মঙ্গলবার, ১৭ সেপ্টেম্বর, ২০১৯, ১২:১৬:৫৬

অস্থির মধ্যপ্রাচ্যে আরেকটি যু'দ্ধ আসন্ন, গোপনে এরদোগান-রুহানির রুদ্ধদ্বার বৈঠক

অস্থির মধ্যপ্রাচ্যে আরেকটি যু'দ্ধ আসন্ন, গোপনে এরদোগান-রুহানির রুদ্ধদ্বার বৈঠক

আন্তর্জাতিক ডেস্ক : হুথি বি'দ্রো'হীরা দাবি করছে এই হা'ম'লা তারা চালিয়েছে। যুক্তরাষ্ট্রের দাবি এর পেছনে আছে ইরান। আর ইরান এর সঙ্গে তাদের কোন সম্পর্কের কথা জোর গলায় অস্বীকার করছে।

সৌদি আরবের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ তেল স্থাপনার ওপর নাটকীয় হা'ম'লার পর তীব্র বাকযু'দ্ধ শুরু হয়ে গেছে। সৌদি আরবের এই তেলস্থাপনাগুলো গোটা বিশ্বের তেল সরবরাহের ক্ষেত্রে খু্বই গুরুত্বপূর্ণ। কিন্তু এগুলো যে কতটা নাজুক অবস্থায় আছে, এই হা'ম'লা সেটা স্পষ্ট করে দিয়েছে।

ইয়েমেনের বিরুদ্ধে যে বিমান হা'মলা চালাচ্ছে সৌদি আরব, তাতে যুক্তরাষ্ট্রের মদত আছে। সৌদি আরবের এসব বিমান সরবরাহ করেছে পশ্চিমা দেশগুলো। বহু দিন ধরে সৌদি আরব হুথি বি'দ্রো'হীদের বিরুদ্ধে বিমান হা'মলা চালিয়ে যাচ্ছে। কিন্তু প্রতিপক্ষও যে পাল্টা হা'ম'লার ক্ষমতা রাখে, সৌদি তেল স্থাপনার ওপর এই আ'ঘা'ত তারই প্রমাণ।

তবে এই ঘটনা সেই পুরোনো বি'ত'র্ককে আবার উ'স্কে দিয়েছে- হুথি বিদ্রোহীদের ইরান কী পরিমাণ সামরিক এবং প্রযুক্তিগত সহায়তা দিচ্ছে? মধ্যপ্রাচ্যের পরিস্থিতি এমনিতেই অস্থিতিশীল। সেখানে এই সর্বশেষ ঘটনা যেন পুরো অঞ্চলের পরিস্থিতি আরও অ'গ্নিগ'র্ভ করে তুলেছে।

কিন্তু এই হা'মলা একই সঙ্গে ইরানের ব্যাপারে যুক্তরাষ্ট্রের ট্রাম্প প্রশাসনের নীতি এবং কৌশলের ব্যর্থতাও ফুটিয়ে তুলেছে। সৌদি তেল স্থাপনায় হা'ম'লার ব্যাপারে নানা দাবি এবং পাল্টা দাবির মধ্যে অনেক তথ্য এখনো অজানা।

হুথি বি'দ্রো'হীরা সৌদি আরবের বিভিন্ন টা'র্গে'টে আগেও ড্রোন এবং মিসাইল হা'মলা চালিয়েছে। কিন্তু ড্রোন হা'মলা থেকে তারা খুব সীমিত সাফল্যই পেয়েছে। তবে এবারের যে হা'ম'লা সেটা এমন মাত্রার যে তার সঙ্গে আগেরগুলোর কোন তুলনাই চলে না। বহুদূর থেকে যেরকম ব্যাপক মাত্রায় যে ধরণের লক্ষ্যবস্তুতে হা'ম'লা করা হয়েছে, তার নজির নেই।

যদি মিসাইল ব্যবহার করা হয়ে থাকে, সৌদি বিমান প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা কেন তার সংকেত পেল না? আরেকটি প্রশ্ন হচ্ছে হা'মলার পেছনে ইরাকের কোন ইরানপন্থী মিলিশিয়া গোষ্ঠী ছিল, নাকি স্বয়ং ইরানই জড়িত?

মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী মাইক পম্পেও কিন্তু কোন সময় নষ্ট না করে সরাসরি তেহরানের দিকে আঙ্গুল তুলছেন এই ঘটনার জন্য। ঘটনার ব্যাপারে কোন গোয়েন্দা তথ্যের জন্য পর্যন্ত তিনি অপেক্ষা করেননি।

কয়েকঘন্টা পর অবশ্য মার্কিন সূত্রগুলো দাবি করতে থাকে মোট ১৭টি স্থানে এই ড্রোন হা'ম'লা হয় এবং প্রতিটি ক্ষেত্রেই এসব হা'মলা হয়েছে উত্তর বা উত্তর-পশ্চিম দিক থেকে। যুক্তরাষ্ট্র বলতে চাইছে এই হামলা হয়েছে ইরান বা ইরাকের দিক থেকে, দক্ষিণের ইয়েমেন থেকে নয়।

