মঙ্গলবার, ২৯ জানুয়ারী, ২০১৯, ০২:৩০:২২

দাম তলানিতে, কৃষক ক্ষেত থেকেই আলু তুলছে না!

দাম তলানিতে, কৃষক ক্ষেত থেকেই আলু তুলছে না!

বগুড়া: বগুড়ায় পাইকারি বাজারে নেই ক্রেতাদের আনাগোনা। আলুর দামও তলানিতে এসে ঠেকেছে। দাম না মেলায় অনেক কৃষক ক্ষেত থেকেই আলু তুলছে না। গত সপ্তাহে খোলাবাজারে পাকড়ি (লাল) আলুর দাম কেজিপ্রতি ১৫-১৬ টাকায় নেমে আসে। হাটে সেই আলু আরো কমে ৫৫০ থেকে ৬০০ টাকা প্রতি মণ দরে বিক্রি হয়েছে। আর সাদা হলেন্ডার স্টিক বিক্রি হয়েছে প্রতি মণ ৪৫০ টাকা। আর গ্রানোলা জাতের আলুর দাম ছিল প্রতি মণ মাত্র ৩০০ থেকে ৩৫০ টাকা। সেই হিসেবে এই আলুর কেজি হাটে পড়ে মাত্র ৭ টাকা ৫০ পয়সা কেজি। এই চিত্র বগুড়ায়।

মাঠের চিত্র আরো খারাপ। মাঠের কৃষক আলুর দাম পাচ্ছে সর্বোচ্চ ১০ টাকা কেজি। এবার ফলন ভালো হওয়ার সুবাদে হাটে আলুর স্তূপ। কিন্তু একে তো দাম কম, তার ওপর ক্রেতার অভাবে ওই আলু বিক্রি করা যাচ্ছে না। এ অবস্থায় অনেক কৃষক ক্ষেত থেকেই আলু তুলছে না। সপ্তাহজুড়ে ঘুরে মিলেছে মাঠের এ চিত্র।

বগুড়ায় মোট সবজি আবাদের ৫০ শতাংশ এলাকা এখন আলুর দখলে। বগুড়ার চণ্ডীহারার কৃষক আব্দুল মানিক, মোকামতলা বাজার এলাকার সবুর সওদাগর, নয়মাইল বাজারের মিনহাজ উদ্দিন ও শেরপুরের আকবর মিয়া জানান, বাজার পরিস্থিতি দেখে ক্ষেত থেকে আলু তোলা বন্ধ রেখেছি। এখন আলু তুললে লোকসানে বিক্রি করতে হবে। আবার দেরিতে তুললে পরবর্তী ফসল চাষ বিঘ্নিত হবে। যে কারণে আমরা পড়েছি উভয় সংকটে।

এদিকে এখনো বগুড়াসহ উত্তরাঞ্চলে অব্যাহত শৈত্যপ্রবাহ রয়েছে। কমছে না ঘন কুয়াশাও। আবহাওয়া ক্রমেই চলে যাচ্ছে আলু চাষিদের প্রতিকূলে। জমিতে ছড়িয়ে পড়ছে রোগবালাই। অথচ এখন মাঠে পড়ে রয়েছে প্রায় ৪০ শতাংশ আলু।

কৃষি বিশেষজ্ঞ বজলুর রশিদ বলেন, গাছ শুকিয়ে যাওয়ার পর আলু না তুললেও অন্তত ১৫ দিন মাটিতে আলু ভালো থাকবে। ওই কয়েক দিনে বাজার কিছুটা চাঙ্গা হতে পারে। বগুড়ার পাইকারি আলুর বাজার কত দিন এমন মন্দা থাকবে তা নিয়ে কৃষি ও কৃষি বিপণন দপ্তরের কর্তারা স্পষ্ট কিছু জানাতে পারেননি।

কৃষকরা জানায়, এ সময়ে মূলত পাকড়ি (লাল) প্রজাতির আলুর ফলন হয়। গত বৃহস্পতিবার মহাস্থান হাটে ৫৫০ থেকে ৬০০ টাকা মণ দরে ওই আলু বিক্রি হয়েছে। সাদা হলেন্ডার স্টিক বিক্রি হয়েছে প্রতি মণ ৪৫০ টাকা। আর গ্রানোলা জাতের আলুর দাম ছিল প্রতি মণ মাত্র ৩০০ থেকে ৩৫০ টাকা। সেই হিসেবে এই আলুর কেজি হাটে পড়ে মাত্র ৭ টাকা ৫০ পয়সা কেজি।

