বুধবার, ১৫ মার্চ, ২০১৭, ১২:৫৭:০০

চা বিক্রেতা থেকে পৌরসভার কাউন্সিলর

চা বিক্রেতা থেকে পৌরসভার কাউন্সিলর

মাহমুদ কামাল ও আরাফাত ইসলাম : পেশায় তিনি চা বিক্রেতা। হয়েছেন বিপুল ভোটে পৌরসভার কাউন্সিলর। তার নাম আবদুর রাজ্জাক। ২০১৫ সালের ৩০শে ডিসেম্বর টাঙ্গাইলের মির্জাপুর উপজেলার মির্জাপুর পৌরসভার নির্বাচনে তিনি ৬নং ওয়ার্ডের কাউন্সিলর নির্বাচিত হয়েছেন। নিজ এলাকায় একজন সৎ ব্যক্তি হিসেবে রয়েছে তার চমৎকার ইমেজ। আদর্শবান জনপ্রতিনিধি হিসেবে অল্প দিনেই তার প্রশংসায় পঞ্চমুখ এলাকাবাসী।

আবদুর রাজ্জাক বলেন, ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি বাল্যকালে ছিলেন চা বিক্রেতা। আমি নিজে চা তৈরি করে বিক্রি করি। এটা আমার সৎ উপার্জন। তিনি জানান, প্রতিদিন প্রায় দেড় থেকে দু’হাজার টাকার চা, পান বিক্রি হয়। তা থেকে যা লাভ থাকে তাই দিয়ে তার সংসারের ব্যয় নির্বাহ হয়।

তার মতে, টাকা-পয়সায় সুখ আসে না। মানুষের ভালোবাসায় প্রকৃত সুখ পাওয়া যায়। দিনের বেশির ভাগ সময় তিনি ছোট্ট দোকানে বসেই এলাকার লোকজনের নানা সমস্যার কথা শোনেন। সেখানে বসেই তিনি সমাধানের চেষ্টা করেন। এছাড়ার নিজের সিল-প্যাড দোকানেই থাকে। তাই যে কোনো প্রয়োজনে অফিসিয়াল কাজ তিনি দোকানে বসেই সেরে ফেলেন।

উপজেলা সদরের বাইমহাটি গ্রামের মো. নাজিম উদ্দিন মিয়ার বড় ছেলে কাউন্সিলার আবদুর রাজ্জাক। পাঁচ ভাই বোনের মধ্যে তিনি সবার বড়। ১৯৯৬ সালে এসএসসি পাস করে মির্জাপুর কলেজে ভর্তি হয়েছিলেন। কিন্তু অর্থাভাবে পড়াশোনা চালিয়ে যেতে পারেননি। টানাটানির সংসারে দু’বছর কলেজে পড়েও এইচএসসি পরীক্ষা দিতে পারেননি। ২০০৩ সালে তিনি বিয়ে করেন। এক কন্যা ও এক পুত্র সন্তান নিয়ে তার ছোট সংসার। মেয়ে দৃষ্টিমণি পঞ্চম শ্রেণির সমাপনী পরীক্ষার্থী এবং ছেলে শুভর বয়স এখন সাড়ে চার বছর।

নিম্ন মধ্যবিত্ত পরিবারের সন্তান হওয়ায় দুই বোনের আগেই  বিয়ে হয়ে যায়। মেজো ভাই বিয়ে করে আলাদা হয়েছেন। আর ছোট ভাই, মা-বাবা ও স্ত্রী সন্তানদের নিয়ে রাজ্জাকের সুখের সংসার। তার পিতা নাজিম উদ্দিন বয়সকালে ইট ভাটার শ্রমিক ছিলেন। বার্ধক্যের কারণে সেই কাজ ছেড়ে তিনি একসময় বাড়ির পাশেই উপজেলা প্রশাসনের মসজিদের পাশে ঘুন্টি ঘরে চায়ের দোকান খুলে বসেন। ছোট ভাই নিজ অর্থায়নে একটি ইঞ্জিনিয়রিং ওয়ার্কসপের দোকান পরিচালনা করেন।

কাউন্সিলর আবদুর রাজ্জাক বলেন কোনো কাজকেই অবহেলা করা ঠিক নয়। দোকান করার পাশাপশি এলাকাবাসীর সমস্যার কথা শুনে তা সমাধান করে থাকেন দোকানে বসেই। সকাল থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত তাকে পাওয়া যায় চা দোকানে। তার দোকানের ৫০ গজ দূরে মির্জাপুর পৌরসভার কার্যালয়। পৌরসভা কার্যালয়ে এলাকার নাগরিকদের কোনো কাজ থাকলে দোকান ফেলে তৎক্ষণাৎ ছুটে চলে যান অফিসে।

মির্জাপুর পৌরসভার মেয়র সাহাদৎ হোসেন সুমনও এই ব্যতিক্রমী কাউন্সিলরের প্রশংসা করে বলেন, আবদুর রাজ্জাক খুবই ভালো একজন মানুষ। তার মধ্যে কোনো অহংকার এবং প্রতিহিংসা নেই। তিনি তার কথা ও ব্যবহারে সবাইকে অতি সহজে আপন করে নিতে পারেন। তার কর্মকাণ্ডে তিনি পৌরসভার সেরা কাউন্সিলর হওয়ার তকমা পেয়েছেন। এমজমিন
১৫ মার্চ ২০১৭/এমটি নিউজ২৪/এসবি

Follow করুন এমটিনিউজ২৪ গুগল নিউজ, টুইটার , ফেসবুক এবং সাবস্ক্রাইব করুন এমটিনিউজ২৪ ইউটিউব চ্যানেলে