যুক্তরাষ্ট্র বলছে তারা এই হা'ম'লা ব্যাপারে আরও বিস্তারিত তথ্য জানাবে। হামলায় ব্যবহৃত যেসব ড্রোন টার্গেট পর্যন্ত যেতে পারেনি, সেগুলো পরীক্ষা করা হচ্ছে।

সৌদি আরবের দুটি তেলক্ষেত্রে ড্রোন হা'মলার প্রতি'শো'ধ নিতে ইরানে হামলার পাঁয়তারা করছে যুক্তরাষ্ট্র। ইয়েমেনের হুথি বি'দ্রো'হী গোষ্ঠী শনিবারের ওই হা'মলার দায় স্বীকার করলেও এজন্য তেহরানকে দায়ী করছে ওয়াশিংটন। খুব শিগগিরই এর প্র'তিশো'ধ নেয়া হবে বলে হু'মকি দিয়েছে দেশটি।

সোমবার মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প বলেন, সৌদি হা'মলার জবাব দিতে ‘পুরোপুরি প্রস্তুত’ রয়েছে মার্কিন বাহিনী। তেল স্থাপনায় হামলার পেছনে ইরানই দায়ী- এ দাবির পক্ষে ইতিমধ্যে তথ্য-প্রমাণও হাজির করেছে ট্রাম্প প্রশাসন।

এক টুইটার বার্তায় ট্রাম্প বলেন, ‘সৌদি আরবে বিশ্বের বৃহত্তম তেল স্থাপনা হা'মলার শি'কার হয়েছে। কে এই অপরাধী তা আমরা জানি; সেটি বিশ্বাস করার মতো যথেষ্ট তথ্যপ্রমাণ রয়েছে। আমরা ‘লকড অ্যান্ড লোডেড’ অর্থাৎ সম্পূর্ণ প্রস্তুত। তবে সৌদি রাজতন্ত্র কি বিশ্বাস করে তা জানার প্রতীক্ষায় রয়েছি আমরা। সেই ভিত্তিতেই আমরা অগ্রসর হব।’ 

শেষ বিচারে এসব খুঁটি-নাটি তথ্যের কোন মানে দাঁড়ায় না। কারণ কূটনৈতিক ক্ষ'তি যা হওয়ার তা হয়ে গেছে। যুক্তরাষ্ট্র এবং সৌদি আরব ইরানের নি'র্ম'ম শ'ত্রু। ট্রাম্প প্রশাসন ইতোমধ্যে মনস্থির করে ফেলেছে। পারস্য উপসাগরে বিভিন্ন জাহাজে হা'মলার জন্য তারা ইরানকেই দোষী করছে।

ইরান এবং হুথি বি'দ্রো'হীরা যু'দ্ধে যে ধরণের কৌশল নিয়েছে, সেটা শক্তিমানের বিরুদ্ধে দু'র্বলের ল'ড়াইয়ের চিরাচরিত কৌশল। বেশিরভাগ কৌশল যেন রুশদের কাছ থেকে ধার করা- যে কোন কিছু অস্বীকার করা, ছায়াযু'দ্ধ, সাইবার হা'মলা এবং প্রপাগান্ডা যু'দ্ধ।

যে কোন মূহুর্তে যে কারও একটা ভূল হিসেবের কারণে একটা সর্বাত্মক যু'দ্ধ শুরু হয়ে যাওয়ার আ'শং'কা আছে। এমন অবস্থায় ইরানের প্রেসিডেন্ট ড. হাসান রুহানি তুরস্কের প্রেসিডেন্ট এরদোগানের সঙ্গে রুদ্ধদ্বার বৈঠক করেছেন।

রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিনের সঙ্গে ত্রিপক্ষীয় বৈঠকে মিলিত হওয়ার আগে সোমবার হাসান রুহানি এবং রজব তাইয়্যেব এরদোগান তুরস্কের রাজধানী আংকারায় এ বৈঠক করলেন। শান্তিপূর্ণ উপায়ে মানবিক সং'ক'ট নিরসনের লক্ষ্যে ইরান, রাশিয়া এবং তুরস্ক এই বৈঠকে বসছে।

তার আগে ইরান ও তুরস্কের প্রেসিডেন্ট এরদোগান রুদ্ধদ্বার এ বৈঠক করলেন। ইরানের বার্তা সংস্থা ইরনা জানিয়েছে, দুই প্রেসিডেন্ট পারস্পারিক স্বার্থ নিয়ে আলোচনা করেন। ইরান এবং তুরস্কের যৌথ কমিশন আগামী কয়েকদিনের মধ্যে পরবর্তী বৈঠকে বসবে। 

তার আগে হাসান রুহানি তুর্কি প্রেসিডেন্ট রজব তাইয়্যেব এরদোগানের সঙ্গে অর্থনৈতিক সম্পর্ক বাড়ানোর বিষয় নিয়ে আলোচনা করলেন। গত রাতে ইরানি প্রেসিডেন্ট তুরস্কের রাজধানী আঙ্কারায় পৌঁছান। প্রেসিডেন্ট এরদোগানের আনুষ্ঠানিক আমন্ত্রণে তিনি এ সফরে গেছেন।

Follow করুন এমটিনিউজ২৪ গুগল নিউজ, টুইটার , ফেসবুক এবং সাবস্ক্রাইব করুন এমটিনিউজ২৪ ইউটিউব চ্যানেলে