রবিবার, ২১ জুলাই, ২০১৯, ০৫:২৩:০৬

ভারতীয় বিভিন্ন মিডিয়ার চোখে ট্রাম্পের কাছে প্রিয়া সাহার সেই নালিশ

ভারতীয় বিভিন্ন মিডিয়ার চোখে ট্রাম্পের কাছে প্রিয়া সাহার সেই নালিশ

নিউজ ডেস্ক : যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের কাছে নালিশ করে প্রিয়া সাহা বলেছিলেন, বাংলাদেশে ৩ কোটি ৭০ লাখ হিন্দু-খ্রিস্টান-বৌদ্ধ গুম হয়ে গেছে। এ নিয়ে আন্তর্জাতিক গণমাধ্যমগুলোও খবর প্রকাশ করেছে। এ বিষয়টি বড় করেই ফোকাস করেছে ভারতের কয়েকটি সংবাদ মাধ্যমও। “ট্রাম্পে নালিশ করে বিপাকে প্রিয়া” শিরোনামে খবর ছেপেছে আনন্দবাজার। জি-নিউজ হেডলাইন করেছে “ধর্মীয় মৌলবাদীদের সাজা নয়, নির্যাতিতা প্রিয়াকেই কাঠগড়ায় তুলল বাংলাদেশ সরকার”। এছাড়া কলকাতার ‘সংবাদ প্রতিদিন’সহ একাধিক মিডিয়া প্রিয়া সাহাকে নিউজ করেছে। 

২১ জুলাই প্রকাশিত আনন্দবাজারের প্রতিবেদনে তারা লিখেছে:
 
বাংলাদেশের সংখ্যালঘুদের দুর্দশার কথা বলতে তিনি পৌঁছে গিয়েছিলেন হোয়াইট হাউসে মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের দরবারে। ঢাকার প্রিয়া সাহা সেখানে যে দু’তিনটি কথা বলতে পেরেছেন, তা নিয়ে বাংলাদেশ তোলপাড়। শাসক আওয়ামি লীগের সমর্থকেরা শনিবার ঢাকায় তার বাড়ির সামনে বিক্ষোভ দেখিয়েছেন। 

দলের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের সংশয় প্রকাশ করে বলেছেন, এটা সরকারকে বদনাম করার বৃহত্তর চক্রান্তের অংশ হতে পারে। স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীও জানিয়েছেন, প্রিয়া দেশে ফিরলে তার কাছে জানতে চাওয়া হবে, কী উদ্দেশ্যে তিনি এই কাজ করেছেন। এমনকি যে ‘হিন্দু, বৌদ্ধ, খ্রিস্টান ঐক্য পরিষদ’-এর অন্যতম সাংগঠনিক সম্পাদক প্রিয়া সাহা, সেই সংগঠনও তার বক্তব্যের দায় নিচ্ছে না। 
 
হিন্দু আমেরিকান ফাউন্ডেশন নামে একটি সংগঠনের আলোচনাচক্রে যোগ দেওয়ার পরে বিভিন্ন দেশের নির্যাতিত সংখ্যালঘুদের যে প্রতিনিধি দল হোয়াইট হাউসে গিয়ে ট্রাম্পের সঙ্গে কথা বলার সুযোগ পান, বাংলাদেশের প্রিয়াও তাতে ছিলেন। ট্রাম্প জানতে চান, কারা এই নির্যাতন করে। প্রিয়া বলেন, এরা মুসলিম মৌলবাদী। কিন্তু সব সময়েই তারা রাজনৈতিক আশ্রয় পেয়ে যায়। এর পরে অন্য দেশের প্রতিনিধিরা একে একে তাদের সমস্যার কথা জানান। কিন্তু ওই ভিডিওটি প্রকাশ্যে আসতেই অভিযোগ ওঠে, সরকারকে বদনাম করতে তিনি এই কাজ করেছেন।

