শনিবার, ০৭ মার্চ, ২০২০, ০৭:০৯:০৯

পাশাপাশি মসজিদ-মন্দির, শ্রীমঙ্গলে সম্প্রীতির উজ্জ্বল নিদর্শন

পাশাপাশি মসজিদ-মন্দির, শ্রীমঙ্গলে সম্প্রীতির উজ্জ্বল নিদর্শন

মৌলভীবাজার থেকে : মৌলভীবাজারের শ্রীমঙ্গল উপজেলার ভৈরবগঞ্জ বাজারে মাত্র কয়েক গজের ব্যবধানে গড়ে উঠেছে ভৈরব মন্দির আর মাজদিহি জামে মসজিদ। মসজিদের মিনার আর মন্দিরের চূড়া দাঁড়িয়ে আছে পাশাপাশি। দেশের সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতির এক উজ্জ্বল নিদর্শন এটি। ৭৩ বছর বছর ধরে এখানে শান্তিপূর্ণভাবে দুই ধর্মের মানুষ যে যার ধর্ম পালন করে আসছেন। 

পাশাপাশি মন্দির ও মসজিদ থাকায় এখানকার দুই ধর্মের মানুষই একে অন্যের ধর্ম সম্পর্কেও অভিজ্ঞতা নিতে পারছেন। সম্প্রীতির শিক্ষা ছড়াচ্ছে এই দুই ধর্মীয় প্রতিষ্ঠান। স্থানীয় সূত্রে জানা যায়, প্রায় ২০০ বছর আগে এখানে মন্দির নির্মাণ করা হয়। ৭৩ বছর আগে মসজিদ নির্মাণ করা হয়। গত ৭৩ বছরে দেশব্যাপী অনেক সাম্প্রদায়িক উসকানি ঘটলেও তার প্রভাব এখানে পড়েনি। 

দুটি ধর্মীয় প্রতিষ্ঠান এক সঙ্গে প্রায় ২০ গজের ব্যবধানে সহাবস্থানে রয়েছে। প্রথমে এই দুই ধর্মীয় প্রতিষ্ঠানের মধ্যে কোনো দেয়াল বা স্থাপনা ছিল না। বর্তমানে দেয়াল উঠেছে। এই দীর্ঘ সময় দুই ধর্মের মানুষ কাছাকাছি অবস্থানে ধর্মকর্ম পালন করে গেলেও এখানে কোনো সাম্প্রদায়িক সম্প্রতি বিনষ্টের ঘটনা ঘটেনি।

অত্যন্ত লজ্জাজনক; বসন্তোত্‍সবে তরুনীদের খোলা পিঠে লেখা অ'শ্লী'ল শব্দ!

স্থানীয় কালাপুর ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান মুজিবুর রহমান মজুল জানান, এই মন্দিরের পাশেই এক সময় বাজার গড়ে ওঠে। যা এখন ভৈরব বাজার নামে পরিচিত। লোকমুখে প্রচলিত তথ্য মতে প্রায় ২০০ বছর আগে পূণ্যদত্তের পরিবার ভৈরব মন্দির স্থাপন করেছিলেন। এরপর এখানে মসজিদ স্থাপন করা হয় ১৯৪৭ সালের দিকে। এলাকাবাসী ও মাজদিহি চা বাগান কর্তৃপক্ষ নিজেদের অর্থায়নে মসজিদটি নির্মাণ করেন। এরপর থেকে এখন পর্যন্ত কোনো রকম ঝামেলা ছাড়াই দুই ধর্মের মানুষ শান্তিপূর্ণভাবে ধর্মকর্ম পালন করে যাচ্ছেন।

মসিজিদের ইমাম মৌলানা জাফর আহমদ বলেন, ১৫ বছর ধরে এখানে খতিবের দায়িত্ব পালন করছি। প্রায় ৭৩ বছরের ইতিহাসে দুই ধর্মের মধ্যে কোনো ঝামেলা হয়নি। কোনোদিন তাদের মধ্যে মনক্ষুন্নতা সৃষ্টি হয়নি। নামাজ শেষে মসজিদ থেকে বের হওয়ার পর প্রায়ই মন্দিরের পুরোহিত জন্মজয় ভট্টাচার্য্যরে সঙ্গে দেখা হয়। তখন তারা সেখানে কুশল বিনিময় করেন।

মসিজিদ কমিটির সাধারণ সম্পাদক আব্দুল মতিন বলেন, আমি ছোট বেলা থেকেই এভাবে দেখে আসছি। নিজেও ৪০ বছর ধরে এই মসজিদে নামাজ পড়ছি। আমরা একে অপরের সমস্যায় এগিয়ে আসি। আমাদের কোনো সমস্যা নেই। দুই ধর্মের মানুষ কাছাকাছি দীর্ঘ সময় ধরে অবস্থান করে নিজ নিজ ধর্ম পালন করছেন।

যেসব কারণে পুতিন ছাড়া এরদোয়ানের সামনে আর কোন রাস্তা খোলা নেই

ওই এলাকার কবি শেখ শাহ্ জামাল আহমদ জানান, ''এখানে কোনো ধরনের সা'ম্প্রদা'য়িক সম্প্রীতি বি'ন'ষ্টের ঘটনা ঘটেনি বা সম'স্যা হয়নি। মন্দিরে প্রায়ই অনেক রাত পর্যন্ত পূর্জা ও কীর্তন হয়। এতে কারও কোনো সম'স্যা হয় না। বরং দুই ধর্মীয় প্রতিষ্ঠানে প্রতিদিন এলাকার মুসল্লি ও হিন্দু ধর্মাবলম্বীরা আসেন, এটি অন্যরকম ভালো লাগে।'' স্থানীয় চাতালী চা বাগান সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক বিজয় নুনিয়া জানান, ''নতুন প্রজন্ম এই মন্দির এবং মসজিদ থেকে অনেক কিছু শিখতে পারবে বলে আমি বিশ্বাস করি।''

মন্দিরের পুরোহিত জন্মজয় ভট্টাচার্য্য বলেন, এখানে উভয় ধর্মের মধ্যে এক সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি বিরা'জমান। বিভিন্ন অনুষ্ঠানে মুসলমান ধর্মাবলম্বীদের নিমন্ত্রণ দিলে তারা আসেন। মাঝে মাঝে আমরা অনেক রাত পর্যন্ত কীর্তন করি। শুধু নামাজের সময় আমাদের বাদ্যযন্ত্রের আওয়াজ নিয়ন্ত্রণে রাখি, যেনও তাদের সম'স্যা না হয়। পূজা-আর্চনায় মুসল্লি ভাইয়েরা সহায়তাও করেন। নি'র্দ্বি'ধায় বিগত ২৫/৩০ বছর ধরে এখানে পূজা পার্বণ করে আসছি।

Follow করুন এমটিনিউজ২৪ গুগল নিউজ, টুইটার , ফেসবুক এবং সাবস্ক্রাইব করুন এমটিনিউজ২৪ ইউটিউব চ্যানেলে