মঙ্গলবার, ১২ মার্চ, ২০১৯, ০৮:৫২:১৪

পুত্রবধূ এ্যানীর বিয়ে দিয়ে প্রিয়কের মা ছেলের নামে মসজিদ ও মাদ্রাসা বানাচ্ছেন

পুত্রবধূ এ্যানীর বিয়ে দিয়ে প্রিয়কের মা ছেলের নামে মসজিদ ও মাদ্রাসা বানাচ্ছেন

নিউজ ডেস্ক : বাড়িটি দোতালা। নিচে পাশাপাশি দুইটি কবর। পাথর দিয়ে বাঁধানো কবরের এক পাশে লেখা- ‘চলে গেছো, কিন্তু আমাদের সঙ্গে তোমার অস্তিত্ব ও হৃদ্যতা ভুলিনি’। 

নিশ্চয়ই নেপালের কাঠমান্ডুর ত্রিভুবন বিমানবন্দরে ইউএস বাংলার মর্মান্তিক বিমান দুর্ঘটনায় নিহত আলোকচিত্রী এফএইচ প্রিয়ক ও তার শিশু কন্যা প্রিয়ন্ময়ীর কথা মনে আছে! ভয়াবহ সেই বিমান দুর্ঘটনায় নিহত বাবা-মেয়ের কবরের পাশে পাথরে খোদাই করে লেখা বাণীটিই যেন বলে দিচ্ছে কত অসময়ে প্রিয় মানুষদ্বয়ের চলে যাওয়ার কথা। 

সোমবার দুপুরে গাজীপুরের শ্রীপুর নগরহাওলা গ্রামে বিমান দুর্ঘটনায় নিহত প্রিয়কের বাড়িতে গিয়ে এমন দৃশ্য দেখা যায়। পুরো বাড়ি নিস্তব্ধ। নিঃসঙ্গ একাকী প্রিয়কের বৃদ্ধা মা ফিরোজা বেগম আর কাজের মেয়ে ছবি বেগমই এখন বাড়ির প্রহরী।

সংবাদকর্মী দেখতে দেখতে এখন আর ফিরোজা বেগমের ভালো লাগে না। অপরিচিত কাউকে দেখলেই বলে উঠেন-কেন আসছেন? আমি আর স্বাক্ষাতকার দিতে পারমু না। কথা বললেই কী আমার ছেলেরে ফিরত দিতে পারবেন? 

পরক্ষণেই আবার ঘুরিয়ে ঘুরিয়ে দেখান প্রিয়ক-প্রিয়ন্ময়ীর জামা কাপড়, গিটার, খেলনা। প্রিয়কের থাকার ঘরে খুব যত্ম করে এগুলো রেখে দিয়েছেন তিনি। স্বামীহারা ফিরোজা বেগম একমাত্র পুত্র প্রিয়ককে অবলম্বন করেই চেয়েছিল বাঁচতে। কিন্তু হঠাৎ বিমান দুর্ঘটনা সবকিছু উলট-পালট করে দিয়েছে। দুর্ঘটনায় আহত অবস্থায় বেঁচে ফিরেন পুত্রবধূ এ্যানী।

সুস্থ হয়ে এ্যানী নতুন করে সংসার পেতেছেন। ফিরোজা নিজ হাতেই নাকি পুত্রবধূকে বিয়ে দিয়েছেন। ফিরোজা বেগম বলেন, স্বামী হারিয়েছি, পুত্রও ওপারে চলে গেছে। এই বয়সে আর কেমন থাকমু। টাকা-পয়সা সবই আছে আমার, খালি নাই সুখ।

বাড়ির কাজের মেয়ে ছবি বেগম বলেন, খালা আম্মা হারাদিন কতা কয় না, খালি প্রিয়ক ভাইয়ের ছবি দ্যাইহা কান্দে। ইউএস বাংলা কর্তৃপক্ষ যে টাকা দিয়েছে সেগুলো দিয়ে প্রিয়কের নামে একটি মসজিদ নির্মাণে হাত দিয়েছেন। নাতিনের নামে একটি মাদরাসাও করবেন।

কাঠমান্ডু ট্র্যাজেডির এক বছর পূর্ণ হলো আজ (১২ মার্চ)। গত বছর এই দিনে নেপালের কাঠমান্ডু ত্রিভুবন আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে অবতরণকালে বিধ্বস্ত হয় ইউএস-বাংলার ফ্লাইট বিএস-২১১। ভয়াবহ সেই দুর্ঘটনায় প্রাণ হারান ৫১ জন যাত্রী। এদের মধ্যে পুড়ে অঙ্গার হয়ে যাওয়ার তালিকায় ছিলেন খ্যাতিমান আলোকচিত্রী এইফএইচ প্রিয়ক ও তার কন্যা তামাররা প্রিয়ন্মীয়। 

ওই বিমানের যাত্রী ভাগ্যক্রমে বেঁচে যাওয়া মেহেদী হাসান বলেন, এফএইচ প্রিয়ক তার ফুফাতো ভাই। নেপাল ভ্রমণ করার জন্য প্রিয়ক তার স্ত্রী আলমুন এ্যানী ও কন্যার সাথে স্ত্রীসহ তাকেও সঙ্গী করেন। সকল প্রস্তুতি শেষ করে ৫ জন ওই বিমানে নেপালে যাচ্ছিলেন। বিমানটি অবতরণের অল্প কিছু সময় আগে বিধ্বস্ত হয়ে যায়। তিন জন প্রাণে বেঁচে গেলেও রক্ষা পায়নি প্রিয়ক ও তার কন্যা।

Follow করুন এমটিনিউজ২৪ গুগল নিউজ, টুইটার , ফেসবুক এবং সাবস্ক্রাইব করুন এমটিনিউজ২৪ ইউটিউব চ্যানেলে