বুধবার, ২০ জুন, ২০১৮, ০৪:৩৭:০২

আমের সর্বনিম্ন দাম রাজশাহীতে!

আমের সর্বনিম্ন দাম রাজশাহীতে!

রাজশাহী: বছরের এ সময় আম পাকার ভরা মৌসুম। চলতি মৌসুমে রাজশাহী অঞ্চলে আমের বাম্পার ফলন হলেও বাজার দর উঠেনি। এক যুগে এবার রাজশাহী অঞ্চলে আমের দাম সর্বনিম্ন পর্যায়ে নেমে আসে।

এ কারণে এ অঞ্চলের চাষীরা গাছ থেকে আম নামানো বন্ধ রেখেছেন। চলতি মৌসুমে এ অঞ্চলের চাষী আমের কম দামের কারণে বড় ধরনের আর্থিক ক্ষতির মুখোমুখি হবেন বলে আশঙ্কা করছেন সংশ্লিষ্টরা।

প্রশাসনের বেঁধে দেয়া সময়ে রাজশাহী অঞ্চলের আম পাকেনি। এর কারণ হিসেবে বিশেষজ্ঞরা বলছেন, ২০ মে থেকে ১০ জুন রাজশাহীতে আম পাকার জন্য যে তাপমাত্রার প্রয়োজন, তা ছিল না।

ফলে কমসংখ্যক চাষীই ওই সময়ে গাছ থেকে আম নামাতে পেরেছেন। ১০ জুনের পর থেকে রাজশাহী অঞ্চলে শুরু হয় তাপপ্রবাহ। এক সপ্তাহ থেকে ৩৫-৪০ ডিগ্রি পর্যন্ত ওঠানামা করে তাপমাত্রা।

আর বেশি তাপমাত্রার কারণে প্রচণ্ড গরম পড়ায় গাছের আম পাকতে শুরু করে। এদিকে প্রচণ্ড গরমের পাশাপাশি সামনে চলে আসে ঈদ। আর ঈদের কারণে ১৪ জুন থেকে বন্ধ হয়ে যায় কুরিয়ার সার্ভিসগুলোর কার্যক্রম।

ঈদের পর ১৮ জুন থেকে এ সার্ভিস আবার চালু হয়। ঈদের ছুটিতে কুরিয়ার সার্ভিস বন্ধ থাকায় চাষীরা স্থানীয় মোকামগুলোয় আম বিক্রি করতে পারেননি। ফলে আমের দাম কমতে থাকে। প্রচণ্ড গরমে গাছে আম পাকলেও কম দামের কারণে তা নামাতে পারেননি চাষীরা।

রাজশাহী কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতর সূত্রে জানা গেছে, চলতি মৌসুমে রাজশাহীতে ১৬ হাজার ৮০০ হেক্টর জমিতে আম চাষের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়। এ পরিমাণ জমিতেই আমের চাষ করা হয়েছে।

আর এ বছর উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা রয়েছে সাড়ে ৬ লাখ টন। সংশ্লিষ্টরা বলছেন, চলতি মৌসুমে লক্ষ্যমাত্রার চেয়ে বেশি আম উৎপাদন হবে।

৯ মে ফল গবেষণা কেন্দ্র ও কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতরের কর্মকর্তা, আমচাষী এবং ব্যবসায়ীসহ সংশ্লিষ্টদের নিয়ে রাজশাহী জেলা প্রশাসনের উদ্যোগে বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়।

বৈঠকে রাজশাহীর জেলা প্রশাসক এসএম আবদুল কাদের রাজশাহীতে ২০ মে থেকে গোপালভোগ জাতের আম নামানোর সময় নির্ধারণ করেন। এছাড়া হিমসাগর, ক্ষিরসাপাত ও লক্ষণভোগ আম নামানোর সময় নির্ধারণ করা হয় ১ জুন।

আর ল্যাংড়া নামানোর সময় নির্ধারণ করা হয় ৬ জুন। এছাড়া আম্রপালি ও ফজলি ১৬ জুন এবং আশ্বিনা জাতের আম ১ জুলাইয়ের আগে চাষীরা গাছ থেকে পাড়তে পারবেন না বলে বৈঠকে সিদ্ধান্ত হয়।

রাজশাহীতে আম বেচাকেনার সবচেয়ে বড় মোকাম বানেশ্বর হাট। খোলা মাঠ এবং রাজশাহী-ঢাকা মহাসড়কের ধারে বিক্রি হয় আম। পাশাপাশি বানেশ্বরে রয়েছে দুই শতাধিক বড় আড়ত। দেশের বিভিন্ন প্রান্তের আম ব্যবসায়ীরা আসেন এ মোকামে আম কিনতে।