যদিও এক কেজি পাকড়ি প্রজাতির আলুর উৎপাদন খরচ প্রায় ১০ টাকা। সঙ্গে অন্যান্য খরচ আরো দুই টাকা যোগ হবে। হাটের এই দামও যদি কৃষক পেত তাহলে লাভ হওয়ার কথা। কিন্তু জমিতে ৪০০ থেকে ৪৫০ টাকা মণের বেশি দাম পাওয়া দুষ্কর।

বগুড়া, শিবগঞ্জ, মোকামতলা, শেরপুর, শাজাহানপুর ও কাহালু এলাকা ঘুরে দেখা গেছে, চারদিকে শুধু আলু আর আলু। তার পরও আলু চাষিরা হতাশ। তাদের চেহারায় শঙ্কার ছাপ। ভরা মৌসুমে বাজারে আলুর দাম নেই। খুচরা বাজারে যে আলুর কেজি ১৮ টাকা, সেই আলু ক্ষেতে বিক্রি হচ্ছে ৮ থেকে ১০ টাকা দরে। এর পরও হাটে ক্রেতা নেই।

মাটির গুণগত মানের কারণে উত্তরের অন্যান্য জেলার চেয়ে বগুড়ায় আলুর ফলন বেশি হয়। পুরো উত্তরাঞ্চল মিলে আলুর যা ফলন হয়, তার প্রায় দ্বিগুণ হয় বগুড়ায়। এ তথ্য কৃষি বিভাগের। পাশের জয়পুরহাটেও আলুর ফলন ভালো হয়। এ কারণে এ অঞ্চলে গড়ে উঠেছে অনেক হিমাগার। বগুড়া থেকে আলু কিনে দেশের বিভিন্ন স্থানে নিয়ে যান পাইকাররা। অনেকে আলু কিনে পাশেই হিমাগারে সংরক্ষণ করেন পরবর্তী সময় বেশি দামে বিক্রির জন্য। মৌসুমি ব্যবসায়ীরাও আলু কিনে মজুদ করেন এসব হিমাগারে।

কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের হিসাব অনুযায়ী এবার উত্তরের ১৬ জেলায় তিন লাখ ৩৪ হাজার ৩৩ হেক্টর জমিতে আলু উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা ছিল ৩২ লাখ ৯০ হাজার মেট্রিক টন। এর মধ্যে শুধু বগুড়ায় ৬০ হাজার ২৫০ হেক্টর জমিতে লক্ষ্যমাত্রা ছিল ১৩ লাখ ৫৭ হাজার ১৯ মেট্রিক টন।

কিন্তু এ পরিমাণের চেয়ে প্রায় ৩০ শতাংশ আলু বেশি উৎপাদন হয়েছে। এত আলু আগে কখনো উৎপাদন হয়নি। তথ্য মতে, উত্তরের ১৬ জেলায় হিমাগারের সংখ্যা দেড় শতাধিক। এসবের ধারণক্ষমতা ১০ লাখ ৮৫ হাজার ৮৭০ মেট্রিক টন। বাজারে দাম কম হওয়ায় হিমাগারের ধারণক্ষমতার পুরোটাই মজুদ করা হচ্ছে এবার।

বগুড়া কৃষি সম্প্রসারণ বিভাগের উপপরিচালক নিখিল চন্দ্র বিশ্বাস জানান, বগুড়ায় গত বছরের তুলনায় প্রায় চার হাজার হেক্টর বেশি জমিতে আলু চাষ হয়েছে। কিন্তু শুরুতেই কৃষকরা বীজ সংকট ও সারের উচ্চ মূল্যের কারণে ধাক্কা খায়। এ সমস্যা কাটিয়ে জমিতে আলুগাছ যখন বাড়তে শুরু করে, তখনই নেমে আসে হাড় কাঁপানো শীত আর ঘন কুয়াশা। তাপমাত্রা এখন ১০ ডিগ্রি সেলসিয়াসের আশপাশে ওঠানামা করছে। সব বাধা অতিক্রম করে ভালো ফলন হয়েছে। এখন বাজার স্থিতিশীল হওয়ার অপেক্ষা।-কালের কণ্ঠ

Follow করুন এমটিনিউজ২৪ গুগল নিউজ, টুইটার , ফেসবুক এবং সাবস্ক্রাইব করুন এমটিনিউজ২৪ ইউটিউব চ্যানেলে