শুক্রবার, ১৭ মে, ২০১৯, ০২:২৭:০৬

ফাইনাল যেন বাংলাদেশের দুর্ভাগ্যের দেয়াল!

ফাইনাল যেন বাংলাদেশের দুর্ভাগ্যের দেয়াল!

রবিউল ইসলাম : ১৯৮৬ সালের ৩১ মার্চ থেকে এক দিনের ক্রিকেট খেলছে বাংলাদেশ। ৩৩ বছর পেরিয়ে গেছে, এখনও জেতা হয়নি কোনও ট্রফি। দেশের ক্রিকেটের সেরা প্রজন্মের নেতৃত্ব দিয়েছেন যারা, সেই সাকিব-মাশরাফিদের হাত ধরে ছয় বার ট্রফির পাশ দিয়ে গেলেও ছুঁয়ে দেখা হয়নি। চারটি ওয়ানডে আর দুটি টি-টোয়েন্টির বহুজাতিক সিরিজের ফাইনাল খেলে প্রতিবারই ব্যর্থ হয়েছে বাংলাদেশ।

মুরালিধরনের বিস্ফোরক ব্যাটিংয়ে হারে বাংলাদেশমুরালিধরনের কাছে স্বপ্নভঙ্গ
২০০৯ সাল, জিম্বাবুয়ে ও শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে ত্রিদেশীয় সিরিজে দাপট দেখায় বাংলাদেশ। সাকিবের অসাধারণ পারফরম্যান্সে ফাইনালেও উঠেছিল বাংলাদেশ। ব্যাটসম্যানদের ব্যর্থতায় মাত্র ১৫৪ রানের টার্গেট দিয়েও বোলাররা শ্রীলঙ্কার ৫ উইকেট তুলে নেয় মাত্র ৬ রানের ব্যবধানে। যখন জয়ের সুবাস পেতে শুরু করেছিল তারা, ঠিক তখন মুত্তিয়া মুরালিধরন জ্বলে উঠলেন। ৩৩ রানের ঝড়ো এক ইনিংসে অপরাজিত ছিলেন এই লঙ্কান, তাতে ২ উইকেটে হেরে ট্রফি হাতছাড়া হয় বাংলাদেশের।

মাহমুদউল্লাহর অসহায়ত্ব
এশিয়া কাপের ফাইনালে প্রথমবারে বাংলাদেশ জায়গা পায় ২০১২ সালে, প্রতিপক্ষ পাকিস্তান। কিন্তু শেষ ওভারের নাটকীয়তায় মাত্র ‍২ রানের হারে সাকিব-তামিমদের কান্নায় ভেসে যায় মিরপুর থেকে শুরু করে ৫৬ হাজার বর্গমাইল। পাকিস্তানকে ২৩৬ রানে থামিয়ে দেয় বাংলাদেশের বোলাররা। কিন্তু সাকিবের ৬৮ ও তামিমের ৬০ রানের ইনিংস শেষে মাশরাফি ঝড় তুললেও লক্ষ্য ছুঁতে পারেনি বাংলাদেশ। শেষ ওভারে মাত্র ৯ রান দরকার ছিল তাদের। কিন্তু আব্দুর রাজ্জাককে নিয়ে প্রয়োজনীয় রান করতে পারেননি মাহমুদউল্লাহ। চতুর্থ বলে তিন রান নিয়ে স্ট্রাইকে পাঠান তিনি রাজ্জাককে। পঞ্চম বলে বোল্ড হন রাজ্জাক, শেষ বলে শাহাদাত হোসেন প্রয়োজনীয় ৪ রানের একটি রান নেন লেগ বাইয়ে।

প্রথম এশিয়া কাপ ফাইনালে হেরে সাকিবদের কান্না ছুঁয়েছিল লাখ লাখ ভক্তদের মনবৃষ্টিবিঘ্নিত ফাইনালে আরেকটি ব্যর্থতা
২০১২ সালে ওয়ানডে সংস্করণের এশিয়া কাপের ট্রফি হারানো বাংলাদেশ চার বছর পর টি-টোয়েন্টি ফরম্যাটের ফাইনালেও জায়গা করে নেয়। কিন্তু বৃষ্টিবিঘ্নিত ম্যাচে ভারতের বিপক্ষে হেরে যায় তারা। স্নায়ুচাপ এবারও উতরাতে পারেনি স্বাগতিকরা। আগে ব্যাটিং করা বাংলাদেশ নির্ধারিত ১৫ ওভারে ১২০ রান তোলে। সেই লক্ষ্য তাড়া করতে নেমে খুব সহজেই ভারত ৭ বল হাতে রেখে ৮ উইকেটে জিতে যায়।

