বৃহস্পতিবার, ০২ জুন, ২০২২, ০৯:৩৬:২৩

মায়ের চোখের সামনে ঘাড় ভেঙে সন্তানকে হত্যা করল 'পরকীয়া'!

মায়ের চোখের সামনে ঘাড় ভেঙে সন্তানকে হত্যা করল 'পরকীয়া'!

বরিশাল: বরিশালের উজিরপুরে চাঞ্চল্যকর ৮ বছরের শিশু দীপ্ত মণ্ডল হত্যার রহস্য উদঘাটিত হয়েছে। দীপ্তর পাষাণী মা ও তাঁর পরকীয়া প্রেমিকসহ গ্রেপ্তারকৃত চার আসামি আদালতে হত্যাকাণ্ডের আদ্যেপান্ত খুলে বলে স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দিয়েছেন।

গতকাল ১ জুন বরিশাল সিনিয়র জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট উজিরপুর আমলি আদালতের বিচারক মো. মাহফুজুর আলমের কাছে তাঁরা হত্যার ঘটনায় এ স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দেন। পরকীয়া প্রেমিক সেলুন কর্মচারী নয়ন শীলের (৩৫) সঙ্গে নিজ মাকে আপ'ত্তিকর অবস্থায় দেখে ফে'লার কারণে মায়ের চোখের সামনে তৃতীয় শ্রেণির শিক্ষার্থী দীপ্ত মণ্ডলের (৮) ঘাড় ভেঙে ও গলা টি'পে হত্যা করা হয়।

হত্যাকাণ্ডের পর লা'শ গু'ম ও হ'ত্যাকাণ্ডের ঘটনাটি ধা'মাচা'পা দিতে নানা ছক আঁকেন সেলুন মালিক রতন বিশ্বাস (৩০) ও তাঁর স্ত্রী ইভা বিশ্বাস (২৮)। তারা ম'রদে'হটি ড্রামের মধ্যে লু'কিয়ে অটোগাড়িতে করে নিয়ে বস্তায় ভরে হারতা বাজারসংলগ্ন খালে ফে'লে দেন। আর ছেলে নিখোঁ'জের নাটক সাজায় দীপ্তর পাষাণী মা সীমা মণ্ডল (২৬)।

পুলিশের হাতে আটক হওয়ার পর সমস্ত ঘটনার বিবরণ দিয়ে বুধবার (১ জুন) দুপুরে বরিশাল সিনিয়র চীফ জুড়িসিয়াল মেজিস্ট্রেট আদালতে স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দেন সীমা মণ্ডল (২৬), তাঁর পরকীয়া প্রেমিক ঘা'তক সেলুন কর্মচারী নয়ন শীল (৩৫), সেলুন মালিক রতন বিশ্বাস ও তাঁর স্ত্রী ইভা বিশ্বাস।

এর আগে ৩১ মে রাতে স্কুলছাত্র দীপ্ত মণ্ডল হ'ত্যাকাণ্ডের ঘটনায় তার বাবা দীপক মণ্ডল বাদী হয়ে স্ত্রীর পরকীয়া প্রেমিক নয়ন শীল ও মা সীমা মণ্ডলসহ চারজনের নাম উল্লেখ করে উজিরপুর মডেল থানায় হত্যা মামলা দায়ের করেন। ওই রাতেই সীমা মণ্ডলকে গ্রেপ্তার করা হয়।

জানা গেছে, পিরোজপুর জেলার স্বরূপকাঠী উপজেলার অতুল চন্দ্র শীলের ছেলে নয়ন শীল বরিশালের উজিরপুরের হারতা বাজারে রতন বিশ্বাসের সেলুনে কাজ করার সুবাদে হারতা ইউনিয়নের কাজীবাড়ী এলাকার দিনমজুর দীপক মণ্ডলের সঙ্গে সুসম্পর্ক তৈরি করেন। 

একপর্যায়ে দীপকের সুন্দরী স্ত্রী সীমা মণ্ডলের সঙ্গে পরকীয়ায় জড়িয়ে পড়েন নয়ন। ঘটনার দিন শুক্রবার (২৭ মে) হারতা মাছ বাজারের পাশে মন্দিরে ধর্মীয় অনুষ্ঠান বার্ষিক কীর্তন দেখতে যান সীমা মণ্ডল (২৬) ও তার ছেলে দীপ্ত। 

