রবিবার, ১৩ সেপ্টেম্বর, ২০১৫, ০৬:১৮:২২

মহিলা থানার রহস্য ফাঁস

মহিলা থানার রহস্য ফাঁস

আন্তর্জাতিক ডেস্ক : এক মহিলা থানা পুলিশের সদস্যদের তাক লাগানো কৌশল, যা শুনলে আপনি বাহবা না দিয়ে পারবেন না।  মাত্র এক বছরের মধ্যে বিশ্বাসযোগ্যতা অর্জন করেছে ভারতের বর্ধমানের মহিলা থানা৷

প্রাথমিক অবস্থায় তেমন পরিকাঠামো না থাকলেও চেষ্টায় এবং একাগ্রতায় সেই সাফল্যের কৃতিত্ব থানার মহিলা কর্মীদের৷ সেই কৌশলের রহস্য ফাঁস করলেন থানার আইসি বনানী সরকার৷

তিনি বলেন, কেউ থানায় এলে আগে বলি, সত্যি বলবেন৷ মিথ্যা বলে উদ্দেশ্যপ্রণোদিত হয়ে কাউকে ফাঁসানোর চেষ্টা করবেন না৷ এতেই অর্ধেক কাজ হয়ে যায় বুঝলেন৷

বর্ধমানের মহিলা থানায় সাফল্যের এটাই রহস্য৷ অভিযোগ জানানোর আগে কাউন্সেলিংয়ের ব্যবস্থা থাকায় মিথ্যে অভিযোগ দায়েরের প্রবণতা কমে যায় এক ধাক্কায়৷ এমন মিথ্যা অভিযোগই অনেক সময় কাজে সমস্যা তৈরি করে৷ অভিযুক্ত হন পুলিশকর্মীরাই৷ আইসির বক্তব্য, এরপর যা বাকি রয়ে যায়, তদন্তে সেই সত্য উদঘাটিত হয়৷

২০১৪-এর ৭ ফেব্রুয়ারি বর্ধমানে মহিলা থানার উদ্বোধন করেছিলেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়৷ সে দিন থানার নিজস্ব কোনো অফিসঘরই ছিল না৷ পরে জেলার গোয়েন্দা শাখার পুরনো অফিসের পরিবর্তন ঘটিয়ে তৈরি হয় বর্ধমান মহিলা থানা৷ দায়িত্ব নেন পুলিশ ইন্সপেক্টর বনানী সরকার৷

২০১৫-এর জুলাই পর্যন্ত ২০৩টি মামলা এই থানায় জমা পড়েছে৷ এর বেশ কিছু মামলার তদন্ত শেষে চার্জশিটও জমা পড়ে গেছে।  পাঁচজন এএসআই, একজন এসআই, ১৫ জন কনস্টেবল ও ছ'জন সিভিল পুলিশকে নিয়ে গঠিত মহিলা থানা মূলত কাউন্সেলিংয়েই জোর দেয়৷

পিলখুড়ির স্বপ্না ঘোষ জানালেন তার অভিজ্ঞতা৷ তিনি বলেন, গত এপ্রিলে স্বামীর বিরুদ্ধে অভিযোগ নিয়ে থানায় এসেছিলাম৷ স্বামী খুব মদ খেত৷ আমাকে আর পাঁচ বছরের ছেলেটাকে খুব মারত৷ আমাকে থানায় বসিয়ে স্বামীকে ডেকে পাঠিয়েছিলেন পুলিশদিদি৷ প্রায় ঘণ্টা দু'য়েক ওকে বুঝিয়েছিলেন তিনি৷

তিনি বলেন, এখন সেই অভিশপ্ত দিন আর নেই আমার জীবনে৷ দিদি সেদিন সাহায্য না করলে হয়তো স্বামীর সঙ্গে ঘরই করতে পারতাম না৷ নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক মহিলা জানান, কীভাবে তার অভিযোগের ভিত্তিতে কেরালায় গিয়ে অভিযুক্তকে গ্রেপ্তার করে এনেছিলেন পুলিশ আধিকারিকরা৷

তিনি বলেন, আসামিকে চেনানোর জন্য থানায় ডেকে পাঠানোর পর মনে হয়েছিল পুলিশ ইচ্ছে করলে সত্যিই কাজ করতে পারে৷ ভরসা বেড়ে গেছে।

থানার আইসি বনানী সরকার বলেন, আমাদের কাছে অভিযোগ এলে প্রথমে শুনি৷ পুলিশে দীর্ঘ কাজের অভিজ্ঞতা থেকে বুঝতে পারি কে সত্যি বলছেন৷ প্রথমেই মিথ্যা না বলার অনুরোধ করি৷

তিনি বলেন, আমরা বলি, উদ্দেশ্যপ্রণোদিত হয়ে কাউকে ফাঁসানোর চেষ্টা করবেন না৷ সত্যি বলছি, এতে অনেক কাজ হয়েছে৷ বর্ধমানের পুলিশ সুপার কুণাল আগরওয়ালও মহিলা থানার ভূমিকায় খুশি৷

তিনি বলেন, সম্প্রতি এক মহিলা ও তাঁর শিশুকন্যার ওপর অতাচারের অভিযোগ লিপিবদ্ধ হতেই আসানসোল থেকে অভিযুক্তকে গ্রেন্তার করা হয়েছে৷ রাজ্য ছাড়িয়ে দিল্লি, কেরালা গিয়েও মামলার তদন্ত করেছেন মহিলা থানার অফিসাররা৷ কোনও অসুবিধায় মহিলাদের থানায় এসে আইনি সাহায্য নেওয়ার জন্য আমরা প্রচার করে থাকি৷

জেলা তৃণমূল মহিলা কংগ্রেসের সভাপতি গার্গী নাহা বলেন, আমাদের মুখ্যমন্ত্রীই মহিলাদের স্বাধীনতা থেকে তাদের নিরাপত্তার কথা ভেবেছিলেন বলে মহিলা থানা গুলি তৈরি করেছেন৷ সেখানে যে মহিলা পুলিশ কর্মীরা মহিলাদের স্বার্থে শুধু কাজ করেন তাই না, মহিলারা যাতে সমাজে মাথা উঁচু করে চলতে পারেন সে সাহায্যও করেন৷

যদিও সিপিএমের রাজ্য মহিলা সমিতির সহ সভাপতি সাধনা মল্লিক বলেন, 'আমাদের আমলে থানা ছিল না ঠিকই, তবুও মহিলারা সুরক্ষিত ছিল৷ এখন কি হচ্ছে সেটা আপনাদের থেকে ভালো কারো জানা নেই৷ মহিলা থানা করে মহিলারাই আজ সব থেকে বেশি অসুরক্ষিত অবস্থায়৷

এরই মধ্যে দেলার সব থানাতেই একটি আলাদা করে মহিলা হেল্প ডেক্স তৈরি করা হয়েছে৷ যেখানে মহিলারা গিয়ে মহিলা পুলিশ অফিসারের কাছে অভিযোগ জানাতে পারবে৷ পাশাপাশি সেখানে সন্তুষ্ট না হলে জেলা পুলিশ সুপারের কাছেও অভিযোগ জানাতে পারবেন৷
১৩ সেপ্টেম্বর,২০১৫/এমটিনিউজ২৪/এমআর/এসএম

Follow করুন এমটিনিউজ২৪ গুগল নিউজ, টুইটার , ফেসবুক এবং সাবস্ক্রাইব করুন এমটিনিউজ২৪ ইউটিউব চ্যানেলে