পররাষ্ট্রমন্ত্রী এ কে আব্দুল মোমেন প্রিয়ার বক্তব্যকে মিথ্যাচার বলে বর্ণনা করেন। তার মন্ত্রণালয় বিবৃতি দিয়ে বলে, প্রিয়ার অভিযোগ কল্পিত ও বানানো। শাসক দলের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের বলেন, প্রিয়ার কাজ শুধু নিন্দনীয় অপরাধই নয়, এই ধরনের উস্কানিমূলক বক্তব্য দেশের অভ্যন্তরে লুকিয়ে থাকা মতলববাজ ও সাম্প্রদায়িক গোষ্ঠীকে সাহায্য করবে।

 তিনি প্রিয়ার এই কাজকে দেশদ্রোহী বলে বর্ণনা করে জানিয়েছেন, তার বিরুদ্ধে কড়া ব্যবস্থা নেওয়া হবে। একই কথা জানান স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামালও।এই নিয়ে বিতর্ক শুরুর পরে ঢাকায় মার্কিন রাষ্ট্রদূত আর্ল মিলারও বিবৃতি দিয়ে বলেন, বাংলাদেশে ধর্মাচরণের স্বাধীনতা উদাহরণ হতে পারে।
 
হিন্দু-বৌদ্ধ ঐক্য পরিষদের সভাপতি রানা দাশগুপ্ত বলেন, প্রিয়া আমাদের ১১ সাংগঠনিক সম্পাদকের এক জন হলেও তার বক্তব্য একান্তই নিজস্ব। সংগঠন স্বীকৃতি দিচ্ছে না।

২০ জুলাই প্রকাশিত জি-নিউজের প্রতিবেদনে তারা লিখেছে:

বাংলাদেশে হিন্দু-সহ সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের উপরে নির্যাতনের কথা মার্কিন প্রেসিডেন্টের সামনে তুলে ধরেছেন প্রিয়া সাহা। দুষ্কৃতীদের বিচার হয় না বলেও অভিযোগ করেছেন ওই মহিলা। কিন্তু সেই মহিলাকেই কার্যত কাঠগড়ায় তুলল বাংলাদেশ সরকার। সে দেশের বিদেশমন্ত্রক বিবৃতি দিয়ে জানাল, প্রিয়া সাহার অভিযোগ ভয়ঙ্কর মিথ্যা।  

বাংলাদেশের বিদেশমন্ত্রক বিবৃতি দিয়ে জানিয়েছে, মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের কাছে প্রিয়া সাহার ভয়ঙ্কর মিথ্যা অভিযোগের কঠোর প্রতিবাদ জানাচ্ছে বাংলাদেশ সরকার। ওনার বক্তব্যের তীব্র নিন্দা করছি। একইসঙ্গে তাঁর বক্তব্য সাজানো ঘটনা বলেও অভিহিত করেছে বাংলাদেশ। তাদের দাবি, প্রিয়া সাহার চরম মিথ্যা ও সাজানো গল্পের পিছনে অশুভ উদ্দেশ্য রয়েছে। বাংলাদেশের ভাবমূর্তি ক্ষুন্ন করাই তাঁর লক্ষ্য ছিল।

স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান আবার দাবি করেছেন, প্রিয়া সাহার অভিযোগ সম্পূর্ণ মিথ্যা ও ভিত্তিহীন। এর পিছনে উদ্দেশ্য রয়েছে।বিভিন্ন দেশে নির্যাতিত সংখ্যালঘুদের সঙ্গে দেখা করেন মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প। তার মধ্যে ছিলেন বাংলাদেশের নির্যাতিতা সংখ্যালঘু প্রতিনিধি প্রিয়া সাহা।

Follow করুন এমটিনিউজ২৪ গুগল নিউজ, টুইটার , ফেসবুক এবং সাবস্ক্রাইব করুন এমটিনিউজ২৪ ইউটিউব চ্যানেলে