সোমবার, ১১ জুলাই, ২০১৬, ০৭:১২:৩৫

কোরআন তেলাওয়াত করেন, নামাজও পড়েন, উত্তাল মেঘনায় পরীর ঝাঁপ

কোরআন তেলাওয়াত করেন, নামাজও পড়েন, উত্তাল মেঘনায় পরীর ঝাঁপ

বরগুনা : ঢাকা সদরঘাট থেকে দুই শিশু কন্যাকে নিয়ে গতকাল রোববার বিকেলে ঢাকা-বরগুনা রুটের এমভি কিং সম্রাট লঞ্চে উঠেন গৃহবধূ পরী।  লঞ্চে ওঠে সারাপথই দুই মেয়েকে বুকে নিয়ে অঝোরে কাঁদছিলেন তিনি।

কান্নার ফাঁকে ফাঁকে দুই শিশুকে ঘুম পাড়ানোর চেষ্টাও করেছিলেন তিনি।  কিন্তু মায়ের ভারাক্রান্ত মন দেখে ঘুম হয়নি কারো।

চাঁদপুর ছেড়ে যখন লঞ্চটি মেঘনার মাঝখানে, রাত তখন ১১টা।  মা পরী বেগম লঞ্চের পাশে গিয়ে দাঁড়ান।  মায়ের এমন দৃশ্য দেখে দ্বিতীয় শ্রেণির ছাত্রী ছোট্ট শিশু নাজিয়াও পিছু নেয়।

হঠাৎ গহীন অন্ধকারে ঝাঁপ দেন মা পরী বেগম।  মাকে ধরতে গিয়ে নদীতে পড়ে যায় ছোট্ট শিশু নাজিয়াও।  মা আর বোনকে না পেয়ে অপর শিশু নুসরতের (৭) কান্না থামছিল না।।

মেঘনায় ঝাঁপিয়ে পড়া মা ও তার শিশু কন্যার খোঁজে ঘণ্টাখানেক লঞ্চ থামিয়ে রাখে কর্তৃপক্ষ।  কোথাও খোঁজ না পেয়ে পুনরায় লঞ্চ ছেড়ে আসে বরগুনার উদ্দেশে।  

আজ সোমবার সকাল ১১টার দিকে বরগুনার ঘাটে এসে পৌঁছায় এমভি কিং সম্রাট নামের লঞ্চটি। বর্তমানে নুসরত নামের ছয় বছরের শিশুটি বরগুনা থানা পুলিশের হেফাজতে রয়েছে।

সে তার বাবার নাম আক্তার হোসেন বলে জানিয়েছে। বাবা একটি চশমার দোকানে কাজ করেন। বাবা-মাসহ তারা যাত্রাবাড়ী থাকতেন বলেও জানায় সে।

শিশুটি জানায়, তিন ভাই-বোনের মধ্যে সে সবার ছোট।  বড় ভাইয়ের নাম আল আমিন।  মাওয়া চৌরাস্তায় তাদের গ্রামের বাড়ি।  নানা দাদার নাম বলতে পারে না সে।

তবে মানিক, টোকন এবং রাজিব নামের দুই মামার নাম বলতে পারে।  এর মধ্যে রাজিব নামের এক মামা বিদেশে থাকে এবং মানিক নামের এক মামা জামা কাপড়ের দোকান দেন বলে জানায় সে।

লঞ্চটির মাস্টার আবুল হোসেন জানান, তারা উপরে লঞ্চ চালাচ্ছিলেন।  রাত ১১টার দিকে লঞ্চ যখন মিয়ার চরের কাছাকাছি, সাধারণ যাত্রীদের কাছে খবর পেয়ে তারা লঞ্চটি থামিয়ে ফেলেন।  

কিন্তু দুর্যোগপূর্ণ আবহাওয়ার কারণে বেশিক্ষণ লঞ্চ থামিয়ে রাখা যাচ্ছিলে না।  তখন মেঘনা ভীষণ  উত্তাল ছিল।  

প্রত্যক্ষদর্শীদের বরাত দিয়ে তিনি বলেন, পরী বেগম তার দুই শিশুকে নিয়ে লঞ্চের নিচতলার ডেকে ছিলেন।  সেখানে তিনি কোরআন শরীফ পড়েছিলেন। নামাজ পড়েছেন।  কান্নাকাটিও করেছেন অনেক।

বাচ্চাদের ঘুম পড়ানোরও চেষ্টা করেছিলেন তিনি। রাত ১২টার দিকে হঠাৎ তিনি নদীতে ঝাঁপিয়ে পড়েন। এ সময় তার নাজিয়া নামের অপর শিশু কন্যা মাকে ধরতে গিয়ে নদীতে পড়ে যায়।

এ ব্যাপারে বরগুনা থানার ওসি রিয়াজ হোসেন জানান, শিশুটির মা পরী বেগম আত্মহত্যা করেছেন বলে প্রাথমিকভাবে ধারণা করা হচ্ছে।  তবে তদন্ত না করে এ বিষয়ে নিশ্চিত করে কিছু বলা যাবে না।

তিনি জানান, শিশুটির পরিবারের সদস্যদের খুঁজে পেতে যাত্রাবাড়ী এবং মাওয়া থানা পুলিশের সঙ্গে  যোগাযোগ করা হচ্ছে।
১১ জুলাই,২০১৬/এমটিনিউজ২৪/এমআর/এসএম

Follow করুন এমটিনিউজ২৪ গুগল নিউজ, টুইটার , ফেসবুক এবং সাবস্ক্রাইব করুন এমটিনিউজ২৪ ইউটিউব চ্যানেলে