পাশাপাশি রাজশাহী অঞ্চলের মানুষ এ মোকাম থেকেই দেশের বিভিন্ন অঞ্চলে অবস্থানরত নিকটাত্মীয় এবং শুভাকাক্সক্ষীদের এ মোকাম থেকে আম কিনে সরবরাহ করেন।

মঙ্গলবার সকালে এ মোকামে ঘুরে দেখা গেছে, আমের দাম গত কয়েক মৌসুমের মধ্যে সবচেয়ে কম। এ অঞ্চলে গোপালভোগ আম প্রায় শেষ পর্যায়ে রয়েছে। অত্যন্ত সুমিষ্ট এ জাতের আম ৭০০ থেকে ৮০০ টাকা, হিমসাগর এক হাজার থেকে ১১শ’ টাকা এবং ল্যাংড়া ১১শ’ থেকে ১২শ’ টাকা এবং ক্ষিরসাপাত ১২শ’ থেকে ১৩শ’ টাকা মণ দরে বিক্রি হচ্ছে।

আর বিভিন্ন জাতের গুটি আমের দাম মণপ্রতি মাত্র ৫০০ টাকা। বানেশ্বর হাটে আম বিক্রি করতে এসেছেন পার্শ্ববর্তী জামিরা গ্রামের চাষী আবু তালেব।

তিনি বলেন, ‘চলতি মাসের শুরুতেও গোপালভোগ আম বিক্রি করেছি ১৪শ’ থেকে ১৬শ’ টাকা মণ। অথচ আজ (মঙ্গলবার) বিক্রি করলাম মাত্র ৭৫০ টাকা মণ। এছাড়া হিমসাগর এবং ল্যাংড়া জাতের আমও কম দামে বিক্রি করেছি। আমার মতো অন্য আমচাষীদেরও একই অবস্থা। আমের দাম এত কম থাকলে চাষীরা এ মৌসুমে পথে বসবেন।’ একই হাটে আম বিক্রি করতে আসা চারঘাট সদরের আমচাষী বাক্কার আলী ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন, ‘চলতি মৌসুমে আমার প্রায় ৪৫ বিঘা জমিতে গোপালভোগ, ল্যাংড়া, হিমসাগর, ক্ষিরসাপাত, ফজলি, আম্রপালি এবং ফজলি জাতের আম রয়েছে। এ পরিমাণ জমিতে কীটনাশক, শ্রমিক এবং অন্য আনুষঙ্গিক ব্যয় হয়েছে প্রায় ৫ লাখ টাকা। কিন্তু চলতি মৌসুমে আমের যে দাম, তাতে উৎপাদন ব্যয় উঠবে কি না, তাতে সন্দেহ রয়েছে।’

তিনি বলেন, ‘গত মৌসুমে হিমসাগর ১৬শ’ থেকে ১৮শ’, ল্যাংড়া এবং ক্ষিরসাপাত ১৬শ’ থেকে ১৮শ’ টাকা মণ দরে বিক্রি করেছি। অথচ এবার দাম অর্ধেক। এখনও ফজলি এবং আম্রপালি গাছ থেকে নামাইনি। এ দুই জাতের আমের দাম কী হবে, তা নিয়েও সংশয়ের মধ্যে আছি। ফলে চলতি মৌসুমে আমার মতো এ অঞ্চলের চাষীরা আম নিয়ে বিড়ম্বনায় পড়েছেন।’

রাজশাহী কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতরের উপপরিচালক দেব দুলাল ঢালি বলেন, এখন আমের চাহিদা বাড়বে। প্রচণ্ড গরম পড়ায় দ্রুত আম পেকে যাওয়ায় কিছুটা সমস্যা হয়েছিল।

ঈদের ছুটি শেষ হয়েছে। কুরিয়ার সার্ভিস চালু হয়েছে। এখন আমের দাম বাড়বে। এ নিয়ে আমচাষীদের দুশ্চিন্তার কারণ নেই বলে মন্তব্য করেন এ কৃষি কর্মকর্তা।

Follow করুন এমটিনিউজ২৪ গুগল নিউজ, টুইটার , ফেসবুক এবং সাবস্ক্রাইব করুন এমটিনিউজ২৪ ইউটিউব চ্যানেলে