রবিবার, ০৫ এপ্রিল, ২০২০, ০৬:২৬:৪৮

ব্রিটেনে ময়লা ফেলার ব্যাগ মাথায় দিয়ে সেবা দিচ্ছেন চিকিৎসকরা

ব্রিটেনে ময়লা ফেলার ব্যাগ মাথায় দিয়ে সেবা দিচ্ছেন চিকিৎসকরা

আন্তর্জাতিক ডেস্ক: যুক্তরাজ্যের হাসপাতালগুলোতে স্বাস্থ্যকর্মীদের কাজের পরিবেশ ও সরঞ্জামের শো'চনীয় অবস্থা উঠে এসেছে নিবিড় পরিচর্যা বিভাগের একজন চিকিৎসকের বক্তব্যে।করোনাভাইরাসের কারণে মৃতের সংখ্যা বাড়ছে, যাদের অবস্থা সঙ্ক'টময় তাদের জন্য দিনরাত কাজ করে যাচ্ছে হাসপাতালগুলো।

মূলত, নিবিড় পরিচর্যা সেবা বা আইসিইউ বাড়াতেই এই উদ্যোগ। কিন্তু তাদের অভিযোগ যথাযথ সাপো'র্ট বা সরঞ্জাম তারা পাচ্ছেন না।
বিবিসিকে দেয়া সাক্ষাৎকারে তারা যে বিষয়টিতে জো'র দিয়েছেন তা হলো সরঞ্জামের অভাব। তাদের গণমাধ্যমে কথা বলতেও নিষেধ করা হয়েছে।শেষ পর্যন্ত যুক্তরাজ্যের একজন কর্মরত চিকিৎসক বিবিসির সঙ্গে কথা বলতে রাজি হয় নাম প্রকাশ না করার শর্তে।

আমরা তার নাম পরিবর্তন করে দিয়েছি এখানে।ড. রবার্টস, খাদের কিনারায় থাকা একটি হাসপাতালের কথা বলছেন। এই হাসপাতালের আইসিইউ এখন কোভিড-১৯ রোগীতে পরিপূর্ণ। যা যা মনে করা হচ্ছে অপ্রয়োজনীয় তার সব বন্ধ করে দেয়া হয়েছে, এমনকি তার মধ্যে আছে ক্যানসার ক্লিনিক।এই হাসপাতালে কর্মীর অভাব আছে, সং'কটময় রোগীর জন্য বিছানার অভাব আছে, একদম সাধারাণ এন্টি'বায়োটি'ক ও ভেন্টি'লেটরের অভাব আছে।

ধারণা করা হচ্ছে, যুক্তরাজ্যে করোনাভাইরাস ১৪ থেকে ১৫ এপ্রিলের মধ্যে বড় আঘা'ত হানবে, বিশ্লেষকদের ভাষায় যেটাকে বলা হচ্ছে 'পিক টাইম'।
কর্মীরা এখনই অনুভব করছে কী পরিমাণ সং'কটময় সময় আসছে সামনে।চূড়া'ন্তভাবে আক্রা'ন্ত রোগীদের সেবা দিচ্ছেন এমন ডাক্তাররা এখন ১৩ ঘণ্টা করে কাজ করছে প্রতিদিন।

ভয়াবহ ব্যাপার হচ্ছে পিপিই- ব্যক্তিগত সুর'ক্ষা দেয়া সরঞ্জামের অভাব প্রক'ট, এমনও হয়েছে যে পিপিইর অভাবে ময়লা ফেলার পলিথিন, প্লাস্টিকের অ্যাপ্রোন ও স্কিইং করার চশমা পরে কাজ চালিয়ে নিচ্ছেন তারা।যথাযথ সুর'ক্ষা ব্যবস্থা ছাড়াই করোনাভাইরাস আক্রা'ন্ত হতে পারেন এমন ব্যক্তির থেকে ২০ সেন্টিমিটারের মতো দূরত্বে থেকে কাজ করছেন ডাক্তাররা, যেখানে সাধারণ মানুষকে বলা হচ্ছে ২ মিটার হতে হবে ন্যূনতম দূরত্ব।

রবার্টস বলছেন, যে মা'রাত্ম'ক প্রভাব পড়তে পারে তাদের জীবনে সেটা এখনই ভাবাচ্ছে, তারা এখন ভী'ত সন্ত্র'স্ত হয়ে পড়ছেন এবং নিজেদের পিপিই নিজেরাই তৈরি করছেন।রবাটর্স বলেন, "এটা বাস্তব চিন্তা, নিবিড় চিকিৎসা যেসব নার্স দিচ্ছেন তাদের এটা এখনই প্রয়োজন। তারা যেখানে কাজ করছেন সেখানে ভাইরাস অ্যারো'সলের মতো করে ছ'ড়িয়ে পড়ার সম্ভাবনা রয়েছে। তাদের বলা হচ্ছে খুব সাধারণ টুপি পরতে যেটায় ছি'দ্র আছে। যেটা কোনো সুর'ক্ষাই দিচ্ছে না।"এটা প্রচণ্ড' রকমের ঝুঁ'কিপূর্ণ। তাই কর্মীরা বিনের ব্যাগ ও অ্যাপ্রোন পরে কাজ চালিয়ে নিচ্ছেন।

