সোমবার, ০১ এপ্রিল, ২০১৯, ১১:২৮:৫৩

এগিয়ে যাওয়ার চেষ্টায় বাবার কোলে চড়ে এসে এইচএসসি পরীক্ষা দিচ্ছে নাইচ খাতুন

এগিয়ে যাওয়ার চেষ্টায় বাবার কোলে চড়ে এসে এইচএসসি পরীক্ষা দিচ্ছে নাইচ খাতুন

বগুড়া : নাইচ খাতুনের দুই পায়ে ও ডান হাতে কোনও শক্তি নেই। শুধু বাম হাত সচল আছে। বাঁ-হাত দিয়েই চলছে তার লড়াই। নাইচ খাতুন বাবার কোলে চড়ে সোমবার ধুনট সরকারি ডিগ্রি কলেজ কেন্দ্রে এসেছিল এইচএসসি পরীক্ষা দিতে। তিনি মানবিক বিভাগের শিক্ষার্থী। বাম হাতের শক্তি ও মনোবল নিয়েই শিক্ষাজীবন শুরু করেছিল নাইচ। রাতদিন পরিশ্রম করে শারীরিক প্রতিবন্ধকতাকে পেছনে ফেলে নাইচ সামনের এগিয়ে যাওয়ার চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছেন।

নাইচ খাতুনের বাড়ি ধুনট উপজেলার চৌকিবাড়ী ইউনিয়নের বিশ্বহরিগাছা গ্রামে। বাবা নজরুল ইসলাম কৃষক ও মা আকতার জাহান গৃহিণী। এক ভাই ও এক বোনের মধ্যে সে ছোট। বড় ভাই রবিউল করিম বগুড়া সরকারি আজিজুল হক কলেজে অনার্সের ছাত্র। মাত্র দেড় বিঘা ফসলি জমির ওপর তাদের লেখাপড়া ও সংসার চলে।

সোমবার সকালে পরীক্ষা কেন্দ্রে গিয়ে দেখা যায়, বাবা নজরুল ইসলাম তাকে কোলে তুলে নিয়ে ধুনট সরকারি ডিগ্রি কলেজের ১২১ নম্বর কক্ষে একটি বেঞ্চে বসিয়ে দিয়েছেন। সেখানে বসে বাম হাত দিয়ে স্বাভাবিকভাবেই লিখেছেন। প্রতিবন্ধী হওয়ায় নির্ধারিত সময়ের অতিরিক্ত ৩০ মিনিট দেওয়া হয়েছে।

নজরুল ইসলাম জানান, তার মেয়ে জন্ম থেকেই প্রতিবন্ধী। তার দুটো পা ও একটি হাত অচল। এ কারণে সে দাঁড়াতে বা হাঁটতে পারেন না। তারপরও নাইচ লেখাপড়া করতে চান। এভাবেই ২০১৭ সালে বিশ্বহরিগাছা উচ্চবিদ্যালয় থেকে এসএসসি পরীক্ষায় অংশ নিয়ে ৩.৫৫ পেয়েছেন নাইচ। নাইচের বাবা মেয়েরে চিকিৎসার জন্য অনেক ডাক্তার ও কবিরাজের কাছে গিয়েছেন। কিন্তু অর্থের অভাবে তাকে সুস্থ করতে পারেননি।

নাইচ খাতুন বলেন, ‘আমি কারো বোঝা হয়ে থাকতে চাই না। তাই ইচ্ছাশক্তি ও মনোবল নিয়েই এক হাত দিয়ে শিক্ষাজীবন শুরু করেছি। এবার এইচএসসি পাস করতে পারলে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি হওয়ার ইচ্ছা রয়েছে। তবে আমার দরিদ্র বাবার পক্ষে লেখাপড়ার খরচ জোগাতে অনেক কষ্ট হবে। তারপরও কষ্ট করে লেখাপড়া করে একজন আদর্শ শিক্ষক হতে চাই।’

Follow করুন এমটিনিউজ২৪ গুগল নিউজ, টুইটার , ফেসবুক এবং সাবস্ক্রাইব করুন এমটিনিউজ২৪ ইউটিউব চ্যানেলে