বুধবার, ০৯ অক্টোবর, ২০১৯, ১২:১২:১৮

আমার নাতি বাড়িতে আসে না কেন? বাড়িতে এতো লোকজন কেন: আবরারের দাদা

আমার নাতি বাড়িতে আসে না কেন? বাড়িতে এতো লোকজন কেন: আবরারের দাদা

নিউজ ডেস্ক : আবদুল গফুর বিশ্বাস। কুষ্টিয়ার কুমারখালী উপজেলার রায়ডাঙ্গা গ্রামের ৮৭ বছর বয়স্ক এই বৃদ্ধ বুয়েট ছাত্রলীগের নি'র্ম'মতার বলি হওয়া শিক্ষার্থী আবরার ফাহাদের দাদা। বয়সের ভারে স্মৃতিশক্তি লোপ পেলেও আবরারকে নিয়ে কিছু ঝামেলা হয়েছে সেটি তিনি বুঝতে পেরেছেন।

সোমবার বাড়িতে সাংবাদিকদের আনাগোনা দেখে কৌতুহলী আব্দুল গফুর বিশ্বাস জানতে চান কী হয়েছে? পরিবারের সদস্যদের অনুরোধ এবং শারীরিক অবস্থা বিবেচনায় সত্য আড়াল করে তাকে জানানো হয়, আবরার সড়ক দু'র্ঘট'নায় আ'হত হয়েছেন। হাসপাতালে ভর্তি আছেন এবং এখন ভালো আছেন। আগামীকাল আবরার বাড়িতে ফিরবে।

সত্য বড় নি'র্মম! আবরার বাড়ি ফিরেছেন বটেই কিন্তু এ ফেরাই শেষ ফেরা। আর কখনো বুয়েট ক্যাম্পাসে ফিরে যাবেন না, দাদা বলে ডাকবেন না আবদুল গফুর বিশ্বাসকে। এই ধ্রুব সত্য কথা তাকে জানানোর ভাষা কেউই যেন খুঁজে পাচ্ছে না।

যমুনা টিভির কুষ্টিয়া প্রতিনিধি মাহাতাব উদ্দিন লালনের একটি প্রতিবেদনে দাদাকে তার প্রিয় নাতির মৃ'ত্যুর খবর না জানানোর খবর উঠে এসেছে।
বৃদ্ধ আব্দুল গফুর বিশ্বাসের ৫ ছেলে চাকুরির সুবাদে বাড়ির বাইরে থাকেন। একসাথে এত লোক কখনও তাদের বাড়িতে আসেন না। অনেকে কা'ন্নাকা'টি করছেন, অনেকেই ভারাক্রান্ত। সব মিলিয়ে অজানা শঙ্কা আবদুল গফুরের মনে।

মঙ্গলবার সকাল আটটার দিকে আবরার ফাহাদের ম'রদে'হ বহনকারী অ্যাম্বুলেন্স যখন তার গ্রামের বাড়িতে পৌঁছালো তখনো আব্দুল গফুর বিশ্বাসকে কিছুই জানানো হয়নি। তাকে সবকিছুর আড়ালে রাখার একটা প্রচেষ্টা পরিবার-পরিজনদের। একসাথে এতো আত্মীয়-স্বজন, প্রতিবেশী আর গ্রামের লোকজনকে দেখে সবার কাছে জানতে চান কী হয়েছে? অনেকেই কথা দিয়ে এটা সেটা বোঝানোর চেষ্টা করছেন, অনেকে আবার পাশ কাটিয়ে নীরবে চলে যাচ্ছেন।

গতকাল ব্যাকুল হয়ে সাংবাদিকদের কাছে জানতে চাইলেন, তোমরা না গত কালকে বললা আমার নাতি এক্সিডেন্ট করেছে? আজকে বাড়ি আসবে। আমার নাতি বাড়িতে আসছে না কেন, আর আমার বাড়িতে এতো লোকজন কেনো? কিছু প্রশ্নের উত্তর হয় না। নির্বাক দর্শকদের ভূমিকা পালন করা ছাড়া খুব বেশি কিছু করা সম্ভব হয়নি।

শুধু রায়ডাঙ্গা না, কুষ্টিয়া না, সারাদেশে যখন আবরার হ'ত্যাকা'ণ্ড নিয়ে আলোচনার ঝড় বইছে, দেশি-বিদেশি মিডিয়াগুলো ফলাও করে আবরারকে ন্যাক্কারজনকভাবে হ'ত্যার সংবাদ পরিবেশন করছে, তখনো দাদা আবদুল গফুর বিশ্বাস আজানা শঙ্কা নিয়ে অপেক্ষা করে আছেন, মেধাবী নাতি সুস্থ হয়ে ফিরে আসবে…

আব্দুল গফুর বিশ্বাসের কাছে জানতে চেয়েছিলাম, আবরার তাকে নিয়মিত দেখতে আসে কিনা। তিনি বলেছিলেন, ছুটিতে বাড়িতে আসলেই গ্রামের বাড়িতে ছুটে আসতো আবরার। খোঁজখবরও নিতো। মেধাবী নাতিকে নিয়ে গর্বিত এই বৃদ্ধ জীবনের শেষলগ্নে এসেও স্বপ্ন দেখেন তার নাতি অনেক বড় ইঞ্জিনিয়ার হবে। পরিবারের মুখ উজ্জ্বল করবে। যদিও তার এবং পরিবারের একসময় চাওয়া ছিল আবরার ডাক্তার হবে।

কোনো ধরনের প্রস্তুতি ছাড়া মেডিকেল ভর্তি পরীক্ষায় উত্তীর্ণও হয়েছিলেন আবরার। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি পরীক্ষায় মেধা তালিকায় দ্বিতীয় হয়েছিলেন। কিন্তু, নিজের ইচ্ছাতেই বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ে ইলেকট্রিকাল এন্ড ইলেকট্রনিক্স ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগে ভর্তি হন। অত্যন্ত মেধাবী আবরার ফাহাদের মৃ'ত্যু কোনোভাবেই মেনে নিতে পারছেন না তার পরিবার আত্মীয়স্বজন এবং প্রতিবেশিরা। আর বৃদ্ধ দাদা তো প্রতীক্ষায় দিন গুনছেন- নাতি সুস্থ হয়ে ফিরে আসবেন। যে প্রতীক্ষার কোনো শেষ নেই…

Follow করুন এমটিনিউজ২৪ গুগল নিউজ, টুইটার , ফেসবুক এবং সাবস্ক্রাইব করুন এমটিনিউজ২৪ ইউটিউব চ্যানেলে