রাতে সেখানে হাজির হন নয়ন শীল। একপর্যায়ে প্রেমিকা সীমাকে নিয়ে তাঁর সেলুনে যান এবং সেখানে তাঁরা অনৈতিক শা'রীরিক সম্পর্ক স্থাপন করেন। রাত প্রায় সাড়ে ১১টার দিকে শিশু দীপ্ত সেখানে উপস্তিত হয় এবং পরপুরুষের সঙ্গে মাকে আপ'ত্তিকর অবস্থায় দেখে ফেলে।

এটাই কাল হয় দীপ্তর জীবনে। সব কথা তার বাবাকে বলে দেবে এ ভয়ে তার মার চোখের সামনে ঘা'তক নয়ন শীল শিশু দীপ্ত মণ্ডলের ঘাড় মটকে ভে'ঙে ফে'লে ও গলা টি'পে হ'ত্যা করে। পরে দীপ্তর মা প্রেমিককে বাঁচাতে বাড়িতে গিয়ে ছেলে নিখোঁ'জের নাটক সাজান। এ বিষয়ে ২৮ মে তার পিতা দীপক মণ্ডল বাদী হয়ে উজিরপুর মডেল থানায় একটি সাধারণ ডায়েরি করেন।

নিখোঁজের পর থেকে স্থানীয় ইউপি সদস্য রবিন্দ্রনাথ বড়াল ও কৃষ্ণ কান্ত বাড়ৈসহ স্থানীয় লোকজন দীপক মণ্ডলের ধর্ম ভাই নয়ন শীলকে স'ন্দে'হের তালিকায় রাখে। ৩০ মে গভীর রাতে নয়ন তাঁর সেলুনের র'ক্তমাখা মেঝে ধোয়ার সময় তাঁকে হাতেনাতে স্থানীয়রা আটক করে পুলিশকে খবর দেয়। 

এ সময় নয়নের স্বীকারোক্তি অনুযায়ী হত্যাকাণ্ডের সঙ্গে জড়িত সেলুনের মালিক রতন বিশ্বাস ও তাঁর স্ত্রী ইভা মল্লিক (৩৫) কে পুলিশ আটক করে।

আটককৃতরা পুলিশ ও স্থানীয়দের জানান, শিশু দীপ্তকে শ্বা'স রোধ করে হ'ত্যার পর লাশ ব'স্তাব'ন্দি করে ৩ দিন সেলুনের ভেতরে বাথরুমে ফে'লে রেখেছিল। দুর্গ'ন্ধ ছড়িয়ে পড়ায় ৩০ মে দুপুর দেড়টায় ব'স্তাব'ন্দি লাশ মাছের ড্রামে ভরে রতন বিশ্বাসের ভাই ভ্যানচালক জীবন বিশ্বাসকে নিয়ে ইভা মল্লিক, নয়ন শীল ও রতন বিশ্বাস মিলে হারতা বাজারসংলগ্ন খালে ফে'লে দেয়।

এরই সূ'ত্র ধরে ভোর সোয়া ৫টায় উজিরপুর মডেল থানা পুলিশ ও স্থানীয়রা খাল থেকে দীপ্তর বস্তাবন্দি লাশ উদ্ধার করে।  

এদিকে শিশু হত্যার খবর পেয়ে ৩১ মে সকালে ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেন বরিশাল রেঞ্জ ডিআইজি আক্তারুজ্জামান, অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (প্রশাসন) মো. শাহ্ জাহান ও উজিরপুর মডেল থানার ওসি আলী আর্শাদ।

অপরদিকে চাঞ্চল্যকর এ হত্যাকাণ্ডের ক্লু উদঘাটনের জন্য পুলিশের একধিক টিম মাঠে নামলে এ ঘটনায় দীপ্তর মা সীমা মণ্ডল জড়িত বলে প্রমাণ পাওয়া যায়। এরপর মঙ্গলবার (৩১ মে) রাতে তাঁকে পুলিশি হেফাজতে নিলে তিনি চোখের সামনে ছেলে হত্যার ঘটনা খুলে বলেন।

উজিরপুর মডেল থানার ওসি আলী আর্শাদ জানান, চাঞ্চল্যকর দীপ্ত হত্যাকাণ্ডের নেপথ্যে রয়েছে পরকীয়া ও অনৈতিক সম্পর্ক। দীপ্তর মা সীমা সরাসরি হত্যায় জড়িত। চারজন আদালতে নিজেদের জড়িত থাকার কথা স্বীকার করেছেন।-কালের কণ্ঠ

Follow করুন এমটিনিউজ২৪ গুগল নিউজ, টুইটার , ফেসবুক এবং সাবস্ক্রাইব করুন এমটিনিউজ২৪ ইউটিউব চ্যানেলে