সোমবার, ০৭ সেপ্টেম্বর, ২০১৫, ১০:৪৬:২৫

চট্টগ্রাম বন্দরে হামলার ছক নতুন জঙ্গি সংগঠনের

চট্টগ্রাম বন্দরে হামলার ছক নতুন জঙ্গি সংগঠনের

সাখাওয়াত কাওসার : চলতি মাসেই চট্টগ্রাম বন্দরসহ নগরীতে ভয়াবহ নাশকতামূলক কর্মকাণ্ড ঘটানোর পরিকল্পনা রয়েছে নতুন জঙ্গি সংগঠন ‘হিলফুল ফুযুল আল ইসলাম আল বাংলাদেশ’-এর। শুধু তাই নয়, দেশব্যাপী আবারও সিরিজ বোমা হামলা এবং সশস্ত্র জিহাদের পরিকল্পনাও রয়েছে ২৮টি জঙ্গি ও উগ্রপন্থি সংগঠন মিলে গঠিত এ নতুন সংগঠনের। টার্গেট বাস্তবায়নের জন্য চট্টগ্রামসহ সারা দেশকে ৭০ ভাগে ভাগ করে ৭০ জন সামরিক কমান্ডার চূড়ান্ত করেছে সংগঠনটি। গোয়েন্দা নজরদারির বাইরে থেকে সদস্যদের মধ্যে নিখুঁত যোগাযোগের জন্য স্যাটেলাইট ন্যানো স্টেশন স্থাপনের পরিকল্পনাও রয়েছে এ সংগঠনের। ‘হিলফুল ফুযুল’-এর কর্মকাণ্ড সম্পর্কে সম্প্রতি একটি প্রতিবেদন স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়সহ সরকারের উচ্চ পর্যায়ে জমা দিয়েছে একটি গোয়েন্দা সংস্থা।

এ ব্যাপারে র‌্যাবের গোয়েন্দা শাখার পরিচালক লে. কর্নেল আবুল কালাম আজাদ প্রতিবেদককে বলেন, সৃষ্টির পর থেকেই র‌্যাব জঙ্গি দমনে বিশেষ ভূমিকা পালন করে আসছে। হিলফুল ফুযুল দীর্ঘদিন ধরে সক্রিয় হওয়ার চেষ্টা করছিল। তবে র‌্যাবসহ অন্যান্য আইন প্রয়োগকারী সংস্থার কারণে পেরে ওঠেনি। তাদের নাশকতামূলক যে কোনো পরিকল্পনা গুঁড়িয়ে দিতে র‌্যাব সদস্যরা প্রস্তুত।

প্রতিবেদন সূত্রে জানা যায়, চলতি মাসের মাঝামাঝি থেকে আগামী মাসের মাঝামাঝি সময়ের মধ্যে চট্টগ্রামে নাশকতামূলক অপারেশন চালাবে হিলফুল ফুযুল। বন্দরনগরীর পতেঙ্গার গুপ্তাখাল এলাকায় পদ্মা, মেঘনা, যমুনা অয়েল ও ইস্টার্ন রিফাইনারির তেল ডিপোগুলোয় গ্যাসবোমা কিংবা আইইডি (IED-Improvise Explosive Device) ব্যবহার করে বিস্ফোরণ ঘটানোর পরিকল্পনা তাদের। চট্টগ্রাম বন্দর চ্যানেলের দুই পাশের প্রায় শতাধিক শিল্পপ্রতিষ্ঠান, সরকারি স্থাপনা, বিশেষ করে কোস্টগার্ড পশ্চিম জোন, কাপ্তাই বিএনএস মোয়াজ্জেম ঘাঁটি, বানৌজা ঈশা খাঁসহ শতাধিক সরকারি-বেসরকারি গুরুত্বপূর্ণ স্থাপনাও ওই বিস্ফোরণে আক্রান্ত হতে পারে। অপারেশনের ধরন সম্পর্কে প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়, অপারেশনটি হবে অনেকটা দুর্ঘটনাসদৃশ।

প্রকৃতির জোয়ার-ভাটার সহায়তা নেওয়া হবে। এ ছাড়া অপারেশনে সহায়তা করবেন পেট্রলিয়াম খাতে গড়ে ওঠা অসাধু সিন্ডিকেট, যারা নিজেদের হীনস্বার্থ চরিতার্থ করতে যে কোনো চক্রান্তে অংশীদার হয়ে দেশের জ্বালানি নিরাপত্তা ও চট্টগ্রাম বন্দরকে হুমকির মুখে ফেলে দিতে পিছপা হবে না এমন কিছু সরকারি কর্মকর্তা-কর্মচারী। অপারেশনে ব্যবহৃত গ্যাসবোমার পরিকল্পনা ত্রিশালের পলাতক দুই জেএমবি জঙ্গি জাহিদুল ইসলাম ওরফে বোমা মিজান ও সালাহ উদ্দিন ওরফে সালেহীনের। এদের সঙ্গে রয়েছেন আরও কিছু দক্ষ ও প্রশিক্ষিত বোমারু, যারা প্রত্যেকেই কোনো না কোনো কারিগরি বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র।