২০১৮ সাল এবং বাংলাদেশের দূঃস্বপ্ন
২০১৮ সালকে বাংলাদেশের জন্য দুঃস্বপ্নের বছর বলা যায়। কেন না এই এক বছরেই তিনটি ফাইনালে হারের ক্ষত এখনও দগদগে হয়ে আছে বাংলাদেশের ক্রিকেট ইতিহাসে। শুরুটা হয় জানুয়ারিতে ত্রিদেশীয় সিরিজ দিয়ে। এবারও ২০০৯ সালের মতো শ্রীলঙ্কার কাছেই হারে বাংলাদেশ। লঙ্কানদের ২২১ রানে অলআউট করেও জিততে পারেনি তারা। ৫৩ বল আগেই ১৪২ রানে অলআউট হয় বাংলাদেশ। মাহমুদউল্লাহ (৭৬) ছাড়া দলের বাকি ব্যাটসম্যানদের সবাই করেছে ভূতুরে ব্যাটিং। আর তাতেই চতুর্থবারের মতো শিরোপা যায় ফসকে।

গত বছর এশিয়া কাপ ফাইনালে ভারতের কাছে হারে বাংলাদেশজানুয়ারির পর মার্চে শ্রীলঙ্কায় ত্রিদেশীয় সিরিজ খেলে ভারত ও বাংলাদেশ। নিদাহাস ট্রফি নামের ওই টুর্নামেন্টের ফাইনালে ওঠে বাংলাদেশ। ভারতকে ১৬৭ রানের টার্গেট দিয়ে দুর্দান্ত বোলিং করে তারা। ১৮তম ওভারে মোস্তাফিজ মেইডেন ওভারসহ ১ উইকেট তুলে নিলে শেষ ২ ওভারে ভারতের লক্ষ্য দাঁড়ায় ৩৪ রান। ১৯তম ওভারে রুবেল হোসেন ২২ রান দিয়ে বসলে খেলার দৃশ্যপট পাল্টে যায়। শেষ বলে জিততে ৫ রান দরকার ছিল ভারতের। সৌম্যর শেষ বলে দিনেশ কার্তিক ছক্কা হাঁকালে আরও একবার ফাইনালে হারের হতাশায় পোড়ে বাংলাদেশ।

২০১২ ও ২০১৬ সালে এশিয়া কাপে দুই দফা চেষ্টাতেও ফাইনালের গেরোটা খুলতে না পারা বাংলাদেশের সামনে সুযোগ ছিল ২০১৮ সালের এশিয়ার শ্রেষ্ঠত্ব অর্জনের। কিন্তু এবারও ব্যর্থ। আগে ব্যাট করতে নেমে লিটন দাসের অনবদ্য সেঞ্চুরিতে (১২১) বাংলাদেশ স্কোরবোর্ডে ২২২ রান জমা করে। অল্প রানেও বেশ ভালোভাবেই শক্তিশালী ভারতকে চেপে ধরেছিল লাল-সবুজের প্রতিনিধিরা। জয়ের জন্য শেষ বলে ভারতের দরকার পড়ে ১ রান। কিন্তু ষষ্ঠবারের মতো বাংলাদেশকে হতাশ করে শিরোপা জয়ের উৎসবে মাতে ভারত।

শুক্রবার বিকেলে সপ্তম ফাইনাল খেলতে যাচ্ছে বাংলাদেশ। এবার আর কোনও এশীয় প্রতিপক্ষ নয়। আগের দুই ম্যাচে গুঁড়িয়ে দেওয়া ওয়েস্ট ইন্ডিজকে পাচ্ছে বাংলাদেশ। এই দুর্দান্ত দুটি জয়ের আত্মবিশ্বাস কাজে লাগিয়ে এবার বিশ্বকাপের আগে শিরোপা উৎসব করার সুযোগ হেলায় হারাতে চায় না তারা। দুর্ভাগ্যের দেয়াল ভেঙে নতুন উদ্যোমে ইংল্যান্ডে যেতে মরিয়া বাংলাদেশ।
সূত্র: বাংলা ট্রিবিউন

Follow করুন এমটিনিউজ২৪ গুগল নিউজ, টুইটার , ফেসবুক এবং সাবস্ক্রাইব করুন এমটিনিউজ২৪ ইউটিউব চ্যানেলে