যুক্তরাজ্যের সরকার সরঞ্জাম বিতরণ নিয়ে যে ঝামেলা হচ্ছে সেটা স্বীকার করেছেন। এখন এই কাজের সঙ্গে যুক্ত হয়েছে সশ'স্ত্র বাহি'নী।সরঞ্জাম জায়গা মতো পৌঁছাতে কাজ করে যাচ্ছেন তারা।পহেলা এপ্রিল ১০ লাখ শ্বাসয'ন্ত্র র'ক্ষাকারী মাস্ক দিয়েছে বলে জানিয়েছে এনএইচএস, যুক্তরাজ্যের জাতীয় স্বাস্থ্যসেবা সংস্থা। তবে সেখানে মাথার সুর'ক্ষা ও গাউনের কথা বলা হয়নি।

রবার্টস যেখানে কাজ করছেন সেই হাসপাতালে কোনো সরকারি সামগ্রী পৌঁছায়নি বলছেন তিনি।"এখন আমরা যে মাস্ক দিয়ে কাজ করছি সেটা নতুন করে তারিখ বসানো হয়েছে। আমি তিনটি স্টিকার দেখেছি যেখানে লেখা মেয়াদোত্তীর্ণ হওয়ার তারিখ ২০০৯, ২০১৩ ও একটিতে ২০২১।"

ইংল্যান্ডের পাবলিক হেলথ বলছে যেগুলোতে মেয়াদের তারিখ শেষ হয়ে গেছে সেগুলো তারা পরীক্ষা করে দেখে যে ব্যবহার করা যাবে, কিন্তু বিবিসি যে চিকিৎসকের সাথে কথা বলেছে তিনি বলছেন তিনি এ বিষয়ে আশ্ব'স্ত হতে পারছেন না।এই মুহূর্তে রবার্টসের তিনজন সহকর্মী ভে'ন্টিলেশনে আছেন যারা করোনাভাইরাসে আক্রা'ন্ত হয়েছেন। যারা আক্রা'ন্ত হয়েছে তাদের একজন কোভিড ওয়ার্ডে কাজ করতেন। বাকি দুজন কোভিড ওয়ার্ডে কাজ করতেন না তাই তাদের পিপিই ছিল না।
রবার্টস মনে করছেন এই দুজনেরও কর্মক্ষেত্রেই সং'ক্রমণ হয়েছে।

সহকর্মীরা দেখা সাক্ষাৎ করতে পারছেন। কিন্তু কোনো আত্মীয়কে সেখানে ঢুকতে দেয়া হচ্ছে না।চিকিৎসক রবার্টস সবচেয়ে ক'ঠিন যে পরিস্থি'তির কথা বলেন, "পরিবারগুলোকে আমাদের বলতে হচ্ছে যে, আপনার রোগী মা'রা যাচ্ছে, তারা দেখতেও আসতে পারছে না।"তিনি বলেন, এমনি সময়ে তো কেউ না কেউ পাশে থাকে, যাকে আমরা সান্তনা দেই যে আমরা সর্বোচ্চ চেষ্টা করবো।

"আমরা সেরা ভে'ন্টিলেটর সেবা দিতে পারছি না। আমরা নার্সিং কেয়ার সর্বোচ্চ দিতে পারছি না, আমাদের সেরা নার্সদের এতো কাজ করানো হচ্ছে যে সেটা অমা'নবিক। আমাদের এ'ন্টিবায়ো'টিক শেষের পথে আমি তাদের সকল সেবার নিশ্চয়তা দিতে পারছি না।"ন্যাশনাল হেলথ সার্ভিস বলছে তাদের কাছে স্বাস্থ্যসেবায় নিয়োজিতরা করোনাভাইরাসে কর্মক্ষেত্রে সং'ক্রমিত হচ্ছে কি না সে বিষয়ে কোনো ত'থ্য নেই।

ইউরোপে যে দুটি দেশে করোনাভাইরাসের সং'ক্রমণ ও এর ফলে মৃত্যুর সংখ্যা সবচেয়ে বেশি তাদের মধ্যে একটি স্পেন যেখানে সরকারি হিসেবে ২৭শে মার্চ পর্যন্ত ৯৪০০ স্বাস্থ্যকর্মীর করোনাভাইরাস পজিটিভ নি'শ্চিত।
৩০শে মার্চ পর্যন্ত ইতালিতে সং'ক্রমিত স্বাস্থ্যকর্মীর সংখ্যা ৬৪১৪ জন।

যুক্তরাজ্যে কয়েকজন স্বাস্থ্যকর্মী মা'রা গেছেন বলে জানা গেছে।পশ্চিম মিডল্যান্ডের একজন নার্স আরিমা নাসরিন মা'রা গেছেন করোনাভাইরাসে।পূর্ব লন্ডনের হেলথ কেয়ার সহকারী থমাস হারভে, সেন্ট্রাল লন্ডনের প্রফেসর মোহাম্মদ সামি সৌশা, দক্ষিণের ড. হাবিব জাইদি, পশ্চিম লন্ডনের ড. আদিল এল তাইয়ার এবং লেস্টারের ড. আমজেদ এল হাওরানি মা'রা গেছেন। সূত্র: বিবিসি বাংলা

Follow করুন এমটিনিউজ২৪ গুগল নিউজ, টুইটার , ফেসবুক এবং সাবস্ক্রাইব করুন এমটিনিউজ২৪ ইউটিউব চ্যানেলে