প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়েছে, নবগঠিত এ জোটের নাশকতার পরিকল্পনার প্রথম ধাপে রয়েছে বন্দরনগরী চট্টগ্রামের গুরুত্বপূর্ণ স্থাপনা উড়িয়ে দেওয়া এবং ধাপে ধাপে পরবর্তী কার্যক্রম বাস্তবায়ন করা। এ পরিকল্পনা বাস্তবায়নের জন্য এ জোট কয়েকটি দল প্রস্তুত করবে এবং নাশকতামূলক গোপন এ অপারেশন একটি বিশেষ সাংকেতিক কোড নামে পরিচালিত হবে। তবে ২০১৬ ও ২০১৭ সাল সামনে রেখে নানা ধরনের ভয়ঙ্কর পরিকল্পনা রয়েছে হিলফুল ফুযুলের। দেশব্যাপী আবারও সিরিজ বোমা হামলা ও সশস্ত্র জিহাদের মাধ্যমে যে কোনো মূল্যে সরকার পতনই হলো তাদের টার্গেট। নেপথ্যে থেকে তাদের আর্থিক ও কারিগরি সহযোগিতা করছে কিছু দেশি-বিদেশি ব্যক্তি ও সংগঠন। জানা যায়, ২০০৩ সাল থেকে এ দেশে হিলফুল ফুযুল প্রতিষ্ঠা লাভ করলেও লক্ষ্য স্থির করে ধীরগতিতে কাজ করে আসছিল। সংগঠনটির সদস্যদের বিশেষ অপারেশন বাস্তবায়নের উপযোগী করে তুলতে নানা ধরনের প্রশিক্ষণ দেওয়া হয়েছে এরই মধ্যে। ভয়ঙ্কর পরিকল্পনার মধ্যে রয়েছে পোশাকশিল্পে বড় ধরনের নাশকতা, বড় বড় বেশ কয়েকটি বিদ্যুৎ কেন্দ্রে হামলা, ব্লগার ও সাংবাদিকদের নিজেদের টার্গেটে এনে কিলিং মিশন চালানো, প্রতিষ্ঠিত রাজনৈতিক ও ব্যবসায়ী ব্যক্তিদের ওপর অথবা তাদের নিয়ন্ত্রণাধীন ব্যবসা প্রতিষ্ঠানে হামলা পরিচালনা কিংবা সিরিজ মার্ডার মিশন বাস্তবায়ন। এসব পরিকল্পনার সফল বাস্তবায়নের জন্য সংগঠনের সদস্যদের মধ্যে গোপন যোগাযোগ ব্যবস্থা বজায় রাখতে স্যাটেলাইট ন্যানো স্টেশন স্থাপন করার পরিকল্পনাও রয়েছে তাদের।

নজরদারি এড়াতে সাংবাদিক পরিচয়! : প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়েছে, পরিবর্তিত পরিস্থিতিতে হিলফুল ফুযুল তার সদস্যদের কাছে দফায় দফায় বার্তা পাঠিয়ে সার্বিকভাবে প্রস্তুত থাকার নির্দেশনা দেবে। তারা প্রত্যেকেই সাংবাদিকের ছদ্মবেশে নাশকতার পরিকল্পনার সব ধাপের সুষ্ঠু সমন্বয় করবে। এ ক্ষেত্রে নাশকতার পূর্বাপর এরা বিভিন্ন নামসর্বস্ব দৈনিক ও অনলাইনের পরিচয় ব্যবহার করবে বলে জানা গেছে।

মোর্চায় যেসব সংগঠন : হিলফুল ফুযুল মোর্চায় থাকা উগ্রপন্থি সংগঠনগুলো হচ্ছে- দাওয়াতে ইসলাম, হিজবুত তাওহীদ, হিযবুত তাহ্রীর, আনসারুল্লাহ বাংলা টিম (এবিটি), হরকাতুল জিহাদ, জেএমবি, লস্কর-ই-তৈয়বা, বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলাম, জামাত-ই-আরাশ, জয়শা-ই-মুহাম্মদ, ইকতাদুল-তুল্লা আল মুসলেমিন, জামায়াত-আল পাকিস্তান, জামায়াত-ই-আল ইসলাম আল পাকিস্তান, জম্মুর হিজাব-উল-মুজাহিদীন, দাওয়া কাফেলা, ইসলামিক সলিডারিটি ফ্রন্ট, রোহিঙ্গা ইসলামিক ফ্রন্ট, আরাকান আর্মি, আরাকান কালচারাল সোসাইটি, রোহিঙ্গা সলিডারিটি অর্গানাইজেশন, ন্যাশনাল লীগ ফর বার্মা, ন্যাশনাল ইউনাইটেড পার্টি অব আরাকান, বার্মা লিবারেশন আর্মি, আরাকান মুভমেন্ট, আরাকান পিপলস ফ্রিডম পার্টি, আরাকান রেহিঙ্গা ইউনিয়ন, একিউআইএস এবং ভারতের নাগা বিদ্রোহী পার্টি উলফা।-বিডিপ্রতিদিন
৪ সেপ্টেম্বর ২০১৫/এমটিনিউজ২৪/এস.এ.সুমন/একে

Follow করুন এমটিনিউজ২৪ গুগল নিউজ, টুইটার , ফেসবুক এবং সাবস্ক্রাইব করুন এমটিনিউজ২৪ ইউটিউব চ্যানেলে