহাসড়কের পাশে পশ্চিম উজানচর রমজান মাতব্বর পাড়া এলাকায় বাবা-মা পরিচয়বিহীন এ শিশুটি উদ্ধার হয়।
আন্না বেগম বলেন, ঘুম থেকে উঠে বাড়ির আঙিনায় যাই। এ সশয় রাস্তার পাশে ঝোপের মধ্য থেকে শিশুটির কান্নার শব্দ শুনতে পাই। এগিয়ে দেখি- শিশুটির সারা শরীর রক্ত-পানি আর ধুলো-বালিতে মাখামাখি।
অসংখ্য পিঁপড়া শিশুটিকে কামড়াচ্ছে। মুহূর্তেই তিনি শিশুটিকে তুলে নিয়ে পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন করেন।
ওই বৃদ্ধার ধারণা, গতরাতেই শিশুটির জন্ম হয়েছে এবং শেষ রাতের দিকে কেউ এখানে ফেলে রেখে গেছে।
এ খবর শুনে পাশের বাড়ির ছানোয়ার হোসেন ও তার স্ত্রী ছালমা বেগম সেখানে ছুটে যান। এ দম্পতি নয় বছরের সংসার জীবনে নিঃসন্তান রয়েছেন।
তারা শিশুটিকে চাইলে আন্না বেগম নিঃসন্তান ছালমা বেগমের কোলে শিশুটিকে তুলে দেন। তারা সঙ্গে সঙ্গে শিশুটিকে হাসপাতালে নিয়ে যান।
ছানোয়ার হোসেন বলেন, ৯ বছরের সংসার জীবনে আমাদের কোনো সন্তান নেই। ওর জন্ম যেভাবেই হোক সৃষ্টিকর্তা হয়তো আমাদের জন্যই পাঠিয়েছেন। আমরা তাকে নিজ সন্তানের মতো লালন পালন করতে চাই।
ছালমা বেগম জানান, শিশুটিকে পেয়ে খুব খুশি হয়েছি। আমার শূন্য কোল পূর্ণ হলো। ও আমার সন্তান হিসেবেই বড় হবে। আমি শিশুটির নাম দিয়েছি সুমাইয়া আক্তার রোজা।
গোয়ালন্দ ঘাট থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মির্জা আবুল কালাম আজাদ বলেন, শিশুটির ব্যাপারে পুলিশকে কেউ কিছু জানায়নি। তবে শিশুটির সঠিক পরিচর্যা ও চিকিৎসার বিষয়টি জরুরি।
১৮ জুন,২০১৬/এমটিনিউজ২৪/প্রতিনিধি/এমআর/এসএম